সান্ধ্য কোর্সের নামে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যবসা বন্ধ করুন

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে টাকা নিয়ে সনদ দেওয়ার হিড়িক। সান্ধ্য কোর্সে নামমাত্র ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সনদ পাচ্ছেন অনেকে। উইকেন্ড প্রোগ্রামগুলো সন্ধ্যাকালীন কোর্সের থেকেও নিম্নমানের। বেশিরভাগ উইকেন্ড প্রোগ্রামে সপ্তাহের এক দিনে পুরো ক্লাস নিয়ে শেষ করা হয়। নামমাত্র ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষার্থীর দ্বিগুণ বা তারও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে এসব কোর্সে। যদিও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করার পর তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির সুযোগ পায় খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী। বিপরীতে সন্ধ্যাকালীন কোর্সে টাকার বিনিময়ে পড়ার সুযোগ পায় এদের কয়েক গুণ। এসব কোর্স নিয়ে ব্যস্ত থাকায় শিক্ষকরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে শিক্ষার পরিবেশের পাশাপাশি সার্বিক পরিবেশ বিঘি্নত হচ্ছে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন ছাড়াই নতুন বিভাগ, প্রোগ্রাম ও ইনস্টিটিউট খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে, যা বাঞ্ছনীয় নয়। অভিযোগ রয়েছে, গবেষণা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কোর্সে আগ্রহ কমলেও সান্ধ্য কোর্স এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে তাদের আগ্রহ বেশি। শুধু আর্থিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমন কর্মকা- নৈতিকভাবেও সমর্থনযোগ্য নয়। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে, সেখানকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। এ কোর্স বন্ধ করতে দীর্ঘদিন ধরে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বক্তব্যেও এর প্রতি তির্যক মন্তব্য উঠে আসে। ইউজিসি এ নিয়ে কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠান এ কোর্স বন্ধ করেনি। উল্টো দিন দিন বেড়েই চলেছে এ কোর্সের পরিধি।

প্রশ্ন হলো এ নিয়ে ইউজিসি নিশ্চুপ কেন? অসঙ্গতি বন্ধে তাদের কি কোনরকম দায়বদ্ধতা নেই? গত মাসে সান্ধ্য কোর্স বন্ধে ইউজিসি একটি পরামর্শপত্র দিয়েছিল। সে পত্রের পরামর্শ যে কেউ গ্রহণ করল না সেটা তো ইউজিসির চোখে পড়া উচিত ছিল এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় ছিল। এর বাইরে আর কিছুই করার নেই। নিয়মিত কার্যক্রমের বাইরে সান্ধ্যকালীন বিভিন্ন কোর্স চালু করে একশ্রেণীর শিক্ষক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। বাণিজ্যিক কোর্স পড়ার পর ডিগ্রিধারীদের লাভ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ওই শিক্ষকরা ঠিকই লাভবান হচ্ছেন, তারা নগদ সুবিধা পাচ্ছেন। এদের বিরুদ্ধেও কোনরকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

শিক্ষাকে মানসম্মতভাবে এগিয়ে নিতে অবশ্যই সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করা জরুরি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে এভাবে বাণিজ্যিক কর্মকা- চলতে পারে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স অব্যাহত থাকলে একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্থনৈতিক বিভাজন তৈরি হবে এবং গবেষণা ও প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে পড়ালেখার মান উন্নত হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না।

আমরা আশা করব, সান্ধ্য কোর্স প্রসঙ্গে ইউজিসির পরামর্শ পত্রটি প্রতিপালনের ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এ ব্যাপারে ইউজিসি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। সেসঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করা হবে।

বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২০ , ১৫ মাঘ ১৪২৬, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪১

সান্ধ্য কোর্সের নামে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যবসা বন্ধ করুন

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে টাকা নিয়ে সনদ দেওয়ার হিড়িক। সান্ধ্য কোর্সে নামমাত্র ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সনদ পাচ্ছেন অনেকে। উইকেন্ড প্রোগ্রামগুলো সন্ধ্যাকালীন কোর্সের থেকেও নিম্নমানের। বেশিরভাগ উইকেন্ড প্রোগ্রামে সপ্তাহের এক দিনে পুরো ক্লাস নিয়ে শেষ করা হয়। নামমাত্র ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষার্থীর দ্বিগুণ বা তারও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে এসব কোর্সে। যদিও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করার পর তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির সুযোগ পায় খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী। বিপরীতে সন্ধ্যাকালীন কোর্সে টাকার বিনিময়ে পড়ার সুযোগ পায় এদের কয়েক গুণ। এসব কোর্স নিয়ে ব্যস্ত থাকায় শিক্ষকরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে শিক্ষার পরিবেশের পাশাপাশি সার্বিক পরিবেশ বিঘি্নত হচ্ছে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন ছাড়াই নতুন বিভাগ, প্রোগ্রাম ও ইনস্টিটিউট খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে, যা বাঞ্ছনীয় নয়। অভিযোগ রয়েছে, গবেষণা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কোর্সে আগ্রহ কমলেও সান্ধ্য কোর্স এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে তাদের আগ্রহ বেশি। শুধু আর্থিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমন কর্মকা- নৈতিকভাবেও সমর্থনযোগ্য নয়। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে, সেখানকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। এ কোর্স বন্ধ করতে দীর্ঘদিন ধরে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বক্তব্যেও এর প্রতি তির্যক মন্তব্য উঠে আসে। ইউজিসি এ নিয়ে কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠান এ কোর্স বন্ধ করেনি। উল্টো দিন দিন বেড়েই চলেছে এ কোর্সের পরিধি।

প্রশ্ন হলো এ নিয়ে ইউজিসি নিশ্চুপ কেন? অসঙ্গতি বন্ধে তাদের কি কোনরকম দায়বদ্ধতা নেই? গত মাসে সান্ধ্য কোর্স বন্ধে ইউজিসি একটি পরামর্শপত্র দিয়েছিল। সে পত্রের পরামর্শ যে কেউ গ্রহণ করল না সেটা তো ইউজিসির চোখে পড়া উচিত ছিল এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় ছিল। এর বাইরে আর কিছুই করার নেই। নিয়মিত কার্যক্রমের বাইরে সান্ধ্যকালীন বিভিন্ন কোর্স চালু করে একশ্রেণীর শিক্ষক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। বাণিজ্যিক কোর্স পড়ার পর ডিগ্রিধারীদের লাভ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ওই শিক্ষকরা ঠিকই লাভবান হচ্ছেন, তারা নগদ সুবিধা পাচ্ছেন। এদের বিরুদ্ধেও কোনরকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

শিক্ষাকে মানসম্মতভাবে এগিয়ে নিতে অবশ্যই সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করা জরুরি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করে এভাবে বাণিজ্যিক কর্মকা- চলতে পারে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স অব্যাহত থাকলে একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্থনৈতিক বিভাজন তৈরি হবে এবং গবেষণা ও প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে পড়ালেখার মান উন্নত হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না।

আমরা আশা করব, সান্ধ্য কোর্স প্রসঙ্গে ইউজিসির পরামর্শ পত্রটি প্রতিপালনের ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এ ব্যাপারে ইউজিসি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। সেসঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করা হবে।