ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাস নিশ্চিত হোক

সাহিদা সাম্য লীনা

‘প্রতিটি শিশু আশা নিয়ে জন্মে। শৈশবে সে কিছু সোনালি স্বপ্ন দেখে। কৈশোরে সে আরও বেশি আশাবাদী হয়ে ওঠে। যৌবনকালে সে মৃত্যু কিংবা পরাজয়ে বিশ্বাস করে না। বার্ধক্য আসে, জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। স্বপ্নগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বাতাসে উড়ে বেড়ায়। আর তখনই মানুষ নিরাশ হয়ে যায়।’ -স্বামী বিবেকানন্দ।

আজকের একবিংশ শতাব্দীর এমন লগ্নে, এসে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে বলতে হয়, এ ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য কেমন পৃথিবী দেখছি! কী রেখে যাব আমরা তাদের জন্য! জন্মের কিছুকাল পরেই তারা ভয়ংকর সব দৃশ্য দেখে যাচ্ছে। যে দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞাত হয় না সে কিভাবে নিষ্ঠুরতার শিকার হয়! আমরা আদৌ কি পেরেছি উন্নত প্রজাতিতে পৌঁছতে? আমরা সামনে নয় যেন পেছনেই যাচ্ছি ক্রমাগত! আমরা সভ্য জগতেও আসিনি বরং অসভ্য, বর্বর যুগে আবার ফেরত গিয়েছি। প্রতি সেকেন্ডে ঘড়ির কাঁটা আমাদের কে বলে দিচ্ছে তোমরা সামনে নয়, পেছনে যাও! যত উন্নত, তত অবনতি। যত শিক্ষিত হচ্ছে তত চিন্তা-ভাবনায় নিষ্ঠুর সব কাজ বেরিয়ে আসছে। যা হওয়ার নয় তাই হচ্ছে। অসুস্থ মস্তিষ্ক, মানসিক ভারসাম্যহীন দৃশ্য এখন সব ক্ষেত্রেই, সব সম্পর্কে। সবাই কেমন যেন বর্বর, হিংস্র্র হয়ে যাচ্ছে। বহির্জগতে আর অন্দরে কোথাও আজ নিরাপত্তা নেই। যে কোন সময়, যে কোন কাজে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যেতে পারে যে কেউ। নিরাপদ না কোন সম্পর্ক, চাওয়া-পাওয়ায় ও স্নেহ মায়ায়! সেখানেও প্রতারণার ঘাটতি। পৃথিবীর সর্বোত্তম নিরাপদ যে জায়গা তা আজ কলঙ্কময়! নিরাপদ না নিজ বাবা-মা। একজন শিশু, শিশুই নিজের কাছে, বড়দের কাছে, সমাজের কাছে। যতক্ষণ না, নিজের আয়ত্তে আর চলতে বেড়ে না উঠে, বয়োপ্রাপ্ত না হয় সে শিশু। শিশুর পক্ষে সম্ভব না নিজেকে সমূহ কোন বিপদ হতে মুক্ত করা। বড়রা যেখানে পারে না, সেখানে শিশুর পক্ষে অসম্ভব। শিশুর নিরাপদ শৈশব, স্থান, পাত্র আজ অনিশ্চিত এমন এক দৈব অপশক্তির ক্ষমতায় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা ফেঁসে গেছে যার কোন সুষ্ঠু সমাধান নেই। কার বিরুদ্ধে বলবে একজন শিশু? নিজ বাবার? নিজ মায়ের? এক সময় সৎ বাবা-মার ওপর অভিযোগের তীর আসত। সমাজে সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। যা ভাবার অবকাশ রাখে না তাই ঘটে যাচ্ছে অবিরত।

