শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কী হবে?

মো. হামিদুল হক টিপু

রোহিঙ্গা মুসলমানরা মায়ানমারের সেনাবাহিনীর দ্বারা যেভাবে নির্যাতিত এবং অত্যাচারিত হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে যখন মায়ানমারের সৈন্যরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার চালায় তখন তা ছিল অত্যন্ত বিভীষিকাময়। সে সময় প্রায় ৭১ জন রোহিঙ্গা মুসলমান মৃত্যুবরণ করে। মায়ানমার সৈন্যরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর এত অত্যাচার করে যে, বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে যায়। মায়ানমারের সেনারা ব্যাপক গোলাগুলিই শুধু চালায়নি তারা নিরীহ ও নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের ওপর শেল নিক্ষেপ করে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। উপায় না পেয়ে রোহিঙ্গা মুসলমান নারীরা তাদের সম্ভ্রম রক্ষায় এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে। কিন্তু মায়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। তারা নারীদের বিবস্ত্র করে বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে অত্যাচার করে। তারা নারীদের ধরে নিয়ে গণধর্ষন করে।

মায়ানমার সৈন্যরা যখন তাদের নির্যাতন ও অত্যাচার বাড়াতে থাকে তখন তারা কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। তখন ঢাকায় নিযুক্ত মায়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্টদূত অং মিন্টকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয় এবং রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ, সহিংসতা, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান এবং রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের নিন্দা জানানো হয়। রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।

৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলাপি মাবসুদি বাংলাদেশ সফরে এসে এক সংবাদ সম্মেলনে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধের জন্য মায়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দেন।

মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা ও চলমান সেনা অভিযান এবং বাংলাদেশে অপ্রত্যাশিত অত্যাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশের ঘটনায় পুনরায় ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয় এবং প্রতিবাদ জানানো হয়।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় গত ৫ সেপ্টেম্বর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব অথবা বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দিতে মায়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বৌদ্ধ নেতারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বৌদ্ধ ধর্মের মূল বাণীর প্রতি অবজ্ঞা করা বলে আখ্যায়িত করেন। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক এক বিবৃতিতে মায়ানমারে রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তা ও সুরক্ষার আহ্বান জানান। কিন্তু তারপরেও কোন ফল না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানকার রোহিঙ্গাদের জন্য ‘সেবাজোন’ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ তৎপরতার তীব্র নিন্দা জানান ৭ সেপ্টেম্বর। সেই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মেডিকেল টিম গঠন এবং শিশুদের ভ্যাকসিন ও অতিরিক্ত ডাক্তার নিয়োগের কথা বলেন।

রাখাইন রাজ্যে সহিংসাত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দ্রুত মানবিক সহায়তাদানের জন্য আহ্বান জানান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এদেশের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দও অনুরূপ আহ্বান জানান জাতিসংঘের প্রতি। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ওআইসি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বিশ্ববাসীর কাছে সহায়তা চান।

২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশর পাশে চীন ও ভারত থাকবে বলে প্রতিশ্রতি দেন। তারা এশিয়ার দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলেও জানান। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দালাইলামা গত ১১ সেপ্টেম্বর সুচিকে চিঠি দেন। ওই একই দিনে মায়ানমারের প্রতি সেনা অভিযান বন্ধের আহবান জানায় জাতিসংঘ। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সভায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস সেনা অভিযানের তীব্র নিন্দা জানান হয়। রাখাইন রাজ্যে পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ নিয়ে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানায় সুইডেন ও যুক্তরাজ্য। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের নিন্দা জানানোর পরদিনই রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে আমাদের দেশে আসেন বিশ্ব সংস্থার শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার ইউএনএইচসিআরের সহকারী কমিশনার জজ ওকথ ওবো।

এরই মধ্যে ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য ৫ হাজার একর জমি বরাদ্দ করেন এবং ১২ সেপ্টেম্বর তিনি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যান। তিনি মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, তবে অন্যায় অত্যাচার সহ্য করব না। রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে থাকব। তিনি বলেন এক দেশের নাগরিক অন্য দেশে আশ্রয় গ্রহন সে দেশের জন্য অপমানজনক।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের নিন্দা জানানোর পরদিনই রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখার জন্য বাংলাদেশে আসেন বিশ্ব সংস্থার শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার ইউএনএইচসিআরের সহকারী কমিশনার জর্জ ওকথ ওবো।

