গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

খুলনায় পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ২৪ জন নেতা ও কর্মী গ্রেফতার

আওয়ামী লীগের গুণ্ডামিতে শহরে ত্রাসের রাজত্ব : ১৪৪ ধারা জারি

নিজস্ব সংবাদদাতা কর্তৃক টেলিফোনে প্রেরিত খুলনা, ৪ সেপ্টেম্বর। গণতন্ত্রের ধ্বজ্জাধারী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে অদ্য খুলনায় বাবু ধীরেন দাস এম, পি, এ এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কর্মী জনাব ফেরদৌস ও জনাব গফুরসহ ২৪ জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হইয়াছে। জেলা কর্তৃপক্ষ শহরে ১৪৪ ধারা জারী করিয়া ন্যাশনাল পার্টি কর্তৃক আয়োজিত একটি সভা বন্ধ করিয়া দিয়েছেন। গ্রেফতার, ১৪৪ ধারা এবং গুণ্ডার আক্রমণের ফলে শহরে ত্রাসের রাজত্ব বিরাজ করিতেছে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গতকল্য জনাব মুজিবুর রহমান যখন গুটিকয়েক সমর্থক সমভিব্যাহারে এখানে সভা করিতে আসেন তখন আওয়ামী লীগ কর্তৃক ২১-দফা ওয়াদা খেলাফে বিক্ষুব্ধ এক জনতা সমবেত হইয়া তাহাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করিয়া তোলে এবং স্থানীয় শ্রমিকদল কর্তৃক শেখ মুজিবরের সমীপে লিখিত একটি খোলা চিঠি সভায় বিলি করা হয়। জনাব মুজিবুর রহমানের ক্রমাগত হুংকারে যখন জনতা তাহাদের রুটি ও রুজির সহিত জড়িত নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসায় বিরত হইতে অস্বীকার করে তখন পূর্ব হইতে আমদানিকৃত একদল গুণ্ডা লাঠি ও নানারূপ অস্ত্রশস্ত্র লইয়া নিরস্ত্র জনতার ওপর ঝাঁপাইয়া পড়ে। কিন্তু জনতার প্রতিরোধে গুণ্ডাদল শেষ পর্যন্ত সরিয়া পড়িতে বাধ্য হয়। গুণ্ডাদলের ব্যুহ রচনা করিয়া তিনি যখন সভা করা সম্ভব হইল না তখন শেখ মুজিব সভাস্থল ত্যাগ করেন। চারিদিকে পাহারার প্রাচীর রচনা করিয়া যখন তিনি সভাস্থল ত্যাগ করিতেছিলেন তখন জনতা মুহুর্মুহু” বিশ্বাসঘাতক আওয়ামী লীগ ধ্বংস হোক” “কুচক্রি দল ফিরিয়া যাও” “গণতান্ত্রিক শক্তি জিন্দাবাদ” ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করিয়া তোলে। জনসভায় নিরস্ত্র জনতার ওপর গুণ্ডা লেলাইয়া দেয়ার প্রতিবাদে অদ্য সকালের দিকে একটি শোভাযাত্রা বাহির করা হয় কিন্তু শোভাযাত্রা যখন বিভিন্ন ধ্বনি সহকারে শহর প্রদক্ষিণ করিতে থাকে, তখন পুনরায় আওয়ামী গুণ্ডাদল শোভাযাত্রার ওপর চড়াও হইয়া শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী জনতার ওপর ইস্টক ও সোডার বোতল নিক্ষেপ করিতে থাকে। গুণ্ডামির প্রতিবাদে ন্যাশনাল পার্টি এক জনসভার আয়োজন করিলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পূর্বাহ্নে ১৪৪ ধারা জারি করিয়া সভা বন্ধ করিয়া দেন। জেলা কর্তৃপক্ষ অতঃপর ন্যাশনাল পার্টির ২৪ জন নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত নেতা ও কর্মীদের মধ্যে বাবু ধীরেন দাস এমপিএ, জনাব ফেরদৌস ও জনাব গফুরের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। গতকল্য অধিক রাত্র পর্যন্ত ধৃত কর্মী ও নেতাদের জামিন দেওয়া হয় নাই বলিয়া প্রকাশ। আওয়ামী গুণ্ডাদল অদ্য স্থানীয় ন্যাশনাল পার্টির জনৈক কর্মীর পুস্তকের দোকান ‘মর্ডান লাইব্রেরিতেও হামলা করে। আওয়ামী লীগের এ গুণ্ডামিতে খুলনার ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক মহলে দারুণ ক্ষোভের সঞ্চার হইয়াছে এবং তাহারা ইহাকে চরম ব্যভিচার বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। তারযোগে অপর এক খবরে প্রকাশ, অদ্য ১০ হাজার ছাত্র শ্রমিক ও জনসাধারণ শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা সহকারে খুলনা শহর প্রদক্ষিণ করিয়া শেখ মুজিবরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, গতকল্য জনাব মুজিবর এখানে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও উত্তেজনামূলক বক্তৃতা দেন।