সুনামগঞ্জের শিশু তুহিন নিজ পিতা ও চাচার নিষ্ঠুরতার শিকার! মানবতা উবে গেছে পিতার হৃদয় হতে! কেমন অবিশ্বাস্য ঘটনা! কী নির্মম সে চিত্র! প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এমন ষড়যন্ত্র নিজ সন্তানের প্রতি। একটু বুক কাঁপেনি তুহিনের বাবার! একদিনও কী সে সন্তানকে আদর করেনি? কোলে নেয়নি! খাবার এনে দেয়নি! মুখে তুলে খাওয়ায়নি? আমাদের বাদবাকি শিশুরা এসব দেখে কি শিখছে? তারা কি স্বাভাবিক আছে? এখনকার শিশুদের হাতের নাগালে সব ডিভাইস, পত্রপত্রিকা, টিভির খবর। শোনে স্কুলে সহপাঠীর আলোচনায়; আর অজানা থাকার কথা নয় এসব! আতঙ্কে আমাদের শিশুরা আজ। আমরা তুহিনের কাছে হেরে গেছি! তুহিনদের আমরা রক্ষা করতে পারি না। তুহিনের ভাগ্য নির্ধারণ ভালো, সুস্থ পিতার ঘরে রচিত হয়নি। ঘুমন্ত তুহিন জেনে যেতে পারেনি সে কার কাছে তার ছোট্ট প্রাণটা কে বলি দিয়েছে! না জেনে ভালোই হয়েছে! অন্তত, একটা কষ্ট হতে সে মুক্তি পেয়েছে! শিশুদের সুরক্ষায় দেশব্যাপী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে ইউনিসেফের সহায়তায় চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ চালু হয়েছিল। দেশের যে কোনো প্রান্তের কোন শিশু কোন ধরনের সহিংসতা, নির্যাতন ও শোষণের শিকার হলে শিশু নিজে অথবা অন্য যে কোন ব্যক্তি বিনামূল্যে ১০৯৮ হেল্পলাইনে ফোন করে সহায়তা চাইতে পারবে, এক্ষেত্রে প্রতিকার চাইবার পথটি সহজ হয়ে যাবে এই মর্মে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অধীন সমাজসেবা অধিদফতর শিশু আইন ২০১৩ অনুসারে শিশু অধিকার ও শিশুর সামাজিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দেশব্যাপী child help line 1098 এর কার্যক্রম গত ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে। পরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে child help line 1098 এর দেশব্যাপী চালুর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। কিন্তু সে সুফল কী আজ দেশে একবারও কোন শিশু পেয়েছে? কেন একের পর এক শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে? উদ্যোগের কার্যকারিতা হচ্ছে কি আমরা তদন্ত করেছি?

এ বছর এপ্রিলে আন্তর্জাতিক শিশু সংস্থা (ইউনিসেফ) জানিয়েছে বাংলাদেশের ১ কোটি ৯০ লাখ শিশু জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে বন্যা ও ঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ঘরে ঘরে অনিশ্চিত, অনিরাপদ সম্পর্কের ঝুঁকি নিয়ে যেসব শিশু রয়েছে ইউনিসেফ ও সরকার কি ভাবছে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত আসা দরকার। পরিবারকে ডেকে এনে উঠান বৈঠক করে নির্দেশনা দিয়ে দিতে পারে। যদিও কাজগুলো দুরূহ! এখন বাবা-মা, স্বজনদের বিশেষ ট্র্রেনিং এর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে শিশু পালন ও তাদের অধিকার রক্ষায়। ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের রক্ষায় মাঠপর্যায়ে এমন আরও উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এক সময় শিক্ষার হার, বাল্যবিয়ে নিয়ে সরকার বিরতীহীন কাজ করে গেছে। ফলে, আজ শিক্ষিত ও বাল্যবিয়ের হার কমেছে। এক সময় শিশু নির্যাতনও কমে যাবে। যদি সময় থাকতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া যায়। টেবিলে উত্থাপন ও আলোচনা করেই শুধু কাজ শেষ না, সেগুলো বাস্তবায়ন জরুরি। বিদেশে একটি শিশুর নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকার কঠোর। বাবা-মাকে পর্যন্ত জেলে যেতে হয় কোন রকম গাফলতির প্রমাণ পেলে। সেখানে আমাদের সরকার দেশীয় শিশুদের নিয়ে উদাস! ডিজিটাল দেশের পরিপূর্ণতায় এ প্রজন্মকে সুস্থভাবে বাঁচানো প্রয়োজন। প্রজন্ম ধ্বংস হলে কি হবে এ দেশ, সমাজের উন্নতির? মোট কথায়, শিশুর সুরক্ষার মূল জায়গায় যেতে হবে।

