নিয়ামতপুর প. প. কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার (স্যাকমো) আফজাল হোসেনের ভবিষ্যৎ তহবিলের (প্রভিডেন্ট ফান্ড) ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই তহবিল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দীন ওই টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

এ ঘটনায় গত ২৩ জানুয়ারি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আফজাল হোসেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-রিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

জানা যায়, উপজেলার রসুলপুর সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আফজাল হোসেন গত বছরের ১৫ অক্টোবর সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল (জিপিএফ) থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ নভেম্বর আফজালের নামে প্রভিডেন্ট ফান্ডের মোট স্থিতির ৮০ শতাংশ টাকা হিসেবে ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে অর্থ ছাড় হওয়ার দীর্ঘদিন পরেও আফজাল হোসেনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব নম্বরে ওই টাকা জমা না হওয়ায় গত ২৩ জানুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করতে গেলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন ওই আবেদন পত্রটি গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। সরাসরি আবেদনপত্রটি গ্রহণ না করায় তিনি ডাকযোগে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম উদ্দীনের বরাবর আবেদনপত্রটি পাঠান। পরবর্তীতে আফজাল হোসেন বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন তার প্রভিডেন্ট ফান্ডের ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা ইতোমধ্যে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন তার ব্যক্তিগত হিসাব নম্বরে জমা করে নিয়েছেন। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার আফজাল হোসেন তার দাবি করা প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তাকে বুঝিয়ে দেয়া ও টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিপ্তরের উপ-পরিচালক কুস্তরী আমিনা কুইন বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তে আসেন। তিনি এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের হিসাব শাখা ও সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখেন।

উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আফজাল হোসেন বলেন, আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছি। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তুলতে গেলে অনেক বিড়ম্বনা হয় এটা জানতাম। কিন্তু এখন দেখছি আমার জমা করা পুরো টাকায় আত্মসাত করে ফেলা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী আতাউল গণির যোগসাজশে আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাত করেছেন। এখন টাকা চাইতে গেলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কালক্ষেপণ করছেন। গত শনিবার আতাউল গণির সঙ্গে মুঠোফোনে আমার কথা হয়। ফোনালাপে আতাউল গণি দাবি করেছেন তার সহযোগিতায় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন তার ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পার করে নিয়েছেন এবং ওই টাকা পরবর্তীতে সমুদয় উত্তোলন করেছেন। এখন নিজে বাঁচার জন্য সেলিম উদ্দিন অফিস সহকারী আতাউল গণির ওপর দায় চাপাচ্ছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন দাবি করেন, ‘এ ঘটনায় আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে অফিস সহকারী আতাউল গণি উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আফজাল হোসেনের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাত করে নিয়েছেন। বিষয়টি আমি জানার পর, গত ২০ জানুয়ারি জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এছাড়া গত ১৯ জানুয়ারি থেকে অফিস সহকারী আতাউল গণি অনুমোদিতভাবে অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের ধারণা, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আতাউল গণি আত্মসাত করেছেন। টাকা আত্মসাত করে পলাতক থাকার বিষয়ে গত ২০ জানুয়ারি নিয়ামতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কুস্তরী আমিনা কুইন এ প্রতিবেদক কে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিপ্তরের সহকারী পরিচালক কামরুল আহসানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি নিজেও খোঁজখবর নিচ্ছি। এই টাকা যেই আত্মসাত করুক না কেন তদন্ত করে দায়ী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০ , ১৫ মাঘ ১৪২৬, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪১

নিয়ামতপুর প. প. কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

প্র্রতিনিধি, নিয়ামতপুর (নওগাঁ)

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার (স্যাকমো) আফজাল হোসেনের ভবিষ্যৎ তহবিলের (প্রভিডেন্ট ফান্ড) ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই তহবিল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দীন ওই টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

এ ঘটনায় গত ২৩ জানুয়ারি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আফজাল হোসেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-রিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

জানা যায়, উপজেলার রসুলপুর সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আফজাল হোসেন গত বছরের ১৫ অক্টোবর সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল (জিপিএফ) থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ নভেম্বর আফজালের নামে প্রভিডেন্ট ফান্ডের মোট স্থিতির ৮০ শতাংশ টাকা হিসেবে ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে অর্থ ছাড় হওয়ার দীর্ঘদিন পরেও আফজাল হোসেনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব নম্বরে ওই টাকা জমা না হওয়ায় গত ২৩ জানুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করতে গেলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন ওই আবেদন পত্রটি গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। সরাসরি আবেদনপত্রটি গ্রহণ না করায় তিনি ডাকযোগে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম উদ্দীনের বরাবর আবেদনপত্রটি পাঠান। পরবর্তীতে আফজাল হোসেন বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন তার প্রভিডেন্ট ফান্ডের ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা ইতোমধ্যে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন তার ব্যক্তিগত হিসাব নম্বরে জমা করে নিয়েছেন। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার আফজাল হোসেন তার দাবি করা প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তাকে বুঝিয়ে দেয়া ও টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিপ্তরের উপ-পরিচালক কুস্তরী আমিনা কুইন বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তে আসেন। তিনি এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের হিসাব শাখা ও সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখেন।

উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আফজাল হোসেন বলেন, আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছি। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তুলতে গেলে অনেক বিড়ম্বনা হয় এটা জানতাম। কিন্তু এখন দেখছি আমার জমা করা পুরো টাকায় আত্মসাত করে ফেলা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী আতাউল গণির যোগসাজশে আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাত করেছেন। এখন টাকা চাইতে গেলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কালক্ষেপণ করছেন। গত শনিবার আতাউল গণির সঙ্গে মুঠোফোনে আমার কথা হয়। ফোনালাপে আতাউল গণি দাবি করেছেন তার সহযোগিতায় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন তার ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পার করে নিয়েছেন এবং ওই টাকা পরবর্তীতে সমুদয় উত্তোলন করেছেন। এখন নিজে বাঁচার জন্য সেলিম উদ্দিন অফিস সহকারী আতাউল গণির ওপর দায় চাপাচ্ছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন দাবি করেন, ‘এ ঘটনায় আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে অফিস সহকারী আতাউল গণি উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আফজাল হোসেনের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাত করে নিয়েছেন। বিষয়টি আমি জানার পর, গত ২০ জানুয়ারি জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এছাড়া গত ১৯ জানুয়ারি থেকে অফিস সহকারী আতাউল গণি অনুমোদিতভাবে অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের ধারণা, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আতাউল গণি আত্মসাত করেছেন। টাকা আত্মসাত করে পলাতক থাকার বিষয়ে গত ২০ জানুয়ারি নিয়ামতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কুস্তরী আমিনা কুইন এ প্রতিবেদক কে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিপ্তরের সহকারী পরিচালক কামরুল আহসানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি নিজেও খোঁজখবর নিচ্ছি। এই টাকা যেই আত্মসাত করুক না কেন তদন্ত করে দায়ী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।