রংপুরে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

খুনি পুলিশ সদস্য হওয়ায় মামলা নিতে গড়িমসি

অপহরণের ৭ দিন পর রোববার সকালে ঢাকা থেকে আসা ব্যাবসায়ী তোষারফ হোসেন পপির লাশ বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল রবিউলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে স্বজনদের অভিযোগ খুনি পুলিশের লোক হওয়ায় পুলিশ মামলা গ্রহণে গড়িমসি এবং উদ্ধার করার ব্যাপারে বিলম্ব করার কারণেই তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।

পুলিশ জানায় রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগের এনায়েতগঞ্জ লেনের ব্যবসায়ী ও আরবান হেলথ কেয়ারের অ্যাডমিন তোষারফ হোসেন পপি কাজের মেয়ের সন্ধানে তার পূর্ব পরিচিত পুলিশ কনস্টেবল রবিউল ইসলামের সঙ্গে দেখা করার জন্য গত ১১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে নাইট কোচে রংপুর নগরীর কামার পাড়াস্থ নাইট কোচ ষ্টান্ডে আসেন সেখানে রবিউলের সঙ্গে দেখা হয়। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার স্বজনরা ওই ব্যবসায়ীর কোন হদিস পাচ্ছিলেন না। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানায় অপহৃত ব্যবসায়ীর ছোট বোন সাজিয়া আফরিন ডলি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কনস্টেবল রবিউল ও তার ভগ্নিপতি সাইফুল ও বাসার কাজের ছেলে বিপুলকে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কনস্টেবল ব্যবসায়ী তোষারফকে হত্যা করে লাশ বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর এলাকায় মাটিতে পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করে। পরে রোববার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে রবিউলকে নিয়ে গিয়ে তার দেখানো জায়গায় মাটি খুঁড়ে তার লাশ উদ্ধার করে।

এদিকে নিহত ব্যবসায়ী তোষারফ হোসেন পপির বোন ও মামলার বাদী সাজিয়া আফরিন ডলি ও নিহতের স্ত্রী ইভা অভিযোগ করেছেন তোষারফ অপহৃত হবার পর থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি এমনকি খুনিদের নাম বলার পরেও পুলিশ সদস্য বলে গ্রেফতার করেনি। পরে র‌্যাবকে জানালে তারা পুলিশ কনস্টেবল রবিউলকে গ্রেফতার করে। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে তাকে উদ্ধার করা যেতো বলে দাবি করেন তারা।

রোববার দুপুরে নিহত ব্যবসায়ী তোষারফ হোসেন পপির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় নিহতের বোন সাজিয়া আফরিন ডলি অভিযোগ করেন ১১ জানুয়ারি তার ভাই রংপুরে আসার পর নিখোঁজ হয়। আমরা বিভিন্নভাবে খোঁজ করেও তার সন্ধান না পাওয়ায় ঢাকা থেকে রংপুরে আসি। প্রথমে আমরা রংপুর সদর থানায় গিয়ে অভিযোগ দেবার কথা বললে পুলিশ আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করেনি। এরপর আমরা রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানায় যাই সেখানে ওসি আবদুর রশীদের সঙ্গে দেখা করে জানাই রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল রবিউল ইসলাম আমার ভাইকে ঢাকা থেকে ডেকে এনেছে সে আমাদের বলেছে ঢাকায় চলে গেছে। তাকেই জিজ্ঞাসা করলেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। কিন্তু পুলিশ আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। এরপর আমরা উপায়ন্তর না দেখে রংপুর র‌্যাব ১৩ কার্যালয়ে যাই সেখানে তাদের ঘটনার বিষয় বললে র‌্যাব পুলিশ কনস্টেবল রবিউল ইসলামকে আটক করে নিয়ে আসে। এ ঘটনার পর রবিউল যেহেতু মুল পোস্টিং বগুড়ায় সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তার কথায় তাকে বগুড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পুলিশ বুঝতে পারে রবিউল মূল কিলার তার পর তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের এসব নাটক করার কারণে কয়েকদিন বিলম্ব হয় আর এ সুযোগে তাকে হত্যা করা হয়েছে ।

একই অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী ইভা তিনি বলেন আমার স্বামী ব্যবসায়ী সে বেশ কিছু টাকাও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল ফলে পুলিশ কনস্টেবল ওই টাকার লোভেই তাকে হত্যা করেছে। আর খুনি পুলিশের সদস্য হওয়ায় পুলিশ ইচ্ছে করে এ ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করে তিনি পুরো ঘটনার জন্য পুলিশের ব্যর্থতা আর দায়িত্বহীনতাকেই দায়ি করেছেন তিনি।

তবে কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রশীদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন আমরা অভিযোগ পাওয়ার পাবার সঙ্গে সঙ্গে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে খুনের মাস্টার মাইন্ড পুলিশ কনস্টেবল রবিউল তার দুলাভাই সাইফুল ও বাসার কাজের ছেলে বিপুলকে গ্রেফতার করেছি। তিনি দাবি করেন দ্রুততম সময়ে খুনিদের গ্রেফতার করতে পেরেছি।

তবে মেট্রোপলিটান পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) শহিদুল্লা কাওসার বলেছেন, খুনের মাস্টার মাইন্ড হচ্ছে পুলিশ কনস্টেবল রবিউল। সে বোনের বাসায় নিয়ে এসে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার পর তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০ , ৬ মাঘ ১৪২৬, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

