ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর

অপরাধ করে কেউ পার পাবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আইনের চোখে সব নাগরিক সমান এবং কোন অপরাধীই অপরাধ করে পার পাবে না। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের মাঝে এই উপলব্ধি তৈরি করাতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনের ৯ম কার্যদিবসে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ‘প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও উত্তর’ পর্বে সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার সুনিশ্চিত করাই বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে আইনি সংস্কার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আধুনিক বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে এ দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক ও কলঙ্কিত দিন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে বা আশ্রয় গ্রহণ করে আছে, তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার সব প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। মাদক সমাজের বিষফোঁড়া : প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান সাফল্য হলো- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা। বর্তমান সময়ে মাদক সমস্যা সমাজের একটি বিষফোঁড়া। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। মাদক সংক্রান্ত মামলা সমূহের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছি। মাদকের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও বর্তমানে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত পাঁচ বছরের বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র সংক্রান্ত মামলা, সিলেটে চাঞ্চল্যকর জোড়া শিশু হত্যা মামলা, নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের মামলা এবং জাপানি নাগরিক খুনি ও হোশির হত্যা মামলাসহ চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার শেষ হয়েছে। ‘দল-মত নির্বিশেষে সন্ত্রাসী ওয়ারেন্টভুক্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেফতার করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অবৈধ অস্ত্র বিস্ফোরক এবং মাদকদ্রব্যসহ সব ধরনের অবৈধ মালামাল উদ্ধার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত ও বিশেষ অভিযান পরিচালনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ : প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের লক্ষ্যে ৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে, তার প্রমাণ চাঞ্চল্যকর ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা। মাত্র ৬২ কার্যদিবসে এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনের শাসন নিশ্চিতকল্পে বিচার কাজে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ মেয়াদে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৬ জন ও হাইকোর্ট বিভাগে ৩৭ জন বিচারপতি নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে এবং অধস্তন আদালতে ৬৭১ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০০ জন সহকারী জজ নিয়োগের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

প্রযুক্তির মাধ্যমেই অপরাধীদের ধরা হচ্ছে : তিনি বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহারে যেমন বহুমাত্রিক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি প্রযুক্তি ব্যবহার করেই অপরাধীদেরকে আইনের জালে ধরে ফেলা হচ্ছে। সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধন করে সমাজের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।

মুনাফাখোর ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে : সরকারি দলের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট। অসৎ মুনাফাখোর কতিপয় ব্যবসায়ী মাঝে মধ্যে নিত্য পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন এবং অধিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করে থাকে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি ও বেসরকারিভাবে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকের পণ্য উৎপাদন, বিক্রি ও বাজারজাত করার পদক্ষেপ বিদ্যমান রয়েছে। যাতে কৃষকরা অধিক লাভবান হবে। পুরনো সমবায় আইনকে যুগোপযোগী করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাউল ঐতিহ্য যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় : আইসিটি মামলায় টাঙ্গাইলের বাউল শরিয়ত বয়াতীর গ্রেফতার সংক্রান্ত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাউল শিল্পীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখানে বাউল গানের তো কোন দোষ নেই। বাউল গানে সম্পৃক্ত কেউ যদি কোন অপরাধে সম্পৃক্ত হন তাহলেও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আইন অনুযায়ীই তার অপরাধের বিচার হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নকর্তা কী এমন কোন গ্যারান্টি দিতে পারবেন- বাউল গান করছেন বলেই ওই শিল্পী কোন অপরাধে জড়িত নন। নিশ্চয়ই তিনি এমন কোন অপরাধ করেছেন, যার জন্য তার বিরুদ্ধে এমন আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখন সরকার বাউল গানকে বিশ্বঐতিহ্য করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। তাই অনুরোধ করব, বাউল গানে সম্পৃক্তরা যেন এমন কোন কাজ না করেন, যাতে বিশ্বঐতিহ্য বাউল গান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

এর আগে রাজবাড়ীর পাংশার বাউল সম্প্রদায়ের চুল কেটে দেয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসকদের মতো এখনও যদি চুল কেটে দেয়ার মতো কোন অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সরকার সেটা দেখবে। কারণ অহেতুক চুলকাটা বা বাউলদের প্রতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি গ্রহণযোগ্য নয়। কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানের বাউল সম্প্রদায়ের কল্যাণে তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পঁচাত্তরের পর সামরিক শাসকদের যারাই ক্ষমতায় এসেছে- তাদের মধ্যেই এমন প্রবণতা দেখা গেছে। ক্ষমতায় এসে প্রথমেই তারা চারপাশটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে শুরু করেন, অর্থাৎ সুইপারের দায়িত্ব তারাই নিয়ে নেন। যারা ক্ষমতায় আসেন, তাদের কেউ টি-শার্ট পড়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন, কৃচ্ছতা সাধনের কথা বলেন, কেউ সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাওয়া শুরু করেন। পরে দেখা যায় তারাই সবচেয়ে দামি গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়ান, প্যারিস থেকে স্যুট নিয়ে আসেন, শিফন শাড়ি নিয়ে আসেন। মানুষের চুলকাটাসহ এসব কাজগুলো তারাই করেছেন। অবশ্য তাদের এমন উদ্যোগ বেশি দিন টেকে না। ছয় মাস থাকে, তারপরই দেখা যায় তারা নিজেদের আসল রূপকে প্রকাশ করে ফেলেন।

আরও খবর
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আ’লীগ নেতারা টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন কাল
সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জেলায় ঝরলো পাঁচ প্রাণ
রপ্তানি ৫০ লাখ ডলার হলে বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান এসএমইর মর্যাদা পাবে
রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা মানবিক সংকটে : কাদের
আজ সমাপ্ত দিনের লোকনাট্য ‘ধামাইল’
কক্সবাজারে সৈকত সাংস্কৃতিক উৎসব
সাগরদাঁড়িতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা
পুলিশের ভুলে এক দিন জেল খাটলো তোতলা মিজান
মোহাম্মদ নাসিমের এপিএসকে দুদকে তলব
জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুখোশ পরে বিক্ষোভ
বিএনপি নেতা আমীর খসরু মিথ্যা ভাষণ দিচ্ছেন তথ্যমন্ত্রী
ঢাকা ক্লাবের শীতবস্ত্র বিতরণ
এটিএম বুথের টাকা লুটের নানা কাহিনী

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২০ , ৯ মাঘ ১৪২৬, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর

অপরাধ করে কেউ পার পাবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আইনের চোখে সব নাগরিক সমান এবং কোন অপরাধীই অপরাধ করে পার পাবে না। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের মাঝে এই উপলব্ধি তৈরি করাতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনের ৯ম কার্যদিবসে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ‘প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও উত্তর’ পর্বে সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার সুনিশ্চিত করাই বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে আইনি সংস্কার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আধুনিক বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে এ দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক ও কলঙ্কিত দিন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে বা আশ্রয় গ্রহণ করে আছে, তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার সব প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। মাদক সমাজের বিষফোঁড়া : প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান সাফল্য হলো- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা। বর্তমান সময়ে মাদক সমস্যা সমাজের একটি বিষফোঁড়া। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। মাদক সংক্রান্ত মামলা সমূহের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেছি। মাদকের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও বর্তমানে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত পাঁচ বছরের বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র সংক্রান্ত মামলা, সিলেটে চাঞ্চল্যকর জোড়া শিশু হত্যা মামলা, নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের মামলা এবং জাপানি নাগরিক খুনি ও হোশির হত্যা মামলাসহ চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার শেষ হয়েছে। ‘দল-মত নির্বিশেষে সন্ত্রাসী ওয়ারেন্টভুক্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেফতার করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অবৈধ অস্ত্র বিস্ফোরক এবং মাদকদ্রব্যসহ সব ধরনের অবৈধ মালামাল উদ্ধার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত ও বিশেষ অভিযান পরিচালনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ : প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের লক্ষ্যে ৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে, তার প্রমাণ চাঞ্চল্যকর ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা। মাত্র ৬২ কার্যদিবসে এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনের শাসন নিশ্চিতকল্পে বিচার কাজে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ মেয়াদে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৬ জন ও হাইকোর্ট বিভাগে ৩৭ জন বিচারপতি নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে এবং অধস্তন আদালতে ৬৭১ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০০ জন সহকারী জজ নিয়োগের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