এছাড়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নাক-মুখ চোখ বেঁধে কালো পোশাকধারী মানুষ রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে গুলি চালায় এবং তাদের জবাই করে হত্যা করা হয়। কত নৃশংস আর পাশবিক এই হত্যাযজ্ঞ তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সামরিক বাহিনীর অত্যাচার এখানেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা হত্যার পর বাড়ীঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এ হত্যাযজ্ঞকে সে দেশের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা এবং পরাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচিকে দায়ী করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বর্বর হত্যাকা- ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগে ডি-কাস্টো সরকারের শীর্ষ নেতা সুচিকে ‘নিষ্ঠুর নারী’ বলে অখ্যায়িত করেছেন। খোমেনি বলেছিলেন গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমার সরকারেকে বাধ্য করার জন্য মুসলিম দেশগুলোর উচিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা এবং মায়ানমার সংকট অবসানের জন্য মুসলিম দেশগুলোকে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই নৃশংস হত্যাকা- বন্ধ এবং রোহিঙ্গা সংকটে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন ১৯১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নোবেল বিজয়ী এবং পৃথিবীর আরও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে ছিলেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বেটি উইলিযান্স, মেইরিড মাগুইং, আর্চটিশপ ডেসমন্ড টুটু, অসকার আরিয়াস সানচেজ, জোডি উইলিয়ান্স, শিরিন এবাদি, লেইমা বোয়ি, তাওয়াক্কল কারমান, মালালা ইউসুফ জাই, স্যার রিচার্ড জে রবার্ঁস, এলিজাবেথ ব্ল্যাক বান। আর বিশ্ব ব্যক্তিত্বরা হলেন, মালয়েশিয়ার সাবেক পরারাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদ হামিদ আলবার, ইতালির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বোনিনো, ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্রো হারলেম ব্রানউটল্যান্ড, উদ্দ্যোক্তা ও সমাজসেবা মো. ইব্রাহিম, মানবাধিকার কর্মী কেরি কেনেডি, লিবিয় নারী অধিবার প্রবক্তা এমডিজি সমর্থক আল মুরারিত, ব্যাবসীয় নেতা নারায়ন মুর্তি, থাইল্যান্ডের সাবেক পরারাষ্ট্রমন্ত্রী কাসিত পিরামিয়া, আসিয়ানের সাবেক মহাসচিব সুরিন পিটসুয়ান, ব্যবসায়ী নেতা ও এসডিজি সমর্থক পাল পোলম্যান, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যারি রবিনসন, জাতিসংঘ সাসটেইনেবল ডেপেলপমেন্ট সলিউশন্স নেটওয়ার্ক পরিচালক জেফার ডি সান, অভিনেতা ফরেস্ট ডুইটেকার, ব্যবসায়ী নেতা ও সামজকর্মী জোফেন জাইটাজ, অভিনেত্রী শাবানা আজমি, কবি ও গীতিকার জাবেদ আখতার এবং পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আসমা জাহাঙ্গীর।

ইউনিফের শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান জ্য লিবিকে রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রামের ঘরবাড়ীতে আগুনের দৃশ্য কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত থেকে প্রত্যক্ষ করেন বাংলাদেশে কর্মরত ৪০ দেশের কূটনীতিক। জ্যেষ্ঠ মার্কিন ৩ জন সিনেটর মায়ানমারে মার্কিন সামরিক সহযোগিতা বন্ধের প্রস্তাব দেন। আল-কায়দাও মায়ানমারকে উপযুক্ত জবাব দেয়ার হুশিয়ারি দেয় গত ১৩ সেপ্টেম্বর। মায়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বোরচিত হামলায় ১৭৬টি গ্রাম হয়ে পড়ে জনমানব শূন্য।

ভারতের তৎকালীন বাংলাদেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শ্রিংলা জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ৭২তম নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদে ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র ঐকমত্যে পৌঁছে। জাতিসংঘের সদর দফতরের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে যে, জাতিসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন নিরাপত্তা পরিষদ মায়ানমারের নিপীড়িত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যা নিয়ে মুখ খুলতে ব্যর্থ হয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রডো ফোনে সুচিকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা ও অন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর চলমান গণহত্যায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মায়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপের হুমকি দেয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর।