ড. এপিজে আবুল কালাম বলেছেন, ‘আমরা আজকের দিনটি উৎসর্গ করি যেন আমাদের শিশুরা একটি সুন্দর আগামী পেতে পারে’ শিশুদের কাছে অনেক কিছু অজানা থাকার কথা! আজ যে পরিস্থিতি মনে হয় নিজ বাবা-মা থেকেও শিশুদের শিখাতে হবে সতর্ক থেকো! বড্ড দুঃখজনক পরিবেশ দেশটাকে ক্রমান্বয়ে ঢেকে নিয়েছে। তার থেকে উত্তরণের পথ আমরা নিজেরাও জানি না। তবু আগামী প্রজন্মকে আমাদের বাঁচাতে হবে যে কোন মূল্যে! কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, শিশুরা হচ্ছে এমন এক প্রকার প্রাণী, যারা নিজেরা নিজেদের জগত তৈরি করে’- এ শিশুরা আমাদের আগামী। আমাদের ধারাবাহিকতা। ওদের জন্য আমাদেরই সাজাতে হবে সুন্দর একটি বাগান। এই বাগানের পরিচর্যায় সৃজনশীল, প্রগতিশীলরা পারে সর্বাত্মক সূচনা দিতে। কবি, সাহিত্যিক ছাড়া উদার, উন্নত সৃজনী ক্ষমতা আর কারও নেই। সে বাগানের মালী হয়ে, যে কেউ যুক্ত হতে পারেন শিশুদের পরিচর্যায়। যেখানে গরিব, অসহায় শিশুরা অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকে তাদের নিয়ে ভাবা যায় প্রথমে। যার, যার শিশু লালন-পালনের পাশাপাশি ওদেরও তুলে আনা আবশ্যক। ওই শিশুরাই আমাদের আসল ঠিকানা, ওদের তৈরি করতে পারলেই বাংলাদেশ আরও উঁচুতে দাঁড়াবে।

[ লেখক : সম্পাদক, আঁচল ]

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ , ৭ মাঘ ১৪২৬, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাস নিশ্চিত হোক

সাহিদা সাম্য লীনা

‘প্রতিটি শিশু আশা নিয়ে জন্মে। শৈশবে সে কিছু সোনালি স্বপ্ন দেখে। কৈশোরে সে আরও বেশি আশাবাদী হয়ে ওঠে। যৌবনকালে সে মৃত্যু কিংবা পরাজয়ে বিশ্বাস করে না। বার্ধক্য আসে, জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। স্বপ্নগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বাতাসে উড়ে বেড়ায়। আর তখনই মানুষ নিরাশ হয়ে যায়।’ -স্বামী বিবেকানন্দ।

আজকের একবিংশ শতাব্দীর এমন লগ্নে, এসে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে বলতে হয়, এ ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য কেমন পৃথিবী দেখছি! কী রেখে যাব আমরা তাদের জন্য! জন্মের কিছুকাল পরেই তারা ভয়ংকর সব দৃশ্য দেখে যাচ্ছে। যে দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞাত হয় না সে কিভাবে নিষ্ঠুরতার শিকার হয়! আমরা আদৌ কি পেরেছি উন্নত প্রজাতিতে পৌঁছতে? আমরা সামনে নয় যেন পেছনেই যাচ্ছি ক্রমাগত! আমরা সভ্য জগতেও আসিনি বরং অসভ্য, বর্বর যুগে আবার ফেরত গিয়েছি। প্রতি সেকেন্ডে ঘড়ির কাঁটা আমাদের কে বলে দিচ্ছে তোমরা সামনে নয়, পেছনে যাও! যত উন্নত, তত অবনতি। যত শিক্ষিত হচ্ছে তত চিন্তা-ভাবনায় নিষ্ঠুর সব কাজ বেরিয়ে আসছে। যা হওয়ার নয় তাই হচ্ছে। অসুস্থ মস্তিষ্ক, মানসিক ভারসাম্যহীন দৃশ্য এখন সব ক্ষেত্রেই, সব সম্পর্কে। সবাই কেমন যেন বর্বর, হিংস্র্র হয়ে যাচ্ছে। বহির্জগতে আর অন্দরে কোথাও আজ নিরাপত্তা নেই। যে কোন সময়, যে কোন কাজে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যেতে পারে যে কেউ। নিরাপদ না কোন সম্পর্ক, চাওয়া-পাওয়ায় ও স্নেহ মায়ায়! সেখানেও প্রতারণার ঘাটতি। পৃথিবীর সর্বোত্তম নিরাপদ যে জায়গা তা আজ কলঙ্কময়! নিরাপদ না নিজ বাবা-মা। একজন শিশু, শিশুই নিজের কাছে, বড়দের কাছে, সমাজের কাছে। যতক্ষণ না, নিজের আয়ত্তে আর চলতে বেড়ে না উঠে, বয়োপ্রাপ্ত না হয় সে শিশু। শিশুর পক্ষে সম্ভব না নিজেকে সমূহ কোন বিপদ হতে মুক্ত করা। বড়রা যেখানে পারে না, সেখানে শিশুর পক্ষে অসম্ভব। শিশুর নিরাপদ শৈশব, স্থান, পাত্র আজ অনিশ্চিত এমন এক দৈব অপশক্তির ক্ষমতায় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা ফেঁসে গেছে যার কোন সুষ্ঠু সমাধান নেই। কার বিরুদ্ধে বলবে একজন শিশু? নিজ বাবার? নিজ মায়ের? এক সময় সৎ বাবা-মার ওপর অভিযোগের তীর আসত। সমাজে সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। যা ভাবার অবকাশ রাখে না তাই ঘটে যাচ্ছে অবিরত।

সুনামগঞ্জের শিশু তুহিন নিজ পিতা ও চাচার নিষ্ঠুরতার শিকার! মানবতা উবে গেছে পিতার হৃদয় হতে! কেমন অবিশ্বাস্য ঘটনা! কী নির্মম সে চিত্র! প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এমন ষড়যন্ত্র নিজ সন্তানের প্রতি। একটু বুক কাঁপেনি তুহিনের বাবার! একদিনও কী সে সন্তানকে আদর করেনি? কোলে নেয়নি! খাবার এনে দেয়নি! মুখে তুলে খাওয়ায়নি? আমাদের বাদবাকি শিশুরা এসব দেখে কি শিখছে? তারা কি স্বাভাবিক আছে? এখনকার শিশুদের হাতের নাগালে সব ডিভাইস, পত্রপত্রিকা, টিভির খবর। শোনে স্কুলে সহপাঠীর আলোচনায়; আর অজানা থাকার কথা নয় এসব! আতঙ্কে আমাদের শিশুরা আজ। আমরা তুহিনের কাছে হেরে গেছি! তুহিনদের আমরা রক্ষা করতে পারি না। তুহিনের ভাগ্য নির্ধারণ ভালো, সুস্থ পিতার ঘরে রচিত হয়নি। ঘুমন্ত তুহিন জেনে যেতে পারেনি সে কার কাছে তার ছোট্ট প্রাণটা কে বলি দিয়েছে! না জেনে ভালোই হয়েছে! অন্তত, একটা কষ্ট হতে সে মুক্তি পেয়েছে! শিশুদের সুরক্ষায় দেশব্যাপী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে ইউনিসেফের সহায়তায় চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ চালু হয়েছিল। দেশের যে কোনো প্রান্তের কোন শিশু কোন ধরনের সহিংসতা, নির্যাতন ও শোষণের শিকার হলে শিশু নিজে অথবা অন্য যে কোন ব্যক্তি বিনামূল্যে ১০৯৮ হেল্পলাইনে ফোন করে সহায়তা চাইতে পারবে, এক্ষেত্রে প্রতিকার চাইবার পথটি সহজ হয়ে যাবে এই মর্মে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অধীন সমাজসেবা অধিদফতর শিশু আইন ২০১৩ অনুসারে শিশু অধিকার ও শিশুর সামাজিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দেশব্যাপী child help line 1098 এর কার্যক্রম গত ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে। পরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে child help line 1098 এর দেশব্যাপী চালুর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। কিন্তু সে সুফল কী আজ দেশে একবারও কোন শিশু পেয়েছে? কেন একের পর এক শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে? উদ্যোগের কার্যকারিতা হচ্ছে কি আমরা তদন্ত করেছি?