প্রযুক্তির মাধ্যমেই অপরাধীদের ধরা হচ্ছে : তিনি বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহারে যেমন বহুমাত্রিক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি প্রযুক্তি ব্যবহার করেই অপরাধীদেরকে আইনের জালে ধরে ফেলা হচ্ছে। সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধন করে সমাজের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।

মুনাফাখোর ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে : সরকারি দলের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট। অসৎ মুনাফাখোর কতিপয় ব্যবসায়ী মাঝে মধ্যে নিত্য পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন এবং অধিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করে থাকে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি ও বেসরকারিভাবে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকের পণ্য উৎপাদন, বিক্রি ও বাজারজাত করার পদক্ষেপ বিদ্যমান রয়েছে। যাতে কৃষকরা অধিক লাভবান হবে। পুরনো সমবায় আইনকে যুগোপযোগী করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাউল ঐতিহ্য যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় : আইসিটি মামলায় টাঙ্গাইলের বাউল শরিয়ত বয়াতীর গ্রেফতার সংক্রান্ত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাউল শিল্পীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখানে বাউল গানের তো কোন দোষ নেই। বাউল গানে সম্পৃক্ত কেউ যদি কোন অপরাধে সম্পৃক্ত হন তাহলেও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আইন অনুযায়ীই তার অপরাধের বিচার হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নকর্তা কী এমন কোন গ্যারান্টি দিতে পারবেন- বাউল গান করছেন বলেই ওই শিল্পী কোন অপরাধে জড়িত নন। নিশ্চয়ই তিনি এমন কোন অপরাধ করেছেন, যার জন্য তার বিরুদ্ধে এমন আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখন সরকার বাউল গানকে বিশ্বঐতিহ্য করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। তাই অনুরোধ করব, বাউল গানে সম্পৃক্তরা যেন এমন কোন কাজ না করেন, যাতে বিশ্বঐতিহ্য বাউল গান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

এর আগে রাজবাড়ীর পাংশার বাউল সম্প্রদায়ের চুল কেটে দেয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসকদের মতো এখনও যদি চুল কেটে দেয়ার মতো কোন অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সরকার সেটা দেখবে। কারণ অহেতুক চুলকাটা বা বাউলদের প্রতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি গ্রহণযোগ্য নয়। কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানের বাউল সম্প্রদায়ের কল্যাণে তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পঁচাত্তরের পর সামরিক শাসকদের যারাই ক্ষমতায় এসেছে- তাদের মধ্যেই এমন প্রবণতা দেখা গেছে। ক্ষমতায় এসে প্রথমেই তারা চারপাশটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে শুরু করেন, অর্থাৎ সুইপারের দায়িত্ব তারাই নিয়ে নেন। যারা ক্ষমতায় আসেন, তাদের কেউ টি-শার্ট পড়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন, কৃচ্ছতা সাধনের কথা বলেন, কেউ সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাওয়া শুরু করেন। পরে দেখা যায় তারাই সবচেয়ে দামি গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়ান, প্যারিস থেকে স্যুট নিয়ে আসেন, শিফন শাড়ি নিয়ে আসেন। মানুষের চুলকাটাসহ এসব কাজগুলো তারাই করেছেন। অবশ্য তাদের এমন উদ্যোগ বেশি দিন টেকে না। ছয় মাস থাকে, তারপরই দেখা যায় তারা নিজেদের আসল রূপকে প্রকাশ করে ফেলেন।