চীনে বেড়েই চলেছে রহস্যজনক ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা

চীনে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে রহস্যজনক ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। দেশটিতে গত দুই দিনে এই ভাইরাসে নতুন করে আরও ১৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে নতুন এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ হাজারে দাঁড়াল। বিবিসি।

সংবাদ মাধ্যমটির এক অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের উহান শহরে ডিসেম্বরে প্রথম এই ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তীতে এই ভাইরাসে দেশটির বিভিন্ন শহরের মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩ জনের মারা গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এদিকে নতুন এই রহস্যজনক ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কারণে চীনা নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও দেখা গেছে নানা গুজব। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কয়েকটি দেশ। সিঙ্গাপুর এবং হংকং তাদের বিমানবন্দরে চীনের উইয়ান থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে অনুরূপ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আল জাজিরা, বিবিসি।

এছাড়া, এই ভাইরাসে ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও জাপানে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রহস্যজনক এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভাইরাসটি ভাইরাল নিউমোনিয়া হওয়ার অনেকগুলো সম্ভাব্য উপসর্গ রয়েছে। এই উপসর্গগুলো সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের ভাইরাসের তুলনায় এই ভাইরাসেই বেশি দেখা যায়।

গবেষকদের অভিমত : ভাইরাসটি নিয়ে ইতোমধ্যে গবেষণা শুরু করেছেন বিশ্বের বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট লিন্ফা ওয়াং বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এটি সাধারণত জুনোটিক ভাইরাস, যা প্রাণীর দেহ থেকে মানবদেহে সহজে চলে আসে। সচরাচর শীতের মাসগুলোতে এ ভাইরাস সংক্রমণশীল হয়ে ওঠে। ২০০২-০৩ সালে এসএআরএস বা সার্স ভাইরাসে চীনে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল বলে তিনি স্মরণ করেন। এদিকে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তন বিজ্ঞানী অ্যাডওয়ার্ড হোমস বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’কে বলেন, প্রাথমিকভাবে সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাং ইওং-ঝেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক ভাইরাসের পাঁচ ধরনের ডিএনএ সিকুয়েন্স পেয়েছে।

যা ইতোমধ্যে ডেটাবেইজে শেয়ার করা হয়েছে। যদি এটি মহামারি আকারে রূপ নেয়, তাহলে এ সিকুয়েন্স নতুন গবেষণার খোরাক যোগাবে। তবে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক এবং চীন সরকার এ ভাইরাস মূল্যায়ন কমিটির প্রধান জু জিয়ানগু বলেছেন, প্রথম দিকে রোগীদের শরীরে যে লক্ষণগুলো পাওয়া গিয়েছিল তার মধ্যে ছিল শ্বাসকষ্ট এবং জ্বর যা থেকে আমরা নিউমোনিয়া বলে ধারণা করছি। তবে তিনি আশা করেন, আগামী সপ্তাহে এটি ছড়িয়ে না পড়লে হয়ত এ ভাইরাসের সংক্রমণ কমবে।

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ , ৭ মাঘ ১৪২৬, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

চীনে বেড়েই চলেছে রহস্যজনক ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা

সংবাদ ডেস্ক |

image

চীনের উবেই প্রদেশের কেন্দ্রীয় রাজধানী শহর হুয়ানে রহস্যজনক ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা - বিবিসি

চীনে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে রহস্যজনক ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। দেশটিতে গত দুই দিনে এই ভাইরাসে নতুন করে আরও ১৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে নতুন এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ হাজারে দাঁড়াল। বিবিসি।

সংবাদ মাধ্যমটির এক অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের উহান শহরে ডিসেম্বরে প্রথম এই ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তীতে এই ভাইরাসে দেশটির বিভিন্ন শহরের মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩ জনের মারা গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এদিকে নতুন এই রহস্যজনক ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কারণে চীনা নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও দেখা গেছে নানা গুজব। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কয়েকটি দেশ। সিঙ্গাপুর এবং হংকং তাদের বিমানবন্দরে চীনের উইয়ান থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে অনুরূপ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আল জাজিরা, বিবিসি।

এছাড়া, এই ভাইরাসে ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও জাপানে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রহস্যজনক এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভাইরাসটি ভাইরাল নিউমোনিয়া হওয়ার অনেকগুলো সম্ভাব্য উপসর্গ রয়েছে। এই উপসর্গগুলো সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের ভাইরাসের তুলনায় এই ভাইরাসেই বেশি দেখা যায়।

গবেষকদের অভিমত : ভাইরাসটি নিয়ে ইতোমধ্যে গবেষণা শুরু করেছেন বিশ্বের বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট লিন্ফা ওয়াং বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এটি সাধারণত জুনোটিক ভাইরাস, যা প্রাণীর দেহ থেকে মানবদেহে সহজে চলে আসে। সচরাচর শীতের মাসগুলোতে এ ভাইরাস সংক্রমণশীল হয়ে ওঠে। ২০০২-০৩ সালে এসএআরএস বা সার্স ভাইরাসে চীনে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল বলে তিনি স্মরণ করেন। এদিকে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তন বিজ্ঞানী অ্যাডওয়ার্ড হোমস বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’কে বলেন, প্রাথমিকভাবে সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাং ইওং-ঝেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক ভাইরাসের পাঁচ ধরনের ডিএনএ সিকুয়েন্স পেয়েছে।

যা ইতোমধ্যে ডেটাবেইজে শেয়ার করা হয়েছে। যদি এটি মহামারি আকারে রূপ নেয়, তাহলে এ সিকুয়েন্স নতুন গবেষণার খোরাক যোগাবে। তবে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক এবং চীন সরকার এ ভাইরাস মূল্যায়ন কমিটির প্রধান জু জিয়ানগু বলেছেন, প্রথম দিকে রোগীদের শরীরে যে লক্ষণগুলো পাওয়া গিয়েছিল তার মধ্যে ছিল শ্বাসকষ্ট এবং জ্বর যা থেকে আমরা নিউমোনিয়া বলে ধারণা করছি। তবে তিনি আশা করেন, আগামী সপ্তাহে এটি ছড়িয়ে না পড়লে হয়ত এ ভাইরাসের সংক্রমণ কমবে।