সামসুজ্জামান
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লুএফপি) গত ৪ ডিসেম্বর একটি উদ্বেগজনক খবর প্রকাশ করেছে তাদের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে এক সপ্তমাংশ মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার। অর্থাৎ প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন মানুষ নিয়মিত পুষ্টিসম্মত খাবার খেতে পারে না। বিশ্লেষণে পুষ্টিসম্মত খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং মানুষের তা কেনার সামর্থ্য কতটুকু তার বিশদ ব্যাখ্যা রয়েছে। দেশে নারীদের পুষ্টির পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। ১০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন নারী প্রয়োজনীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার পায় না। তবে প্রতিবেদনে একটু আশার আলোও জ্বলছে। সেটি হলো খর্বাকৃতির শিশুদের নিয়ে। ১৯৯৭ সালে যেখানে দেশে খর্বাকৃত শিশুর সংখ্যা ছিল ৬০ শতাংশ ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩১ শতাংশে।
বর্তমান জনবান্ধব সরকার পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নতিকল্পে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। অপুষ্টি মোকাবিলায় মাতৃত্বকালীন ভাতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেয়াসহ নানা সামাজিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। অনেকের আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কৃপনতা করে অথবা অজ্ঞতার কারণে পুষ্টিকর খাবার খান না। কিনে খাবার সামর্থ যাদের নেই তাদের বিষয় আলাদা। এ গেল গ্রামাঞ্চলের কথা। শহর এলাকার বিত্তবানদের ফাস্টফুডের ব্যাপারে দুর্বলতা বেশি। তারা পুষ্টিকর অর্থে সম্ভবত বুঝে থাকেন বার্গার, ফ্রাইড চিকেন, হটডগ এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার। খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে পুষ্টি পরিস্থিতির যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এ কথা তারা বুঝেও বোঝেন না। সামর্থ্যবানদের এমন কারণে হিতে বিপরীতে হচ্ছে। পুষ্টি বাড়ার বদলে স্থূলকার মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০০৪ সালে দেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৯ শতাংশ স্থূলকার ছিল। ২০১৮ সাল পর্যন্ত জরিপে তা বেড়ে হয়েছে ২৪ শতাংশ। এছাড়া উচ্চ বিত্তদের অতিলোভ ও পুষ্টি গুণের অভাবে ৪০ শতাংশ বাড়তি খরচ এবং ৮ শতাংশ খাবার অপচয় হচ্ছে, যা খাদ্য সংকটের কারণ সম্পদের স্বল্পতা নয় বরং অপচয় ধরা হচ্ছে। জীবনযাত্রার সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুঃখের বিষয় এদুটোতে পরিবর্তন আসলেও বাড়াবাড়ি রকম পরিবর্তন এসেছে খাবার অপচয়ে। আমাদের দেশে নানা উৎসব-অনুষ্ঠান, পার্টি সেন্টার রেস্টুরেন্ট, ক্লাব এবং ফাস্টফুড ও তারকা হোটেল গুলিতে যে পরিমাণ খাবার আপচয় হয় তা দিয়ে প্রতিদিন ৬০ হাজার লোককে একবেলা করে খাওয়ানো সম্ভব।
দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি খারাপ হবার কারণ অর্থনৈতিক সমস্যা কিছুটা হলেও অতি অপব্যয় এবং অজ্ঞতাই মূলত দায়ী। ৩০টি দেশের পাঁচ লাখ শিশু এবং টিন এজারদের ওপর এক জরিপে দেখা যায়, যারা সপ্তাহে তিন দিন কোন না কোন ফাস্টফুড খেয়ে থাকে এবং এ কারণে তারা এলার্জিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে বেশি। জিহ্বার স্বাদ যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মারাত্মক শারীরিক ক্ষতির কারণ হয়ে পড়ে তা অনেকেরই জানা নেই। ফাস্টফুড এবং পথের ধারের খাবার অনেকেই গোগ্রাসে খেয়ে ফেলেন। ছুটির দিনে কাজের ফাঁকে অজ্ঞতায় শহরবাসীর খাবার মেন্যু থাকে ফাস্টফুডের দোকানে। চটজলদি খিদে মেটালেও এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য যে মারাত্মক ক্ষতিকর এ কথা জেনেও না জানার ভান করে অনেকে। দোকানগুলোর এসব খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু এবং মুখরোচক হওয়ায় ক্রেতারাও সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আর ফাস্টফুডের লোভনীয় স্বাদের কাছে হেরে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সচেতনতা।
