গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

আওয়ামী লীগ-ন্যাপ সমঝোতা

জনাব,

৯৩ ধারা প্রবর্তনে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী প্রতিটি পাকিস্তানীই মর্মাহত হইয়াছে। যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অজুহাতে কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৩ ধারা প্রবর্তন করিয়াছে, তাহা ন্যাপদল কর্তৃক নিরপেক্ষ ভূমিকা ত্যাগ করিয়া আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকারকে সমর্থন ও জনাব আবু হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক আনীত অনাস্থা প্রস্তাব ১৪ ভোটের আধিক্যে গৃহীত হওয়ার পর দূরীভূত হইল। রাজনৈতিক আকাশে যখন দুর্যোগের ঘনঘটা ছিল না, তখন কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৩ ধারা প্রবর্তন করিয়াছে। আতা মন্ত্রিসভাকে পুনর্বহালের সুযোগ দিয়া কেন্দ্রীয় সরকার পাক শাসনতন্ত্র ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাবের পরিচয় দিতে পারিতেন। অনেকে এমনকি জনাব সোহরাওয়ার্দী পর্যন্ত বলিয়াছেন যে, এই কার্যের পেছনে কোন অদৃশ্য হস্তকার্য করিতেছে। কেহ কেহ ইহাকে সাধারণ নির্বাচন বানচাল, বিপ্লবী পরিষদ গঠনের পথে প্রথম পদক্ষেপ এবং দেশে এক নায়কত্ব প্রতিষ্ঠার পূর্বাভাস বলিয়া অভিহিত করিতেছেন। গৃহীত পন্থা দুষ্ট সন্দেহ করা স্বাভাবিক। মনে হয়, ইহা দুরভিসন্ধিমূলক। এই কার্যের কিছুদিন পূর্ব্বেই পেশোয়ার রিপাবলিকান পার্টির এক সভায় সাধারণ নির্বাচন না করিয়া সমস্ত শাসন ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হস্তে গ্রহণ করিবার জন্য জনাব ইসকান্দার মির্জাকে অনুরোধ করিয়া এক প্রস্তাব গৃহীত হয়। বিপ্লবী পরিষদ গঠনের কথা অনেক আগেই শোনা গিয়াছে। কিন্তু গণতন্ত্রী পাকিস্তানী জনসাধারণ এই প্রকার যে কোন কার্যকে বানচাল করিবার জন্য শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংগ্রাম করিবে। দেশকে এই প্রকার পরিস্থিতির মুখে ঠেলিয়া না দিয়া, অবিলম্বে ১৯৩ ধারা প্রত্যাহার, পূর্ব পাকিস্তানে আতা মন্ত্রিসভার পুনর্বহাল ও প্রতিশ্রুত সময়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ সমীপে আবেদন জানাইতেছে। এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ-ন্যাপ সমঝোতাকে অভিনন্দন জানাই। পাকিস্তানে মুসলিম লীগ শাসনের সময় যখন গণতন্ত্রের কবর রচনা করিবার প্রচেষ্টা চলিত, তখন এই প্রগতিশীল কর্মীরাই গণতন্ত্রকে রক্ষা করিবার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য, রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নের জন্য একত্রে সংগ্রাম করিয়াছে। মধ্যপথে কোন প্রশ্নে দ্বিধা-বিভক্ত হয়। আবার সমঝোতায় আসাতে আমরা সুখী হইয়াছি। -মোহাম্মদ আবু হামেদ এমএ, সহ-সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগ, ত্রিপুরা।

দৈনিক সংবাদ : ৯ জুলাই ১৯৫৮

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ যোগদান করিবে না

করাচিতে শেখ মুজিবুর রহমানের মন্তব্য

করাচী ৯ জুলাই (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের যোগদানের গুজব সম্পূর্ণ অস্বীকার করিয়া অদ্য বলেন যে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগদান না করার পূর্বসিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করিতেছেন। ইহার কোন সম্ভাবনাও নাই। তিনি বলেন যে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে রিপাবলিকান সরকারকে সমর্থনদান করিতেছেন; কিন্তু তাহারা মন্ত্রীসভায় যোগদান করে নাই। শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে জনাব আতাউর রহমান খানকে সরকার গঠন করিতে না দেয়ায় আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা না করিয়া পারি না। পরিষদে জনাব খানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করিয়া তিনি বলেন যে, জনাব খান সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিষদ সদস্যদের সমর্থন লাভ করা সত্ত্বেও তাহাকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হইতেছে না। শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাসনের তীব্র বিরোধিতা করেন।

দৈনিক সংবাদ ১০ জুলাই ১৯৫৮

ন্যাপ-আওয়ামী লীগ সমঝোতা অভিনন্দিত

বেগমগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভায় প্রস্তাব গ্রহণ

সংবাদদাতা, নোয়াখালী, ১৪ জুলাই। সম্প্রতি চৌমোহনী পাবলিক ইন্সটিটিউট হলে মহকুমা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জনাব নুরুল হকের সভাপতিত্বে বেগমগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জনাব নুরুল আলমকে সভাপতি এবং মোহাম্মদ আক্কাসকে সম্পাদক করিয়া একটি কমিটি গঠিত হয়। সম্মেলনে প্রদেশে ১৯৩ ধারা জারির নিন্দা করিয়া এবং অবিলম্বে প্রদেশের বুক হইতে উহা প্রত্যাহার করার দাবি জানান হয়। অপর এক প্রস্তাবে জনাব আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে প্রদেশে পার্লামেন্টারি শাসন প্রবর্তনের দাবি করা হয়। ১৯৫৮ সালের নভেম্বর মাসের পরিবর্তে ১৯৫৯ সালে যুক্ত নির্বাচনের ভিত্তিতে দেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়। অপর এক প্রস্তাবে ন্যাপ সম্পাদক জনাব মাহমুদ আলী এবং আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে যে প্রকাশিত দলিল সমঝোতা হয়, উহার জন্য তাহাদিগকে অভিনন্দিত করা হয়। সম্মেলনে অনাবৃষ্টি প্রপীড়িত জনসাধারণকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাহায্য দানের দাবি জানানো হয়।

দৈনিক সংবাদ : ১৬ জুলাই ১৯৫৮

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০ , ১৩ মাঘ ১৪২৬, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪১

গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

আওয়ামী লীগ-ন্যাপ সমঝোতা

জনাব,

৯৩ ধারা প্রবর্তনে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী প্রতিটি পাকিস্তানীই মর্মাহত হইয়াছে। যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অজুহাতে কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৩ ধারা প্রবর্তন করিয়াছে, তাহা ন্যাপদল কর্তৃক নিরপেক্ষ ভূমিকা ত্যাগ করিয়া আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকারকে সমর্থন ও জনাব আবু হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক আনীত অনাস্থা প্রস্তাব ১৪ ভোটের আধিক্যে গৃহীত হওয়ার পর দূরীভূত হইল। রাজনৈতিক আকাশে যখন দুর্যোগের ঘনঘটা ছিল না, তখন কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৩ ধারা প্রবর্তন করিয়াছে। আতা মন্ত্রিসভাকে পুনর্বহালের সুযোগ দিয়া কেন্দ্রীয় সরকার পাক শাসনতন্ত্র ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাবের পরিচয় দিতে পারিতেন। অনেকে এমনকি জনাব সোহরাওয়ার্দী পর্যন্ত বলিয়াছেন যে, এই কার্যের পেছনে কোন অদৃশ্য হস্তকার্য করিতেছে। কেহ কেহ ইহাকে সাধারণ নির্বাচন বানচাল, বিপ্লবী পরিষদ গঠনের পথে প্রথম পদক্ষেপ এবং দেশে এক নায়কত্ব প্রতিষ্ঠার পূর্বাভাস বলিয়া অভিহিত করিতেছেন। গৃহীত পন্থা দুষ্ট সন্দেহ করা স্বাভাবিক। মনে হয়, ইহা দুরভিসন্ধিমূলক। এই কার্যের কিছুদিন পূর্ব্বেই পেশোয়ার রিপাবলিকান পার্টির এক সভায় সাধারণ নির্বাচন না করিয়া সমস্ত শাসন ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হস্তে গ্রহণ করিবার জন্য জনাব ইসকান্দার মির্জাকে অনুরোধ করিয়া এক প্রস্তাব গৃহীত হয়। বিপ্লবী পরিষদ গঠনের কথা অনেক আগেই শোনা গিয়াছে। কিন্তু গণতন্ত্রী পাকিস্তানী জনসাধারণ এই প্রকার যে কোন কার্যকে বানচাল করিবার জন্য শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংগ্রাম করিবে। দেশকে এই প্রকার পরিস্থিতির মুখে ঠেলিয়া না দিয়া, অবিলম্বে ১৯৩ ধারা প্রত্যাহার, পূর্ব পাকিস্তানে আতা মন্ত্রিসভার পুনর্বহাল ও প্রতিশ্রুত সময়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ সমীপে আবেদন জানাইতেছে। এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ-ন্যাপ সমঝোতাকে অভিনন্দন জানাই। পাকিস্তানে মুসলিম লীগ শাসনের সময় যখন গণতন্ত্রের কবর রচনা করিবার প্রচেষ্টা চলিত, তখন এই প্রগতিশীল কর্মীরাই গণতন্ত্রকে রক্ষা করিবার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য, রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নের জন্য একত্রে সংগ্রাম করিয়াছে। মধ্যপথে কোন প্রশ্নে দ্বিধা-বিভক্ত হয়। আবার সমঝোতায় আসাতে আমরা সুখী হইয়াছি। -মোহাম্মদ আবু হামেদ এমএ, সহ-সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগ, ত্রিপুরা।

