শেয়ারবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করতে কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

শেয়ারবাজারে দরপতনের পেছনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের একটি অংশ জড়িত বলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আর এ কারণে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে (সিআরও) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএসইসি। আগামী রোববার বিএসইসি তাদের শুনানিতে অংশ নিতে বলেছে।

শেয়ারবাজারের অন্তিম অবস্থায় জানা গেল, ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের একটি অংশ এর পেছনে জড়িত এবং সেটা জানালো স্বয়ং বিএসইসি, যাদের দায়িত্ব শেয়ারবাজারের তদারকি করা। আমরা দেখতে পেলাম, বিএসইসি দরপতনের তদন্ত করেছে এবং এর জন্য দায়ীকে শনাক্ত করে শুনানির জন্য ডেকেছে। প্রশ্ন হলো, শেয়ারবাজার কি একদিনে এ অবস্থায় পৌঁছেছে? শুধুই কি ২০১৯ সালের দরপতনের জন্যই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল? এর আগে কি সব স্বাভাবিক ছিল? সবকিছুই স্বাভাবিক নিয়মে চলেছে?

এক কথায় এর উত্তর, না। ২০১০ সাল থেকেই শেয়ারবাজারের দুর্দিন চলছে, একের পর এক অনিয়ম হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন, বারবার রাস্তায় নেমেছেন, আন্দোলন করেছেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- কেউ তাদের কথা শোনেনি। বরং শেয়ারবাজারকে ধাপে ধাপে বিপর্যয়ের দিকে টেনে নামানো হয়েছে।

শেয়ারবাজারের বিপর্যয় সত্ত্বেও বিএসইসির কর্তাব্যক্তিরা স্বপদে বহাল রয়েছেন বহু বছর ধরে। তারা বাজারের জন্য নতুন নতুন আইন করেছেন, আবার পুরনো আইনের সংস্কারও করছেন। তবে এসব সংস্কার বাজারের সুশাসন ফেরাতে কোনরকম ভূমিকা রাখছে না। বরং স্বার্থান্বেষী মহল ও কারসাজির চক্রকে লুটপাটের সুযোগ করে দিচ্ছে। একের পর এক খারাপ কোম্পানির আইপিও দিয়ে বাজার সয়লাব হচ্ছে। বাজারে প্রতিনিয়ত কারসাজি হচ্ছে।

২০১০ সালের ধসের পর ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। সেই কমিটির রিপোর্টে কারসাজির কারণ ও হোতাদের নাম বলা হয়েছিল, কিন্তু সে রিপোর্ট জনসমক্ষে আজও প্রকাশিত হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন আবার নতুন করে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটা করে শুনানির আয়োজন চলছে। আমরা জানতে চাই, বিএসইসি এতদিন কী করছিল? কিসের ছোঁয়ায় এমন ভালো মানুষ বনে গেলেন? নাকি এটাও নতুন কোন ছল, ‘ভালো মানুষ’ সাজার চেষ্টা।

আমরা বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল দেখতে চাই। দরপতন যখন দীর্ঘায়িত হয়, তখন নিশ্চিত করে বলা যায়, কোন না কোন কারণে বিনিয়োগকারীদের নতুন করে বিনিয়োগে আস্থা নেই। কেন এ আস্থার সংকট তা বাজার যারা পরিচালনা করেন তাদের খুঁজে দেখা উচিত। বাজারে সাময়িক সাপোর্টের বিষয়টি বিবেচনায় না এনে বরং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এক্সপোজারসহ অন্যান্য যেসব সমস্যা হচ্ছে সেগুলো দ্রুত সমাধান করা উচিত। ২০১০ সাল থেকে বিরাজমান মন্দা অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াটি যেন সুস্থধারায় থাকে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দোষীদের আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা বাঞ্ছনীয়। একই সঙ্গে বিএসইসির তদন্তে বেরিয়ে আসা দোষীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সেটি করতে হবে দ্রুততার সঙ্গে।

বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৩ মাঘ ১৪২৬, ১১ জমাদিউল সানি ১৪৪১

শেয়ারবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করতে কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

শেয়ারবাজারে দরপতনের পেছনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের একটি অংশ জড়িত বলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আর এ কারণে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে (সিআরও) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএসইসি। আগামী রোববার বিএসইসি তাদের শুনানিতে অংশ নিতে বলেছে।

শেয়ারবাজারের অন্তিম অবস্থায় জানা গেল, ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের একটি অংশ এর পেছনে জড়িত এবং সেটা জানালো স্বয়ং বিএসইসি, যাদের দায়িত্ব শেয়ারবাজারের তদারকি করা। আমরা দেখতে পেলাম, বিএসইসি দরপতনের তদন্ত করেছে এবং এর জন্য দায়ীকে শনাক্ত করে শুনানির জন্য ডেকেছে। প্রশ্ন হলো, শেয়ারবাজার কি একদিনে এ অবস্থায় পৌঁছেছে? শুধুই কি ২০১৯ সালের দরপতনের জন্যই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল? এর আগে কি সব স্বাভাবিক ছিল? সবকিছুই স্বাভাবিক নিয়মে চলেছে?

এক কথায় এর উত্তর, না। ২০১০ সাল থেকেই শেয়ারবাজারের দুর্দিন চলছে, একের পর এক অনিয়ম হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন, বারবার রাস্তায় নেমেছেন, আন্দোলন করেছেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- কেউ তাদের কথা শোনেনি। বরং শেয়ারবাজারকে ধাপে ধাপে বিপর্যয়ের দিকে টেনে নামানো হয়েছে।

শেয়ারবাজারের বিপর্যয় সত্ত্বেও বিএসইসির কর্তাব্যক্তিরা স্বপদে বহাল রয়েছেন বহু বছর ধরে। তারা বাজারের জন্য নতুন নতুন আইন করেছেন, আবার পুরনো আইনের সংস্কারও করছেন। তবে এসব সংস্কার বাজারের সুশাসন ফেরাতে কোনরকম ভূমিকা রাখছে না। বরং স্বার্থান্বেষী মহল ও কারসাজির চক্রকে লুটপাটের সুযোগ করে দিচ্ছে। একের পর এক খারাপ কোম্পানির আইপিও দিয়ে বাজার সয়লাব হচ্ছে। বাজারে প্রতিনিয়ত কারসাজি হচ্ছে।

২০১০ সালের ধসের পর ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। সেই কমিটির রিপোর্টে কারসাজির কারণ ও হোতাদের নাম বলা হয়েছিল, কিন্তু সে রিপোর্ট জনসমক্ষে আজও প্রকাশিত হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন আবার নতুন করে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটা করে শুনানির আয়োজন চলছে। আমরা জানতে চাই, বিএসইসি এতদিন কী করছিল? কিসের ছোঁয়ায় এমন ভালো মানুষ বনে গেলেন? নাকি এটাও নতুন কোন ছল, ‘ভালো মানুষ’ সাজার চেষ্টা।

আমরা বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল দেখতে চাই। দরপতন যখন দীর্ঘায়িত হয়, তখন নিশ্চিত করে বলা যায়, কোন না কোন কারণে বিনিয়োগকারীদের নতুন করে বিনিয়োগে আস্থা নেই। কেন এ আস্থার সংকট তা বাজার যারা পরিচালনা করেন তাদের খুঁজে দেখা উচিত। বাজারে সাময়িক সাপোর্টের বিষয়টি বিবেচনায় না এনে বরং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এক্সপোজারসহ অন্যান্য যেসব সমস্যা হচ্ছে সেগুলো দ্রুত সমাধান করা উচিত। ২০১০ সাল থেকে বিরাজমান মন্দা অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াটি যেন সুস্থধারায় থাকে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দোষীদের আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা বাঞ্ছনীয়। একই সঙ্গে বিএসইসির তদন্তে বেরিয়ে আসা দোষীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সেটি করতে হবে দ্রুততার সঙ্গে।