গৃহযুদ্ধের সময় নিখোঁজ সবাই মারা গেছে গোতাবেয়ে রাজাপাকশে

শ্রীলঙ্কায় ২৬ বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সময় নিখোঁজ হওয়াদের সবাই মারা গেছে বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে দেশটির কর্র্তৃপক্ষ। রাজধানী কলম্বোতে জাতিসংঘের এক দূতের সঙ্গে বৈঠকে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবেয়ে রাজাপাকশে এ স্বীকারুক্তি দেন। ওই সময় ২০ হাজারেরও বেশি নাগরিক নিখোঁজ হয়। বিবিসি।

শ্রীলঙ্কার আইন অনুযায়ী, ডেথ সার্টিফিকেট না থাকলে নিখোঁজ স্বজনের সম্পত্তি, ব্যাংক একাউন্ট বা অন্য সম্পদ তার পরিবারের সদস্যরা হস্তগত করতে পারবেন না। এক প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যমটি বলেছে, এদিন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক হানা সিঙ্গারের সঙ্গে কলম্বোর বৈঠকে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময় যে ২০ হাজারেরও বেশি নাগরিক নিখোঁজ হয়েছিল তারা সবাই মারা গেছে বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবেয়ে রাজাপাকশে।

এ প্রসঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই নিখোঁজদের ডেথ সার্টিফিকেট দেয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। হানা সিঙ্গারের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট গোতাবেয়ে রাজাপাকশের বৈঠকের দেয়া ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নিখোঁজদের অধিকাংশই লিবারেশন অব তামিল ইলমের (এলটিটিই) নিয়োগকৃত সদস্য ছিল।

ওই বিবৃতির বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রেসিডেন্ট রাজাপাকশে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এ নিখোঁজ ব্যক্তিরা প্রকৃতপক্ষে মারা গেছেন বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।’ নিখোঁজদের পরিবারগুলো বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিয়ে তাদের প্রিয়জনরা কোথায়, তা জানানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল তাদের স্বজনরা এখনও বেঁচে আছে, কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীগুলো তাদের আটকে রেখেছে। তবে তাদের এ ধারণা আগেই প্রত্যাখ্যান করেছিল দেশটির সরকার।

নিখোঁজদের জন্য প্রার্থনা করতে পরিবারের কয়েকশ’ সদস্য প্রতিদিন নিয়মিত মিলিত হয়ে প্রতিবাদ জানানোর মধ্য দিয়ে তাদের স্মৃতি অমলিন রেখেছে।

এদিকে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের বছরগুলোতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকশে ও তার ভাই গোতাবেয়ে রাজাপাকশের বিরোধী বলে চিহ্নিত ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও অধিকার আন্দোলনকারীদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া চলতে থাকে। গ্রেফতার করা এসব ব্যক্তিদেনর খোঁজ আর কখনও পাওয়া যায়নি। এসব ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তাদের কোন ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে রাজাপাকশে সরকার। চলতি মাসের প্রথমদিকে গোতাবেয়ে রাজাপাকশে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে তোলা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগগুলোর কোন ‘ভিত্তি’ নেই।

প্রসঙ্গত, দেশটির তামিল বিদ্রোহীরা পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে যুদ্ধে নামে। কিন্তু দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলী বৌদ্ধ সমর্থিত সরকার শেষ পর্যন্ত তাদের দমন করতে সক্ষম হয়। এর জেরে ২৬ বছর ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলার পর ২০০৯ সালের মে মাসে বিদ্রোহী তামিল টাইগারদের পরাজিত করে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী।

বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২০ , ৮ মাঘ ১৪২৬, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

গৃহযুদ্ধের সময় নিখোঁজ সবাই মারা গেছে গোতাবেয়ে রাজাপাকশে

সংবাদ ডেস্ক |

image

শ্রীলঙ্কায় ২৬ বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সময় নিখোঁজ হওয়াদের সবাই মারা গেছে বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে দেশটির কর্র্তৃপক্ষ। রাজধানী কলম্বোতে জাতিসংঘের এক দূতের সঙ্গে বৈঠকে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবেয়ে রাজাপাকশে এ স্বীকারুক্তি দেন। ওই সময় ২০ হাজারেরও বেশি নাগরিক নিখোঁজ হয়। বিবিসি।

শ্রীলঙ্কার আইন অনুযায়ী, ডেথ সার্টিফিকেট না থাকলে নিখোঁজ স্বজনের সম্পত্তি, ব্যাংক একাউন্ট বা অন্য সম্পদ তার পরিবারের সদস্যরা হস্তগত করতে পারবেন না। এক প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যমটি বলেছে, এদিন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক হানা সিঙ্গারের সঙ্গে কলম্বোর বৈঠকে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময় যে ২০ হাজারেরও বেশি নাগরিক নিখোঁজ হয়েছিল তারা সবাই মারা গেছে বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবেয়ে রাজাপাকশে।

এ প্রসঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই নিখোঁজদের ডেথ সার্টিফিকেট দেয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। হানা সিঙ্গারের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট গোতাবেয়ে রাজাপাকশের বৈঠকের দেয়া ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নিখোঁজদের অধিকাংশই লিবারেশন অব তামিল ইলমের (এলটিটিই) নিয়োগকৃত সদস্য ছিল।

ওই বিবৃতির বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রেসিডেন্ট রাজাপাকশে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এ নিখোঁজ ব্যক্তিরা প্রকৃতপক্ষে মারা গেছেন বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।’ নিখোঁজদের পরিবারগুলো বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিয়ে তাদের প্রিয়জনরা কোথায়, তা জানানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল তাদের স্বজনরা এখনও বেঁচে আছে, কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীগুলো তাদের আটকে রেখেছে। তবে তাদের এ ধারণা আগেই প্রত্যাখ্যান করেছিল দেশটির সরকার।

নিখোঁজদের জন্য প্রার্থনা করতে পরিবারের কয়েকশ’ সদস্য প্রতিদিন নিয়মিত মিলিত হয়ে প্রতিবাদ জানানোর মধ্য দিয়ে তাদের স্মৃতি অমলিন রেখেছে।

এদিকে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের বছরগুলোতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকশে ও তার ভাই গোতাবেয়ে রাজাপাকশের বিরোধী বলে চিহ্নিত ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও অধিকার আন্দোলনকারীদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া চলতে থাকে। গ্রেফতার করা এসব ব্যক্তিদেনর খোঁজ আর কখনও পাওয়া যায়নি। এসব ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তাদের কোন ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে রাজাপাকশে সরকার। চলতি মাসের প্রথমদিকে গোতাবেয়ে রাজাপাকশে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে তোলা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগগুলোর কোন ‘ভিত্তি’ নেই।

প্রসঙ্গত, দেশটির তামিল বিদ্রোহীরা পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে যুদ্ধে নামে। কিন্তু দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলী বৌদ্ধ সমর্থিত সরকার শেষ পর্যন্ত তাদের দমন করতে সক্ষম হয়। এর জেরে ২৬ বছর ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলার পর ২০০৯ সালের মে মাসে বিদ্রোহী তামিল টাইগারদের পরাজিত করে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী।