চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের চেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ মামলার রায় দিয়েছেন একটি আদালত। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দীর্ঘ ৩২ বছর পর অবশেষে এই গণহত্যা মামলার রায়ে তৎকালীন ৫ পুলিশ সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ এবং স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক ইসমাইল হোসেন এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- কোতোয়ালি থানার তৎকালীন পেট্রল ইন্সপেক্টর গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল (মামলার বিচার শুরুর পর থেকেই পলাতক), সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, মো. আবদুলাহ এবং মমতাজ উদ্দিন। দণ্ডবিধির ৩০২-৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায় প্রত্যেকের আরও দশ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৩২ বছর আগে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদিঘী ময়দানে সমাবেশে যাবার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। নিহতরা হলেন- হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম. স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডিকে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আবদুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আবদুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো. শাহাদাত। আহত হন কমপক্ষে দু’শতাধিক মানুষ। ঘটনাটি ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৮৮ সালে জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও এ সংক্রান্ত মামলাটি হয়েছে ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ স্বৈরাচার পতনের পর। ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে অ্যাডভোকেট শহীদুল হুদা বাদী হয়ে আদালতে মামলাটি দায়ের করলেও রায় দেখার আগেই তিনি মারা যান। এতে পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৪৭ জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। আসামিরা সরকারি কর্মচারী এবং মামলা চালাতে সরকারি অনুমতি না থাকায় আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে বাদী পক্ষ উচ্চ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করলে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বহুল আলোচিত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের নির্দেশে সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন পেট্রল ইন্সপেক্টর (পিআই) জেসি মণ্ডল, পুলিশ কনস্টেবল আবদুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, মো. আবদুল্লাহ এবং মমতাজ উদ্দিন। আসামিদের মধ্যে রকিবুল হুদা, বশির উদ্দিন ও আবদুস সালাম মারা গেছেন। জেসি মণ্ডল পলাতক আর বাকি চারজন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। আদালতে দুই দফায় আলোচিত এ মামলার চার্জ গঠন (দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত আকারে) করা হয়। প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ৫ আগস্ট এবং দ্বিতীয় দফায় ২০০০ সালের ৯ মে ৮ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/৩২৬/৩০৭/১১৪/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলার মোট সাক্ষী ১৬৭ জন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ নেতা গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য ড. অনুপম সেন, হেলাল উদ্দিন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী মামলায় সাক্ষ্য দেন। এদিকে আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। গতকাল বিকেল ৩টায় রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা লালদীঘির ময়দানে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেদিন অনুমতি দেয়া হয়নি। তারপরও অমরা সমাবেশ করেতে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। নেত্রীকে নিয়ে সমাবেশ স্থলে অগ্রসর হলে আমাদের গাড়িবহরে হামলা হয়।
অল্পের জন্য নেত্রী রক্ষা পান। এই সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। আমার পায়ে গুলি লাগে। আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি। তিনি বলেন, আজ মামলার রায় হয়েছে। রায়ে আমি সন্তুষ্ট। এখন একটাই দাবি রায়টি যাতে দ্রুত কার্যকর করা হয়। এদিকে সেদিন মিছিলে ছিলেন বর্তমান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম। গতকাল বিকেলে রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, এক সময় রায় নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ সরকারের মামলার রায় হয়েছে। ওইদিন আমরাও ওই মিছিলে ছিলাম। হয়তো আমিও সেদিন মারা যেতে পারতাম। ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের পরিবার আজ খুশি হবে। অবিলম্বে রায় কার্যকরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা যেন আর না ঘটে এটি একটি সতর্কবার্তা।
মামলার বাদী অ্যাডভোকেট শহীদুল হুদার ছেলে জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের এপিপি অ্যাডভোকেট এরশাদ হোসেন বলেন, চাঞ্চল্যকর এ গণহত্যা মামালাটি দায়ের করতে তৎকালীন সাহস করে কেউ এগিয়ে আসেননি। ক্ষতিগ্রস্তদের কথা বিবেচনা করে আমার বাবা মামলাটি দায়ের করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে তিনি মামলার রায় দেখার আগেই মৃত্যুবরণ করেন।
মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী তৎকালীর মহানগর ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মো. ফরিদুল আলম খান চট্টগ্রাম আদালত ভবনে মামলার রায় শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে মিছিলে গুলি চালিয়ে এই ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। আমাদের পা ভেঙে দেয়া হয়। এমনটি নন্দনকানন র্যান্ড হোটেল ভাঙচুর মামলার আসামি দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়।
জানা গেছে, এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হত্যাকাণ্ডের সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করা হয়। এতে রকিবুল হুদাকে ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই গণহত্যায় নিহতরা ছিলেন দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ। ঘটনার পর শোকে কাতর ওইসব পরিবারকে চাকরিসহ অনেক আশার বাণী শুনালেও পরে এদের খবর কেউ রাখেনি। তবে ওই ঘটনার বিচার কার্যক্রম শেষ হওয়ায় নিহতের পরিবাররা ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ , ৭ মাঘ ১৪২৬, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের চেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ মামলার রায় দিয়েছেন একটি আদালত। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দীর্ঘ ৩২ বছর পর অবশেষে এই গণহত্যা মামলার রায়ে তৎকালীন ৫ পুলিশ সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ এবং স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক ইসমাইল হোসেন এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- কোতোয়ালি থানার তৎকালীন পেট্রল ইন্সপেক্টর গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল (মামলার বিচার শুরুর পর থেকেই পলাতক), সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, মো. আবদুলাহ এবং মমতাজ উদ্দিন। দণ্ডবিধির ৩০২-৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায় প্রত্যেকের আরও দশ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৩২ বছর আগে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদিঘী ময়দানে সমাবেশে যাবার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। নিহতরা হলেন- হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম. স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডিকে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আবদুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আবদুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো. শাহাদাত। আহত হন কমপক্ষে দু’শতাধিক মানুষ। ঘটনাটি ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৮৮ সালে জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও এ সংক্রান্ত মামলাটি হয়েছে ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ স্বৈরাচার পতনের পর। ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে অ্যাডভোকেট শহীদুল হুদা বাদী হয়ে আদালতে মামলাটি দায়ের করলেও রায় দেখার আগেই তিনি মারা যান। এতে পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৪৭ জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। আসামিরা সরকারি কর্মচারী এবং মামলা চালাতে সরকারি অনুমতি না থাকায় আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে বাদী পক্ষ উচ্চ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করলে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বহুল আলোচিত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের নির্দেশে সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন পেট্রল ইন্সপেক্টর (পিআই) জেসি মণ্ডল, পুলিশ কনস্টেবল আবদুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, মো. আবদুল্লাহ এবং মমতাজ উদ্দিন। আসামিদের মধ্যে রকিবুল হুদা, বশির উদ্দিন ও আবদুস সালাম মারা গেছেন। জেসি মণ্ডল পলাতক আর বাকি চারজন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। আদালতে দুই দফায় আলোচিত এ মামলার চার্জ গঠন (দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত আকারে) করা হয়। প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ৫ আগস্ট এবং দ্বিতীয় দফায় ২০০০ সালের ৯ মে ৮ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/৩২৬/৩০৭/১১৪/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলার মোট সাক্ষী ১৬৭ জন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ নেতা গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য ড. অনুপম সেন, হেলাল উদ্দিন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী মামলায় সাক্ষ্য দেন। এদিকে আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। গতকাল বিকেল ৩টায় রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা লালদীঘির ময়দানে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেদিন অনুমতি দেয়া হয়নি। তারপরও অমরা সমাবেশ করেতে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। নেত্রীকে নিয়ে সমাবেশ স্থলে অগ্রসর হলে আমাদের গাড়িবহরে হামলা হয়।
অল্পের জন্য নেত্রী রক্ষা পান। এই সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। আমার পায়ে গুলি লাগে। আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি। তিনি বলেন, আজ মামলার রায় হয়েছে। রায়ে আমি সন্তুষ্ট। এখন একটাই দাবি রায়টি যাতে দ্রুত কার্যকর করা হয়। এদিকে সেদিন মিছিলে ছিলেন বর্তমান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম। গতকাল বিকেলে রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, এক সময় রায় নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ সরকারের মামলার রায় হয়েছে। ওইদিন আমরাও ওই মিছিলে ছিলাম। হয়তো আমিও সেদিন মারা যেতে পারতাম। ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের পরিবার আজ খুশি হবে। অবিলম্বে রায় কার্যকরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা যেন আর না ঘটে এটি একটি সতর্কবার্তা।
মামলার বাদী অ্যাডভোকেট শহীদুল হুদার ছেলে জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের এপিপি অ্যাডভোকেট এরশাদ হোসেন বলেন, চাঞ্চল্যকর এ গণহত্যা মামালাটি দায়ের করতে তৎকালীন সাহস করে কেউ এগিয়ে আসেননি। ক্ষতিগ্রস্তদের কথা বিবেচনা করে আমার বাবা মামলাটি দায়ের করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে তিনি মামলার রায় দেখার আগেই মৃত্যুবরণ করেন।
মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী তৎকালীর মহানগর ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মো. ফরিদুল আলম খান চট্টগ্রাম আদালত ভবনে মামলার রায় শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে মিছিলে গুলি চালিয়ে এই ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। আমাদের পা ভেঙে দেয়া হয়। এমনটি নন্দনকানন র্যান্ড হোটেল ভাঙচুর মামলার আসামি দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়।
জানা গেছে, এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হত্যাকাণ্ডের সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করা হয়। এতে রকিবুল হুদাকে ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই গণহত্যায় নিহতরা ছিলেন দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ। ঘটনার পর শোকে কাতর ওইসব পরিবারকে চাকরিসহ অনেক আশার বাণী শুনালেও পরে এদের খবর কেউ রাখেনি। তবে ওই ঘটনার বিচার কার্যক্রম শেষ হওয়ায় নিহতের পরিবাররা ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।