সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট বনাম মফস্বল সাংবাদিক

এনায়েত আলী বিশ্বাস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের সার্বিক কল্যাণে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন। গত ১৩ এপ্রিল ২০১৬ সালে বাংলাদেশ গেজেটে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মো. নুরুল ইসলাম যুগ্ম সচিব (প্রেস) এক সার্কুলারে এ ট্রাস্ট গঠনের উদ্দেশ্য ও নিয়মাবলী ঘোষণা করেছেন। এতে জেলা কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি, জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত স্থানীয় সরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষ, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, উপ-পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন বা প্রেস ক্লাব সভাপতি কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি থাকবেন। জেলা তথ্য কর্মকর্তা এর সদস্য সচিব থাকবেন। সদস্যবৃন্দ এক বছরে জন্য মনোনয়ন তারিখ থেকে কমিটির সদস্য থাকবেন। জেলা কমিটির বিধি(৪)-এ উল্লিখিত দায়িত্ব ছাড়াও বোর্ড কর্তৃক নির্দেশিত কার্যাবলী ও দায়িত্ব সম্পাদন করবে।

এই দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে- (১) আইনের ধারা ৭-এ বর্ণিত উদ্দেশ্যে, বোর্ড সময় সময় অনুদানের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবে। (২) ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিধি ৪-এর উপবিধি(২)-এর দফা (খ)-এর অধীন প্রাপ্ত আবেদনসমূহ পর্যালোচনা করে অনুদান পাবার যোগ্য বিবেচিত হলে সুপারিশসহ বোর্ড সভায় উপস্থাপন করবেন। (৩) বোর্ড সুপারিশকৃত আবেদন বিবেচনা করে অনুদান পাওয়ার যোগ্য মনে করলে অনুদানের পরিমাণসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। (৪) ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপবিধি ৩-এর অধীন বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত অনুদান মঞ্জুরির আদেশ জারি করবেন। (৫) অনুদান মঞ্জুরের পর ও গ্রহণের পূর্বে আবেদনকারীর মৃত্যু হলে বোর্ডের অনুমোদনক্রমে মঞ্জুরিকৃত অর্থ তার পরিবারের সদস্যকে প্রদান করা যাবে। (৬) ট্রাস্ট সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী বা সুবিধাভোগীকে কেবল প্রাপকের হিসাবে প্রদেয় চেকের মাধ্যমে অনুদান প্রদান করতে হবে। (৯) অনুদানপ্রাপ্ত সাংবাদিকের তথ্য সংরক্ষণ- ট্রাস্ট আইনের ধারা ও ৭-এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এ বিধিমালার অধীন কোন সাংবাদিক বা এর পরিবারের অনুকূলে প্রদেয় অর্থের পরিমাণসহ অনুদানের একটা তালিকা ও আনুষঙ্গিক তথ্যাদি সংরক্ষণ করবে। (১০) ট্রাস্টের তহবিল আইনের ধারা ৯-এর বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে। (৫) ধারায় সাংবদিকের পরিবারকর্তৃক আবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে (১) মৃত সাংবাদিকের পরিবারের একাধিক সদস্য থাকার ক্ষেত্রে আইন এবং এই বিধিমালার অধীন প্রদেয় অর্থ তার পরিবারের সকল সদস্যদের দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন সদস্যকে প্রদান করা যাবে। (২) উপবিধি (১) ও (২) এর অধীন ক্ষমতাপত্র দাখিল করা না হলে উপবিধি (৪) এ উল্লেখিত অগ্রাধিকারক্রম অনুস্মরণক্রমে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ইউনিয়ন, বা ক্ষেত্রমত প্রেস ক্লাবের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরসহ আবেদন দাখিল করতে হবে। (৩) উপবিধি উল্লিখিত ক্ষমতাপত্রটি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ইউনিয়ন বা প্রেস ক্লাবের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের প্রতিস্বাক্ষরসহ আবেদন করতে হবে। (৪) এই বিধির অধীন পরিবারের সদস্যদের আবেদনের অগ্রগণ্যতা নির্ধাণের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত ক্রম অনুসরণ করতে হবে। যথা- (ক) মৃত সাংবাদিকের ক্ষেত্রে যদি উক্ত সাংবাদিকের স্ত্রী বা স্বামী যদি পরবর্তীতে পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে থাকেন। (খ) পুত্রসন্তান (গ) হিন্দু ধর্মালম্বীর ক্ষেত্রে সাংবাদিকের দত্তক পুত্র (ঘ) কন্যাসন্তান (ঙ) সাংবাদিকের সাথে একত্রে বসবাসরত ও তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল পিতা (চ) সাংবাদিকের সাথে একত্রে বসবাসরত ও তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল মাতা (ছ) সাংবাদিকের সাথে একত্রে বসবাসরত ও তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল নাবালক ভাই (জ) সাংবাদিকের সাথে একত্রে বসবাসরত ও তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল অবিবাহিত বা তালাকপ্রাপ্তা বোন (ঝ) সাংবাদিকের সাথে একত্রে বসবাসরত ও তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিবন্ধী বোন। (৬) বিশেষ পরিস্থিতে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের অনুদান প্রদানের ক্ষমতা-আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে আইন ও এই বিধিমালার বিধানাবলীর অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়াসাপেক্ষে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেমন- জরুরি চিকিৎসা সহায়তা বা দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য বোর্ডের চেয়ারম্যান সর্বোচ্চ দুই লাখ (খ) চেয়ারম্যানের সাথে পরামর্শক্রমে ভাইস চেয়ারম্যান সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান প্রদান করতে পারেন এবং উক্ত অনুদানের সিদ্ধান্ত বোর্ডের পরবর্তী সভায় অনুমোদিত হতে হবে।