রংপুরে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

খুনি পুলিশ সদস্য হওয়ায় মামলা নিতে গড়িমসি

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

image

অপহরণের ৭ দিন পর রোববার সকালে ঢাকা থেকে আসা ব্যাবসায়ী তোষারফ হোসেন পপির লাশ বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল রবিউলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে স্বজনদের অভিযোগ খুনি পুলিশের লোক হওয়ায় পুলিশ মামলা গ্রহণে গড়িমসি এবং উদ্ধার করার ব্যাপারে বিলম্ব করার কারণেই তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।

পুলিশ জানায় রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগের এনায়েতগঞ্জ লেনের ব্যবসায়ী ও আরবান হেলথ কেয়ারের অ্যাডমিন তোষারফ হোসেন পপি কাজের মেয়ের সন্ধানে তার পূর্ব পরিচিত পুলিশ কনস্টেবল রবিউল ইসলামের সঙ্গে দেখা করার জন্য গত ১১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে নাইট কোচে রংপুর নগরীর কামার পাড়াস্থ নাইট কোচ ষ্টান্ডে আসেন সেখানে রবিউলের সঙ্গে দেখা হয়। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার স্বজনরা ওই ব্যবসায়ীর কোন হদিস পাচ্ছিলেন না। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানায় অপহৃত ব্যবসায়ীর ছোট বোন সাজিয়া আফরিন ডলি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কনস্টেবল রবিউল ও তার ভগ্নিপতি সাইফুল ও বাসার কাজের ছেলে বিপুলকে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কনস্টেবল ব্যবসায়ী তোষারফকে হত্যা করে লাশ বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর এলাকায় মাটিতে পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করে। পরে রোববার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে রবিউলকে নিয়ে গিয়ে তার দেখানো জায়গায় মাটি খুঁড়ে তার লাশ উদ্ধার করে।

এদিকে নিহত ব্যবসায়ী তোষারফ হোসেন পপির বোন ও মামলার বাদী সাজিয়া আফরিন ডলি ও নিহতের স্ত্রী ইভা অভিযোগ করেছেন তোষারফ অপহৃত হবার পর থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি এমনকি খুনিদের নাম বলার পরেও পুলিশ সদস্য বলে গ্রেফতার করেনি। পরে র‌্যাবকে জানালে তারা পুলিশ কনস্টেবল রবিউলকে গ্রেফতার করে। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে তাকে উদ্ধার করা যেতো বলে দাবি করেন তারা।

রোববার দুপুরে নিহত ব্যবসায়ী তোষারফ হোসেন পপির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় নিহতের বোন সাজিয়া আফরিন ডলি অভিযোগ করেন ১১ জানুয়ারি তার ভাই রংপুরে আসার পর নিখোঁজ হয়। আমরা বিভিন্নভাবে খোঁজ করেও তার সন্ধান না পাওয়ায় ঢাকা থেকে রংপুরে আসি। প্রথমে আমরা রংপুর সদর থানায় গিয়ে অভিযোগ দেবার কথা বললে পুলিশ আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করেনি। এরপর আমরা রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানায় যাই সেখানে ওসি আবদুর রশীদের সঙ্গে দেখা করে জানাই রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল রবিউল ইসলাম আমার ভাইকে ঢাকা থেকে ডেকে এনেছে সে আমাদের বলেছে ঢাকায় চলে গেছে। তাকেই জিজ্ঞাসা করলেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। কিন্তু পুলিশ আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। এরপর আমরা উপায়ন্তর না দেখে রংপুর র‌্যাব ১৩ কার্যালয়ে যাই সেখানে তাদের ঘটনার বিষয় বললে র‌্যাব পুলিশ কনস্টেবল রবিউল ইসলামকে আটক করে নিয়ে আসে। এ ঘটনার পর রবিউল যেহেতু মুল পোস্টিং বগুড়ায় সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তার কথায় তাকে বগুড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পুলিশ বুঝতে পারে রবিউল মূল কিলার তার পর তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের এসব নাটক করার কারণে কয়েকদিন বিলম্ব হয় আর এ সুযোগে তাকে হত্যা করা হয়েছে ।

একই অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী ইভা তিনি বলেন আমার স্বামী ব্যবসায়ী সে বেশ কিছু টাকাও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল ফলে পুলিশ কনস্টেবল ওই টাকার লোভেই তাকে হত্যা করেছে। আর খুনি পুলিশের সদস্য হওয়ায় পুলিশ ইচ্ছে করে এ ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করে তিনি পুরো ঘটনার জন্য পুলিশের ব্যর্থতা আর দায়িত্বহীনতাকেই দায়ি করেছেন তিনি।

তবে কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রশীদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন আমরা অভিযোগ পাওয়ার পাবার সঙ্গে সঙ্গে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে খুনের মাস্টার মাইন্ড পুলিশ কনস্টেবল রবিউল তার দুলাভাই সাইফুল ও বাসার কাজের ছেলে বিপুলকে গ্রেফতার করেছি। তিনি দাবি করেন দ্রুততম সময়ে খুনিদের গ্রেফতার করতে পেরেছি।

তবে মেট্রোপলিটান পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) শহিদুল্লা কাওসার বলেছেন, খুনের মাস্টার মাইন্ড হচ্ছে পুলিশ কনস্টেবল রবিউল। সে বোনের বাসায় নিয়ে এসে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার পর তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।