দৈনিক সংবাদ : ৯ জুলাই ১৯৫৮

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ যোগদান করিবে না

করাচিতে শেখ মুজিবুর রহমানের মন্তব্য

করাচী ৯ জুলাই (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের যোগদানের গুজব সম্পূর্ণ অস্বীকার করিয়া অদ্য বলেন যে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগদান না করার পূর্বসিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করিতেছেন। ইহার কোন সম্ভাবনাও নাই। তিনি বলেন যে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে রিপাবলিকান সরকারকে সমর্থনদান করিতেছেন; কিন্তু তাহারা মন্ত্রীসভায় যোগদান করে নাই। শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে জনাব আতাউর রহমান খানকে সরকার গঠন করিতে না দেয়ায় আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা না করিয়া পারি না। পরিষদে জনাব খানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করিয়া তিনি বলেন যে, জনাব খান সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিষদ সদস্যদের সমর্থন লাভ করা সত্ত্বেও তাহাকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হইতেছে না। শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাসনের তীব্র বিরোধিতা করেন।

দৈনিক সংবাদ ১০ জুলাই ১৯৫৮

ন্যাপ-আওয়ামী লীগ সমঝোতা অভিনন্দিত

বেগমগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভায় প্রস্তাব গ্রহণ

সংবাদদাতা, নোয়াখালী, ১৪ জুলাই। সম্প্রতি চৌমোহনী পাবলিক ইন্সটিটিউট হলে মহকুমা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জনাব নুরুল হকের সভাপতিত্বে বেগমগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জনাব নুরুল আলমকে সভাপতি এবং মোহাম্মদ আক্কাসকে সম্পাদক করিয়া একটি কমিটি গঠিত হয়। সম্মেলনে প্রদেশে ১৯৩ ধারা জারির নিন্দা করিয়া এবং অবিলম্বে প্রদেশের বুক হইতে উহা প্রত্যাহার করার দাবি জানান হয়। অপর এক প্রস্তাবে জনাব আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে প্রদেশে পার্লামেন্টারি শাসন প্রবর্তনের দাবি করা হয়। ১৯৫৮ সালের নভেম্বর মাসের পরিবর্তে ১৯৫৯ সালে যুক্ত নির্বাচনের ভিত্তিতে দেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়। অপর এক প্রস্তাবে ন্যাপ সম্পাদক জনাব মাহমুদ আলী এবং আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে যে প্রকাশিত দলিল সমঝোতা হয়, উহার জন্য তাহাদিগকে অভিনন্দিত করা হয়। সম্মেলনে অনাবৃষ্টি প্রপীড়িত জনসাধারণকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাহায্য দানের দাবি জানানো হয়।

দৈনিক সংবাদ : ১৬ জুলাই ১৯৫৮