কর্মরত সাংবাদিক বিশেষ করে যারা পত্রিকার ডেস্কে কাজ করেন বা নিয়োগপ্রাপ্ত এবং এ ধরনের কর্মরত মৃত সাংবাদিকবৃন্দের পরিবারবৃন্দ এ সুযোগ পাবেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, শহরে অথবা রাজধানীতে ডেস্কে কর্মরত সাংবদিকের তুলনায় মফস্বল বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিদিন এসব সাংবাদিকের প্রেরিত নিউজে পত্রিকার পাতা ভরে ওঠে। অথচ এসব সাংবাদিকে জাতীয় পত্রিকাসহ শহরকেন্দ্রিক পত্রিকাসমূহ বেতন ভাতা বাবদ একটি টাকাও দেন না। এমনকি আজ কাল ইন্টারনেট বা অনলাইনের মাধ্যমে সংবাদ পাঠাতে হয়। সেক্ষেত্রে নিউজ ও ছবি পাঠানোর খরচ ও দেওয়া হয় না। প্রধানমন্ত্রী যখন ২০১৬ সালে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের নীতিমালা ঘোষণা করেন এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির যুগ্ম সচিব (প্রেস) মো. নুরুল ইসলাম যখন এটাকে বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত গেজেট আকারে প্রকাশ করেন, তখন কি তাদের কারো মনে মফস্বলে কর্মরত সাংবাদিকদের কথা ঘুণাক্ষরেও মনে পড়েনি? নাকি মফস্বলের সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে যাওয়ার সুযোগ বা সাহস কোনটা পান না বলে। তাদের অবস্থার কথা কেউ বলতে পারে না বলেই এ অবস্থা? এ অবস্থায় আমরা জানি, মফস্বল পর্যায় সাংবাদিকদের কথা বলার জন্য জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা বা জাতীয় সাংবাদিক ফেডারেশন বা সাংবাদিক সমিতি আছে কিন্তু তারাও জাতীয় বা স্থানীয় দৈনিকের বেতনভুক্ত সাংবাদিক। তাই হয়তো এ পর্যন্ত মফস্বল সাংবাদিকের দাবি আলোর মুখ দেখতে পারেনি। যেহেতু ১৯৭৩ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত এবং মফস্বল এলাকায় সাংবাদিকতা করে থাকি, সেহেতু আমাকেও এসব সংস্থার সাথে জড়িত করা হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ঢাকায় কোনো সভায় আমি যেতে পারিনি। সেহেতু মফস্বল সাংবাদিকদের কথা সভায় তুলে ধরতে পারিনি; তবে জাতীয়সহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় অনেকবার মফস্বল সাংবাদিকদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে নিবন্ধ প্রকাশ করেছি। কিন্তু কার্যত তার কোন ফল হয়নি। তার প্রমাণ ২০১৬ সালে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গেজেট। এখানে শুধুমাত্র যারা শহরকেন্দ্রিক প্রেস ক্লাবের বা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাথে জড়িত তারা ছাড়া উপজেলা পর্যায় প্রেস ক্লাবভুক্ত সাংবাদিক এ কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাভুক্ত হতে পারবে না। এমনকি আবেদন করারও সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আশু সুনজর কামনা করে মফস্বল সাংবাদিকদের বেঁচে থাকার সুবিধার্থে বেতন-ভাতা চালু করতে কল্যাণ ট্রাস্টের মতো অনুরূপ ট্রাস্ট গঠন করার একান্ত অনুরোধ রাখছি।

[লেখক : অধ্যাপক, সাংবাদিক, কলামিস্ট, বটিয়াঘাটা, খুলনা]

