নির্বাচনী প্রচারণা : ভয়াবহ প্লাস্টিক দূষণ

আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমেছে নির্বাচনী প্রচারণা। পোস্টারে ব্যানারে ছেয়ে গেছে গোটা শহর। ইশতেহারে ভর্তি পোস্টারে সেজেছে নগর। কেউ ইশতেহার করছেন উপযুক্ত ছেলেমেয়ের বিবাহের, কেউবা আবার করছেন পরিচ্ছন্ন নগরীর অঙ্গীকার। অথচ এই পরিচ্ছন্ন নগরীর অঙ্গীকারনামাই আবার অপচনশীল প্লাস্টিকের প্যাকেটে করে ঝুলিয়ে শহর সাঁজিয়েছেন তারা।

কি অদ্ভুত! যেখানে সারাবিশ্ব আজ প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে সেখানে এই নগরীর সম্ভাব্য পিতারাই প্লাস্টিকে পোস্টার মোড়াচ্ছেন। কেবল এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই নয়; সারা দেশেই নির্বাচনকালীন প্রচারণায় পোস্টার মোড়ানো হয় প্লাস্টিকে। কিন্তু দু’দিন বাদে নির্বাচন শেষে এই প্লাস্টিক কোথায় যাবে কেউ বলতে পারেন? ড্রেনে? বুড়িগঙ্গায়? নাকি খাল-বিল-, সমুদ্রে? আচ্ছা, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ নগরী গড়ার অঙ্গিকার যারা করছেন তারা আদৌ প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে অবগত আছেন কি!

প্লাস্টিক এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যা পরিবেশে পচতে এমনকি কারখানায় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করতে প্রচুর সময় লাগে। তাই একে ‘অপচ্য পদার্থ’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিণত হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। সাধারণত উদ্ভিদকূল, জলজ প্রাণী, দ্বীপ অঞ্চলের প্রাণীরা এ প্লাস্টিক বর্জ্যরে জন্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য এসব প্রাণীর বাসস্থান, খাদ্য সংগ্রহের স্থান ও উদ্ভিদের খাদ্য গ্রহণের পথে বাধার সৃষ্টি করে। শুধু উদ্ভিদ বা জলজ প্রাণী নয়, মানবজাতিও প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের জন্য প্লাস্টিক দূষণকেই পরোক্ষভাবে দায়ী করা হয়। আমরা যেসব প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যাদি ব্যবহার করি সেগুলো তৈরি হয় তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে। যখন এসব জ্বালানি খনি থেকে নিষ্কাশন করা হয়, তখন বিপুল পরিমাণ দূষিত পদার্থের নির্গমন ঘটে। এসব পদার্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, বেনজিন এবং মিথেন। এসব গ্যাসকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়। আর গ্রিনহাউস গ্যাস বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হিমালয়ের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। ফলে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে আমাদের বাংলাদেশ। গবেষণায় দেখা গেছে এক আউন্স পলিইথিলিন তৈরি করতে গেলে পাঁচ আউন্স কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। অর্থাৎ আমরা যে পরিমাণ প্লাস্টিকদ্রব্য প্রস্তুত করছি তার চেয়ে বেশি পরিমাণ দূষিত পদার্থ বায়ুতে নির্গমন করছি। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতির দিকে যেন আমাদের দেশ ও পৃথিবীকে আমরাই ঠেলে দিচ্ছি। অন্যদিকে এই প্লাস্টিক জমে নদী-নালা ভরাট হয়ে যাচ্ছে, ভূমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ড্রেন ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

পৃথিবীর অনেক দেশের সরকার এ ক্ষতিকর প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ যা ২০০২ সালে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এবং ২০১৭ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত সমুদ্র সম্মেলনে ২০২৫ সালের মধ্যে স্বেচ্ছায় সামুদ্রিক দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।

ঠিক এ জায়গায় দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় প্লাস্টিকের পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করাও এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরাফাত হোসেন ভূঁইয়া,

শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২০ , ৯ মাঘ ১৪২৬, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

