রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে নতুন আদালত গঠনের প্রস্তাব দেবেন ইয়াং হি লি

মায়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ের ইয়াং হি লি, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার জন্য মায়ানমারের বিরুদ্ধে বিচারের সুপারিশ করার পাশাপাশি গণহত্যার বিচারে নতুন অন্তর্র্বর্তীকালীন আন্তর্জাতিক আদালত গঠনের প্রস্তাব দেবেন বলে জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রতিবেদন দেওয়ার সময় তিনি এগুলো তুলে ধরবেন। গতকাল রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেল অনুষ্ঠিক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। ইয়াংহি লি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা দায়বদ্ধতার জন্য একটি অন্তর্র্বর্তীকালীন আন্তর্জাতিক আদালত গঠন করা উচিত। এই আদালতের পরিসর ও কাজের পরিধি কেমন হবে সেটি মার্চে মানবাধিকার পরিষদের প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে।

তিনি বলেন, সিয়েরালিওন, রুয়ান্ডা বা বসনিয়া হার্জেগোভিনায় গণহত্যার বিচার যেভাবে হয়েছে, এ ক্ষেত্রেও একই ধরনের সুপারিশ করব আমি। তবে এটি অন্য আদালত যেমন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে না। এটি আলাদাভাবে কাজ করবে।

ইয়াংহি লি বলেন, আমার ৬ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে মায়ানমারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হত্যা, ধর্ষণসহ নানান নৃশংসতার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার মতো মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে। মায়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হওয়া লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি মায়ানমারের সেনা সদস্য এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কীভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন এবং হত্যা চালিয়েছে। এসব নৃশংসতার বিচার পাওয়ার মতো পরিবেশ মায়ানমারে নেই। মায়ানমারের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা উচিত, এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্যোগী হতে হবে।

ইয়াংহি লি জানান, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য মানবাধিকার পরিষদের প্রতিবেদনে জোরালো সুপারিশ করবেন। ওই প্রতিবেদনে সত্য উঠে এসেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে উদ্যোগ নিতে বলব। নিরাপত্তা পরিষদে চীন এবং রাশিয়া মায়ানমারকে যেভাবে সমর্থন জানাচ্ছে তা লজ্জাজনক।

গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়নের হাত থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় অন্তর্র্বর্তী ব্যবস্থার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) বিচার চলছে। গতকাল সেই আদালতের অন্তর্র্বর্তী আদেশ ঘোষিত হয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মায়ানমার সরকারের দীর্ঘ কয়েক দশকের জাতিগত বৈষম্য ও নিপীড়ন এবং ২০১৭ সালের সেনা অভিযানের পটভূমিতে গাম্বিয়া এই সুরক্ষার আবেদন করে। আইসিজের বিচার যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে। এর পাশাপাশি এই অ্যাডহক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন দরকার। এটা কীভাবে কাজ করবে, এর ধরন কেমন হবে, তা মার্চের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে তুলে ধরা হবে। মায়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ের হিসেবে ইয়াংহি লির ছয় বছরের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। তাই মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে মার্চে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রতিবেদন দেয়ার আগে তিনি গত ১৭ জানুয়ারি শেষ বারের মতো বাংলাদেশে আসেন। এ সময় তিনি সরকারি, বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেন। কক্সবাজারে দুই দিন থেকে রোহিঙ্গাদের মনোভাব বুঝেছেন। ঢাকা ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরেন ইয়াংহি লি।

শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২০ , ১০ মাঘ ১৪২৬, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে নতুন আদালত গঠনের প্রস্তাব দেবেন ইয়াং হি লি

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মায়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ের ইয়াং হি লি, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার জন্য মায়ানমারের বিরুদ্ধে বিচারের সুপারিশ করার পাশাপাশি গণহত্যার বিচারে নতুন অন্তর্র্বর্তীকালীন আন্তর্জাতিক আদালত গঠনের প্রস্তাব দেবেন বলে জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রতিবেদন দেওয়ার সময় তিনি এগুলো তুলে ধরবেন। গতকাল রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেল অনুষ্ঠিক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। ইয়াংহি লি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা দায়বদ্ধতার জন্য একটি অন্তর্র্বর্তীকালীন আন্তর্জাতিক আদালত গঠন করা উচিত। এই আদালতের পরিসর ও কাজের পরিধি কেমন হবে সেটি মার্চে মানবাধিকার পরিষদের প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে।

তিনি বলেন, সিয়েরালিওন, রুয়ান্ডা বা বসনিয়া হার্জেগোভিনায় গণহত্যার বিচার যেভাবে হয়েছে, এ ক্ষেত্রেও একই ধরনের সুপারিশ করব আমি। তবে এটি অন্য আদালত যেমন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে না। এটি আলাদাভাবে কাজ করবে।

ইয়াংহি লি বলেন, আমার ৬ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে মায়ানমারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হত্যা, ধর্ষণসহ নানান নৃশংসতার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার মতো মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে। মায়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হওয়া লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি মায়ানমারের সেনা সদস্য এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কীভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন এবং হত্যা চালিয়েছে। এসব নৃশংসতার বিচার পাওয়ার মতো পরিবেশ মায়ানমারে নেই। মায়ানমারের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা উচিত, এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্যোগী হতে হবে।

ইয়াংহি লি জানান, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য মানবাধিকার পরিষদের প্রতিবেদনে জোরালো সুপারিশ করবেন। ওই প্রতিবেদনে সত্য উঠে এসেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে উদ্যোগ নিতে বলব। নিরাপত্তা পরিষদে চীন এবং রাশিয়া মায়ানমারকে যেভাবে সমর্থন জানাচ্ছে তা লজ্জাজনক।

গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়নের হাত থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় অন্তর্র্বর্তী ব্যবস্থার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) বিচার চলছে। গতকাল সেই আদালতের অন্তর্র্বর্তী আদেশ ঘোষিত হয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মায়ানমার সরকারের দীর্ঘ কয়েক দশকের জাতিগত বৈষম্য ও নিপীড়ন এবং ২০১৭ সালের সেনা অভিযানের পটভূমিতে গাম্বিয়া এই সুরক্ষার আবেদন করে। আইসিজের বিচার যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে। এর পাশাপাশি এই অ্যাডহক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন দরকার। এটা কীভাবে কাজ করবে, এর ধরন কেমন হবে, তা মার্চের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে তুলে ধরা হবে। মায়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ের হিসেবে ইয়াংহি লির ছয় বছরের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। তাই মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে মার্চে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রতিবেদন দেয়ার আগে তিনি গত ১৭ জানুয়ারি শেষ বারের মতো বাংলাদেশে আসেন। এ সময় তিনি সরকারি, বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেন। কক্সবাজারে দুই দিন থেকে রোহিঙ্গাদের মনোভাব বুঝেছেন। ঢাকা ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরেন ইয়াংহি লি।