তারিখ : ২২/০১/২০২০

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২০ , ৯ মাঘ ১৪২৬, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট বনাম মফস্বল সাংবাদিক

এনায়েত আলী বিশ্বাস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের সার্বিক কল্যাণে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন। গত ১৩ এপ্রিল ২০১৬ সালে বাংলাদেশ গেজেটে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মো. নুরুল ইসলাম যুগ্ম সচিব (প্রেস) এক সার্কুলারে এ ট্রাস্ট গঠনের উদ্দেশ্য ও নিয়মাবলী ঘোষণা করেছেন। এতে জেলা কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি, জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত স্থানীয় সরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষ, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, উপ-পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন বা প্রেস ক্লাব সভাপতি কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি থাকবেন। জেলা তথ্য কর্মকর্তা এর সদস্য সচিব থাকবেন। সদস্যবৃন্দ এক বছরে জন্য মনোনয়ন তারিখ থেকে কমিটির সদস্য থাকবেন। জেলা কমিটির বিধি(৪)-এ উল্লিখিত দায়িত্ব ছাড়াও বোর্ড কর্তৃক নির্দেশিত কার্যাবলী ও দায়িত্ব সম্পাদন করবে।

এই দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে- (১) আইনের ধারা ৭-এ বর্ণিত উদ্দেশ্যে, বোর্ড সময় সময় অনুদানের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবে। (২) ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিধি ৪-এর উপবিধি(২)-এর দফা (খ)-এর অধীন প্রাপ্ত আবেদনসমূহ পর্যালোচনা করে অনুদান পাবার যোগ্য বিবেচিত হলে সুপারিশসহ বোর্ড সভায় উপস্থাপন করবেন। (৩) বোর্ড সুপারিশকৃত আবেদন বিবেচনা করে অনুদান পাওয়ার যোগ্য মনে করলে অনুদানের পরিমাণসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। (৪) ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপবিধি ৩-এর অধীন বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত অনুদান মঞ্জুরির আদেশ জারি করবেন। (৫) অনুদান মঞ্জুরের পর ও গ্রহণের পূর্বে আবেদনকারীর মৃত্যু হলে বোর্ডের অনুমোদনক্রমে মঞ্জুরিকৃত অর্থ তার পরিবারের সদস্যকে প্রদান করা যাবে। (৬) ট্রাস্ট সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী বা সুবিধাভোগীকে কেবল প্রাপকের হিসাবে প্রদেয় চেকের মাধ্যমে অনুদান প্রদান করতে হবে। (৯) অনুদানপ্রাপ্ত সাংবাদিকের তথ্য সংরক্ষণ- ট্রাস্ট আইনের ধারা ও ৭-এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এ বিধিমালার অধীন কোন সাংবাদিক বা এর পরিবারের অনুকূলে প্রদেয় অর্থের পরিমাণসহ অনুদানের একটা তালিকা ও আনুষঙ্গিক তথ্যাদি সংরক্ষণ করবে। (১০) ট্রাস্টের তহবিল আইনের ধারা ৯-এর বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে। (৫) ধারায় সাংবদিকের পরিবারকর্তৃক আবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে (১) মৃত সাংবাদিকের পরিবারের একাধিক সদস্য থাকার ক্ষেত্রে আইন এবং এই বিধিমালার অধীন প্রদেয় অর্থ তার পরিবারের সকল সদস্যদের দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন সদস্যকে প্রদান করা যাবে। (২) উপবিধি (১) ও (২) এর অধীন ক্ষমতাপত্র দাখিল করা না হলে উপবিধি (৪) এ উল্লেখিত অগ্রাধিকারক্রম অনুস্মরণক্রমে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ইউনিয়ন, বা ক্ষেত্রমত প্রেস ক্লাবের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরসহ আবেদন দাখিল করতে হবে। (৩) উপবিধি উল্লিখিত ক্ষমতাপত্রটি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ইউনিয়ন বা প্রেস ক্লাবের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের প্রতিস্বাক্ষরসহ আবেদন করতে হবে। (৪) এই বিধির অধীন পরিবারের সদস্যদের আবেদনের অগ্রগণ্যতা নির্ধাণের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত ক্রম অনুসরণ করতে হবে। যথা- (ক) মৃত সাংবাদিকের ক্ষেত্রে যদি উক্ত সাংবাদিকের স্ত্রী বা স্বামী যদি পরবর্তীতে পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে থাকেন। (খ) পুত্রসন্তান (গ) হিন্দু ধর্মালম্বীর ক্ষেত্রে সাংবাদিকের দত্তক পুত্র (ঘ) কন্যাসন্তান (ঙ) সাংবাদিকের সাথে একত্রে বসবাসরত ও তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল পিতা (চ) সাংবাদিকের সাথে একত্রে বসবাসরত ও তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল মাতা (ছ) সাংবাদিকের সাথে একত্রে বসবাসরত ও তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল নাবালক ভাই (জ) সাংবাদিকের সাথে একত্রে বসবাসরত ও তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল অবিবাহিত বা তালাকপ্রাপ্তা বোন (ঝ) সাংবাদিকের সাথে একত্রে বসবাসরত ও তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিবন্ধী বোন। (৬) বিশেষ পরিস্থিতে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের অনুদান প্রদানের ক্ষমতা-আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে আইন ও এই বিধিমালার বিধানাবলীর অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়াসাপেক্ষে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেমন- জরুরি চিকিৎসা সহায়তা বা দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য বোর্ডের চেয়ারম্যান সর্বোচ্চ দুই লাখ (খ) চেয়ারম্যানের সাথে পরামর্শক্রমে ভাইস চেয়ারম্যান সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান প্রদান করতে পারেন এবং উক্ত অনুদানের সিদ্ধান্ত বোর্ডের পরবর্তী সভায় অনুমোদিত হতে হবে।

