ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন

সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়েই ধর্ষণ বাড়ছে, বাড়ছে ধর্ষণের পর হত্যা, একই সঙ্গে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা। ধর্ষণের খবরগুলো সমাজজীবনে যেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক ও বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় আমরা বিস্মিত হই; কিন্তু আমাদের এ বিস্ময়ের পরিধি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলে। এক এলাকায় ধর্ষণের ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই গণমাধ্যম কেঁপে ওঠে নতুন আরেক খবরে।

স্বীকার করতেই হবে যে, ধর্ষকরাও আমাদের সমাজেরই কোন না কোন পরিবারের সদস্য। তাদের বখে যাওয়ার দায় রয়েছে পরিবার-সমাজেরও। তরুণদের সুস্থ-সুন্দর মন ও মূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না, এটাও স্পষ্ট। অবৈধ অর্থের বাড়বাড়ন্ত, সামাজিক বৈষম্য, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, বিকৃত রুচি, পর্ণোগ্রাফি এবং মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গেও এরকম অপরাধের হার বৃদ্ধির যোগসূত্র আছে। আইনে দুর্বলতার কারণে ধর্ষণের মামলায় অনেক অভিযুক্ত পার পেয়ে যাচ্ছে। আইনের মধ্যে এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো ধর্ষিতার বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে দেখা দিচ্ছে। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ যে মাত্রায় বেড়েছে, লাগাম টেনে না ধরা গেলে তা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নেবে।

রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া ধর্ষণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে না। আমরা বারবার বলেছি, ধর্ষণ প্রতিরোধে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মনিটরিং কমিটি করার জন্য, কিন্তু তা করা হচ্ছে না। একটা ঘটনা ঘটে, তারপর গণমাধ্যমসহ সব জায়গায় তুমুল আলোচনা হয়, এক সময় থেমে যায় সবকিছু। এ সময়ের মধ্যে তালিকায় আরও একটি ঘটনা যোগ হয়। তাই ঘটনা যাতে ঘটতেই না পারে, সেজন্য একটি সামাজিক আন্দোলন খুব জরুরি। ধর্ষণ প্রতিরোধে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি, তা থেকে বের হতে হবে। ধর্ষককে দৃষ্টান্তমূলক সাজার আওতায় আনতে হবে। ২০০৩ সালে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের বিচারে যে সময় নির্ধারণ করা আছে, সেই সময়ের মধ্যেই তা শেষ করতে হবে। এ আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করাও জরুরি। দেশে এখন পর্যন্ত ভিকটিম ও সাক্ষীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

পাঠ্যক্রমে সমাজ এবং নারী-পুরুষ সম্পর্কের স্বাভাবিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা দরকার। যারা উচ্চশিক্ষা নিতে পারছে না কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তত পড়াশোনা করছে, সেখানে নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে শিক্ষা দেয়া যেতে পারে। পরিবার ব্যবস্থাকে জোরালোভাবে ভূমিকা পালনের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। অভিভাবকদের খোঁজ রাখতে হবে তাদের সন্তান কাদের সঙ্গে মিশছে। তাদের অগোচরে কোন ধরনের বিনোদন উপকরণগুলো ভোগ করছে। এগুলো যদি নিশ্চিত করতে পারি, তবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে এবং যেভাবে বিকৃতভাবে ধর্ষণ বাড়ছে, ধর্ষণ হচ্ছে-সেটাও কমে আসবে। একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন গণমাধ্যম এমনভাবে খবরটা প্রকাশ বা প্রচার করছে, তাতে বিষয়টিতে অন্যদের আরও বেশি করে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ প্রবণতা থেকে বের হতে হবে।

ধর্ষণের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে শুধু সরকারকে নয়, গোটা সমাজকে। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে ব্যক্তি, পরিবার, পাড়া-মহল্লাসহ গোটা সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০ , ১৭ মাঘ ১৪২৬, ৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন

সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়েই ধর্ষণ বাড়ছে, বাড়ছে ধর্ষণের পর হত্যা, একই সঙ্গে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা। ধর্ষণের খবরগুলো সমাজজীবনে যেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক ও বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় আমরা বিস্মিত হই; কিন্তু আমাদের এ বিস্ময়ের পরিধি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলে। এক এলাকায় ধর্ষণের ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই গণমাধ্যম কেঁপে ওঠে নতুন আরেক খবরে।

স্বীকার করতেই হবে যে, ধর্ষকরাও আমাদের সমাজেরই কোন না কোন পরিবারের সদস্য। তাদের বখে যাওয়ার দায় রয়েছে পরিবার-সমাজেরও। তরুণদের সুস্থ-সুন্দর মন ও মূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না, এটাও স্পষ্ট। অবৈধ অর্থের বাড়বাড়ন্ত, সামাজিক বৈষম্য, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, বিকৃত রুচি, পর্ণোগ্রাফি এবং মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গেও এরকম অপরাধের হার বৃদ্ধির যোগসূত্র আছে। আইনে দুর্বলতার কারণে ধর্ষণের মামলায় অনেক অভিযুক্ত পার পেয়ে যাচ্ছে। আইনের মধ্যে এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো ধর্ষিতার বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে দেখা দিচ্ছে। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ যে মাত্রায় বেড়েছে, লাগাম টেনে না ধরা গেলে তা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নেবে।

রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া ধর্ষণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে না। আমরা বারবার বলেছি, ধর্ষণ প্রতিরোধে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মনিটরিং কমিটি করার জন্য, কিন্তু তা করা হচ্ছে না। একটা ঘটনা ঘটে, তারপর গণমাধ্যমসহ সব জায়গায় তুমুল আলোচনা হয়, এক সময় থেমে যায় সবকিছু। এ সময়ের মধ্যে তালিকায় আরও একটি ঘটনা যোগ হয়। তাই ঘটনা যাতে ঘটতেই না পারে, সেজন্য একটি সামাজিক আন্দোলন খুব জরুরি। ধর্ষণ প্রতিরোধে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি, তা থেকে বের হতে হবে। ধর্ষককে দৃষ্টান্তমূলক সাজার আওতায় আনতে হবে। ২০০৩ সালে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের বিচারে যে সময় নির্ধারণ করা আছে, সেই সময়ের মধ্যেই তা শেষ করতে হবে। এ আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করাও জরুরি। দেশে এখন পর্যন্ত ভিকটিম ও সাক্ষীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

পাঠ্যক্রমে সমাজ এবং নারী-পুরুষ সম্পর্কের স্বাভাবিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা দরকার। যারা উচ্চশিক্ষা নিতে পারছে না কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তত পড়াশোনা করছে, সেখানে নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে শিক্ষা দেয়া যেতে পারে। পরিবার ব্যবস্থাকে জোরালোভাবে ভূমিকা পালনের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। অভিভাবকদের খোঁজ রাখতে হবে তাদের সন্তান কাদের সঙ্গে মিশছে। তাদের অগোচরে কোন ধরনের বিনোদন উপকরণগুলো ভোগ করছে। এগুলো যদি নিশ্চিত করতে পারি, তবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে এবং যেভাবে বিকৃতভাবে ধর্ষণ বাড়ছে, ধর্ষণ হচ্ছে-সেটাও কমে আসবে। একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন গণমাধ্যম এমনভাবে খবরটা প্রকাশ বা প্রচার করছে, তাতে বিষয়টিতে অন্যদের আরও বেশি করে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ প্রবণতা থেকে বের হতে হবে।

ধর্ষণের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে শুধু সরকারকে নয়, গোটা সমাজকে। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে ব্যক্তি, পরিবার, পাড়া-মহল্লাসহ গোটা সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।