মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

১৭ জানুয়ারি

বার্মা বাংলাদেশে চাল সরবরাহ করবে

বিএসএস পরিবেশিত এক সংবাদে সোমবার বলা হয় যে, দ্বিপক্ষীয় বিনিময় ভিত্তিতে বার্মা সরকার বাংলাদেশে চাল সরবরাহের ব্যাপারে নীতিগতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। খাদ্য ও সিভিল সাপ্লাই দপ্তরের মন্ত্রী মি, ফণীভূষণ মজুমদার এবং বার্মার কন্সালের সাথে আলোচনার পর মন্ত্রী মহোদয় উক্ত বিষয় প্রকাশ করেন। বার্মার কন্সাল বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েটে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বার্মা কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট কন্সাল মহোদয় এই দ্বিতীয়বার খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। মন্ত্রী মহোদয় বলেন যে, বার্মা বাংলাদেশে কি পরিমাণ চাল সরবরাহ করবে, তা নির্ভর করে রপ্তানিযোগ্য কি পরিমাণ চাল সেখানে পাওয়া যাবে, তার ওপরে। এই বিষয়টি চূড়ান্তকরণের জন্য বার্মা সরকার শিগগিরই বাংলাদেশের একটি সরকারি প্রতিনিধি দলকে বার্মা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে মন্ত্রী মহোদয় উল্লেখ করেন।

পাকিস্তান-মার্কিন অশুভ আঁতাত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি একটি রোমাঞ্চকর চিত্র দেখানো হয়েছে। চিত্রটির নাম ‘জ্যাক এন্ডারসনের চৌম্বক টেপ রেকর্ড।’ এর গল্প হচ্ছে কি করে একটি গোপন টেপ রেকর্ড অপরাধ ফাস করতে সাহায্য। করল, সে সম্পকে। “এন্ডারসন পেপার” প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি শুরু হয়েছে, তার নামের সমাপতনের দিক থেকেই নয়, মার্কিন প্রশাসনের “শ্রেণী বিভাগকৃত” দলিলপত্রাদি ও তার প্রতিনিধিবৃন্দ যা ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে অসমাপতনের থেকেও সাদৃশ্যপণ। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে এখন যে কেউ এন্ডারসনের ফাঁস হওয়ার ফলস্বরূপ আমেরিকানদের কৃত নিরুৎসাহব্যঞ্জক সিদ্ধান্তসমূহের কিছু তালিকাবদ্ধ করতঃ যে কর্তৃপক্ষ খোলানীতি পরিচালনা প্রতিশ্রতিতে ক্ষমতাসীন হয়েছিল। তারা কংগ্রেস ও ভোট দাতাদের হতাশা করেছে।” এন্ডারসন পেপারের বিচারে কর্তৃপক্ষ যখন থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন চুক্তি রয়েছে, তখন থেকে শাসনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছে। শাসনতন্ত্র অনুসারে এই চুক্তি কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া উচিত। কিন্তু এই ধরনের কোন চুক্তির অস্তিত্ব সম্পর্কে ক্যাপিটাল কোনো ধারণা ছিল না। মার্কিন কর্মকর্তারা বারংবারই ভারতবর্ষকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহতম গণতন্ত্র বলা সত্ত্বেও (অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে) ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রাজনীতির অশুভ ত্রিভুজের অন্যতম বাহু হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “গণতন্ত্রকে” নয়-পৃষ্ঠপোষণ করেছে ইয়াহিয়া খানের এক নায়কত্বমূলক শাসনব্যবস্থাকে। এই কোলাকুলি এত শক্ত ছিল যে, চীনা নেতারা ভিয়েতনাম গণপ্রজাতন্ত্রে মার্কিন বিমান হামলার নিন্দা জ্ঞাপন করার ব্যাপারে দীর্ঘদিন নীরব ছিলেন। দুঃখজনক ফিরিস্তি আরও বাড়ানো যায়। কিন্তু সাংবাদিকেরা এখন খাঁটি “গোয়েন্দা” ধরনের প্রশ্নের ব্যাপারে চিন্তিত জ্যাক এন্ডারসনকে হোয়াহট হাউসের শ্রেণী বিভাগকৃত ফাইল যোগাল, এগুলোর মতলবই বা কি? পেন্টাগনের গোপন দলিলাদির ব্যাপারটি কতটা সবল-পেন্টাগন কর্মচারী ড্যানিয়েল এলসবেগের গোপন দলিলপত্র ঘাঁটার সুবিধা ছিল- যুদ্ধের ব্যাপারে তার মনোভাব পরিবর্তিত হলে তিনি সেগুলো জনসমক্ষে ফাঁস করে দেন। এছাড়াও পেন্টাগনের দলিলে পূর্বেকার শাসক কর্তৃপক্ষও জড়িত এবং ‘এন্ডারসন পেপার কার্যকলাপ ফাঁস করে দিয়েছেন। বর্তমান শাসক কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মচারীর পক্ষেই এগুলো এন্ডারসনকে দেয়া সম্ভব, ব্যাপারটি এন্ডারসন স্বয়ং স্বীকার করেছেন। যখন খোঁজাখুঁজি করেছে, সাংবাদিকদের দ্বিতীয় প্রশ্ন নিয়ে ব্যতিব্যস্তঃ এবারের মতলবটা কি? বহু রকম আন্দাজ-অনুমান করা হলো। এশিয়ায় বর্তমান মার্কিন নীতির নীতিগত প্রতিপক্ষরা এই নীতি পরিবর্তনের জন্য এই কাজ করেছে। এটি নীরবে করা হয়েছে এজন্য যে কর্তৃপক্ষের বিপজ্জনক এশিয়ার নীতি ব্যাপকভিত্তিক ও সাংগঠনিক সামরিক সংঘর্ষের দাবি কংগ্রেসে হতে পারে। অবস্থা দেখে মনে হয়, প্রকাশিত গোপন দলিলপত্রাদি প্রমাণ করেছে যে, এশিয়ায় মার্কিন নীতির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের মধ্যে গভীর মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে।

বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিচ্ছবি সংবলিত খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণীত হচ্ছে

সংসদীয় দফতরের মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন সোমবার বলেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণীত হচ্ছে। এনা প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি আশা প্রকাশ করেন খসড়া শাসনতন্ত্রের চূড়ান্ত রূপ দেয়ার জন্য বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গণপরিষদের অধিবেশন আহ্বানের তারিখ সম্পর্কে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, শিগগিরই অধিবেশনের আহ্বান করবেন বলে তিনি আশা করছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান যে, গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৌলিক শর্তগুলো প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাছাড়া শাসনতন্ত্রে জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এবং নির্বাচনিক কর্মসূচি তথা আওয়ামী লীগের প্রদত্ত অঙ্গীকারসমূহ পরিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২

শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১১ মাঘ ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মুজিব শতবর্ষ

মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

১৭ জানুয়ারি

বার্মা বাংলাদেশে চাল সরবরাহ করবে

বিএসএস পরিবেশিত এক সংবাদে সোমবার বলা হয় যে, দ্বিপক্ষীয় বিনিময় ভিত্তিতে বার্মা সরকার বাংলাদেশে চাল সরবরাহের ব্যাপারে নীতিগতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। খাদ্য ও সিভিল সাপ্লাই দপ্তরের মন্ত্রী মি, ফণীভূষণ মজুমদার এবং বার্মার কন্সালের সাথে আলোচনার পর মন্ত্রী মহোদয় উক্ত বিষয় প্রকাশ করেন। বার্মার কন্সাল বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েটে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বার্মা কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট কন্সাল মহোদয় এই দ্বিতীয়বার খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। মন্ত্রী মহোদয় বলেন যে, বার্মা বাংলাদেশে কি পরিমাণ চাল সরবরাহ করবে, তা নির্ভর করে রপ্তানিযোগ্য কি পরিমাণ চাল সেখানে পাওয়া যাবে, তার ওপরে। এই বিষয়টি চূড়ান্তকরণের জন্য বার্মা সরকার শিগগিরই বাংলাদেশের একটি সরকারি প্রতিনিধি দলকে বার্মা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে মন্ত্রী মহোদয় উল্লেখ করেন।

পাকিস্তান-মার্কিন অশুভ আঁতাত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি একটি রোমাঞ্চকর চিত্র দেখানো হয়েছে। চিত্রটির নাম ‘জ্যাক এন্ডারসনের চৌম্বক টেপ রেকর্ড।’ এর গল্প হচ্ছে কি করে একটি গোপন টেপ রেকর্ড অপরাধ ফাস করতে সাহায্য। করল, সে সম্পকে। “এন্ডারসন পেপার” প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি শুরু হয়েছে, তার নামের সমাপতনের দিক থেকেই নয়, মার্কিন প্রশাসনের “শ্রেণী বিভাগকৃত” দলিলপত্রাদি ও তার প্রতিনিধিবৃন্দ যা ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে অসমাপতনের থেকেও সাদৃশ্যপণ। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে এখন যে কেউ এন্ডারসনের ফাঁস হওয়ার ফলস্বরূপ আমেরিকানদের কৃত নিরুৎসাহব্যঞ্জক সিদ্ধান্তসমূহের কিছু তালিকাবদ্ধ করতঃ যে কর্তৃপক্ষ খোলানীতি পরিচালনা প্রতিশ্রতিতে ক্ষমতাসীন হয়েছিল। তারা কংগ্রেস ও ভোট দাতাদের হতাশা করেছে।” এন্ডারসন পেপারের বিচারে কর্তৃপক্ষ যখন থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন চুক্তি রয়েছে, তখন থেকে শাসনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছে। শাসনতন্ত্র অনুসারে এই চুক্তি কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া উচিত। কিন্তু এই ধরনের কোন চুক্তির অস্তিত্ব সম্পর্কে ক্যাপিটাল কোনো ধারণা ছিল না। মার্কিন কর্মকর্তারা বারংবারই ভারতবর্ষকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহতম গণতন্ত্র বলা সত্ত্বেও (অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে) ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রাজনীতির অশুভ ত্রিভুজের অন্যতম বাহু হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “গণতন্ত্রকে” নয়-পৃষ্ঠপোষণ করেছে ইয়াহিয়া খানের এক নায়কত্বমূলক শাসনব্যবস্থাকে। এই কোলাকুলি এত শক্ত ছিল যে, চীনা নেতারা ভিয়েতনাম গণপ্রজাতন্ত্রে মার্কিন বিমান হামলার নিন্দা জ্ঞাপন করার ব্যাপারে দীর্ঘদিন নীরব ছিলেন। দুঃখজনক ফিরিস্তি আরও বাড়ানো যায়। কিন্তু সাংবাদিকেরা এখন খাঁটি “গোয়েন্দা” ধরনের প্রশ্নের ব্যাপারে চিন্তিত জ্যাক এন্ডারসনকে হোয়াহট হাউসের শ্রেণী বিভাগকৃত ফাইল যোগাল, এগুলোর মতলবই বা কি? পেন্টাগনের গোপন দলিলাদির ব্যাপারটি কতটা সবল-পেন্টাগন কর্মচারী ড্যানিয়েল এলসবেগের গোপন দলিলপত্র ঘাঁটার সুবিধা ছিল- যুদ্ধের ব্যাপারে তার মনোভাব পরিবর্তিত হলে তিনি সেগুলো জনসমক্ষে ফাঁস করে দেন। এছাড়াও পেন্টাগনের দলিলে পূর্বেকার শাসক কর্তৃপক্ষও জড়িত এবং ‘এন্ডারসন পেপার কার্যকলাপ ফাঁস করে দিয়েছেন। বর্তমান শাসক কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মচারীর পক্ষেই এগুলো এন্ডারসনকে দেয়া সম্ভব, ব্যাপারটি এন্ডারসন স্বয়ং স্বীকার করেছেন। যখন খোঁজাখুঁজি করেছে, সাংবাদিকদের দ্বিতীয় প্রশ্ন নিয়ে ব্যতিব্যস্তঃ এবারের মতলবটা কি? বহু রকম আন্দাজ-অনুমান করা হলো। এশিয়ায় বর্তমান মার্কিন নীতির নীতিগত প্রতিপক্ষরা এই নীতি পরিবর্তনের জন্য এই কাজ করেছে। এটি নীরবে করা হয়েছে এজন্য যে কর্তৃপক্ষের বিপজ্জনক এশিয়ার নীতি ব্যাপকভিত্তিক ও সাংগঠনিক সামরিক সংঘর্ষের দাবি কংগ্রেসে হতে পারে। অবস্থা দেখে মনে হয়, প্রকাশিত গোপন দলিলপত্রাদি প্রমাণ করেছে যে, এশিয়ায় মার্কিন নীতির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের মধ্যে গভীর মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে।

বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিচ্ছবি সংবলিত খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণীত হচ্ছে

সংসদীয় দফতরের মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন সোমবার বলেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণীত হচ্ছে। এনা প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি আশা প্রকাশ করেন খসড়া শাসনতন্ত্রের চূড়ান্ত রূপ দেয়ার জন্য বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গণপরিষদের অধিবেশন আহ্বানের তারিখ সম্পর্কে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, শিগগিরই অধিবেশনের আহ্বান করবেন বলে তিনি আশা করছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান যে, গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৌলিক শর্তগুলো প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাছাড়া শাসনতন্ত্রে জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এবং নির্বাচনিক কর্মসূচি তথা আওয়ামী লীগের প্রদত্ত অঙ্গীকারসমূহ পরিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২