ইতিপূর্বে লন্ডনে ৩ থেকে ৫ বছরের শিশুদের ওপর চানানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাস্টফুড খাবার ফলে শিশুদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা স্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। পাশাপাশি যে সব শিশুকে ফলমূল শাকসবজি খাওয়ানো হয় তাদের আইকিউ ৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতাই মুখ্য হওয়া প্রয়োজন।
আমাদের দেশে এখন উপজেলা পর্যন্ত উন্নতমানের ফাস্টফুডের দোকান হয়েছে। ফলে গ্রামের বিত্তবানদের স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলেমেয়েরা হরহামেশাই এসব দোকানে গিয়ে খাবার খায়। উপজেলা পর্যায়ের ফাস্টফুডের দোকানগুলো সবসময় গম-গম করে। এদের বেচা বিক্রিও হয়ে থাকে ভালো। ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে যে ধরনের খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে- তা যেমন মানসম্মত নয়, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যেও ক্ষতিকর। ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে যাওয়া ফ্যাশন হয়ে গেছে। অপ্রয়োজনে এখানকার খাবারের ফলে যে শরীরের মধ্যে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন ধরনের মরণব্যাধি কেউ তা চিন্তায়ও আনেন না। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক অপচয় তো আছেই।
দেশে আশঙ্কাজনক হারে পুষ্টিহীনতার খবর নিঃসন্দেহে আতঙ্কজনক। হিসাব অনুযায়ী ১১ দশমিক ৩ শতাংশ অতিদরিদ্র যাদের পক্ষে পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। এ অবস্থা দূর করতে হলে খাদ্যাভাসের ব্যাপারে শৃঙ্খলাসহ মানবিক ভূমিকার পাশাপাশি সরকারের খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। পাশাপাশি এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সবাইকে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সচেতন করতে হবে।
আমাদের সবার এখন প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিত শিশু কিশোরদের ফাস্টফুড খাওয়া বন্ধ করা। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিশেষত শাকসবজি এবং ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারে আসক্তি আনা। এছাড়া চর্বিযুক্ত খাবার পুরোপুরি পরিহার করা। তবে শরীরে আমিষের খাটতি পূরণ করতে সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে অবশ্য পরিবারের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। ব্যাপকভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাহায্য-সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা অত্যাবশ্যক।
এ ব্যাপারে পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, একজন পূর্ণ বয়ষ্ক মানুষের শারীরিক গঠন প্রণালির জন্য মূল উপাদান ক্যালোরির প্রয়োজন বারোশ, যা আমরা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক শাকসবজি এবং ডিম থেকে পেতে পারি। একজন মানুষের সুস্থ শারীরিক গঠনের স্বাভাবিকত্ব বজায় রাখতে একটি ডিমই জোগান দিতে পারে ৪০০ ক্যালোরি। অথচ সেই ডিমই ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারায়। তা দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমরা আক্রান্ত হই বিভিন্ন রোগে। শিশুদের ছোটবেলা থেকে যদি আমরা সুষম খাদ্য দিতে পারি। পাশাপাশি চর্বি জাতীয় খাদ্য থেকে বিরত রাখতে পারি তাহলে অপুষ্টির শিকার হতে হয় না। অভিভাবকদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য।
[লেখক : কলামিস্ট]
তারিখ: ১৯.০১.২০২০
