খাবার খোঁজে লোকালয়ে বন্যপ্রাণী

যশোরে হনুমান দল থানায় সুন্দরবনে হরিণ ও বানর খাবারের জন্য পর্যটকদের কাছে

বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল দিন দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বনখেকোরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য বনের গাছপালা কেটে ফেলছে। বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরি ও বন দখল করে ঘরবাড়ি করায় বন্যপ্রাণীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। প্রাকৃতিকভাবে হওয়া বিভিন্ন ধরনের ফল এখন আর বনে পাওয়া যায় না। যার কারণে বন্যহাতি ও বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী খাবার খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে। রাঙ্গামাটি ও শেরপুর সীমান্তবর্তী অঞ্চলসহ অনেক স্থানে হাতি ও বানর খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে। বানরের দল পর্যটক ও শিশুদের হাত থেকে খাবার কেড়ে নিয়ে খাচ্ছে। প্রতিদিন এ সব ঘটনা অহরহ ঘটছে। এদিকে যশোরে লোকালে এসে হনুমানের দল নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় আশ্রয় নিয়েছিল। পরে থানা পুলিশ নানা কৌশলে তাদের সরিয়ে দেয়। তবে বন্যপ্রাণীদের মধ্যে বানরই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোকালয়ে ঢুকে মানুষের কাছ থেকে খাবার খুঁজছে বা শিশু ও বয়স্কদের হাত থেকে খাবার কেড়ে নিচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব বন্যপ্রাণীর খাবারের জন্য আলাদা বা বাড়তি কোন বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে কোন কোন স্থানে কিছু খাবার দেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আর বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে খাবারের জন্য এখন তেমন কোন বরাদ্ধ নেই।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বানর দেখা যায়। কিন্তু বানরদের খাদ্য সোর্স নেই। পর্যটন জেলা রাঙ্গামাটি শহরের রাজবন ও বৌদ্ধবিহারসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বানর দেখা যায়। ওই সব বানর খাবারের জন্য লোকালয়ে ছুঁটে যায়। তারা শিশুসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের হাতে থাকা খাবার টেনে নিয়ে যায়। তবে বন বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, বানরের বিষয় আলাদা। বানর মানুষের কাছে যেতে পছন্দ করে। মানুষের কাছ থেকে খাবার খেতে আসক্ত এটা পুরনো অভ্যাস। কিছু কিছু এলাকায় বানর থাকলেও সেখানে তাদের খাবার সংকট রয়েছে। খাবার খুঁজে না পেলে তারা মানুষের হাত থেকে কেড়ে নেয়া থেকে শুরু করে ঘরে খাবারের খোঁজে ঘরে পর্যন্ত ঢুকে। এমন ঘটনা প্রায় ঘটছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফসহ চট্টগ্রামসহ যেখানে বন উজাড় হচ্ছে সেখানে এসব ঘটনা নিত্য দিন ঘটছে। খোদ পুরনো ঢাকা ও ধামরাইসহ বিভিন্ন স্থানে বানর দেখা যায়। এছাড়াও ঢাকার বাইরে যশোর, ময়মনসিংহ ও শেরপুর, টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চল, নরসিংদীর মনোহরদীর রামপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বানর, হনুমানসহ বন্যপ্রাণীর তীব্র খাদ্য সংকট বিরাজ করছে। খাদ্য সংকটের কারণে লোকালয়ে ঢুকে লাউ, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের সব্জি নষ্ট করছে। এসব স্থানে বানরের জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বরাদ্দ নেই। ফলে অনেক স্থানে বানরের যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।

গত বছর যশোরে একদল হনুমান লোকালয়ে গেলে স্থানীয় জনতা হনুমানের একটি বাচ্চাকে আঘাত করে। এর জের ধরে হনুমানের দল পাশ্ববর্তী একটি থানায় আশ্রয় নেয়। পরে থানার ওসি হনুমানের দলকে কোনমতে বুঝিয়ে খাবার দেয়ার পর এক পর্যায়ে থানা এলাকা ত্যাগ করে। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় সময় বন্যপ্রাণী নানাভাবে হামলার শিকার হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে গ্রামবাসী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বানর ও হনুমানের দলকে খাবার দিলে তারা ওই সব খাবার খেয়ে আবার বনে চলে যায়।

