মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনায় শেষ বিশ্ব ইজতেমা

দুই পর্বে ২২ মুসল্লির মৃত্যু

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনায়, গতকাল টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত শুরু হয়ে শেষ হয় ১২টা ৭ মিনিটে। ১৭ মিনিটের আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হয় তাবলীগ জামাত আয়োজিত ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা। বিশ্ব মুসলীম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশে অংশ নেন ভারতের দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজের শূরা সদস্য মাওলানা জামশেদ।

মোনাজাতে জীবনের সব গুণা মাফ, কবরের আজাব, জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি এবং জান্নাত নসিবের জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানানো হয়। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশে খোলা জায়গায় সমবেত মুসল্লিরা ‘আমিন আমিন, ‘ইয়া আল্লাহু’ ‘ইয়া আল্লাহু’ ধ্বনিতে চোখের পানিতে ভাসেন। আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে দুনিয়ার কৃতকর্মের কথা স্মরণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ইজতেমাস্থলে তাবলীগ জামাতের সমবেত দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও আশপাশের জেলার কয়েক লাখ মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে এ আখেরি মোনাজাতে শরিক হন। গত ১০ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। প্রথম পর্বে ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেন। ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছিল প্রথম পর্ব।

এদিকে আখেরি মোনাজাতে যোগ দিতে রোববার ভোর থেকে মানুষ ছুটতে থাকে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের দিকে। ইজতেমা প্যান্ডেলসহ আশপাশের এলাকা মানুষে মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায় মোনাজাত শুরুর আগেই। ছুটে আসা মুসল্লিরা আল্লাহর দরবারে গুণাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করেছেন অজরধারায়। মোনাজাতে মানুষের আল্লাহর দরবারে আহাজারিতে টঙ্গীর পুরো এলাকা রূপ নেয় ধর্মীয় নগরীতে। নিজের গুণা মাফের জন্য দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে। মোনাজাত শুরুর পূর্বে লাখ লাখ মানুষ রাস্তার ওপর, বাড়ির ছাদে, বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে বসে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। দোয়ায় নবী করিম (সা.) এর তরিকা মনের মধ্যে পয়দা করার তৌফিক দান, গুণাগার বান্দাদের দোয়া কবুল, গুণা মাফ করে জানমাল কোরবানি দেয়ার তৌফিক দান, মুসলমানদের জানমাল হেফাজত, মুসমানদের দেশকে হেফাজত, ইমানী জিন্দেগী, ইমান আখলাককে কবুল, ঈমানের দ্বীনের কাজকে মজবুত করে দেয়া, আল্লাহ হাবিবের সুন্নতের পথে চলার তৌফিক দান, নবীর সুন্নতকে নসিব করার, নবীর হাওজে কাউসারের পবিত্র পানি পান করার নসিব এবং আমলনামা ডান হাতে দেয়ার ও দ্বীনের পথে এবং আখিরাতকে কবুল নসিব করার এবং দুনিয়াধারী না হয়ে আখিরাতি বানানোর জন্য লাখো মুসল্লি দু’হাত তুলে দোয়ায় অংশ নেন।

সাদ অনুসারীদের দুই পর্বের ইজতেমার তারিখ ঘোষণা

বিশ্ব ইজতেমার মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের দুই পর্বের ইজতেমার তারিখ ঘোষণার পর মাওলানা সাদ অনুসারীরা আগামী ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার পৃথক সময়ে দুই পর্বের তারিখ ঘোষণা করেছেন। গতকাল ১৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের আগে ইজতেমার বয়ান মঞ্চ থেকে এ তারিখ ঘোষণা করা হয়। মাওলানা সাদ অনুসারীদের ইজতেমা আয়োজক কমিটির শুরার বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ তারিখ ঘোষণা করা হয় বলে জানান ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম। ঘোষাণা অনুযায়ী আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ প্রথম পর্ব এবং ১, ২ ও ৩ জানুয়ারি ২০২১ দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৩ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে সা’দ অনসুসারীদের পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।

গত ১২ জানুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষে মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের ইজতেমার দুই দফার তারিখ ঘোষণা করা হয়। সেই ঘোষণা অনুসারে তাদের ইজতেমার প্রথম ধাপ হবে ৮, ৯ ও ১০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হবে ১৫, ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি।

মহিলাদের অংশগ্রহণ : আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মহিলা মুসল্লীও ইজতেমা ময়দানের আশেপাশে, বিভিন্ন মিল কারখানা, বাসা-বাড়িতে ও বিভিন্ন দালানের ছাদে বসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়। ইজতেমায় মহিলাদের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা না থাকায় যে যেখানে পেরেছেন সেখানে বসেই লাখো মুসল্লির সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নিতে নিয়েছেন। আখেরি মোনাজাতের সময় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও মোবাইলের মাধ্যমে বাড়ি-ঘরে বসে লাখ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা : এবারের বিশ্ব ইজতেমায় নজীরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সাড়ে ৮ হাজারের অধিক পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি দায়িত্বরত ছিল সাদা পোশাকি গোয়েন্দা পুলিশ। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে আকাশে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল, নৌপথে স্পিড বোটে সতর্ক টহল ও নজরদারি। আকাশ ও নৌপথের পাশাপাশি সড়ক পথগুলোতে খালি চোখ ছাড়াও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে বাইনোকুলার দিয়ে মুসল্লিসহ সবার চলার পথ ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে স্থাপিত র‌্যাবের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়েছিল। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন।