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২০ , ৯ মাঘ ১৪২৬, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
সামসুজ্জামান
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লুএফপি) গত ৪ ডিসেম্বর একটি উদ্বেগজনক খবর প্রকাশ করেছে তাদের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে এক সপ্তমাংশ মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার। অর্থাৎ প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন মানুষ নিয়মিত পুষ্টিসম্মত খাবার খেতে পারে না। বিশ্লেষণে পুষ্টিসম্মত খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং মানুষের তা কেনার সামর্থ্য কতটুকু তার বিশদ ব্যাখ্যা রয়েছে। দেশে নারীদের পুষ্টির পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। ১০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন নারী প্রয়োজনীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার পায় না। তবে প্রতিবেদনে একটু আশার আলোও জ্বলছে। সেটি হলো খর্বাকৃতির শিশুদের নিয়ে। ১৯৯৭ সালে যেখানে দেশে খর্বাকৃত শিশুর সংখ্যা ছিল ৬০ শতাংশ ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩১ শতাংশে।
বর্তমান জনবান্ধব সরকার পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নতিকল্পে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। অপুষ্টি মোকাবিলায় মাতৃত্বকালীন ভাতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেয়াসহ নানা সামাজিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। অনেকের আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কৃপনতা করে অথবা অজ্ঞতার কারণে পুষ্টিকর খাবার খান না। কিনে খাবার সামর্থ যাদের নেই তাদের বিষয় আলাদা। এ গেল গ্রামাঞ্চলের কথা। শহর এলাকার বিত্তবানদের ফাস্টফুডের ব্যাপারে দুর্বলতা বেশি। তারা পুষ্টিকর অর্থে সম্ভবত বুঝে থাকেন বার্গার, ফ্রাইড চিকেন, হটডগ এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার। খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে পুষ্টি পরিস্থিতির যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এ কথা তারা বুঝেও বোঝেন না। সামর্থ্যবানদের এমন কারণে হিতে বিপরীতে হচ্ছে। পুষ্টি বাড়ার বদলে স্থূলকার মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০০৪ সালে দেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৯ শতাংশ স্থূলকার ছিল। ২০১৮ সাল পর্যন্ত জরিপে তা বেড়ে হয়েছে ২৪ শতাংশ। এছাড়া উচ্চ বিত্তদের অতিলোভ ও পুষ্টি গুণের অভাবে ৪০ শতাংশ বাড়তি খরচ এবং ৮ শতাংশ খাবার অপচয় হচ্ছে, যা খাদ্য সংকটের কারণ সম্পদের স্বল্পতা নয় বরং অপচয় ধরা হচ্ছে। জীবনযাত্রার সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুঃখের বিষয় এদুটোতে পরিবর্তন আসলেও বাড়াবাড়ি রকম পরিবর্তন এসেছে খাবার অপচয়ে। আমাদের দেশে নানা উৎসব-অনুষ্ঠান, পার্টি সেন্টার রেস্টুরেন্ট, ক্লাব এবং ফাস্টফুড ও তারকা হোটেল গুলিতে যে পরিমাণ খাবার আপচয় হয় তা দিয়ে প্রতিদিন ৬০ হাজার লোককে একবেলা করে খাওয়ানো সম্ভব।
দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি খারাপ হবার কারণ অর্থনৈতিক সমস্যা কিছুটা হলেও অতি অপব্যয় এবং অজ্ঞতাই মূলত দায়ী। ৩০টি দেশের পাঁচ লাখ শিশু এবং টিন এজারদের ওপর এক জরিপে দেখা যায়, যারা সপ্তাহে তিন দিন কোন না কোন ফাস্টফুড খেয়ে থাকে এবং এ কারণে তারা এলার্জিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে বেশি। জিহ্বার স্বাদ যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মারাত্মক শারীরিক ক্ষতির কারণ হয়ে পড়ে তা অনেকেরই জানা নেই। ফাস্টফুড এবং পথের ধারের খাবার অনেকেই গোগ্রাসে খেয়ে ফেলেন। ছুটির দিনে কাজের ফাঁকে অজ্ঞতায় শহরবাসীর খাবার মেন্যু থাকে ফাস্টফুডের দোকানে। চটজলদি খিদে মেটালেও এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য যে মারাত্মক ক্ষতিকর এ কথা জেনেও না জানার ভান করে অনেকে। দোকানগুলোর এসব খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু এবং মুখরোচক হওয়ায় ক্রেতারাও সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আর ফাস্টফুডের লোভনীয় স্বাদের কাছে হেরে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সচেতনতা।
