বার্লিন শান্তি সম্মেলন

অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত বিশ্বনেতারা

গত নয় মাস ধরে চলা লিবিয়ার রাজনৈতিক সংকট সমাধানে স্বল্পকালীন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছেন বিশ্বনেতারা। একইসঙ্গে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব অনুসারে দেশটিতে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞায়ও একমত হয়েছেন তারা। জার্মানির রাজধানী বার্লিনে এক দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বিশেষ শান্তি সম্মেলনে বিশ্বনেতারা এ সমঝোতায় পৌঁছান। তবে লিবিয়ার বিবদমান দুই পক্ষ এখনও ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বলে শেষ পর্যন্ত পাওয়া প্রতিবেদনে জানা গেছে। আল-জাজিরা, বিবিসি।

গত রোববার বার্লিনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের পর সব পক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত ঘোষণাপত্রের বরাতে এ তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের আহ্বানে বিশ্বের ১২টি দেশের শীর্ষ নেতাসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং আরব লীগের শীর্ষ প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নেন। অংশ নেয়া পক্ষগুলো ঘোষণাপত্রে লিবিয়ার স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় অখ-তা ও ঐক্যের ওপর তাদের প্রতিজ্ঞার কথা ব্যক্ত করে। একইসঙ্গে লিবিয়ার সংকটের তীব্রতা কমাতে দেশটিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব ১৯৭০ অনুসারে, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণাপত্রে প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি এতে এ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বা যুদ্ধবিরতির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এবং সংকটের তীব্রতাকে বাড়াতে পারে এমন যে কোন কাজ থেকে সবাইকে দূরে থাকার জন্য আহ্বান করা হয়। এদিকে প্রকাশিত ওই ঘোষণাপত্রে লিবিয়ায় যুদ্ধরত সব পক্ষকে বিশেষ করে জাতিসংঘ সমর্থিত জিএনএ সরকার ও দেশটির বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তা হাফতারের অনুগত বাহিনী পিএলএল-এর মধ্যকার সংঘাতের তীব্রতা কমানো ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য দ্বিগুণ চেষ্টা করার আহ্বান জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, ‘যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়ার শুরুতে সংঘাতে নিয়োজিত সব পক্ষের অথবা তাদের সমর্থনে সবধরনের সামরিক তৎপরতা লিবিয়ার সীমানা থেকে বন্ধ করতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’

জার্মান চ্যান্সেলর মার্কেল ও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতরেসের যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে আলোচনায় আরও অংশ নেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানসহ অন্য নেতারা। এদিকে লিবিয়ায় সংঘাতে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত প্রধানমন্ত্রী ফায়াজ আল-সাররাজ ও বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতার জার্মানিতে উপস্থিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেননি। এর আগে ১২ জানুয়ারি তুরস্ক ও রাশিয়ার যৌথ আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় লিবিয়ায় যুদ্ধরত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকার ও বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতারের বাহিনী। পরে রাশিয়ায় উভয়পক্ষ স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনায় বসলে কোন প্রকার চুক্তি সই ছাড়াই মস্কো ছাড়েন জেনারেল হাফতার।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে আরব বসন্তের প্রভাবে বিক্ষোভ ও গৃহযুদ্ধে লিবিয়ার দীর্ঘকালীন শাসক মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফির পদচ্যুতির জেরে দেশটি দু’পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জাতিসংঘ স্বীকৃত লিবিয়ার সরকার রাজধানী ত্রিপোলিসহ দেশটির পশ্চিমাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন এবং বেনগাজিকে কেন্দ্র করে মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থিত বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতারের বাহিনী দেশটির পূর্বাঞ্চলের দখল নেয়।

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ , ৭ মাঘ ১৪২৬, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

বার্লিন শান্তি সম্মেলন

অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত বিশ্বনেতারা

সংবাদ ডেস্ক |

image

গত নয় মাস ধরে চলা লিবিয়ার রাজনৈতিক সংকট সমাধানে স্বল্পকালীন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছেন বিশ্বনেতারা। একইসঙ্গে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব অনুসারে দেশটিতে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞায়ও একমত হয়েছেন তারা। জার্মানির রাজধানী বার্লিনে এক দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বিশেষ শান্তি সম্মেলনে বিশ্বনেতারা এ সমঝোতায় পৌঁছান। তবে লিবিয়ার বিবদমান দুই পক্ষ এখনও ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বলে শেষ পর্যন্ত পাওয়া প্রতিবেদনে জানা গেছে। আল-জাজিরা, বিবিসি।

গত রোববার বার্লিনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের পর সব পক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত ঘোষণাপত্রের বরাতে এ তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের আহ্বানে বিশ্বের ১২টি দেশের শীর্ষ নেতাসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং আরব লীগের শীর্ষ প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নেন। অংশ নেয়া পক্ষগুলো ঘোষণাপত্রে লিবিয়ার স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় অখ-তা ও ঐক্যের ওপর তাদের প্রতিজ্ঞার কথা ব্যক্ত করে। একইসঙ্গে লিবিয়ার সংকটের তীব্রতা কমাতে দেশটিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব ১৯৭০ অনুসারে, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণাপত্রে প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি এতে এ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বা যুদ্ধবিরতির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এবং সংকটের তীব্রতাকে বাড়াতে পারে এমন যে কোন কাজ থেকে সবাইকে দূরে থাকার জন্য আহ্বান করা হয়। এদিকে প্রকাশিত ওই ঘোষণাপত্রে লিবিয়ায় যুদ্ধরত সব পক্ষকে বিশেষ করে জাতিসংঘ সমর্থিত জিএনএ সরকার ও দেশটির বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তা হাফতারের অনুগত বাহিনী পিএলএল-এর মধ্যকার সংঘাতের তীব্রতা কমানো ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য দ্বিগুণ চেষ্টা করার আহ্বান জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, ‘যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়ার শুরুতে সংঘাতে নিয়োজিত সব পক্ষের অথবা তাদের সমর্থনে সবধরনের সামরিক তৎপরতা লিবিয়ার সীমানা থেকে বন্ধ করতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’

জার্মান চ্যান্সেলর মার্কেল ও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতরেসের যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে আলোচনায় আরও অংশ নেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানসহ অন্য নেতারা। এদিকে লিবিয়ায় সংঘাতে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত প্রধানমন্ত্রী ফায়াজ আল-সাররাজ ও বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতার জার্মানিতে উপস্থিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেননি। এর আগে ১২ জানুয়ারি তুরস্ক ও রাশিয়ার যৌথ আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় লিবিয়ায় যুদ্ধরত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকার ও বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতারের বাহিনী। পরে রাশিয়ায় উভয়পক্ষ স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনায় বসলে কোন প্রকার চুক্তি সই ছাড়াই মস্কো ছাড়েন জেনারেল হাফতার।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে আরব বসন্তের প্রভাবে বিক্ষোভ ও গৃহযুদ্ধে লিবিয়ার দীর্ঘকালীন শাসক মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফির পদচ্যুতির জেরে দেশটি দু’পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জাতিসংঘ স্বীকৃত লিবিয়ার সরকার রাজধানী ত্রিপোলিসহ দেশটির পশ্চিমাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন এবং বেনগাজিকে কেন্দ্র করে মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থিত বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতারের বাহিনী দেশটির পূর্বাঞ্চলের দখল নেয়।