টুইটারে পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার বিষয়ে জতিসংঘের অবদানের প্রতি সমর্থন জানান। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এবং ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব মায়ানমার সেনাবহিনীর অভিযান বন্ধ করে রোহিঙ্গা সংকট অবসানের শেষ সুযোগ প্রদান করেন এবং বলেন সুচি সাড়া দিতে ব্যর্থ হলে ভয়ংকর বিপর্যয় ডেকে আনবে।

এক সময় অং সান সুচিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল। সেগুলো ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার, স্থগিত এবং বাতিলের দাবি উঠে। তারা সূচিকে যে সম্মানজনক উপাধি দেয় তা প্রত্যাহার করে নেয়।

মোট কথা, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দাবিকে উপক্ষো করে মায়ানমার সরকার এক তরফাভাবে নিজের গুণকীর্ত্তন নিজেই করে চলেছেন। আজ প্রায় দু’বছরের অধিক সময় পাড় হয়ে গেল কিন্তু কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো না। উপায় না পেয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা শেষ পর্যন্ত আদালতে গিয়ে উঠেছে। সবকিছু শেষও হয়ে গেছে। অথচ আজ পর্যন্ত সুরাহা হয়নি। বিশ্বের মধ্যে সবচাইতে আলোচনার বিষয় এখন মায়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন।

পুরো বিশ্ব এখন একটিই মাত্র আলোচ্য বিষয়, আর তা হচ্ছে মায়ানমারে সামিরক নির্যাতন। বিশ্ববাসীর শুধুমাত্র বিবৃতি প্রদানই নয় বরং তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে কি অকথ্য অত্যাচার আর নির্যাতন হয়েছে তা প্রত্যক্ষও করেছেন।

এখন রোহিঙ্গা মুসলমানরা আমাদের দেশে শরণার্থী। বিশ্ববাসীর সহযোগিতায় তারা আমাদের দেশে থাকার সহায়তা পেয়েছেন কিন্তু তাই বলে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। আমরা এখন তাদের নিয়ে চিন্তিত।

[লেখক : সাংবাদিক

সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০ , ৬ মাঘ ১৪২৬, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কী হবে?

মো. হামিদুল হক টিপু

image

রোহিঙ্গা মুসলমানরা মায়ানমারের সেনাবাহিনীর দ্বারা যেভাবে নির্যাতিত এবং অত্যাচারিত হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে যখন মায়ানমারের সৈন্যরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার চালায় তখন তা ছিল অত্যন্ত বিভীষিকাময়। সে সময় প্রায় ৭১ জন রোহিঙ্গা মুসলমান মৃত্যুবরণ করে। মায়ানমার সৈন্যরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর এত অত্যাচার করে যে, বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে যায়। মায়ানমারের সেনারা ব্যাপক গোলাগুলিই শুধু চালায়নি তারা নিরীহ ও নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের ওপর শেল নিক্ষেপ করে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। উপায় না পেয়ে রোহিঙ্গা মুসলমান নারীরা তাদের সম্ভ্রম রক্ষায় এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে। কিন্তু মায়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। তারা নারীদের বিবস্ত্র করে বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে অত্যাচার করে। তারা নারীদের ধরে নিয়ে গণধর্ষন করে।

মায়ানমার সৈন্যরা যখন তাদের নির্যাতন ও অত্যাচার বাড়াতে থাকে তখন তারা কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। তখন ঢাকায় নিযুক্ত মায়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্টদূত অং মিন্টকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয় এবং রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ, সহিংসতা, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান এবং রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের নিন্দা জানানো হয়। রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।

৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলাপি মাবসুদি বাংলাদেশ সফরে এসে এক সংবাদ সম্মেলনে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধের জন্য মায়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দেন।

মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা ও চলমান সেনা অভিযান এবং বাংলাদেশে অপ্রত্যাশিত অত্যাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশের ঘটনায় পুনরায় ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয় এবং প্রতিবাদ জানানো হয়।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় গত ৫ সেপ্টেম্বর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব অথবা বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দিতে মায়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বৌদ্ধ নেতারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বৌদ্ধ ধর্মের মূল বাণীর প্রতি অবজ্ঞা করা বলে আখ্যায়িত করেন। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক এক বিবৃতিতে মায়ানমারে রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তা ও সুরক্ষার আহ্বান জানান। কিন্তু তারপরেও কোন ফল না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানকার রোহিঙ্গাদের জন্য ‘সেবাজোন’ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ তৎপরতার তীব্র নিন্দা জানান ৭ সেপ্টেম্বর। সেই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মেডিকেল টিম গঠন এবং শিশুদের ভ্যাকসিন ও অতিরিক্ত ডাক্তার নিয়োগের কথা বলেন।