দৈনিক সংবাদ : ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫৭

সোহরাওয়ার্দী কর্তৃক আওয়ামী সরকারের গুণকীর্তন

জয়দেবপুরের জনসভায় খাদ্য সমস্যা সমাধানে সরকারি সাফল্যে আত্মপ্রসাদ

জয়দেবপুর (ঢাকা), ১২ সেপ্টেম্বর (এ,পি,পি)। অদ্য ঢাকা হইতে প্রায় ২৫ মাইল দূরবর্তী জয়দেবপুরে এক জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়ার্দী বলেন যে, কেন্দ্রে ও প্রদেশে ক্ষমতায় আসীন বর্তমান সরকারদ্বয়ের যুক্ত প্রচেষ্টায় দেশকে গুরুতর খাদ্য সংকট হইতে রক্ষা করা হইয়াছে। তিনি আরও বলেন যে, জনগণের প্রকৃত স্বার্থরক্ষার খাতিরেই বর্তমান সরকার শিল্পোন্নয়ন অপেক্ষা কৃষি উন্নয়নের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপে... অবলম্বন করিয়াছেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কাউন্সিলের অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ হইতে ট্রেনযোগে অদ্য সকালে জয়দেবপুর উপস্থিত হন। কাউন্সিল অধিবেশন সমাপ্ত হওয়ার কিছুক্ষণ পর স্থানীয় ভাওয়াল রাজপ্রাসাদের সম্মুখস্থ প্রাঙ্গণে এক জনসভায় তিনি ১৫ মিনিট কাল কক্তৃতা করেন। বক্তৃতা প্রসঙ্গে জনাব সোহরওয়ার্দী বলেন, সরকার শিল্পোন্নয়নের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ না করিয়া কৃষি উন্নয়নের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপের দুর্নীতি অবলম্বন করিয়াছেন। শিল্পোন্নয়নকেও অবহেলা করা হইবে না। তবে সরকার কৃষি এবং কৃষির সহায়ক শিল্পগুলোর উন্নয়নকে প্রধান্য দিবেন। তিনি বলেন যে, এদেশের অধিকাংশ অধিবাসীই কৃষক। সুতরাং কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা এবং তাহাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করাই সরকারের বর্তমান নীতির লক্ষ্য। কেন্দ্রে ও প্রদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতালাভের প্রাক্কালে প্রদেশে যে চরম খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হইয়াছিল উভয় সরকারের যুক্ত প্রচেষ্টায় তাহার হাত হইতে প্রদেশকে সেভাবে রক্ষা করিয়াছেন, প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতায় সেগুলোর উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, জনসাধারণের সবচেয়ে বড় সমস্যা হইল যে দুই বেলা পেট ভরিয়া খাইতে পাওয়া। এই সমস্যার সমাধান না হইলে অন্য কোন ক্ষেত্রেই দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সরকার সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সেচ, খাল খনন, বন্যা ও লোনা পানির প্লাবন প্রতিরোধ ইত্যাদির যে সব ব্যবস্থা করিয়াছেন প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতায় সেগুলির উল্লেখ করিয়াছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে, লঙ্গর খানা খুলিয়া সরকার লাখ লাখ মানুষকে অনাহারের হাত হইতে রক্ষা করিয়াছেন। ইহা ছাড়া সরকারি চেষ্টায় বিদেশ হইতে বিপুল পরিমাণে খাদ্য আমদানি করা সম্ভব হইয়াছে। কিন্তু বন্দরে গুদামের অভাব এবং মাল চলাচলের অন্যান্য অসুবিধার দরুন যথাসম্ভব ত্বরিৎ গতিতে আমদানিকৃত খাদ্য প্রদেশের অভ্যন্তরভাগে প্রেরণ করা সম্ভব হয় নাই। জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষায় বর্তমান সরকারের সাফল্যের জন্য তিনি আল্লাহকে ধন্যবাদ দেন এবং বলেন যে, সরকার ভবিষ্যতেও এই চেষ্টা চালাইয়া যাবেন। জনাব সোহরাওয়ার্দী বলেন যে, তাহার সরকারের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতি বিদেশে পাকিস্তানের মর্যাদা বৃদ্ধি করিয়াছে। জনাব সোহরাওয়ার্দীর বক্তৃতা পূর্ব প্রাদেশিক পরিষদের প্রধানমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খান এবং আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান সভায় বক্তৃতা করেন।

দৈনিক সংবাদ : ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৭

শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২০ , ১০ মাঘ ১৪২৬, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