জানা গেছে, শেরপুর নালিতাবাড়িসহ আশপাশের সীমান্তে বন্য হাতির ৫ থেকে ৬টি গ্রুপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ২৫ থেকে ৩০টি হাতি দেখা যায়। হাতিগুলো দলবেঁধে লোকালয়ে ঢুকে এখন ধানক্ষেত নষ্ট করছে। আবার কাঠালের মৌসুমে কাঠাল খেতে লোকালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। মাঝেমধ্যে আকাশমনি গাছেল ছালও খাচ্ছে। এরপর খাদ্য সংকট, আবাস সংকট ও বনে চলাচলে পথে বাধার কারণে হাতি মারা যাচ্ছে।

বন বিভাগ থেকে জানা গেছে, হাতি চলাচলে পর্যাপ্ত বনের দরকার। সেখানে বন নেই। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা উখিয়া ও টেকনাফে হাতি চলাচলের রাস্তায় বসত ঘর তৈরি করায় হাতি চলচলে সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য প্রায় বন্য হাতি গ্রুপ বেঁধে লোকালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। অভিযোগ রয়েছে, অনেক স্থানে প্রায় সময় হাতি মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে, বন্যপ্রাণী শিকারিরা হাতির দাঁতসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগ্রহ করে বিক্রি করছে। অনেক সময় হাতির দাঁত দিয়ে নানা ধরনের পণ্য তৈরি করে। এখন হাতির আবাসন মানুষ দখলে নেয়ায় হাতি লোকালয়ে ঢুকে মানুষের ফসল নষ্ট করছে। আর খাদ্য অভাবে অসুস্থ হয়ে দিনে দিনে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অনাহারে মারা যাচ্ছে।

মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, বন্যপ্রাণীদের খাবারের জন্য আলাদা বরাদ্ধ নিয়ে কোন প্রকল্প নেই। এ নিয়ে বন বিভাগ থেকে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠালে বানরের খাবারের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আর হাতির চলাচলে যাতে বিঘ্ন না ঘটে তার জন্য পরিকল্পনা নেয়া যেতে পারে। তবে দুই একটি স্থানে বানরের জন্য মাঝে মধ্যে যে খাবার দেয়া হয় তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাও ঠিকমত দেয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ , ৭ মাঘ ১৪২৬, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

খাবার খোঁজে লোকালয়ে বন্যপ্রাণী

যশোরে হনুমান দল থানায় সুন্দরবনে হরিণ ও বানর খাবারের জন্য পর্যটকদের কাছে

বাকিবিল্লাহ |

image

যশোরে থানায় হনুমান -সংবাদ

বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল দিন দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বনখেকোরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য বনের গাছপালা কেটে ফেলছে। বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরি ও বন দখল করে ঘরবাড়ি করায় বন্যপ্রাণীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। প্রাকৃতিকভাবে হওয়া বিভিন্ন ধরনের ফল এখন আর বনে পাওয়া যায় না। যার কারণে বন্যহাতি ও বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী খাবার খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে। রাঙ্গামাটি ও শেরপুর সীমান্তবর্তী অঞ্চলসহ অনেক স্থানে হাতি ও বানর খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে। বানরের দল পর্যটক ও শিশুদের হাত থেকে খাবার কেড়ে নিয়ে খাচ্ছে। প্রতিদিন এ সব ঘটনা অহরহ ঘটছে। এদিকে যশোরে লোকালে এসে হনুমানের দল নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় আশ্রয় নিয়েছিল। পরে থানা পুলিশ নানা কৌশলে তাদের সরিয়ে দেয়। তবে বন্যপ্রাণীদের মধ্যে বানরই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোকালয়ে ঢুকে মানুষের কাছ থেকে খাবার খুঁজছে বা শিশু ও বয়স্কদের হাত থেকে খাবার কেড়ে নিচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব বন্যপ্রাণীর খাবারের জন্য আলাদা বা বাড়তি কোন বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে কোন কোন স্থানে কিছু খাবার দেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আর বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে খাবারের জন্য এখন তেমন কোন বরাদ্ধ নেই।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বানর দেখা যায়। কিন্তু বানরদের খাদ্য সোর্স নেই। পর্যটন জেলা রাঙ্গামাটি শহরের রাজবন ও বৌদ্ধবিহারসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বানর দেখা যায়। ওই সব বানর খাবারের জন্য লোকালয়ে ছুঁটে যায়। তারা শিশুসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের হাতে থাকা খাবার টেনে নিয়ে যায়। তবে বন বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, বানরের বিষয় আলাদা। বানর মানুষের কাছে যেতে পছন্দ করে। মানুষের কাছ থেকে খাবার খেতে আসক্ত এটা পুরনো অভ্যাস। কিছু কিছু এলাকায় বানর থাকলেও সেখানে তাদের খাবার সংকট রয়েছে। খাবার খুঁজে না পেলে তারা মানুষের হাত থেকে কেড়ে নেয়া থেকে শুরু করে ঘরে খাবারের খোঁজে ঘরে পর্যন্ত ঢুকে। এমন ঘটনা প্রায় ঘটছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফসহ চট্টগ্রামসহ যেখানে বন উজাড় হচ্ছে সেখানে এসব ঘটনা নিত্য দিন ঘটছে। খোদ পুরনো ঢাকা ও ধামরাইসহ বিভিন্ন স্থানে বানর দেখা যায়। এছাড়াও ঢাকার বাইরে যশোর, ময়মনসিংহ ও শেরপুর, টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চল, নরসিংদীর মনোহরদীর রামপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বানর, হনুমানসহ বন্যপ্রাণীর তীব্র খাদ্য সংকট বিরাজ করছে। খাদ্য সংকটের কারণে লোকালয়ে ঢুকে লাউ, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের সব্জি নষ্ট করছে। এসব স্থানে বানরের জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বরাদ্দ নেই। ফলে অনেক স্থানে বানরের যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।

গত বছর যশোরে একদল হনুমান লোকালয়ে গেলে স্থানীয় জনতা হনুমানের একটি বাচ্চাকে আঘাত করে। এর জের ধরে হনুমানের দল পাশ্ববর্তী একটি থানায় আশ্রয় নেয়। পরে থানার ওসি হনুমানের দলকে কোনমতে বুঝিয়ে খাবার দেয়ার পর এক পর্যায়ে থানা এলাকা ত্যাগ করে। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় সময় বন্যপ্রাণী নানাভাবে হামলার শিকার হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে গ্রামবাসী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বানর ও হনুমানের দলকে খাবার দিলে তারা ওই সব খাবার খেয়ে আবার বনে চলে যায়।

জানা গেছে, শেরপুর নালিতাবাড়িসহ আশপাশের সীমান্তে বন্য হাতির ৫ থেকে ৬টি গ্রুপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ২৫ থেকে ৩০টি হাতি দেখা যায়। হাতিগুলো দলবেঁধে লোকালয়ে ঢুকে এখন ধানক্ষেত নষ্ট করছে। আবার কাঠালের মৌসুমে কাঠাল খেতে লোকালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। মাঝেমধ্যে আকাশমনি গাছেল ছালও খাচ্ছে। এরপর খাদ্য সংকট, আবাস সংকট ও বনে চলাচলে পথে বাধার কারণে হাতি মারা যাচ্ছে।

বন বিভাগ থেকে জানা গেছে, হাতি চলাচলে পর্যাপ্ত বনের দরকার। সেখানে বন নেই। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা উখিয়া ও টেকনাফে হাতি চলাচলের রাস্তায় বসত ঘর তৈরি করায় হাতি চলচলে সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য প্রায় বন্য হাতি গ্রুপ বেঁধে লোকালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। অভিযোগ রয়েছে, অনেক স্থানে প্রায় সময় হাতি মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে, বন্যপ্রাণী শিকারিরা হাতির দাঁতসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগ্রহ করে বিক্রি করছে। অনেক সময় হাতির দাঁত দিয়ে নানা ধরনের পণ্য তৈরি করে। এখন হাতির আবাসন মানুষ দখলে নেয়ায় হাতি লোকালয়ে ঢুকে মানুষের ফসল নষ্ট করছে। আর খাদ্য অভাবে অসুস্থ হয়ে দিনে দিনে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অনাহারে মারা যাচ্ছে।

মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, বন্যপ্রাণীদের খাবারের জন্য আলাদা বরাদ্ধ নিয়ে কোন প্রকল্প নেই। এ নিয়ে বন বিভাগ থেকে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠালে বানরের খাবারের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আর হাতির চলাচলে যাতে বিঘ্ন না ঘটে তার জন্য পরিকল্পনা নেয়া যেতে পারে। তবে দুই একটি স্থানে বানরের জন্য মাঝে মধ্যে যে খাবার দেয়া হয় তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাও ঠিকমত দেয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।