রাখাইন রাজ্যে সহিংসাত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দ্রুত মানবিক সহায়তাদানের জন্য আহ্বান জানান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এদেশের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দও অনুরূপ আহ্বান জানান জাতিসংঘের প্রতি। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ওআইসি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বিশ্ববাসীর কাছে সহায়তা চান।

২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশর পাশে চীন ও ভারত থাকবে বলে প্রতিশ্রতি দেন। তারা এশিয়ার দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলেও জানান। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দালাইলামা গত ১১ সেপ্টেম্বর সুচিকে চিঠি দেন। ওই একই দিনে মায়ানমারের প্রতি সেনা অভিযান বন্ধের আহবান জানায় জাতিসংঘ। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সভায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস সেনা অভিযানের তীব্র নিন্দা জানান হয়। রাখাইন রাজ্যে পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ নিয়ে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানায় সুইডেন ও যুক্তরাজ্য। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের নিন্দা জানানোর পরদিনই রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে আমাদের দেশে আসেন বিশ্ব সংস্থার শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার ইউএনএইচসিআরের সহকারী কমিশনার জজ ওকথ ওবো।

এরই মধ্যে ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য ৫ হাজার একর জমি বরাদ্দ করেন এবং ১২ সেপ্টেম্বর তিনি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যান। তিনি মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, তবে অন্যায় অত্যাচার সহ্য করব না। রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে থাকব। তিনি বলেন এক দেশের নাগরিক অন্য দেশে আশ্রয় গ্রহন সে দেশের জন্য অপমানজনক।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের নিন্দা জানানোর পরদিনই রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখার জন্য বাংলাদেশে আসেন বিশ্ব সংস্থার শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার ইউএনএইচসিআরের সহকারী কমিশনার জর্জ ওকথ ওবো।

এছাড়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নাক-মুখ চোখ বেঁধে কালো পোশাকধারী মানুষ রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে গুলি চালায় এবং তাদের জবাই করে হত্যা করা হয়। কত নৃশংস আর পাশবিক এই হত্যাযজ্ঞ তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সামরিক বাহিনীর অত্যাচার এখানেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা হত্যার পর বাড়ীঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এ হত্যাযজ্ঞকে সে দেশের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা এবং পরাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচিকে দায়ী করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বর্বর হত্যাকা- ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগে ডি-কাস্টো সরকারের শীর্ষ নেতা সুচিকে ‘নিষ্ঠুর নারী’ বলে অখ্যায়িত করেছেন। খোমেনি বলেছিলেন গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমার সরকারেকে বাধ্য করার জন্য মুসলিম দেশগুলোর উচিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা এবং মায়ানমার সংকট অবসানের জন্য মুসলিম দেশগুলোকে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই নৃশংস হত্যাকা- বন্ধ এবং রোহিঙ্গা সংকটে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন ১৯১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নোবেল বিজয়ী এবং পৃথিবীর আরও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে ছিলেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বেটি উইলিযান্স, মেইরিড মাগুইং, আর্চটিশপ ডেসমন্ড টুটু, অসকার আরিয়াস সানচেজ, জোডি উইলিয়ান্স, শিরিন এবাদি, লেইমা বোয়ি, তাওয়াক্কল কারমান, মালালা ইউসুফ জাই, স্যার রিচার্ড জে রবার্ঁস, এলিজাবেথ ব্ল্যাক বান। আর বিশ্ব ব্যক্তিত্বরা হলেন, মালয়েশিয়ার সাবেক পরারাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদ হামিদ আলবার, ইতালির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বোনিনো, ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্রো হারলেম ব্রানউটল্যান্ড, উদ্দ্যোক্তা ও সমাজসেবা মো. ইব্রাহিম, মানবাধিকার কর্মী কেরি কেনেডি, লিবিয় নারী অধিবার প্রবক্তা এমডিজি সমর্থক আল মুরারিত, ব্যাবসীয় নেতা নারায়ন মুর্তি, থাইল্যান্ডের সাবেক পরারাষ্ট্রমন্ত্রী কাসিত পিরামিয়া, আসিয়ানের সাবেক মহাসচিব সুরিন পিটসুয়ান, ব্যবসায়ী নেতা ও এসডিজি সমর্থক পাল পোলম্যান, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যারি রবিনসন, জাতিসংঘ সাসটেইনেবল ডেপেলপমেন্ট সলিউশন্স নেটওয়ার্ক পরিচালক জেফার ডি সান, অভিনেতা ফরেস্ট ডুইটেকার, ব্যবসায়ী নেতা ও সামজকর্মী জোফেন জাইটাজ, অভিনেত্রী শাবানা আজমি, কবি ও গীতিকার জাবেদ আখতার এবং পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আসমা জাহাঙ্গীর।