খুলনায় পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ২৪ জন নেতা ও কর্মী গ্রেফতার

আওয়ামী লীগের গুণ্ডামিতে শহরে ত্রাসের রাজত্ব : ১৪৪ ধারা জারি

নিজস্ব সংবাদদাতা কর্তৃক টেলিফোনে প্রেরিত খুলনা, ৪ সেপ্টেম্বর। গণতন্ত্রের ধ্বজ্জাধারী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে অদ্য খুলনায় বাবু ধীরেন দাস এম, পি, এ এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কর্মী জনাব ফেরদৌস ও জনাব গফুরসহ ২৪ জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হইয়াছে। জেলা কর্তৃপক্ষ শহরে ১৪৪ ধারা জারী করিয়া ন্যাশনাল পার্টি কর্তৃক আয়োজিত একটি সভা বন্ধ করিয়া দিয়েছেন। গ্রেফতার, ১৪৪ ধারা এবং গুণ্ডার আক্রমণের ফলে শহরে ত্রাসের রাজত্ব বিরাজ করিতেছে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গতকল্য জনাব মুজিবুর রহমান যখন গুটিকয়েক সমর্থক সমভিব্যাহারে এখানে সভা করিতে আসেন তখন আওয়ামী লীগ কর্তৃক ২১-দফা ওয়াদা খেলাফে বিক্ষুব্ধ এক জনতা সমবেত হইয়া তাহাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করিয়া তোলে এবং স্থানীয় শ্রমিকদল কর্তৃক শেখ মুজিবরের সমীপে লিখিত একটি খোলা চিঠি সভায় বিলি করা হয়। জনাব মুজিবুর রহমানের ক্রমাগত হুংকারে যখন জনতা তাহাদের রুটি ও রুজির সহিত জড়িত নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসায় বিরত হইতে অস্বীকার করে তখন পূর্ব হইতে আমদানিকৃত একদল গুণ্ডা লাঠি ও নানারূপ অস্ত্রশস্ত্র লইয়া নিরস্ত্র জনতার ওপর ঝাঁপাইয়া পড়ে। কিন্তু জনতার প্রতিরোধে গুণ্ডাদল শেষ পর্যন্ত সরিয়া পড়িতে বাধ্য হয়। গুণ্ডাদলের ব্যুহ রচনা করিয়া তিনি যখন সভা করা সম্ভব হইল না তখন শেখ মুজিব সভাস্থল ত্যাগ করেন। চারিদিকে পাহারার প্রাচীর রচনা করিয়া যখন তিনি সভাস্থল ত্যাগ করিতেছিলেন তখন জনতা মুহুর্মুহু” বিশ্বাসঘাতক আওয়ামী লীগ ধ্বংস হোক” “কুচক্রি দল ফিরিয়া যাও” “গণতান্ত্রিক শক্তি জিন্দাবাদ” ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করিয়া তোলে। জনসভায় নিরস্ত্র জনতার ওপর গুণ্ডা লেলাইয়া দেয়ার প্রতিবাদে অদ্য সকালের দিকে একটি শোভাযাত্রা বাহির করা হয় কিন্তু শোভাযাত্রা যখন বিভিন্ন ধ্বনি সহকারে শহর প্রদক্ষিণ করিতে থাকে, তখন পুনরায় আওয়ামী গুণ্ডাদল শোভাযাত্রার ওপর চড়াও হইয়া শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী জনতার ওপর ইস্টক ও সোডার বোতল নিক্ষেপ করিতে থাকে। গুণ্ডামির প্রতিবাদে ন্যাশনাল পার্টি এক জনসভার আয়োজন করিলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পূর্বাহ্নে ১৪৪ ধারা জারি করিয়া সভা বন্ধ করিয়া দেন। জেলা কর্তৃপক্ষ অতঃপর ন্যাশনাল পার্টির ২৪ জন নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত নেতা ও কর্মীদের মধ্যে বাবু ধীরেন দাস এমপিএ, জনাব ফেরদৌস ও জনাব গফুরের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। গতকল্য অধিক রাত্র পর্যন্ত ধৃত কর্মী ও নেতাদের জামিন দেওয়া হয় নাই বলিয়া প্রকাশ। আওয়ামী গুণ্ডাদল অদ্য স্থানীয় ন্যাশনাল পার্টির জনৈক কর্মীর পুস্তকের দোকান ‘মর্ডান লাইব্রেরিতেও হামলা করে। আওয়ামী লীগের এ গুণ্ডামিতে খুলনার ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক মহলে দারুণ ক্ষোভের সঞ্চার হইয়াছে এবং তাহারা ইহাকে চরম ব্যভিচার বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। তারযোগে অপর এক খবরে প্রকাশ, অদ্য ১০ হাজার ছাত্র শ্রমিক ও জনসাধারণ শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা সহকারে খুলনা শহর প্রদক্ষিণ করিয়া শেখ মুজিবরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, গতকল্য জনাব মুজিবর এখানে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও উত্তেজনামূলক বক্তৃতা দেন।

