রাজনীতিতে ধর্মকে সম্পৃক্ত করতে না বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু

মিথুশিলাক মুরমু

ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন জানুয়ারি ৩০ ঘোষিত হলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হৃদয়াকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দেয়। অবশ্য ইতোমধ্যেই পদ্মা-মেঘনা-বুড়িগঙ্গা নদীতে অনেক জল গড়িয়েছে; পেছানো সম্ভবপর হলো পূর্বঘোষিত নির্বাচনের তারিখ। কিন্তু যেটি উন্মোচিত হলো, সেটি হচ্ছে সরকারের মধ্যেই ভূত রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মকে সর্বদা রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছেন; আর এক শ্রেণীর অনুসারীরা বারবারই বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের স্বপ্নকে কালিমাযুক্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজার দিনে নির্বাচন কমিশন হিসাব-নিকাশ ছাড়াই দিন ধার্য করা সরকারের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। কখনও কখনও আমার মনে হয়, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানেন না বাংলাদেশে কতোগুলো ধর্ম রয়েছে? প্রশ্নের উত্তরে সহজেই বলবেন- ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, বাহাই। তারপরও যে অনেক ধর্মমত রয়েছে সেগুলো কখনোই খুঁটিয়ে দেখেননি। তবে পবিত্র সংবিধানে স্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে, ২ ক. রাষ্ট্রধর্ম ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ এখানে স্মতর্ব্য যে, ‘অন্যান্য ধর্ম’ অর্থাৎ দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ধর্মকেও স্বীকার ও স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরই বলে থাকেন ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ স্লোগান আমাদেরও মোহিত করে। তাহলে এরা কারা, যারা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বজনীন ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়! বঙ্গবন্ধু শাসনতন্ত্র অনুমোদনের পরবর্তীকালে সিরাজগঞ্জে এক জনসভায় ভাষণে বলেছেন, ‘শাসনতন্ত্রে লিখে দিয়েছি যে কোনদিন আর শোষকরা বাংলার মানুষকে শোষণ করতে পারবে না ইনশাল্লাহ। ... আমার রাষ্ট্র হবে ধর্মনিরপেক্ষ। মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে, হিন্দু তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে, বুদ্ধিষ্ট তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। তবে একটা কথা হলো, এই ধর্মের নামে আর ব্যবসা করা যাবে না। (২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩)। আর শাসনতন্ত্র অনুমোদনের দিনে নভেম্বর ৪, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘... বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করব না। ... আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না ...।’ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় তাহলে কী ষড়যন্ত্র হচ্ছে! অন্যের ধর্মীয় অধিকার খর্বের মধ্যে মহত্ত্ব থাকে না; বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী যখন সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উৎসব-পূজা-পার্বন, সামাজিক অনুষ্ঠানাদিকে সম্মান করে, তখনই সরকার, জাতি ও দেশ সম্মানিত হয়ে থাকে।

আমরা বিশ্বাস করি, যারা বুদ্ধিদীপ্ত, চৌকস এবং দেশ-দুনিয়ার আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয়সহ বহুধা জ্ঞানের সম্মিলন ঘটাতে সমর্থ, তাদেরই এরূপ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমাদের নির্বাচন কমিশন কী সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে! আমরা কোন কোন সময় দেশ-বিদেশের উদাহরণ নিয়ে দেশবাসীকে ধোঁয়াশা করে তুলি; কিন্তু সত্যিকার অর্থে জাতির জনকও অন্য দেশের ব্যাখ্যাকে আমলে নেননি। সেদিন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, পাশ্চাত্যে ‘সেক্যুলারিজম’ শব্দটিকে ধর্মহীনতার অর্থে ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে এটির বাংলা প্রতিশব্দ করা হয়েছে ‘ইহজাগিতকতা’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সেক্যুলারিজম’ শব্দটির বাংলারূপ দিয়েছেন ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’; লক্ষ্যণীয় যে, তিনি ইহজাগতিকতা বা নাস্তিকতাবাদ বোঝাননি। “বঙ্গবন্ধু একবার দুজন খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে আলাপের সময় (সৈয়দ মুজতবা আলী ও সন্তোষ কুমার ঘোষ) বলেছিলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ ও সেক্যুলার বাঙালি জাতির অস্তিত্বের রক্ষাকারী হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। আমি এই ধর্মনিরপেক্ষতার চারা বাংলাদেশের মাটিতে পুঁতে রেখে গেলাম। যদি কেউ এই চারা উৎপাটন করে, তাহলে বাঙালি জাতির স্বাধীন অস্তিত্বই সে বিপন্ন করবে’ (দৈনিক যুগান্তর-কলকাতার), ২৯ নভেম্বর, ১৯৭২)।

আমাদের নির্বাচন কমিশন সচিব আলমগীর বক্তব্যে বলেছেন, ‘পূজা ২৯ জানুয়ারি। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন পূজা ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টা পর্যন্ত লগ্ন রয়েছে। পূজার দিন কিন্তু নির্বাচনের দিন নয়।’ অর্থাৎ তিনি পূজোর সময়কালকে গণনা করতে নারাজ। ৩০ তারিখ বেলা ১১টা পর্যন্ত যদি পূজার কার্যাদি থাকে, তাহলে সেই ধর্মের অনুসারীদের হৃদয়ের মনোব্যথাকে বাইরে থেকে বোঝা খুবই দুঃসাধ্য। মাননীয় সচিব আলমগীর সবই বুঝেছেন কিন্তু কর্তৃত্ব ধরে রাখতে চেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে সবার প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা খুবই দরকার। আর ধর্মীয় আচারাদি ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য দুটোই একে-অপরের পরিপূরক। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কিংবা জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর কোন আচার-অনুষ্ঠানকে যেন বিঘ্ন না করে। প্রত্যেকটি নাগরিক যাতে উৎসাহে, উৎসবে উৎজ্জীবিত হয়ে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেটির দিকে খেয়াল রাখা নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পরে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোন ধর্মীয়ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক-হিন্দু-মুসলমান সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে।’

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ , ৭ মাঘ ১৪২৬, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

রাজনীতিতে ধর্মকে সম্পৃক্ত করতে না বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু

মিথুশিলাক মুরমু

ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন জানুয়ারি ৩০ ঘোষিত হলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হৃদয়াকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দেয়। অবশ্য ইতোমধ্যেই পদ্মা-মেঘনা-বুড়িগঙ্গা নদীতে অনেক জল গড়িয়েছে; পেছানো সম্ভবপর হলো পূর্বঘোষিত নির্বাচনের তারিখ। কিন্তু যেটি উন্মোচিত হলো, সেটি হচ্ছে সরকারের মধ্যেই ভূত রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মকে সর্বদা রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছেন; আর এক শ্রেণীর অনুসারীরা বারবারই বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের স্বপ্নকে কালিমাযুক্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজার দিনে নির্বাচন কমিশন হিসাব-নিকাশ ছাড়াই দিন ধার্য করা সরকারের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। কখনও কখনও আমার মনে হয়, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানেন না বাংলাদেশে কতোগুলো ধর্ম রয়েছে? প্রশ্নের উত্তরে সহজেই বলবেন- ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, বাহাই। তারপরও যে অনেক ধর্মমত রয়েছে সেগুলো কখনোই খুঁটিয়ে দেখেননি। তবে পবিত্র সংবিধানে স্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে, ২ ক. রাষ্ট্রধর্ম ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ এখানে স্মতর্ব্য যে, ‘অন্যান্য ধর্ম’ অর্থাৎ দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ধর্মকেও স্বীকার ও স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরই বলে থাকেন ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ স্লোগান আমাদেরও মোহিত করে। তাহলে এরা কারা, যারা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বজনীন ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়! বঙ্গবন্ধু শাসনতন্ত্র অনুমোদনের পরবর্তীকালে সিরাজগঞ্জে এক জনসভায় ভাষণে বলেছেন, ‘শাসনতন্ত্রে লিখে দিয়েছি যে কোনদিন আর শোষকরা বাংলার মানুষকে শোষণ করতে পারবে না ইনশাল্লাহ। ... আমার রাষ্ট্র হবে ধর্মনিরপেক্ষ। মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে, হিন্দু তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে, বুদ্ধিষ্ট তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। তবে একটা কথা হলো, এই ধর্মের নামে আর ব্যবসা করা যাবে না। (২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩)। আর শাসনতন্ত্র অনুমোদনের দিনে নভেম্বর ৪, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘... বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করব না। ... আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না ...।’ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় তাহলে কী ষড়যন্ত্র হচ্ছে! অন্যের ধর্মীয় অধিকার খর্বের মধ্যে মহত্ত্ব থাকে না; বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী যখন সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উৎসব-পূজা-পার্বন, সামাজিক অনুষ্ঠানাদিকে সম্মান করে, তখনই সরকার, জাতি ও দেশ সম্মানিত হয়ে থাকে।