ইউনিফের শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান জ্য লিবিকে রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রামের ঘরবাড়ীতে আগুনের দৃশ্য কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত থেকে প্রত্যক্ষ করেন বাংলাদেশে কর্মরত ৪০ দেশের কূটনীতিক। জ্যেষ্ঠ মার্কিন ৩ জন সিনেটর মায়ানমারে মার্কিন সামরিক সহযোগিতা বন্ধের প্রস্তাব দেন। আল-কায়দাও মায়ানমারকে উপযুক্ত জবাব দেয়ার হুশিয়ারি দেয় গত ১৩ সেপ্টেম্বর। মায়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বোরচিত হামলায় ১৭৬টি গ্রাম হয়ে পড়ে জনমানব শূন্য।

ভারতের তৎকালীন বাংলাদেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শ্রিংলা জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ৭২তম নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদে ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র ঐকমত্যে পৌঁছে। জাতিসংঘের সদর দফতরের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে যে, জাতিসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন নিরাপত্তা পরিষদ মায়ানমারের নিপীড়িত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যা নিয়ে মুখ খুলতে ব্যর্থ হয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রডো ফোনে সুচিকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা ও অন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর চলমান গণহত্যায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মায়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপের হুমকি দেয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর।

টুইটারে পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার বিষয়ে জতিসংঘের অবদানের প্রতি সমর্থন জানান। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এবং ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব মায়ানমার সেনাবহিনীর অভিযান বন্ধ করে রোহিঙ্গা সংকট অবসানের শেষ সুযোগ প্রদান করেন এবং বলেন সুচি সাড়া দিতে ব্যর্থ হলে ভয়ংকর বিপর্যয় ডেকে আনবে।

এক সময় অং সান সুচিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল। সেগুলো ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার, স্থগিত এবং বাতিলের দাবি উঠে। তারা সূচিকে যে সম্মানজনক উপাধি দেয় তা প্রত্যাহার করে নেয়।

মোট কথা, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দাবিকে উপক্ষো করে মায়ানমার সরকার এক তরফাভাবে নিজের গুণকীর্ত্তন নিজেই করে চলেছেন। আজ প্রায় দু’বছরের অধিক সময় পাড় হয়ে গেল কিন্তু কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো না। উপায় না পেয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা শেষ পর্যন্ত আদালতে গিয়ে উঠেছে। সবকিছু শেষও হয়ে গেছে। অথচ আজ পর্যন্ত সুরাহা হয়নি। বিশ্বের মধ্যে সবচাইতে আলোচনার বিষয় এখন মায়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন।

পুরো বিশ্ব এখন একটিই মাত্র আলোচ্য বিষয়, আর তা হচ্ছে মায়ানমারে সামিরক নির্যাতন। বিশ্ববাসীর শুধুমাত্র বিবৃতি প্রদানই নয় বরং তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে কি অকথ্য অত্যাচার আর নির্যাতন হয়েছে তা প্রত্যক্ষও করেছেন।

এখন রোহিঙ্গা মুসলমানরা আমাদের দেশে শরণার্থী। বিশ্ববাসীর সহযোগিতায় তারা আমাদের দেশে থাকার সহায়তা পেয়েছেন কিন্তু তাই বলে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। আমরা এখন তাদের নিয়ে চিন্তিত।

[লেখক : সাংবাদিক