ফলাফল ঘোষণার পর কাউন্সিলর প্রার্থীর এক এজেন্ট খুন হন

সিটি নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পর দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকের সংঘর্ষে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে সুমন শিখদার (২৪) নামে কাউন্সিলর প্রার্থীর এক এজেন্টকে। সিটি নির্বাচনের দিন রাত ৯টায় মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া মজিলা কলেজ কেন্দ্রে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গতকাল পর্যন্ত এ হত্যকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে খুন হওয়া যুবক সুমনের পরিবারের আহাজারিতে এলাকায় হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

নিহত সুমনের বোন সুবর্ণা সাংবাদিকদের বলেন বলেন, ঢাকা উত্তরের নৌকা মার্কার প্রার্থী আতিকুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ছিল সুমন। ভোটের সারাদিন কাটিয়েছে লালমাটিয়া মহিলা কলেজে। ভোট শেষ হবার পর বাসায় এসে নাস্তা খায়। এরপর তার মোবাইলে একটা কল আসে। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে যায় তার ভাই। আর ফেরেনি। রাত ১০টার দিকে খবর পেয়ে ছুটে যাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। দেখি রক্তাক্ত নিথর শরীর নিয়ে স্ট্রেচারে শুয়ে আছে আমার ভাই। ডাক্তার আর পুলিশের মুখে জানতে পারি সুমন ভাইকে কে বা কারা কুপিয়ে খুন করেছে।

স্থানীয়রা জানায়, নিহত সুমন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্টনের পক্ষে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী নিহত সুমনের বন্ধু সাজ্জাদ জানান, ‘আমি, সুমন, রুবেল, আলামিন, ইমরান (মেসি) ও ইমরানসহ ৬ জন মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারের রহিম ব্যাপারী ঘাটে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। হঠাৎ বেশ কয়েকজন যুবক এসে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের নেতা শাহ আলম জীবনের লোক কে কে আছে বলে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে সুমন আহত হলে আমরা তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হামলাকারি সবার মুখে মাস্ক পরা থাকায় কাউকে চিনতে পারিনি।’

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. প্রবাহ বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই সুমনের মৃত্যু হয়েছে। বুকের ডান পাশের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া তার পেটে, পায়ে ও পিঠসহ শরীরে বেশ কয়েকটি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

মোহাম্মাদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হারুন বলেন, সুমন হত্যায় জড়িতদের শনাক্তে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে রাতে মোবাইল ফোনে সুমনের ভাই বলেন, তারা অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন।

নবনির্বাচিত কাউন্সির রাষ্টন দাবি করেন, সুমন শিকদার নামের কাউকে চেনেন না। যে গন্ডগোল হয়েছে, সেটি তার এলাকায় হয়নি। যে ছেলেটা মারা গেছে, সে তার পোলিং এজেন্ট ছিল না। তিনি বলেন, আমি ধারণা করছি- তার গলায় আমার ‘ঠেলাগাড়ি’ মার্কার কার্ড ছিল। আমি আমার এলাকায় ৫ হাজার ব্যাজ বণ্টন করেছি। এরমধ্যে হয়তো সে একটি পেয়েছে। সুমনের পরিবারের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। এছাড়াও এই বিষয়ে পুলিশের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

সুমনের মা জুমুর বেগম বলেন, ছেলেটার কী দোষ ছিল। সারাদিন লালমাটিয়া মহিলা কলেজের কেন্দ্রে নৌকা আর ঠেলাগাড়ীর জন্য কাজ করছে। বিকেলে বাসায় আইসা নাস্তা খাইয়া গেছে আড্ডা দিতে। সুস্থ সবল ছেলেকে আমি আর বুকে ফিরে পাইনি। হারলেও ওরা জিতলেও ওরা। কিন্তু বুক খালি করলো আমার। আমি এ হত্যার বিচার চাই। মা ঝুমুর বেগম বলেন, আল্লাহ তুমি বিচার করো, কারা এমন করে আমার ছেলেডারে খুন করলো। আমার বুকটা ফাঁকা করলো। আমি এখন কেমনে বাঁচুম । মা বিলাপ করতে করতে বলেন, রাত ৯টার দিকে খুনের ঘটনা ঘটছে। ছেলেডারে কোপায়ছে। আমি খুনের বিচার চাই। আমার ছেলের মতো ছেলে হয় না। এই মহল্লায় সবাই ওরে চেনে জানে। আমার সন্তানের মতো করে আর কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয়।

সুমনের ছোট বোন সুইটি বলেন, রাতে খেতে আসার জন্য ভাইকে কল দেই ধরে না। আর রাতে একসঙ্গে খাওয়া হলো না। ভাইয়ের খুনের খবরে খাবার ফেলে দৌঁড়ে গেছি হাসপাতালে। আর কখনও ভাইকে পাবো না ভাবতেই পারতাছি না।

পুলিশ জানায়, সুমনের বাবা রাজধানীর লালমাটিয়া এফ ব্লকের ৪/২, ভবনের তত্ত্বাবধায়ক আনোয়ার আহমেদ শিকদার। সেই ভবনের নিচতলায় মা-বাবার সঙ্গেই থাকতো সুমন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে।

সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২০ মাঘ ১৪২৬, ৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

সিটি নির্বাচন

ফলাফল ঘোষণার পর কাউন্সিলর প্রার্থীর এক এজেন্ট খুন হন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

সিটি নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পর দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকের সংঘর্ষে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে সুমন শিখদার (২৪) নামে কাউন্সিলর প্রার্থীর এক এজেন্টকে। সিটি নির্বাচনের দিন রাত ৯টায় মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া মজিলা কলেজ কেন্দ্রে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গতকাল পর্যন্ত এ হত্যকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে খুন হওয়া যুবক সুমনের পরিবারের আহাজারিতে এলাকায় হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

নিহত সুমনের বোন সুবর্ণা সাংবাদিকদের বলেন বলেন, ঢাকা উত্তরের নৌকা মার্কার প্রার্থী আতিকুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ছিল সুমন। ভোটের সারাদিন কাটিয়েছে লালমাটিয়া মহিলা কলেজে। ভোট শেষ হবার পর বাসায় এসে নাস্তা খায়। এরপর তার মোবাইলে একটা কল আসে। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে যায় তার ভাই। আর ফেরেনি। রাত ১০টার দিকে খবর পেয়ে ছুটে যাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। দেখি রক্তাক্ত নিথর শরীর নিয়ে স্ট্রেচারে শুয়ে আছে আমার ভাই। ডাক্তার আর পুলিশের মুখে জানতে পারি সুমন ভাইকে কে বা কারা কুপিয়ে খুন করেছে।

স্থানীয়রা জানায়, নিহত সুমন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্টনের পক্ষে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী নিহত সুমনের বন্ধু সাজ্জাদ জানান, ‘আমি, সুমন, রুবেল, আলামিন, ইমরান (মেসি) ও ইমরানসহ ৬ জন মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারের রহিম ব্যাপারী ঘাটে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। হঠাৎ বেশ কয়েকজন যুবক এসে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের নেতা শাহ আলম জীবনের লোক কে কে আছে বলে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে সুমন আহত হলে আমরা তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হামলাকারি সবার মুখে মাস্ক পরা থাকায় কাউকে চিনতে পারিনি।’

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. প্রবাহ বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই সুমনের মৃত্যু হয়েছে। বুকের ডান পাশের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া তার পেটে, পায়ে ও পিঠসহ শরীরে বেশ কয়েকটি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

মোহাম্মাদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হারুন বলেন, সুমন হত্যায় জড়িতদের শনাক্তে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে রাতে মোবাইল ফোনে সুমনের ভাই বলেন, তারা অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন।

নবনির্বাচিত কাউন্সির রাষ্টন দাবি করেন, সুমন শিকদার নামের কাউকে চেনেন না। যে গন্ডগোল হয়েছে, সেটি তার এলাকায় হয়নি। যে ছেলেটা মারা গেছে, সে তার পোলিং এজেন্ট ছিল না। তিনি বলেন, আমি ধারণা করছি- তার গলায় আমার ‘ঠেলাগাড়ি’ মার্কার কার্ড ছিল। আমি আমার এলাকায় ৫ হাজার ব্যাজ বণ্টন করেছি। এরমধ্যে হয়তো সে একটি পেয়েছে। সুমনের পরিবারের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। এছাড়াও এই বিষয়ে পুলিশের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

সুমনের মা জুমুর বেগম বলেন, ছেলেটার কী দোষ ছিল। সারাদিন লালমাটিয়া মহিলা কলেজের কেন্দ্রে নৌকা আর ঠেলাগাড়ীর জন্য কাজ করছে। বিকেলে বাসায় আইসা নাস্তা খাইয়া গেছে আড্ডা দিতে। সুস্থ সবল ছেলেকে আমি আর বুকে ফিরে পাইনি। হারলেও ওরা জিতলেও ওরা। কিন্তু বুক খালি করলো আমার। আমি এ হত্যার বিচার চাই। মা ঝুমুর বেগম বলেন, আল্লাহ তুমি বিচার করো, কারা এমন করে আমার ছেলেডারে খুন করলো। আমার বুকটা ফাঁকা করলো। আমি এখন কেমনে বাঁচুম । মা বিলাপ করতে করতে বলেন, রাত ৯টার দিকে খুনের ঘটনা ঘটছে। ছেলেডারে কোপায়ছে। আমি খুনের বিচার চাই। আমার ছেলের মতো ছেলে হয় না। এই মহল্লায় সবাই ওরে চেনে জানে। আমার সন্তানের মতো করে আর কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয়।

সুমনের ছোট বোন সুইটি বলেন, রাতে খেতে আসার জন্য ভাইকে কল দেই ধরে না। আর রাতে একসঙ্গে খাওয়া হলো না। ভাইয়ের খুনের খবরে খাবার ফেলে দৌঁড়ে গেছি হাসপাতালে। আর কখনও ভাইকে পাবো না ভাবতেই পারতাছি না।

পুলিশ জানায়, সুমনের বাবা রাজধানীর লালমাটিয়া এফ ব্লকের ৪/২, ভবনের তত্ত্বাবধায়ক আনোয়ার আহমেদ শিকদার। সেই ভবনের নিচতলায় মা-বাবার সঙ্গেই থাকতো সুমন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে।