গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

সরকারের সঙ্গে প্লেনযোগে শেখ মুজিবের

দলীয় প্রচারকার্য ফরিদপুর সফর প্রস্তুতি

এপিপির সংবাদে প্রকাশ, আওয়ামী লীগের প্রচারকার্য চালাইবার উদ্দেশ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান আগামী ৫ ও ৬ আগস্টের জন্য একটি সরকারি সি-প্লেন রিজার্ভ করিয়াছেন। প্রাদেশিক সরকারের এই সি- প্লেনটি দলীয় প্রচার কার্যে উক্ত দুই দিবস ব্যবহারের জন্য সরকার শেখ মুজিবরকে দিতে রাজী হইয়াছে। ইহার ব্যয়ভার জনগণের অর্থে সরকারই করিবেন। শেখ মুজিব ৫ গোপালগঞ্জ এবং ৬ আগস্ট মাদারীপুর উক্ত সি-প্লেনে করিয়া জনসভায় দলীয় প্রচারকার্য চালাইতে যাইবেন বলিয়া জানা গিয়াছে।

দৈনিক সংবাদ : ২ আগস্ট ১৯৫৭

মওলানা ভাসানীর বিরুদ্ধে মুজিবের অশোভন উক্তি প্রসঙ্গে

সংবাদদাতা প্রেরিত

রংপুর, ৩১ জুলাই : ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক সংগঠনী কমিটির সদস্য জনাব ইয়াকুব মাহফুজ আলী এবং রংপুর সদর মহকুমা আওয়ামী লীগের পদত্যাগী দফতর সম্পাদক কাজী আবুল হালীম এক বিবৃতিতে মন্ত্রী-লীগের সম্পাদক শেখ মজিবর রহমান সরকারী দফতর খানায় অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে মওলানা ভাসানীর সম্পর্কে যে বিষোদগার করিয়াছেন, তাহার তীব্র সমালোচনা করেন। বিবৃতিতে বলা হয় যে, জনাব মুজিবর রহমান তাহার সাংবাদিক সম্মেলনে মজলুম। জননায়ক মওলানা ভাসানী সম্পর্কে যে সমস্ত অভিযোগ ও অশোভন উক্তি করিয়াছেন, তাহা বড়ই দুঃখজনক। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পূর্ব পাকিস্তান তথা পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা মওলানা সাহেব সম্বন্ধে প্রতিষ্ঠানের ভিতরে থাকিয়া প্রতিষ্ঠানকে ছুরিকাঘাত করার এক ষড়যন্ত্রও তিনি আবিষ্কার করিয়াছেন, এ সম্বন্ধে আমরা শুধু তাহাকে এইটুকুই বলিতে চাই যে, এই শেখ মুজিবুর সাহেবই মাত্র কিছুদিন পূর্বেও হুজুরের কৃপা ভিক্ষা প্রার্থী ছিলেন। এই সেদিনও দুস্থবেশন সর্বসম্মভিলিয়া গিয়াছিলেন ঘোড়দৌড় বন্ধ সেদিনও ষড়যন্ত্রকারী(?) মওলানা সাহেবকে রাখার জন্য ঢাকার তথাকথিত কাউন্সিল অধিবেশন সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাশ করে। মুজিবর সাহেব বিবৃতি দেওয়ার সময়বোধ হয় উহা ভুলিয়া গিয়াছিলেন।

মওলানা সাহেব খাদ্যসমস্যা, ২১ দফা রূপায়ণ, ঘোড়দৌড় বন্ধ, জুয়া ও বেশ্যাবৃত্তি নিষিদ্ধকরণে ব্যর্থ হওয়াই যে সমস্ত অভিযোগ আনয়ন করিয়াছেন, শেখ সাহেব সুকৌশলে সেগুলি এড়াইয়া যাইয়া অন্য প্রসঙ্গের অবতারণা করিয়া জনসাধারণকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করিয়াছেন।

২১ দফা ওয়াদা সম্পর্কে তাহারা সস্তায় বাজিমাত করার জন্য কয়েকদফা পূরণ করিয়া বাকিগুলি পূরণ করিতে ৫ বৎসর সময় লাগিবে বলিয়া আগামী নির্বাচনে জনসাধারণের নিকট হইতে ভোট আদায় করার সুচতুর জনাব মুজিবুর গং উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছেন। দুর্নীতি দমন মন্ত্রী দুর্নীতি দমনে তাহার ব্যর্থতা ঢাকিতে গিয়া পদত্যাগী রাজস্বমন্ত্রী জনাব মাহমুদ আলী সম্পর্কেও উদ্দেশ্যমূলক ইঙ্গিত করিয়াছেন। অথচ ২১ দফার যে কয়দফা করা হইয়াছে বলিয়া তিনি বাহবা নিতে চাহিয়াছেন তাহার গুরুত্বপূর্ণ কয়েক দফা যেমন সার্টিফিকেট রহিত, পাট্টা কালিয়তের কর রহিত, সুদমাফ ইত্যাদি তো প্রাক্তন রাজস্বমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সময়ই করা হইয়াছে। কাগমারী অধিবেশনটি ছিল প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন। কাজেই ইহার ভাল-মন্দর জন্য দায়ী গোটা প্রাদেশিক ওয়ার্কিং কমিটি। কাগমারী সম্পর্কে নিজেদের দাযিত্ব এড়াইয়া সম্পূর্ণ দায়ী করা হইয়াছে মওলানা সাহেবকে। বলা হইয়াছে, কোন আলোচনা নাকি তাহাদের সঙ্গে করা হয় নাই। ইহা কতদূর। বিশ্বাসযোগ্য তাহা দেশবাসী বিচার করিবেন, কেননা প্রাদেশিক ওয়ার্কিং কমিটি বা কাউন্সিল অধিবেশনেও এই শেখ সাহেব গং এ-কথা তোলেন নাই। হঠাৎ আজ একথা তুলিয়া নিজেদের অক্ষমতা ও ব্যর্থতা ঢাকা এবং জনসাধারণের কাছে মওলানা সাহেবকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করিতেও কার্পণ্য করেননি। গোয়েবলসের নীতি মত একটি মিথ্যাকে একশতবার সত্য বলিয়া প্রচার করার নীতি তাহার এবং তাহাদের ঢাকটি গ্রহণ করিয়াছে। কাগমারী প্রসঙ্গ টানিয়া আনিয়া তিনি ইহাই প্রমাণ করিলেন যে সংগঠনের সভাপতির বিরুদ্ধে তথা সংগঠনের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী প্রচারণার ষড়যন্ত্রের আড়ালে কে বা কাহারা ছিলেন। এবং সেই জন্যই সংগঠনের সেক্রেটারী হইয়াও সভাপতির নামে মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে তিনি একটি রাও করেননি। জনাব সোহরাওয়ার্দীর পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গ শেখ সাহেব ভুলিয়াছেন তিনি বলিয়াছেন মওলানা সাহেব নাকি জাতীয় পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হইলেই উহা গ্রহণ করিবেন। আমাদের জিজ্ঞাসা পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে সামরিক চুক্তিগুলিকে তীব্র বিরোধিতা করার সুস্পষ্ট ঘোষণা সত্বেও আওয়ামী লীগ গঠনতন্ত্রের রক্ষকরা জনাব শেখ সাহেবের কি সে নির্দেশ নিজেরা পালন করিয়া সমস্যা সম্পর্কে কোন উক্তি পর্যন্ত করেন নাই, সাহায্যে আগাইয়া আসাতো দূরের কথা।

শেখ মুজিবর রহমান মওলানা সম্পর্কে গঠনতন্ত্র খেলাপের অভিযোগ আনয়ন করিয়াছেন। দেশবাসী অবগত আছেন গঠনতন্ত্রের প্রতি গণতন্ত্রের প্রতি মওলানা সাহেবের পরাকাষ্ঠা কাহারও চাইতে কম নহে। অথচ আওয়ামী লীগের সহিত আলোচনা না করিয়া জনাব শহীদ সাহেবের ৯২ (ক) ধারার আমলে আইন মন্ত্রীর পদ গ্রহণ, আওয়ামী লীগ কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্তকে পদাঘাত করিয়া দেশের বাহিরে বসিয়া বাগদাদ চুক্তির মহিমা কীত্তন আরম্ভ করিলেন; কিন্তু এই শেখ সাহেবরা তখন নীরব ছিলেন। বরঞ্চ সংগঠনের সিদ্ধান্ত বিরোধী এই কার্যের প্রতিবাদ করিয়া সংগঠনের এবং জনতার একনিষ্ঠ কর্মীরা যখন আগাইয়া আসিলেন, এই শেখ সাহেবের উক্তির সমালোচনা দূরে থাকুক, বরঞ্চ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকে অংকুরে বিনাশ করার জন্য জনসাধারণকে প্রকৃত ঘটনা হইতে দূরে রাখার জন্য এক ফরমান জারী করিয়া বিবৃতি প্রভৃতি মারফত প্রতিবাদ করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিলেন। এই কি প্রতিষ্ঠানের নীতি ও আদর্শের প্রতি নিষ্ঠার নিদর্শন?

কিছুদিন পূর্বেও ভয়াবহ খাদ্যসংকটকে উপেক্ষা করিয়া কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক খাদ্য মন্ত্রী পূর্বতন সরকারের মতই দেশে খাদ্যাভাব নাই বলিয়া উক্তি করিয়াছিলেন। তরুণ বিপ্লবী শেখ মুজিবুর কিন্তু সেদিনও মুখ খুলেন নাই। আসলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্যই বর্তমান নীতি বিচ্যুত মন্ত্রী দলের নেতৃত্ব বিবৃতি প্রচার করিয়া বেড়াইতেছেন। তাহাদের মুখের গালভরা. কথায় জনসাধারণের স্বপক্ষে রাখা যাইতেছে না দেখিয়া তাহারাও সেই পুরাতন চার কথা বলা শুরু করিয়া দিয়াছেন। আজ খাদ্যের দাবি, বিড়ির পাতার ব্যবস্থা, তোঘলোকি নীতি প্রভৃতি সম্পর্কে বলিলেই তাহাদের মুখে পুরাতন বুলি কমিউনিস্ট, ভারতের দালাল, ধ্বংসাত্মক কার্য্যাবলী ইত্যাদি শোনা যাইতেছে। দেশবাসী এই সমস্ত গালী সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। কেননা এর আগেও জনসাধারণের দাবি দাওয়ার আন্দোলন, রাষ্ট্রভাষার। আন্দোলন, প্রভৃতি নিয়া এদেশের অগণিত নিঃস্বার্থ কর্মী নেতা বহুবারই কমিউনিস্ট, ভারতের দালাল প্রভৃতি গালিগালাজ শুনিয়াছেন। কাজেই সচেতন পাকিস্তান কর্মীকে বিশেষ করিয়া পূর্ব বাংলার কোটি কোটি মেহনতি কৃষক শ্রমিক ব্যবসায়ী ছাত্র যুবককে বিভক্ত করা যাইবে না। মিথ্যা প্রচারণা, বিভ্রান্তি, গুণ্ডামী, নিপীড়ন প্রভৃতি দ্বারা দেশবাসীর গণতান্ত্রীক আন্দোলনকে কিছুতেই থামাইয়া রাখা যাইবে না। পরিশেষে আমরা দেশের অগণিত বুভুক্ষু জনসাধারণকে তাহাদের মুক্তিসনদ ২১ দফা রূপায়ণে স্বায়ত্বশাসন আদায়ে আগাইয়া আসিতে আবেদন জানাইতেছি এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করত ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন সৃষ্টির জন্য আগাইয়া আসিতে আবেদন করিতেছি।

দৈনিক সংবাদ : ২ আগস্ট ১৯৫৭

শেখ মুজিবের প্রতিবাদ

প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান জানাইয়াছেন যে, তিনি পাকিস্তান টি-বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন কোন বেতন গ্রহণ করিবেন না। ইতিপূর্বে সংবাদে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ করিয়া শেখ মুজিবুর বলিয়াছেন যে, টি-বোর্ডের চেয়ারম্যান রূপে মাসিক চার হাজার টাকা বেতন গ্রহণের খবরের মূলে কোন সত্য নাই।

দৈনিক সংবাদ : ৯ আগস্ট ১৯৫৭

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ , ৭ মাঘ ১৪২৬, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

সরকারের সঙ্গে প্লেনযোগে শেখ মুজিবের

দলীয় প্রচারকার্য ফরিদপুর সফর প্রস্তুতি

এপিপির সংবাদে প্রকাশ, আওয়ামী লীগের প্রচারকার্য চালাইবার উদ্দেশ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান আগামী ৫ ও ৬ আগস্টের জন্য একটি সরকারি সি-প্লেন রিজার্ভ করিয়াছেন। প্রাদেশিক সরকারের এই সি- প্লেনটি দলীয় প্রচার কার্যে উক্ত দুই দিবস ব্যবহারের জন্য সরকার শেখ মুজিবরকে দিতে রাজী হইয়াছে। ইহার ব্যয়ভার জনগণের অর্থে সরকারই করিবেন। শেখ মুজিব ৫ গোপালগঞ্জ এবং ৬ আগস্ট মাদারীপুর উক্ত সি-প্লেনে করিয়া জনসভায় দলীয় প্রচারকার্য চালাইতে যাইবেন বলিয়া জানা গিয়াছে।

দৈনিক সংবাদ : ২ আগস্ট ১৯৫৭

মওলানা ভাসানীর বিরুদ্ধে মুজিবের অশোভন উক্তি প্রসঙ্গে

সংবাদদাতা প্রেরিত

রংপুর, ৩১ জুলাই : ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক সংগঠনী কমিটির সদস্য জনাব ইয়াকুব মাহফুজ আলী এবং রংপুর সদর মহকুমা আওয়ামী লীগের পদত্যাগী দফতর সম্পাদক কাজী আবুল হালীম এক বিবৃতিতে মন্ত্রী-লীগের সম্পাদক শেখ মজিবর রহমান সরকারী দফতর খানায় অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে মওলানা ভাসানীর সম্পর্কে যে বিষোদগার করিয়াছেন, তাহার তীব্র সমালোচনা করেন। বিবৃতিতে বলা হয় যে, জনাব মুজিবর রহমান তাহার সাংবাদিক সম্মেলনে মজলুম। জননায়ক মওলানা ভাসানী সম্পর্কে যে সমস্ত অভিযোগ ও অশোভন উক্তি করিয়াছেন, তাহা বড়ই দুঃখজনক। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পূর্ব পাকিস্তান তথা পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা মওলানা সাহেব সম্বন্ধে প্রতিষ্ঠানের ভিতরে থাকিয়া প্রতিষ্ঠানকে ছুরিকাঘাত করার এক ষড়যন্ত্রও তিনি আবিষ্কার করিয়াছেন, এ সম্বন্ধে আমরা শুধু তাহাকে এইটুকুই বলিতে চাই যে, এই শেখ মুজিবুর সাহেবই মাত্র কিছুদিন পূর্বেও হুজুরের কৃপা ভিক্ষা প্রার্থী ছিলেন। এই সেদিনও দুস্থবেশন সর্বসম্মভিলিয়া গিয়াছিলেন ঘোড়দৌড় বন্ধ সেদিনও ষড়যন্ত্রকারী(?) মওলানা সাহেবকে রাখার জন্য ঢাকার তথাকথিত কাউন্সিল অধিবেশন সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাশ করে। মুজিবর সাহেব বিবৃতি দেওয়ার সময়বোধ হয় উহা ভুলিয়া গিয়াছিলেন।

মওলানা সাহেব খাদ্যসমস্যা, ২১ দফা রূপায়ণ, ঘোড়দৌড় বন্ধ, জুয়া ও বেশ্যাবৃত্তি নিষিদ্ধকরণে ব্যর্থ হওয়াই যে সমস্ত অভিযোগ আনয়ন করিয়াছেন, শেখ সাহেব সুকৌশলে সেগুলি এড়াইয়া যাইয়া অন্য প্রসঙ্গের অবতারণা করিয়া জনসাধারণকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করিয়াছেন।

