ঘাটাইলে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ফসলি জমির টপ সয়েল বা মাটির উপরিভাগ কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। কৃষকদের অভাবের সুযোগে এসব মাটি কিনে নিয়ে ইট তৈরির কাজে লাগাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। মূলত নগদ টাকার আশায় জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে উর্বরতা শক্তি হারিয়ে চাষাবাদের অযোগ্য হচ্ছে কৃষিজমি। এতে ফসলহানির আশঙ্কা করছেন কৃষিবিদরা। আইনের প্রয়োগ না থাকায় মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণির দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে জমির টপ সয়েল নির্বিঘেœ কেটে নিচ্ছেন। ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইলে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৬০। ভাটা মালিকদের দাবি অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৫টি ইটভাটার লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগেরই লাইসেন্স নবায়ন নেই। ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন না মেনে বনের ভেতর, আবাসিক এলাকা, তিন ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় এসব ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইলে আবাদি জমির পরিমাণ ৩০ হাজার ১৫০ হেক্টর। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে পাঁচ থেকে সাত একর জমির প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী ৬০টির মতো ইটভাটা স্থাপনেই চলে গেছে কমপক্ষে ৪০০ একর আবাদি জমি। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য প্রতিবছর শত একর ফসলি জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

কৃষিবিদ হাসান ইমাম বলেন, ফলনযোগ্য জমির উৎপাদনশক্তি জমা থাকে মাটির ছয় থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশে যেকোনো ফসল বেড়ে উঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসল প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে বড় হয়। এই টপ সয়েল একবার কেটে নিলে সে জমির আর মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। ফলে পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ওই জমিতে কোনো ফসল উৎপাদিত হয় না। এতে জমিটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইটভাটা এলাকা ও এর আশপাশের বেশির ভাগ ফসলি জমির মাটি পাঁচ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে কাটা হয়েছে। এতে এসব ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হয়েছে। মাটি বিক্রি করেছেন এমন কৃষকরা জানান, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য এক শ্রেণির দালাল গ্রামে গ্রামে ঘুরে টাকার লোভ দেখিয়ে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায়। ধানের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় সহজ-সরল কৃষকরা এই ফাঁদে পড়ে ফসলি জমির মাটি স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয়। জমির দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কথা অনেক কৃষকই জানে না। আবার অনেকে ফসলের সঠিক দাম না পাওয়ায় জমির মাটি বিক্রি করে। অর্থাৎ টাকার লোভেই কৃষক জমির মাটি বিক্রি করে। মাটি বিক্রি করে জমির ক্ষতি করছেন কেন জানতে চাইলে কালিয়া গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, ধানের দাম নেই। ফসল আবাদ করে প্রতিবছরই লোকসান হয়। তাই মাটি বিক্রি করে দিয়েছি।

এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. উম্মে হাবিবা জানান, জমির টপ সয়েল বিক্রি করলে জমির উৎপাদন শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। জমির টপ সয়েল বিক্রি না করতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

image

টাঙ্গাইল : এভাবেই কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি -সংবাদ

আরও খবর
ভৈরবে পুলিশের বিরুদ্ধে অটোরিকশা চুরির অভিযোগ
অছাত্র-বিবাহিত-মাদকাসক্তদের হাতে জিম্মি শাবি ছাত্রলীগ!
চট্টগ্রামে ৭ মণ ওজনের কৈ কোরাল : দাম হাকছে ৩ লাখ
রূপগঞ্জে সবজি ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম
গ্রামের নাম মসলা গ্রাম
ফুলবাড়ীতে পাহারাদার হত
ঝিকরগাছায় গরু চুরি গণপিটুনিতে নিহত ১
মাগুরায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ডাকাত হত
নোয়াখালীতে ভূমি অধিগ্রহণ না করে সড়ক নির্মাণ : উত্তেজনা
চট্টগ্রামে ৯ দোকান ছাই
সাতক্ষীরায় ছাত্রের দেহ উদ্ধার আটক ১
গুরুদাসপুরে হত্যা মামলার আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত
গোপালগঞ্জ আদালত চত্বরে ছিনতাই আটক ৩
দশমিনায় চরহাদীতে মেছোবাঘ অবমুক্ত
যথাসময়ে হিসাব খুলতে ব্যর্থ শতাধিক শিক্ষার্থীর বৃত্তির টাকা অনিশ্চিত
টাঙ্গাইলে হাউজিংয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
বাঁশখালীর নাপোড়া বাজারের ভূমি অবৈধ দখলে

শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১১ মাঘ ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ঘাটাইলে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

জেলা বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

image

টাঙ্গাইল : এভাবেই কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি -সংবাদ

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ফসলি জমির টপ সয়েল বা মাটির উপরিভাগ কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। কৃষকদের অভাবের সুযোগে এসব মাটি কিনে নিয়ে ইট তৈরির কাজে লাগাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। মূলত নগদ টাকার আশায় জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে উর্বরতা শক্তি হারিয়ে চাষাবাদের অযোগ্য হচ্ছে কৃষিজমি। এতে ফসলহানির আশঙ্কা করছেন কৃষিবিদরা। আইনের প্রয়োগ না থাকায় মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণির দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে জমির টপ সয়েল নির্বিঘেœ কেটে নিচ্ছেন। ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইলে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৬০। ভাটা মালিকদের দাবি অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৫টি ইটভাটার লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগেরই লাইসেন্স নবায়ন নেই। ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন না মেনে বনের ভেতর, আবাসিক এলাকা, তিন ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় এসব ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইলে আবাদি জমির পরিমাণ ৩০ হাজার ১৫০ হেক্টর। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে পাঁচ থেকে সাত একর জমির প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী ৬০টির মতো ইটভাটা স্থাপনেই চলে গেছে কমপক্ষে ৪০০ একর আবাদি জমি। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য প্রতিবছর শত একর ফসলি জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

কৃষিবিদ হাসান ইমাম বলেন, ফলনযোগ্য জমির উৎপাদনশক্তি জমা থাকে মাটির ছয় থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশে যেকোনো ফসল বেড়ে উঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসল প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে বড় হয়। এই টপ সয়েল একবার কেটে নিলে সে জমির আর মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। ফলে পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ওই জমিতে কোনো ফসল উৎপাদিত হয় না। এতে জমিটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইটভাটা এলাকা ও এর আশপাশের বেশির ভাগ ফসলি জমির মাটি পাঁচ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে কাটা হয়েছে। এতে এসব ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হয়েছে। মাটি বিক্রি করেছেন এমন কৃষকরা জানান, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য এক শ্রেণির দালাল গ্রামে গ্রামে ঘুরে টাকার লোভ দেখিয়ে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায়। ধানের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় সহজ-সরল কৃষকরা এই ফাঁদে পড়ে ফসলি জমির মাটি স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয়। জমির দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কথা অনেক কৃষকই জানে না। আবার অনেকে ফসলের সঠিক দাম না পাওয়ায় জমির মাটি বিক্রি করে। অর্থাৎ টাকার লোভেই কৃষক জমির মাটি বিক্রি করে। মাটি বিক্রি করে জমির ক্ষতি করছেন কেন জানতে চাইলে কালিয়া গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, ধানের দাম নেই। ফসল আবাদ করে প্রতিবছরই লোকসান হয়। তাই মাটি বিক্রি করে দিয়েছি।

এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. উম্মে হাবিবা জানান, জমির টপ সয়েল বিক্রি করলে জমির উৎপাদন শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। জমির টপ সয়েল বিক্রি না করতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।