ইজতেমা ঘিরে মৌসুমি ব্যবসা

টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বাহারী সব পণ্যের ব্যবসা খুলে বসেছিলেন স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি হকার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ছিল জমজমাট ব্যবসা। টঙ্গীর তুরাগ পাড় ছাড়াও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রাস্তার দুই পাশে তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা পায়ে হেঁটেই ফিরছেন অনেকেই। এসব মুসল্লিদের জন্য রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সেখানে বিক্রি হয় আতর, টুপি-জায়নামাজ, তসবিহ, চাদর, কম্বল ও জ্যাকেটসহ নিত্যপণ্যের সকল দ্রব্যসামগ্রী।

আরো ২ মুসল্লির মৃত্যু :

বিশ্ব ইজতেমায় এসে শনিবার রাতে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এবারের দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে এসে ১০ জন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। টঙ্গী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, বার্ধক্যজনিত কারণে ও দুর্ঘটনায় তারা মারা যান। শনিবার রাতে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার চাঁদপাড়া দুর্গাদাহ গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে মো. শাহ আলম (৬৫) ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার খাদিমপুর গ্রামের মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে ফজলুল হক (৬৮)। এই নিয়ে দুই পর্বের বিশ^ ইজতেমায় ২২ মুসল্লির মৃত্যু হলো।

image

টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত -সংবাদ

আরও খবর
ছাত্রলীগের দুঃসময়ে মান্নান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের অপকৌশল : ফখরুল
ভাড়া পায় অ্যালামনাই-ব্যাংক খেলাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ৪ আসামির জামিন বাতিল
সমৃদ্ধির জন্য শিক্ষিত জনগণ বেশি কার্যকর : কৃষিমন্ত্রী
নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সুলতান মেলায় আন্তর্জাতিক আর্টক্যাম্প শুরু
শরিয়তপুর ফেনী ও নওগাঁ জেলার পরিবেশনা আজ
এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসায় পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
প্রথম আলো সম্পাদকসহ ৬ জনকে গ্রেফতার না করার নির্দেশ
আদালতে ৩৬ লাখ মামলা বিচারাধীন
সব জেলায় চক্ষু সেবা কেন্দ্র হবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ভৈরব নদে কয়লাবোঝাই কার্গোডুবি
সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা শফিকুলের ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০ , ৬ মাঘ ১৪২৬, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনায় শেষ বিশ্ব ইজতেমা

দুই পর্বে ২২ মুসল্লির মৃত্যু

ওয়াজ উদ্দিন, টঙ্গী (গাজীপুর)

image

টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত -সংবাদ

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনায়, গতকাল টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত শুরু হয়ে শেষ হয় ১২টা ৭ মিনিটে। ১৭ মিনিটের আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হয় তাবলীগ জামাত আয়োজিত ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা। বিশ্ব মুসলীম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশে অংশ নেন ভারতের দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজের শূরা সদস্য মাওলানা জামশেদ।

মোনাজাতে জীবনের সব গুণা মাফ, কবরের আজাব, জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি এবং জান্নাত নসিবের জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানানো হয়। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশে খোলা জায়গায় সমবেত মুসল্লিরা ‘আমিন আমিন, ‘ইয়া আল্লাহু’ ‘ইয়া আল্লাহু’ ধ্বনিতে চোখের পানিতে ভাসেন। আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে দুনিয়ার কৃতকর্মের কথা স্মরণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ইজতেমাস্থলে তাবলীগ জামাতের সমবেত দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও আশপাশের জেলার কয়েক লাখ মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে এ আখেরি মোনাজাতে শরিক হন। গত ১০ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। প্রথম পর্বে ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেন। ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছিল প্রথম পর্ব।