ইতিপূর্বে লন্ডনে ৩ থেকে ৫ বছরের শিশুদের ওপর চানানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাস্টফুড খাবার ফলে শিশুদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা স্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। পাশাপাশি যে সব শিশুকে ফলমূল শাকসবজি খাওয়ানো হয় তাদের আইকিউ ৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতাই মুখ্য হওয়া প্রয়োজন।
আমাদের দেশে এখন উপজেলা পর্যন্ত উন্নতমানের ফাস্টফুডের দোকান হয়েছে। ফলে গ্রামের বিত্তবানদের স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলেমেয়েরা হরহামেশাই এসব দোকানে গিয়ে খাবার খায়। উপজেলা পর্যায়ের ফাস্টফুডের দোকানগুলো সবসময় গম-গম করে। এদের বেচা বিক্রিও হয়ে থাকে ভালো। ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে যে ধরনের খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে- তা যেমন মানসম্মত নয়, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যেও ক্ষতিকর। ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে যাওয়া ফ্যাশন হয়ে গেছে। অপ্রয়োজনে এখানকার খাবারের ফলে যে শরীরের মধ্যে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন ধরনের মরণব্যাধি কেউ তা চিন্তায়ও আনেন না। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক অপচয় তো আছেই।
দেশে আশঙ্কাজনক হারে পুষ্টিহীনতার খবর নিঃসন্দেহে আতঙ্কজনক। হিসাব অনুযায়ী ১১ দশমিক ৩ শতাংশ অতিদরিদ্র যাদের পক্ষে পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। এ অবস্থা দূর করতে হলে খাদ্যাভাসের ব্যাপারে শৃঙ্খলাসহ মানবিক ভূমিকার পাশাপাশি সরকারের খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। পাশাপাশি এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সবাইকে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সচেতন করতে হবে।
আমাদের সবার এখন প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিত শিশু কিশোরদের ফাস্টফুড খাওয়া বন্ধ করা। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিশেষত শাকসবজি এবং ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারে আসক্তি আনা। এছাড়া চর্বিযুক্ত খাবার পুরোপুরি পরিহার করা। তবে শরীরে আমিষের খাটতি পূরণ করতে সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে অবশ্য পরিবারের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। ব্যাপকভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাহায্য-সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা অত্যাবশ্যক।
এ ব্যাপারে পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, একজন পূর্ণ বয়ষ্ক মানুষের শারীরিক গঠন প্রণালির জন্য মূল উপাদান ক্যালোরির প্রয়োজন বারোশ, যা আমরা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক শাকসবজি এবং ডিম থেকে পেতে পারি। একজন মানুষের সুস্থ শারীরিক গঠনের স্বাভাবিকত্ব বজায় রাখতে একটি ডিমই জোগান দিতে পারে ৪০০ ক্যালোরি। অথচ সেই ডিমই ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারায়। তা দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমরা আক্রান্ত হই বিভিন্ন রোগে। শিশুদের ছোটবেলা থেকে যদি আমরা সুষম খাদ্য দিতে পারি। পাশাপাশি চর্বি জাতীয় খাদ্য থেকে বিরত রাখতে পারি তাহলে অপুষ্টির শিকার হতে হয় না। অভিভাবকদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য।
[লেখক : কলামিস্ট]
তারিখ: ১৯.০১.২০২০