দৈনিক সংবাদ : ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫৭

সোহরাওয়ার্দী কর্তৃক আওয়ামী সরকারের গুণকীর্তন

জয়দেবপুরের জনসভায় খাদ্য সমস্যা সমাধানে সরকারি সাফল্যে আত্মপ্রসাদ

জয়দেবপুর (ঢাকা), ১২ সেপ্টেম্বর (এ,পি,পি)। অদ্য ঢাকা হইতে প্রায় ২৫ মাইল দূরবর্তী জয়দেবপুরে এক জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়ার্দী বলেন যে, কেন্দ্রে ও প্রদেশে ক্ষমতায় আসীন বর্তমান সরকারদ্বয়ের যুক্ত প্রচেষ্টায় দেশকে গুরুতর খাদ্য সংকট হইতে রক্ষা করা হইয়াছে। তিনি আরও বলেন যে, জনগণের প্রকৃত স্বার্থরক্ষার খাতিরেই বর্তমান সরকার শিল্পোন্নয়ন অপেক্ষা কৃষি উন্নয়নের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপে... অবলম্বন করিয়াছেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কাউন্সিলের অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ হইতে ট্রেনযোগে অদ্য সকালে জয়দেবপুর উপস্থিত হন। কাউন্সিল অধিবেশন সমাপ্ত হওয়ার কিছুক্ষণ পর স্থানীয় ভাওয়াল রাজপ্রাসাদের সম্মুখস্থ প্রাঙ্গণে এক জনসভায় তিনি ১৫ মিনিট কাল কক্তৃতা করেন। বক্তৃতা প্রসঙ্গে জনাব সোহরওয়ার্দী বলেন, সরকার শিল্পোন্নয়নের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ না করিয়া কৃষি উন্নয়নের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপের দুর্নীতি অবলম্বন করিয়াছেন। শিল্পোন্নয়নকেও অবহেলা করা হইবে না। তবে সরকার কৃষি এবং কৃষির সহায়ক শিল্পগুলোর উন্নয়নকে প্রধান্য দিবেন। তিনি বলেন যে, এদেশের অধিকাংশ অধিবাসীই কৃষক। সুতরাং কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা এবং তাহাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করাই সরকারের বর্তমান নীতির লক্ষ্য। কেন্দ্রে ও প্রদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতালাভের প্রাক্কালে প্রদেশে যে চরম খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হইয়াছিল উভয় সরকারের যুক্ত প্রচেষ্টায় তাহার হাত হইতে প্রদেশকে সেভাবে রক্ষা করিয়াছেন, প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতায় সেগুলোর উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, জনসাধারণের সবচেয়ে বড় সমস্যা হইল যে দুই বেলা পেট ভরিয়া খাইতে পাওয়া। এই সমস্যার সমাধান না হইলে অন্য কোন ক্ষেত্রেই দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সরকার সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সেচ, খাল খনন, বন্যা ও লোনা পানির প্লাবন প্রতিরোধ ইত্যাদির যে সব ব্যবস্থা করিয়াছেন প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতায় সেগুলির উল্লেখ করিয়াছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে, লঙ্গর খানা খুলিয়া সরকার লাখ লাখ মানুষকে অনাহারের হাত হইতে রক্ষা করিয়াছেন। ইহা ছাড়া সরকারি চেষ্টায় বিদেশ হইতে বিপুল পরিমাণে খাদ্য আমদানি করা সম্ভব হইয়াছে। কিন্তু বন্দরে গুদামের অভাব এবং মাল চলাচলের অন্যান্য অসুবিধার দরুন যথাসম্ভব ত্বরিৎ গতিতে আমদানিকৃত খাদ্য প্রদেশের অভ্যন্তরভাগে প্রেরণ করা সম্ভব হয় নাই। জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষায় বর্তমান সরকারের সাফল্যের জন্য তিনি আল্লাহকে ধন্যবাদ দেন এবং বলেন যে, সরকার ভবিষ্যতেও এই চেষ্টা চালাইয়া যাবেন। জনাব সোহরাওয়ার্দী বলেন যে, তাহার সরকারের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতি বিদেশে পাকিস্তানের মর্যাদা বৃদ্ধি করিয়াছে। জনাব সোহরাওয়ার্দীর বক্তৃতা পূর্ব প্রাদেশিক পরিষদের প্রধানমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খান এবং আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান সভায় বক্তৃতা করেন।

দৈনিক সংবাদ : ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৭