বরগুনার বামনা উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে গত বছর ২০ নভেম্বর থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করে সারাদেশের ন্যায় বামনা উপজেলা খাদ্য অধিদফতর। শুরুতে সঠিকভাবে ধান ক্রয় হলেও বর্তমানে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকরা পড়েছেন নানা ভোগান্তিতে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান পহলান বামনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ধান বিক্রিতে কৃষকের চরম ভোগান্তির বিষয় অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আমি লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ডৌয়াতলা ইউনিয়নের কৃষি কার্ডধারী একজন কৃষক। গত বৃহস্পতিবার সকালে ৪৮ মণ ধান নিয়ে বামনা খাদ্য গুদামে বিক্রির জন্য আসি। এ সময় বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন থেকে আরো ৫ জন কৃষক ১ শত ৩২ মণ ধান বিক্রি করার জন্য খাদ্য গুদামে নিয়ে আসে। সেখানে উপস্থিত থাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার প্রতিনিধি সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাজেন্দ্র নাথ শীল অজ্ঞাত কারনে খাদ্য গুদামে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা ধান পরীক্ষা না করেই কৃষকদের বলেন, এই ধান আমন নয়, এমন কথা বলে কৃষকদের ধান নিয়ে বাড়িতে ফিরে যেতে বলেন। ওই কর্মকর্তার বক্তব্য শুনে বুকাবুনিয়া থেকে আসা কৃষকরা কোন প্রতিবাদ না করেই ধান নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
মো. শাহজাহান পহলান বলেন, আমি কর্মকর্তার বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানাই এবং ধান নিয়ে খাদ্য গুদামে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। এক পর্যায় গুদাম কর্মকর্তা জানান, ধান ক্রয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, প্রতি সপ্তাহের রবিবার-বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন, সোমবার-বামনা সদর ইউনিয়ন, মঙ্গলবার-রামনা ইউনিয়ন এবং বুধবার-ডৌয়াতলা ইউনিয়নের কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার তাই বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ধান ক্রয় করা যাবে না।
অপরদিকে ধান সংগ্রহের ৩ মাস ৮ দিনে বামনা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪৭ মে.টন। সে হিসেবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৯০ মে.টন ধান সংগ্রহের টার্গেট থাকলেও ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮৮ মে.টন।
এ বিষয় সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাজেন্দ্রনাথ শীল জানান, কৃষি কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে আমি গুদামে যাই। দুটি গাড়ির ধানে চিটার পরিমাণ বেশি ছিল। এছাড়াও ধান আমাদের এলাকার নয় এটি মনে হওয়ার কারণে আমি ধান ক্রয় না করতে গুদাম কর্মকর্তাকে অবহিত করি।
বামনা খাদ্য গুদামের শ্রমিক আ.সালাম বলেন, কৃষি কর্মকর্তার প্রতিনিধি রাজেন্দ্রনাথ শীল কোন ধানের বস্তা না দেখেই গেটে বসেই বলেন, এই ধান বামনার নয়। এটি ক্রয় করা হবে না। ফলে কৃষকের ধান বিক্রয় করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মহিমা আক্তার বলেন, কৃষকরা আজ যে ধান গুদামে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছে তা মানসম্মত। এই ধান ক্রয়যোগ্য। তবে কর্মকর্তারা না থাকার কারণে আজ ধান ক্রয় সম্ভব হয়নি।
সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাজেন্দ্রনাথ শীল ধান ক্রয় করতে বাধা দেয়ার বিষয়টি সাংবাদিকরা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ওমর ফারুকে অবহিত করলে তিনি বামনা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে ওই কৃষকের ধান মানসম্মত হলে ক্রয়ের নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ধান ক্রয় না করে ওই কৃষকের ধান গুদামে মজুদ রেখে কৃষককে আগামী রবিবার আসতে বলেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. এনামুল ইসলাম বলেন, আমি বর্তমানে খুলনাতে অবস্থান করছি। ওই কৃষকের ধান গুদাম কর্মকর্তার দায়িত্বে মজুদ রাখতে বলেছি। রবিবার এসে এ বিষয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা সুলতানা বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে অবহিত করেনি। আমি পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকি কৃষকদের নিয়ে আসা ধান মানসম্মত হলে ও নির্বাচিত কৃষক হলে গুদাম কর্মকর্তা কিনতে বাধ্য। তবে কেন কৃষকের ধান সারাদিনেও গুদাম কর্মকর্তা কিনল না এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ , ৭ মাঘ ১৪২৬, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