নির্বাচনী প্রচারণা : ভয়াবহ প্লাস্টিক দূষণ

আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমেছে নির্বাচনী প্রচারণা। পোস্টারে ব্যানারে ছেয়ে গেছে গোটা শহর। ইশতেহারে ভর্তি পোস্টারে সেজেছে নগর। কেউ ইশতেহার করছেন উপযুক্ত ছেলেমেয়ের বিবাহের, কেউবা আবার করছেন পরিচ্ছন্ন নগরীর অঙ্গীকার। অথচ এই পরিচ্ছন্ন নগরীর অঙ্গীকারনামাই আবার অপচনশীল প্লাস্টিকের প্যাকেটে করে ঝুলিয়ে শহর সাঁজিয়েছেন তারা।

কি অদ্ভুত! যেখানে সারাবিশ্ব আজ প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে সেখানে এই নগরীর সম্ভাব্য পিতারাই প্লাস্টিকে পোস্টার মোড়াচ্ছেন। কেবল এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই নয়; সারা দেশেই নির্বাচনকালীন প্রচারণায় পোস্টার মোড়ানো হয় প্লাস্টিকে। কিন্তু দু’দিন বাদে নির্বাচন শেষে এই প্লাস্টিক কোথায় যাবে কেউ বলতে পারেন? ড্রেনে? বুড়িগঙ্গায়? নাকি খাল-বিল-, সমুদ্রে? আচ্ছা, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ নগরী গড়ার অঙ্গিকার যারা করছেন তারা আদৌ প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে অবগত আছেন কি!

প্লাস্টিক এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যা পরিবেশে পচতে এমনকি কারখানায় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করতে প্রচুর সময় লাগে। তাই একে ‘অপচ্য পদার্থ’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিণত হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। সাধারণত উদ্ভিদকূল, জলজ প্রাণী, দ্বীপ অঞ্চলের প্রাণীরা এ প্লাস্টিক বর্জ্যরে জন্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য এসব প্রাণীর বাসস্থান, খাদ্য সংগ্রহের স্থান ও উদ্ভিদের খাদ্য গ্রহণের পথে বাধার সৃষ্টি করে। শুধু উদ্ভিদ বা জলজ প্রাণী নয়, মানবজাতিও প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের জন্য প্লাস্টিক দূষণকেই পরোক্ষভাবে দায়ী করা হয়। আমরা যেসব প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যাদি ব্যবহার করি সেগুলো তৈরি হয় তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে। যখন এসব জ্বালানি খনি থেকে নিষ্কাশন করা হয়, তখন বিপুল পরিমাণ দূষিত পদার্থের নির্গমন ঘটে। এসব পদার্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, বেনজিন এবং মিথেন। এসব গ্যাসকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়। আর গ্রিনহাউস গ্যাস বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হিমালয়ের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। ফলে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে আমাদের বাংলাদেশ। গবেষণায় দেখা গেছে এক আউন্স পলিইথিলিন তৈরি করতে গেলে পাঁচ আউন্স কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। অর্থাৎ আমরা যে পরিমাণ প্লাস্টিকদ্রব্য প্রস্তুত করছি তার চেয়ে বেশি পরিমাণ দূষিত পদার্থ বায়ুতে নির্গমন করছি। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতির দিকে যেন আমাদের দেশ ও পৃথিবীকে আমরাই ঠেলে দিচ্ছি। অন্যদিকে এই প্লাস্টিক জমে নদী-নালা ভরাট হয়ে যাচ্ছে, ভূমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ড্রেন ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

পৃথিবীর অনেক দেশের সরকার এ ক্ষতিকর প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ যা ২০০২ সালে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এবং ২০১৭ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত সমুদ্র সম্মেলনে ২০২৫ সালের মধ্যে স্বেচ্ছায় সামুদ্রিক দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।

ঠিক এ জায়গায় দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় প্লাস্টিকের পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করাও এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরাফাত হোসেন ভূঁইয়া,

শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।