২১ দফা ওয়াদা সম্পর্কে তাহারা সস্তায় বাজিমাত করার জন্য কয়েকদফা পূরণ করিয়া বাকিগুলি পূরণ করিতে ৫ বৎসর সময় লাগিবে বলিয়া আগামী নির্বাচনে জনসাধারণের নিকট হইতে ভোট আদায় করার সুচতুর জনাব মুজিবুর গং উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছেন। দুর্নীতি দমন মন্ত্রী দুর্নীতি দমনে তাহার ব্যর্থতা ঢাকিতে গিয়া পদত্যাগী রাজস্বমন্ত্রী জনাব মাহমুদ আলী সম্পর্কেও উদ্দেশ্যমূলক ইঙ্গিত করিয়াছেন। অথচ ২১ দফার যে কয়দফা করা হইয়াছে বলিয়া তিনি বাহবা নিতে চাহিয়াছেন তাহার গুরুত্বপূর্ণ কয়েক দফা যেমন সার্টিফিকেট রহিত, পাট্টা কালিয়তের কর রহিত, সুদমাফ ইত্যাদি তো প্রাক্তন রাজস্বমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সময়ই করা হইয়াছে। কাগমারী অধিবেশনটি ছিল প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন। কাজেই ইহার ভাল-মন্দর জন্য দায়ী গোটা প্রাদেশিক ওয়ার্কিং কমিটি। কাগমারী সম্পর্কে নিজেদের দাযিত্ব এড়াইয়া সম্পূর্ণ দায়ী করা হইয়াছে মওলানা সাহেবকে। বলা হইয়াছে, কোন আলোচনা নাকি তাহাদের সঙ্গে করা হয় নাই। ইহা কতদূর। বিশ্বাসযোগ্য তাহা দেশবাসী বিচার করিবেন, কেননা প্রাদেশিক ওয়ার্কিং কমিটি বা কাউন্সিল অধিবেশনেও এই শেখ সাহেব গং এ-কথা তোলেন নাই। হঠাৎ আজ একথা তুলিয়া নিজেদের অক্ষমতা ও ব্যর্থতা ঢাকা এবং জনসাধারণের কাছে মওলানা সাহেবকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করিতেও কার্পণ্য করেননি। গোয়েবলসের নীতি মত একটি মিথ্যাকে একশতবার সত্য বলিয়া প্রচার করার নীতি তাহার এবং তাহাদের ঢাকটি গ্রহণ করিয়াছে। কাগমারী প্রসঙ্গ টানিয়া আনিয়া তিনি ইহাই প্রমাণ করিলেন যে সংগঠনের সভাপতির বিরুদ্ধে তথা সংগঠনের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী প্রচারণার ষড়যন্ত্রের আড়ালে কে বা কাহারা ছিলেন। এবং সেই জন্যই সংগঠনের সেক্রেটারী হইয়াও সভাপতির নামে মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে তিনি একটি রাও করেননি। জনাব সোহরাওয়ার্দীর পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গ শেখ সাহেব ভুলিয়াছেন তিনি বলিয়াছেন মওলানা সাহেব নাকি জাতীয় পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হইলেই উহা গ্রহণ করিবেন। আমাদের জিজ্ঞাসা পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে সামরিক চুক্তিগুলিকে তীব্র বিরোধিতা করার সুস্পষ্ট ঘোষণা সত্বেও আওয়ামী লীগ গঠনতন্ত্রের রক্ষকরা জনাব শেখ সাহেবের কি সে নির্দেশ নিজেরা পালন করিয়া সমস্যা সম্পর্কে কোন উক্তি পর্যন্ত করেন নাই, সাহায্যে আগাইয়া আসাতো দূরের কথা।