কর্মরত সাংবাদিক বিশেষ করে যারা পত্রিকার ডেস্কে কাজ করেন বা নিয়োগপ্রাপ্ত এবং এ ধরনের কর্মরত মৃত সাংবাদিকবৃন্দের পরিবারবৃন্দ এ সুযোগ পাবেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, শহরে অথবা রাজধানীতে ডেস্কে কর্মরত সাংবদিকের তুলনায় মফস্বল বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিদিন এসব সাংবাদিকের প্রেরিত নিউজে পত্রিকার পাতা ভরে ওঠে। অথচ এসব সাংবাদিকে জাতীয় পত্রিকাসহ শহরকেন্দ্রিক পত্রিকাসমূহ বেতন ভাতা বাবদ একটি টাকাও দেন না। এমনকি আজ কাল ইন্টারনেট বা অনলাইনের মাধ্যমে সংবাদ পাঠাতে হয়। সেক্ষেত্রে নিউজ ও ছবি পাঠানোর খরচ ও দেওয়া হয় না। প্রধানমন্ত্রী যখন ২০১৬ সালে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের নীতিমালা ঘোষণা করেন এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির যুগ্ম সচিব (প্রেস) মো. নুরুল ইসলাম যখন এটাকে বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত গেজেট আকারে প্রকাশ করেন, তখন কি তাদের কারো মনে মফস্বলে কর্মরত সাংবাদিকদের কথা ঘুণাক্ষরেও মনে পড়েনি? নাকি মফস্বলের সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে যাওয়ার সুযোগ বা সাহস কোনটা পান না বলে। তাদের অবস্থার কথা কেউ বলতে পারে না বলেই এ অবস্থা? এ অবস্থায় আমরা জানি, মফস্বল পর্যায় সাংবাদিকদের কথা বলার জন্য জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা বা জাতীয় সাংবাদিক ফেডারেশন বা সাংবাদিক সমিতি আছে কিন্তু তারাও জাতীয় বা স্থানীয় দৈনিকের বেতনভুক্ত সাংবাদিক। তাই হয়তো এ পর্যন্ত মফস্বল সাংবাদিকের দাবি আলোর মুখ দেখতে পারেনি। যেহেতু ১৯৭৩ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত এবং মফস্বল এলাকায় সাংবাদিকতা করে থাকি, সেহেতু আমাকেও এসব সংস্থার সাথে জড়িত করা হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ঢাকায় কোনো সভায় আমি যেতে পারিনি। সেহেতু মফস্বল সাংবাদিকদের কথা সভায় তুলে ধরতে পারিনি; তবে জাতীয়সহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় অনেকবার মফস্বল সাংবাদিকদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে নিবন্ধ প্রকাশ করেছি। কিন্তু কার্যত তার কোন ফল হয়নি। তার প্রমাণ ২০১৬ সালে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গেজেট। এখানে শুধুমাত্র যারা শহরকেন্দ্রিক প্রেস ক্লাবের বা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাথে জড়িত তারা ছাড়া উপজেলা পর্যায় প্রেস ক্লাবভুক্ত সাংবাদিক এ কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাভুক্ত হতে পারবে না। এমনকি আবেদন করারও সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আশু সুনজর কামনা করে মফস্বল সাংবাদিকদের বেঁচে থাকার সুবিধার্থে বেতন-ভাতা চালু করতে কল্যাণ ট্রাস্টের মতো অনুরূপ ট্রাস্ট গঠন করার একান্ত অনুরোধ রাখছি।

[লেখক : অধ্যাপক, সাংবাদিক, কলামিস্ট, বটিয়াঘাটা, খুলনা]

তারিখ : ২২/০১/২০২০