আমরা বিশ্বাস করি, যারা বুদ্ধিদীপ্ত, চৌকস এবং দেশ-দুনিয়ার আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয়সহ বহুধা জ্ঞানের সম্মিলন ঘটাতে সমর্থ, তাদেরই এরূপ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমাদের নির্বাচন কমিশন কী সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে! আমরা কোন কোন সময় দেশ-বিদেশের উদাহরণ নিয়ে দেশবাসীকে ধোঁয়াশা করে তুলি; কিন্তু সত্যিকার অর্থে জাতির জনকও অন্য দেশের ব্যাখ্যাকে আমলে নেননি। সেদিন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, পাশ্চাত্যে ‘সেক্যুলারিজম’ শব্দটিকে ধর্মহীনতার অর্থে ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে এটির বাংলা প্রতিশব্দ করা হয়েছে ‘ইহজাগিতকতা’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সেক্যুলারিজম’ শব্দটির বাংলারূপ দিয়েছেন ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’; লক্ষ্যণীয় যে, তিনি ইহজাগতিকতা বা নাস্তিকতাবাদ বোঝাননি। “বঙ্গবন্ধু একবার দুজন খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে আলাপের সময় (সৈয়দ মুজতবা আলী ও সন্তোষ কুমার ঘোষ) বলেছিলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ ও সেক্যুলার বাঙালি জাতির অস্তিত্বের রক্ষাকারী হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। আমি এই ধর্মনিরপেক্ষতার চারা বাংলাদেশের মাটিতে পুঁতে রেখে গেলাম। যদি কেউ এই চারা উৎপাটন করে, তাহলে বাঙালি জাতির স্বাধীন অস্তিত্বই সে বিপন্ন করবে’ (দৈনিক যুগান্তর-কলকাতার), ২৯ নভেম্বর, ১৯৭২)।

আমাদের নির্বাচন কমিশন সচিব আলমগীর বক্তব্যে বলেছেন, ‘পূজা ২৯ জানুয়ারি। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন পূজা ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টা পর্যন্ত লগ্ন রয়েছে। পূজার দিন কিন্তু নির্বাচনের দিন নয়।’ অর্থাৎ তিনি পূজোর সময়কালকে গণনা করতে নারাজ। ৩০ তারিখ বেলা ১১টা পর্যন্ত যদি পূজার কার্যাদি থাকে, তাহলে সেই ধর্মের অনুসারীদের হৃদয়ের মনোব্যথাকে বাইরে থেকে বোঝা খুবই দুঃসাধ্য। মাননীয় সচিব আলমগীর সবই বুঝেছেন কিন্তু কর্তৃত্ব ধরে রাখতে চেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে সবার প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা খুবই দরকার। আর ধর্মীয় আচারাদি ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য দুটোই একে-অপরের পরিপূরক। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কিংবা জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর কোন আচার-অনুষ্ঠানকে যেন বিঘ্ন না করে। প্রত্যেকটি নাগরিক যাতে উৎসাহে, উৎসবে উৎজ্জীবিত হয়ে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেটির দিকে খেয়াল রাখা নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পরে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোন ধর্মীয়ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক-হিন্দু-মুসলমান সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে।’