শেখ মুজিবর রহমান মওলানা সম্পর্কে গঠনতন্ত্র খেলাপের অভিযোগ আনয়ন করিয়াছেন। দেশবাসী অবগত আছেন গঠনতন্ত্রের প্রতি গণতন্ত্রের প্রতি মওলানা সাহেবের পরাকাষ্ঠা কাহারও চাইতে কম নহে। অথচ আওয়ামী লীগের সহিত আলোচনা না করিয়া জনাব শহীদ সাহেবের ৯২ (ক) ধারার আমলে আইন মন্ত্রীর পদ গ্রহণ, আওয়ামী লীগ কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্তকে পদাঘাত করিয়া দেশের বাহিরে বসিয়া বাগদাদ চুক্তির মহিমা কীত্তন আরম্ভ করিলেন; কিন্তু এই শেখ সাহেবরা তখন নীরব ছিলেন। বরঞ্চ সংগঠনের সিদ্ধান্ত বিরোধী এই কার্যের প্রতিবাদ করিয়া সংগঠনের এবং জনতার একনিষ্ঠ কর্মীরা যখন আগাইয়া আসিলেন, এই শেখ সাহেবের উক্তির সমালোচনা দূরে থাকুক, বরঞ্চ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকে অংকুরে বিনাশ করার জন্য জনসাধারণকে প্রকৃত ঘটনা হইতে দূরে রাখার জন্য এক ফরমান জারী করিয়া বিবৃতি প্রভৃতি মারফত প্রতিবাদ করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিলেন। এই কি প্রতিষ্ঠানের নীতি ও আদর্শের প্রতি নিষ্ঠার নিদর্শন?

কিছুদিন পূর্বেও ভয়াবহ খাদ্যসংকটকে উপেক্ষা করিয়া কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক খাদ্য মন্ত্রী পূর্বতন সরকারের মতই দেশে খাদ্যাভাব নাই বলিয়া উক্তি করিয়াছিলেন। তরুণ বিপ্লবী শেখ মুজিবুর কিন্তু সেদিনও মুখ খুলেন নাই। আসলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্যই বর্তমান নীতি বিচ্যুত মন্ত্রী দলের নেতৃত্ব বিবৃতি প্রচার করিয়া বেড়াইতেছেন। তাহাদের মুখের গালভরা. কথায় জনসাধারণের স্বপক্ষে রাখা যাইতেছে না দেখিয়া তাহারাও সেই পুরাতন চার কথা বলা শুরু করিয়া দিয়াছেন। আজ খাদ্যের দাবি, বিড়ির পাতার ব্যবস্থা, তোঘলোকি নীতি প্রভৃতি সম্পর্কে বলিলেই তাহাদের মুখে পুরাতন বুলি কমিউনিস্ট, ভারতের দালাল, ধ্বংসাত্মক কার্য্যাবলী ইত্যাদি শোনা যাইতেছে। দেশবাসী এই সমস্ত গালী সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। কেননা এর আগেও জনসাধারণের দাবি দাওয়ার আন্দোলন, রাষ্ট্রভাষার। আন্দোলন, প্রভৃতি নিয়া এদেশের অগণিত নিঃস্বার্থ কর্মী নেতা বহুবারই কমিউনিস্ট, ভারতের দালাল প্রভৃতি গালিগালাজ শুনিয়াছেন। কাজেই সচেতন পাকিস্তান কর্মীকে বিশেষ করিয়া পূর্ব বাংলার কোটি কোটি মেহনতি কৃষক শ্রমিক ব্যবসায়ী ছাত্র যুবককে বিভক্ত করা যাইবে না। মিথ্যা প্রচারণা, বিভ্রান্তি, গুণ্ডামী, নিপীড়ন প্রভৃতি দ্বারা দেশবাসীর গণতান্ত্রীক আন্দোলনকে কিছুতেই থামাইয়া রাখা যাইবে না। পরিশেষে আমরা দেশের অগণিত বুভুক্ষু জনসাধারণকে তাহাদের মুক্তিসনদ ২১ দফা রূপায়ণে স্বায়ত্বশাসন আদায়ে আগাইয়া আসিতে আবেদন জানাইতেছি এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করত ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন সৃষ্টির জন্য আগাইয়া আসিতে আবেদন করিতেছি।

দৈনিক সংবাদ : ২ আগস্ট ১৯৫৭

শেখ মুজিবের প্রতিবাদ

প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান জানাইয়াছেন যে, তিনি পাকিস্তান টি-বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন কোন বেতন গ্রহণ করিবেন না। ইতিপূর্বে সংবাদে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ করিয়া শেখ মুজিবুর বলিয়াছেন যে, টি-বোর্ডের চেয়ারম্যান রূপে মাসিক চার হাজার টাকা বেতন গ্রহণের খবরের মূলে কোন সত্য নাই।

দৈনিক সংবাদ : ৯ আগস্ট ১৯৫৭