ফেব্রুয়ারি থেকে আমানতের সুদ সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় শতাংশের বেশি সুদে আমানত গ্রহণ করবে না কোন ব্যাংক। মেয়াদী স্কিম ছাড়া সব ধরনের আমানতের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। তবে যেসব আমানতের মেয়াদ শেষ হবে, সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। সম্প্রতি ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে এসব বিষয়ে একমত হন। রাজধানীর গুলশানে ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ওই বৈঠকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ও প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক প্রসঙ্গে এবিবির চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার গণমাধ্যমকে বলেন, কোন ব্যাংক যদি ৬ শতাংশ সুদে আমানত নেয়, আবার কোন ব্যাংক ৭ শতাংশে আমানত নেয় তাহলে বাজারে অসমতা সৃষ্টি হবে। আমরা ধাপে ধাপে আমানতের সুদহার কমাতে শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সরকারের আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে। সেই অনুযায়ি, ধীরে ধীরে আমানতের সুদহার কমাচ্ছি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসব। এটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ শুরু করেছি। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, যেন সবাই আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারি।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে সব বড় ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর সম্ভব হলেও ক্ষুদ্রঋণে তা কার্যকর করা কঠিন হবে। তারা বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকার আমানত রয়েছে, এর বড় অংশই মেয়াদী। ৬ শতাংশ সুদে মেয়াদী আমানত নিলে এর সঙ্গে তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ রয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ বেশি। এ অবস্থায় ক্ষুদ্রঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর সম্ভব হবে না বলে তারা মনে করেন।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা জানান, ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। ঋণের সুদহার কমাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য এবিবির বৈঠকে আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়ে একমত হয়েছেন এমডিরা। ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই এটি কার্যকর হবে। মেয়াদী আমানতের (এফডি) মেয়াদ তিন মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত হলেও সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। তবে সর্বনিম্ন সুদের বিষয়ে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ব্যাংক নিজেদের সামর্থ্য ও সক্ষমতা অনুযায়ী, সর্বনিম্ন সুদে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত স্প্রেড (ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান) মানতে হবে। সব ব্যাংক একসঙ্গে সুদহার কমালে তবেই আমানতের সুদ কমানো সম্ভব বলে জানান তারা।

উল্লেখ্য, ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য ১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। ওইদিন অর্থমন্ত্রী ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য আগের সিদ্ধান্ত ‘ছয়নয়’ ফর্মুলা বাতিল করে দেন। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু সেটি নানা কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি ১৭ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্প খাতের ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। সরকারি খাতের ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় রাখতে হবে। সরকারি খাতের আমানতের মধ্যে যে পরিমাণ আমানত শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা হবে, তার বিপরীতে কোন সুদ দিতে হবে না।

এদিকে ঋণের ক্ষেত্রেও শুধু ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। তবে ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঋণ নিতে পারবে। অন্য ঋণের ৯ শতাংশের বেশি নিতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০ , ১৬ মাঘ ১৪২৬, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪১

ফেব্রুয়ারি থেকে আমানতের সুদ সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় শতাংশের বেশি সুদে আমানত গ্রহণ করবে না কোন ব্যাংক। মেয়াদী স্কিম ছাড়া সব ধরনের আমানতের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। তবে যেসব আমানতের মেয়াদ শেষ হবে, সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। সম্প্রতি ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে এসব বিষয়ে একমত হন। রাজধানীর গুলশানে ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ওই বৈঠকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ও প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক প্রসঙ্গে এবিবির চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার গণমাধ্যমকে বলেন, কোন ব্যাংক যদি ৬ শতাংশ সুদে আমানত নেয়, আবার কোন ব্যাংক ৭ শতাংশে আমানত নেয় তাহলে বাজারে অসমতা সৃষ্টি হবে। আমরা ধাপে ধাপে আমানতের সুদহার কমাতে শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সরকারের আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে। সেই অনুযায়ি, ধীরে ধীরে আমানতের সুদহার কমাচ্ছি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসব। এটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ শুরু করেছি। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, যেন সবাই আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারি।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে সব বড় ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর সম্ভব হলেও ক্ষুদ্রঋণে তা কার্যকর করা কঠিন হবে। তারা বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকার আমানত রয়েছে, এর বড় অংশই মেয়াদী। ৬ শতাংশ সুদে মেয়াদী আমানত নিলে এর সঙ্গে তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ রয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ বেশি। এ অবস্থায় ক্ষুদ্রঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর সম্ভব হবে না বলে তারা মনে করেন।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা জানান, ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। ঋণের সুদহার কমাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য এবিবির বৈঠকে আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়ে একমত হয়েছেন এমডিরা। ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই এটি কার্যকর হবে। মেয়াদী আমানতের (এফডি) মেয়াদ তিন মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত হলেও সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। তবে সর্বনিম্ন সুদের বিষয়ে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ব্যাংক নিজেদের সামর্থ্য ও সক্ষমতা অনুযায়ী, সর্বনিম্ন সুদে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত স্প্রেড (ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান) মানতে হবে। সব ব্যাংক একসঙ্গে সুদহার কমালে তবেই আমানতের সুদ কমানো সম্ভব বলে জানান তারা।

উল্লেখ্য, ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য ১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। ওইদিন অর্থমন্ত্রী ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য আগের সিদ্ধান্ত ‘ছয়নয়’ ফর্মুলা বাতিল করে দেন। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু সেটি নানা কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি ১৭ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্প খাতের ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। সরকারি খাতের ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় রাখতে হবে। সরকারি খাতের আমানতের মধ্যে যে পরিমাণ আমানত শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা হবে, তার বিপরীতে কোন সুদ দিতে হবে না।

এদিকে ঋণের ক্ষেত্রেও শুধু ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। তবে ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঋণ নিতে পারবে। অন্য ঋণের ৯ শতাংশের বেশি নিতে পারবে না।