গণতন্ত্র আইসিইউতে : ভোটাধিকার নির্বাসনে

রণেশ মৈত্র

১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কাউন্সিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ফলাফলও সরকারিভাবে প্রকাশিত হয়েছে; যা ঘটার তাই ঘটেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই উভয় সিটি কাউন্সিলের মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন। কাউন্সিলার পদগুলোতে বেশির ভাগ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরাই জিতেছেন- অল্প কিছু সংখ্যক আসনে বিএনপি প্রার্থীও বিজয়ী হয়েছেন।

নির্বাচনের তারিখের অনেক আগে থেকেই, বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্তভাবে দলীয় কার্যালয় থেকে ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই, যে ব্যাপক প্রচারণার বাদ্যি বাজানো হয়েছে, তা গণতন্ত্রের ইতিহাসে অভিনব। সকল টেলিভিশন চ্যানেলই দিবারাত্র খেয়ে না খেয়ে কখনও লাইভ কখনও অন্যভাবে ক্লান্তিহীন প্রচার করেছে নির্বাচনী অভিযানের দৃশ্য। মিছিল-সমাবেশ, প্রচারপত্র বিলি ও পোস্টার সাঁটার মহোৎসবের ছবিগুলো। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টেলিভিশনে এমন প্রচার-প্রচারণা-মিছিল ও অসংখ্য সমাবেশের দৃশ্য দেখানোর ফলে একঘেঁয়ে পরিবেশ রচিত হচ্ছিল।

নির্বাচন শেষ হয়েছে পাঁচদিন হলো, অথচ আজও প্রচার করা হয়নি প্রার্থীরা কত লক্ষ, কত হাজার করে পোস্টার লিফলেট ছেপেছেন এবং সে বাবদে মোট কত টাকা তাদেরকে খরচ করতে হয়েছে। প্রচারে আসে নি দলীয় কর্মী ছাড়াও ভাড়াটিয়া কর্মী কোন প্রার্থী কতজনকে কতদিন ধরে এবং প্রতিদিন কত ঘণ্টা করে খাটিয়েছেন এবং সেই বাবদে কত টাকা ব্যয় হয়েছে। জানার সুযোগ নেই প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার বাবদে মাইক, যানবাহন, কর্মীদের আহারাদি, প্রভৃতি বাবদই বা কত করে দৈনিক খরচ হয়েছে।

পাঠক-পাঠিকাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে, মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে যখন প্রার্থীরা জমা দিলেন, তার সঙ্গে তাদের আয়-ব্যয়ের যে হিসাব দাখিল করেছিলেন; তাতে বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থীরা সকলেই কোটিপতি বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। তাও আবার এক-দুই কোটি টাকা নয়, অনেক অনেক কোটি টাকা। এই প্রার্থীরা কেউ কোনো চাকরি করেন না, করেন ব্যবসা (একজন পেশায় আইনজীবী এবং এটিও ব্যবসা)। ফলে ঢাকা সিটি কাউন্সিল দুটির নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় মোট খরচ কত কোটি টাকা হয়েছে তার কোন হিসেব কোন দিনই প্রকাশ পাবে না জানাও যাবে না। আমার পক্ষে তা অনুমান করাও সম্ভব নয়।

মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন ফি বাবদ প্রত্যেক প্রার্থীকে জামানত হিসেবে জমা দিতে হয়েছে এক লক্ষ টাকা করে। কাউন্সিলর পদে ৫৫,০০০ টাকা করে। ন্যূনতম শতকরা ১২.৫ পার্সেন্ট ভোট পেলে তবেই তিনি ঐ জামানতের টাকা ফেরত পাবেন নতুবা নয়। আইন এমনই।