প্রতিনিধি, বামনা (বরগুনা)
বরগুনার বামনা উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে গত বছর ২০ নভেম্বর থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করে সারাদেশের ন্যায় বামনা উপজেলা খাদ্য অধিদফতর। শুরুতে সঠিকভাবে ধান ক্রয় হলেও বর্তমানে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকরা পড়েছেন নানা ভোগান্তিতে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান পহলান বামনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ধান বিক্রিতে কৃষকের চরম ভোগান্তির বিষয় অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আমি লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ডৌয়াতলা ইউনিয়নের কৃষি কার্ডধারী একজন কৃষক। গত বৃহস্পতিবার সকালে ৪৮ মণ ধান নিয়ে বামনা খাদ্য গুদামে বিক্রির জন্য আসি। এ সময় বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন থেকে আরো ৫ জন কৃষক ১ শত ৩২ মণ ধান বিক্রি করার জন্য খাদ্য গুদামে নিয়ে আসে। সেখানে উপস্থিত থাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার প্রতিনিধি সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাজেন্দ্র নাথ শীল অজ্ঞাত কারনে খাদ্য গুদামে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা ধান পরীক্ষা না করেই কৃষকদের বলেন, এই ধান আমন নয়, এমন কথা বলে কৃষকদের ধান নিয়ে বাড়িতে ফিরে যেতে বলেন। ওই কর্মকর্তার বক্তব্য শুনে বুকাবুনিয়া থেকে আসা কৃষকরা কোন প্রতিবাদ না করেই ধান নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
মো. শাহজাহান পহলান বলেন, আমি কর্মকর্তার বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানাই এবং ধান নিয়ে খাদ্য গুদামে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। এক পর্যায় গুদাম কর্মকর্তা জানান, ধান ক্রয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, প্রতি সপ্তাহের রবিবার-বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন, সোমবার-বামনা সদর ইউনিয়ন, মঙ্গলবার-রামনা ইউনিয়ন এবং বুধবার-ডৌয়াতলা ইউনিয়নের কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার তাই বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ধান ক্রয় করা যাবে না।
অপরদিকে ধান সংগ্রহের ৩ মাস ৮ দিনে বামনা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪৭ মে.টন। সে হিসেবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৯০ মে.টন ধান সংগ্রহের টার্গেট থাকলেও ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮৮ মে.টন।
এ বিষয় সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাজেন্দ্রনাথ শীল জানান, কৃষি কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে আমি গুদামে যাই। দুটি গাড়ির ধানে চিটার পরিমাণ বেশি ছিল। এছাড়াও ধান আমাদের এলাকার নয় এটি মনে হওয়ার কারণে আমি ধান ক্রয় না করতে গুদাম কর্মকর্তাকে অবহিত করি।
বামনা খাদ্য গুদামের শ্রমিক আ.সালাম বলেন, কৃষি কর্মকর্তার প্রতিনিধি রাজেন্দ্রনাথ শীল কোন ধানের বস্তা না দেখেই গেটে বসেই বলেন, এই ধান বামনার নয়। এটি ক্রয় করা হবে না। ফলে কৃষকের ধান বিক্রয় করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মহিমা আক্তার বলেন, কৃষকরা আজ যে ধান গুদামে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছে তা মানসম্মত। এই ধান ক্রয়যোগ্য। তবে কর্মকর্তারা না থাকার কারণে আজ ধান ক্রয় সম্ভব হয়নি।
সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাজেন্দ্রনাথ শীল ধান ক্রয় করতে বাধা দেয়ার বিষয়টি সাংবাদিকরা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ওমর ফারুকে অবহিত করলে তিনি বামনা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে ওই কৃষকের ধান মানসম্মত হলে ক্রয়ের নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ধান ক্রয় না করে ওই কৃষকের ধান গুদামে মজুদ রেখে কৃষককে আগামী রবিবার আসতে বলেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. এনামুল ইসলাম বলেন, আমি বর্তমানে খুলনাতে অবস্থান করছি। ওই কৃষকের ধান গুদাম কর্মকর্তার দায়িত্বে মজুদ রাখতে বলেছি। রবিবার এসে এ বিষয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা সুলতানা বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে অবহিত করেনি। আমি পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকি কৃষকদের নিয়ে আসা ধান মানসম্মত হলে ও নির্বাচিত কৃষক হলে গুদাম কর্মকর্তা কিনতে বাধ্য। তবে কেন কৃষকের ধান সারাদিনেও গুদাম কর্মকর্তা কিনল না এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।