এ বছর এপ্রিলে আন্তর্জাতিক শিশু সংস্থা (ইউনিসেফ) জানিয়েছে বাংলাদেশের ১ কোটি ৯০ লাখ শিশু জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে বন্যা ও ঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ঘরে ঘরে অনিশ্চিত, অনিরাপদ সম্পর্কের ঝুঁকি নিয়ে যেসব শিশু রয়েছে ইউনিসেফ ও সরকার কি ভাবছে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত আসা দরকার। পরিবারকে ডেকে এনে উঠান বৈঠক করে নির্দেশনা দিয়ে দিতে পারে। যদিও কাজগুলো দুরূহ! এখন বাবা-মা, স্বজনদের বিশেষ ট্র্রেনিং এর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে শিশু পালন ও তাদের অধিকার রক্ষায়। ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের রক্ষায় মাঠপর্যায়ে এমন আরও উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এক সময় শিক্ষার হার, বাল্যবিয়ে নিয়ে সরকার বিরতীহীন কাজ করে গেছে। ফলে, আজ শিক্ষিত ও বাল্যবিয়ের হার কমেছে। এক সময় শিশু নির্যাতনও কমে যাবে। যদি সময় থাকতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া যায়। টেবিলে উত্থাপন ও আলোচনা করেই শুধু কাজ শেষ না, সেগুলো বাস্তবায়ন জরুরি। বিদেশে একটি শিশুর নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকার কঠোর। বাবা-মাকে পর্যন্ত জেলে যেতে হয় কোন রকম গাফলতির প্রমাণ পেলে। সেখানে আমাদের সরকার দেশীয় শিশুদের নিয়ে উদাস! ডিজিটাল দেশের পরিপূর্ণতায় এ প্রজন্মকে সুস্থভাবে বাঁচানো প্রয়োজন। প্রজন্ম ধ্বংস হলে কি হবে এ দেশ, সমাজের উন্নতির? মোট কথায়, শিশুর সুরক্ষার মূল জায়গায় যেতে হবে।

ড. এপিজে আবুল কালাম বলেছেন, ‘আমরা আজকের দিনটি উৎসর্গ করি যেন আমাদের শিশুরা একটি সুন্দর আগামী পেতে পারে’ শিশুদের কাছে অনেক কিছু অজানা থাকার কথা! আজ যে পরিস্থিতি মনে হয় নিজ বাবা-মা থেকেও শিশুদের শিখাতে হবে সতর্ক থেকো! বড্ড দুঃখজনক পরিবেশ দেশটাকে ক্রমান্বয়ে ঢেকে নিয়েছে। তার থেকে উত্তরণের পথ আমরা নিজেরাও জানি না। তবু আগামী প্রজন্মকে আমাদের বাঁচাতে হবে যে কোন মূল্যে! কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, শিশুরা হচ্ছে এমন এক প্রকার প্রাণী, যারা নিজেরা নিজেদের জগত তৈরি করে’- এ শিশুরা আমাদের আগামী। আমাদের ধারাবাহিকতা। ওদের জন্য আমাদেরই সাজাতে হবে সুন্দর একটি বাগান। এই বাগানের পরিচর্যায় সৃজনশীল, প্রগতিশীলরা পারে সর্বাত্মক সূচনা দিতে। কবি, সাহিত্যিক ছাড়া উদার, উন্নত সৃজনী ক্ষমতা আর কারও নেই। সে বাগানের মালী হয়ে, যে কেউ যুক্ত হতে পারেন শিশুদের পরিচর্যায়। যেখানে গরিব, অসহায় শিশুরা অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকে তাদের নিয়ে ভাবা যায় প্রথমে। যার, যার শিশু লালন-পালনের পাশাপাশি ওদেরও তুলে আনা আবশ্যক। ওই শিশুরাই আমাদের আসল ঠিকানা, ওদের তৈরি করতে পারলেই বাংলাদেশ আরও উঁচুতে দাঁড়াবে।

[ লেখক : সম্পাদক, আঁচল ]