এদিকে আখেরি মোনাজাতে যোগ দিতে রোববার ভোর থেকে মানুষ ছুটতে থাকে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের দিকে। ইজতেমা প্যান্ডেলসহ আশপাশের এলাকা মানুষে মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায় মোনাজাত শুরুর আগেই। ছুটে আসা মুসল্লিরা আল্লাহর দরবারে গুণাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করেছেন অজরধারায়। মোনাজাতে মানুষের আল্লাহর দরবারে আহাজারিতে টঙ্গীর পুরো এলাকা রূপ নেয় ধর্মীয় নগরীতে। নিজের গুণা মাফের জন্য দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে। মোনাজাত শুরুর পূর্বে লাখ লাখ মানুষ রাস্তার ওপর, বাড়ির ছাদে, বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে বসে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। দোয়ায় নবী করিম (সা.) এর তরিকা মনের মধ্যে পয়দা করার তৌফিক দান, গুণাগার বান্দাদের দোয়া কবুল, গুণা মাফ করে জানমাল কোরবানি দেয়ার তৌফিক দান, মুসলমানদের জানমাল হেফাজত, মুসমানদের দেশকে হেফাজত, ইমানী জিন্দেগী, ইমান আখলাককে কবুল, ঈমানের দ্বীনের কাজকে মজবুত করে দেয়া, আল্লাহ হাবিবের সুন্নতের পথে চলার তৌফিক দান, নবীর সুন্নতকে নসিব করার, নবীর হাওজে কাউসারের পবিত্র পানি পান করার নসিব এবং আমলনামা ডান হাতে দেয়ার ও দ্বীনের পথে এবং আখিরাতকে কবুল নসিব করার এবং দুনিয়াধারী না হয়ে আখিরাতি বানানোর জন্য লাখো মুসল্লি দু’হাত তুলে দোয়ায় অংশ নেন।

সাদ অনুসারীদের দুই পর্বের ইজতেমার তারিখ ঘোষণা

বিশ্ব ইজতেমার মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের দুই পর্বের ইজতেমার তারিখ ঘোষণার পর মাওলানা সাদ অনুসারীরা আগামী ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার পৃথক সময়ে দুই পর্বের তারিখ ঘোষণা করেছেন। গতকাল ১৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের আগে ইজতেমার বয়ান মঞ্চ থেকে এ তারিখ ঘোষণা করা হয়। মাওলানা সাদ অনুসারীদের ইজতেমা আয়োজক কমিটির শুরার বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ তারিখ ঘোষণা করা হয় বলে জানান ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম। ঘোষাণা অনুযায়ী আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ প্রথম পর্ব এবং ১, ২ ও ৩ জানুয়ারি ২০২১ দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৩ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে সা’দ অনসুসারীদের পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।

গত ১২ জানুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষে মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের ইজতেমার দুই দফার তারিখ ঘোষণা করা হয়। সেই ঘোষণা অনুসারে তাদের ইজতেমার প্রথম ধাপ হবে ৮, ৯ ও ১০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হবে ১৫, ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি।

মহিলাদের অংশগ্রহণ : আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মহিলা মুসল্লীও ইজতেমা ময়দানের আশেপাশে, বিভিন্ন মিল কারখানা, বাসা-বাড়িতে ও বিভিন্ন দালানের ছাদে বসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়। ইজতেমায় মহিলাদের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা না থাকায় যে যেখানে পেরেছেন সেখানে বসেই লাখো মুসল্লির সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নিতে নিয়েছেন। আখেরি মোনাজাতের সময় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও মোবাইলের মাধ্যমে বাড়ি-ঘরে বসে লাখ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা : এবারের বিশ্ব ইজতেমায় নজীরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সাড়ে ৮ হাজারের অধিক পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি দায়িত্বরত ছিল সাদা পোশাকি গোয়েন্দা পুলিশ। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে আকাশে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল, নৌপথে স্পিড বোটে সতর্ক টহল ও নজরদারি। আকাশ ও নৌপথের পাশাপাশি সড়ক পথগুলোতে খালি চোখ ছাড়াও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে বাইনোকুলার দিয়ে মুসল্লিসহ সবার চলার পথ ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে স্থাপিত র‌্যাবের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়েছিল। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন।

ইজতেমা ঘিরে মৌসুমি ব্যবসা

টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বাহারী সব পণ্যের ব্যবসা খুলে বসেছিলেন স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি হকার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ছিল জমজমাট ব্যবসা। টঙ্গীর তুরাগ পাড় ছাড়াও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রাস্তার দুই পাশে তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা পায়ে হেঁটেই ফিরছেন অনেকেই। এসব মুসল্লিদের জন্য রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সেখানে বিক্রি হয় আতর, টুপি-জায়নামাজ, তসবিহ, চাদর, কম্বল ও জ্যাকেটসহ নিত্যপণ্যের সকল দ্রব্যসামগ্রী।

আরো ২ মুসল্লির মৃত্যু :

বিশ্ব ইজতেমায় এসে শনিবার রাতে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এবারের দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে এসে ১০ জন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। টঙ্গী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, বার্ধক্যজনিত কারণে ও দুর্ঘটনায় তারা মারা যান। শনিবার রাতে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার চাঁদপাড়া দুর্গাদাহ গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে মো. শাহ আলম (৬৫) ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার খাদিমপুর গ্রামের মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে ফজলুল হক (৬৮)। এই নিয়ে দুই পর্বের বিশ^ ইজতেমায় ২২ মুসল্লির মৃত্যু হলো।