উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে আইসিটি বিষয়ের জগদ্দল পাথর সরান

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের পাঠ্যবই অত্যন্ত জটিল ও দুর্বোধ্য বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিক থেকে জানা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের আইসিটি বইয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের এমনকি প্রকৌশল বিদ্যার আধেয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাই উক্ত বিষয় পড়তে হিমশিম খাচ্ছে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। উক্ত বিষয়ের পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে যেমন অভিযোগ রয়েছে, তেমন তার আকার ও দাম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উক্ত বিষয়ে পঁচিশ পৃষ্ঠার নিচে কোন বই নেই। প্রায় সাতশ’ পৃষ্ঠার বইও রয়েছে। জানা গেছে, এনসিটিবির কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া হয় এক ধরনের বিষয়বস্তু আর ছাপা হয় আরেক ধরনের।

আমরা প্রথমেই জানতে চাইব, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি সবার জন্য আবশ্যিক বিষয় কেন করা হয়েছে। জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তিতে নিজেকে পণ্ডিত মনে করা কোন কোন ব্যক্তি শিক্ষা খাতের নীতি-নির্ধারকদের এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, সব শিক্ষার্থীরই তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে ধরণা রাখতে হবে। ডিজিটাল দেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর সরকার আগপিছ না ভেবেই সবার জন্য উক্ত বিষয় বাধ্যতামূলক করেছে। শিক্ষা খাতের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একবার একটি হুজুগ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গেই তারা সেটি শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়। তাদের কখনও ডিজিটাল হুজুগ পায়, কখনও হেফাজতি হুজুগে পায়। কার প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করা যায় বা যায় না সেটাও তারা বোঝে না। যখন যে যেটা প্রেসক্রাইব করছে তখনই সে মোতাবেক দাওয়াই গোলানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে শিক্ষা খাতের পুরনো রোগ তো সারছেই না, আরও নতুন নতুন রোগ দেখা দিচ্ছে।

চটকদার ডিজিটাল পণ্ডিতরা মনে করেন, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে সবাইকেই অবশ্যই জানতে হবে কারণ এখন ডিজিটাল প্রযুক্তি ছাড়া জীবন অচল। আমরা বলতে চাই, জীবন অনেক কিছু ছাড়াই অচল। যে মানবদেহে আমাদের বসতি সেটা সম্পর্কে জানার চেয়ে বড় আবশ্যকীয় বিষয় আর কিছু হতে পারে না। তাই বলে কি সবাইকে আবশ্যিক ভাবে মেডিকেল সায়েন্সের বই বা কন্টেন্ট পড়তে হয়। এ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকাই যথেষ্ট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক ধারণার জন্যই আইসিটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আমরা জানতে চাইব, প্রাথমিক ধারণার জন্য আলাদা বিষয় করার কি দরকার। বিষয় যখন করাই হলো সেটাকে ঐচ্ছিক না করে আবশ্যিক কেন করা হলো। আবশ্যিক যখন করাই হলো সেটাকে সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য কেন আবশ্যিক করা হলো। সব বিভাগের জন্য আবশ্যিক করার পর আইসিটিকে জটিল আর দুর্বোধ্য করা হলো কেন। এখন তো শিক্ষার্থীরা এ সম্পর্কে ধারণা নিতেও আগ্রহী হচ্ছে না। তাদের অবস্থা হয়েছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। তথ্যপ্রযুক্তিতে তারা আগ্রহী হওয়ার পরিবর্তে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে।

আমরা বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের ওপর কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া বাঞ্ছনীয় নয়। আজকের শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন প্রযুক্তি ব্যবহারে যতটা দক্ষ ততটা দক্ষ নন তথাকথিত অনেক ডিজিটাল পণ্ডিতও। তারপরও আইসিটি বিষয়ে ধারণা দিতে হলে সেটাকে ঐচ্ছিক বিষয় করা যেতে পারে।

অনাবশ্যক ভাবে আবশ্যিক হয়ে ওঠা আইসিটি বিষয়ের পাঠ্যবইকে দুর্বোধ্য করে তোলা প্রকাশকদের বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের এনসিটিবির বই প্রকাশের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০ , ১৬ মাঘ ১৪২৬, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪১

উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে আইসিটি বিষয়ের জগদ্দল পাথর সরান

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের পাঠ্যবই অত্যন্ত জটিল ও দুর্বোধ্য বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিক থেকে জানা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের আইসিটি বইয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের এমনকি প্রকৌশল বিদ্যার আধেয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাই উক্ত বিষয় পড়তে হিমশিম খাচ্ছে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। উক্ত বিষয়ের পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে যেমন অভিযোগ রয়েছে, তেমন তার আকার ও দাম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উক্ত বিষয়ে পঁচিশ পৃষ্ঠার নিচে কোন বই নেই। প্রায় সাতশ’ পৃষ্ঠার বইও রয়েছে। জানা গেছে, এনসিটিবির কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া হয় এক ধরনের বিষয়বস্তু আর ছাপা হয় আরেক ধরনের।

আমরা প্রথমেই জানতে চাইব, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি সবার জন্য আবশ্যিক বিষয় কেন করা হয়েছে। জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তিতে নিজেকে পণ্ডিত মনে করা কোন কোন ব্যক্তি শিক্ষা খাতের নীতি-নির্ধারকদের এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, সব শিক্ষার্থীরই তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে ধরণা রাখতে হবে। ডিজিটাল দেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর সরকার আগপিছ না ভেবেই সবার জন্য উক্ত বিষয় বাধ্যতামূলক করেছে। শিক্ষা খাতের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একবার একটি হুজুগ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গেই তারা সেটি শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়। তাদের কখনও ডিজিটাল হুজুগ পায়, কখনও হেফাজতি হুজুগে পায়। কার প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করা যায় বা যায় না সেটাও তারা বোঝে না। যখন যে যেটা প্রেসক্রাইব করছে তখনই সে মোতাবেক দাওয়াই গোলানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে শিক্ষা খাতের পুরনো রোগ তো সারছেই না, আরও নতুন নতুন রোগ দেখা দিচ্ছে।

চটকদার ডিজিটাল পণ্ডিতরা মনে করেন, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে সবাইকেই অবশ্যই জানতে হবে কারণ এখন ডিজিটাল প্রযুক্তি ছাড়া জীবন অচল। আমরা বলতে চাই, জীবন অনেক কিছু ছাড়াই অচল। যে মানবদেহে আমাদের বসতি সেটা সম্পর্কে জানার চেয়ে বড় আবশ্যকীয় বিষয় আর কিছু হতে পারে না। তাই বলে কি সবাইকে আবশ্যিক ভাবে মেডিকেল সায়েন্সের বই বা কন্টেন্ট পড়তে হয়। এ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকাই যথেষ্ট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক ধারণার জন্যই আইসিটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আমরা জানতে চাইব, প্রাথমিক ধারণার জন্য আলাদা বিষয় করার কি দরকার। বিষয় যখন করাই হলো সেটাকে ঐচ্ছিক না করে আবশ্যিক কেন করা হলো। আবশ্যিক যখন করাই হলো সেটাকে সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য কেন আবশ্যিক করা হলো। সব বিভাগের জন্য আবশ্যিক করার পর আইসিটিকে জটিল আর দুর্বোধ্য করা হলো কেন। এখন তো শিক্ষার্থীরা এ সম্পর্কে ধারণা নিতেও আগ্রহী হচ্ছে না। তাদের অবস্থা হয়েছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। তথ্যপ্রযুক্তিতে তারা আগ্রহী হওয়ার পরিবর্তে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে।

আমরা বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের ওপর কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া বাঞ্ছনীয় নয়। আজকের শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন প্রযুক্তি ব্যবহারে যতটা দক্ষ ততটা দক্ষ নন তথাকথিত অনেক ডিজিটাল পণ্ডিতও। তারপরও আইসিটি বিষয়ে ধারণা দিতে হলে সেটাকে ঐচ্ছিক বিষয় করা যেতে পারে।

অনাবশ্যক ভাবে আবশ্যিক হয়ে ওঠা আইসিটি বিষয়ের পাঠ্যবইকে দুর্বোধ্য করে তোলা প্রকাশকদের বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের এনসিটিবির বই প্রকাশের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।