আর্থিক দিকটা একটু বেশিই হয়তো লিখে ফেললাম কিন্তু প্রার্থীদের খাতওয়ারি ব্যয় ও মোট ব্যয় সম্পর্কে কোন স্পষ্ট বা আনুমানিক ধারণও দেয়া সম্ভব হলো না। গণতন্ত্রে দেশের যে কোন নাগরিক, যদি ভোটার তালিকায় তার নাম থাকে এবং ন্যূনতম বয়স সীমা যদি অর্জন করে থাকেন তা হলে তিনি যে কোন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। এটি সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু যে কোন নাগরিক কি বাস্তবে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন, বিশেষ করে স্বল্পবিত্ত, নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন কোন নাগরিক অপরাপর সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও? এক লক্ষ টাকা সরকারি জামানত (বা কাউন্সিলরের ক্ষেত্রে ৫৫,০০০ টাকা) জমা দিয়ে, বাধ্যতামূলকভাবে ভোটার তালিকার সিডি কিনে (সিডির টাকা অফেরতযোগ্য) প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোস্টার লিফলেট, সভা-সমাবেশ, কর্মী নিয়োগ, আহারাদির জন্য যে বিপুল ব্যয় অনুমানে আনা সম্ভব তাও কি সকল নাগরিকের পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব?

প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের সকলেরই জানা। তা হলে দেখা যাচ্ছে যে নির্বাচন কমিশনে বিপুল অংকের টাকা জমা দেয়ার বাধ্যতামূলক পূর্বশর্ত, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত সিডিগুলোও ক্রয় বাধ্যতামূলক করে সরকারই (বা নির্বাচন কমিশন) ধনিক গোষ্ঠীর জন্যই নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার শতকরা ৯৫ ভাগ। নিম্নবিত্ত, স্বল্পবিত্ত, বিত্তহীনদের জন্য পুরোপুরি অসম্ভব করে তুলে তাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছেন।

নির্বাচনী ব্যয়ে প্রার্থীরা কত টাকা ব্যয় করতে পারবেন তার একটা সীমা নির্বাচনী বিধিতে উল্লেখ করা আছে। নির্বাচন শেষে সকল প্রার্থীকেই (বিজয়ী বা পরাজিত নির্বিশেষে) নির্বাচনী ব্যয়ের একটি হিসাব নির্দিষ্ট সময় কালের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দাখিলের বাধ্যতামূলক বিধান আছে। এই বিধান না মানলে সম্ভবত সংশ্লিষ্ট প্রার্থী পরবর্তী কোন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার হারাতে পারেন। নির্বাচনী ব্যয় প্রার্থীরা সর্বোচ্চ কত টাকা করতে পারবেন নির্বাচন কমিশন প্রণীত নিয়মকানুনে তাও স্পষ্টাক্ষরে লিখিত আছে এবং তাও সম্ভবত বাধ্যতামূলক।

শেষ পর্যন্ত কোন প্রার্থী সর্বোচ্চ কত টাকা ব্যয় করলেন, নির্বাচন শেষে তার হিসাব-নিকাশ বিল-ভাউচার প্রমাণাদিসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিয়ে থাকেন এবং ওই হিসাব-নিকাশ করা বিল ভাউচার সত্য কি না তা কখনও যাচাই করে দেখা হয় না। কিন্তু অফিসিয়ালি স্বীকার না করলেও নির্বাচন কমিশনসহ সকল মহলই তা জানেন। নির্বাচনী অভিযান চলাকালে প্রার্থীরা কে কেমন ব্যয় করছেন তার মনিটরিং বা কারও ব্যয় সীমাবহির্ভূত বলে বিবেচিত হলেও তাকে আদৌ জবাদিহিতার আওয়তায় আনা হয় না। অর্থাৎ গো অ্যাজ ইউ লাইক।

টেলিভিশনে সপ্তাহের পর সপ্তাহব্যাপী দিবারাত্র সিটি কাউন্সিল নির্বাচনের প্রচারও শুধুমাত্র অত্যধিক নয় গণতন্দ্রের বিধান সেখানেও আনা হয় না। উল্টো চ্যানেলগুলোর আচরণ মারাত্মকভাবে বৈষম্যমূলক। দুটি বৃহৎ দলের ধনী প্রার্থীরা ছাড়া অন্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছোট-বড়-মাঝারি দলের প্রার্থীকে চ্যানেলগুলো তাদের প্রচারে স্থান না দিয়ে যে বৈষম্য দেখান তাও গণতন্দ্রের মূল সূত্র বিরোধী। আইনত ও ন্যায়ত সকল দলের (বা নির্দলীয়) সকল প্রার্থীই সমান প্রচার পাওয়ার অধিকার রাখেন। এ বিষয়েও নির্বাচনী বিধিতে কিছু কথা লেখা আছে টেলিভিশন বা সংবাদপত্র এমন কিছু উল্লেখ না করে। প্রচারের ব্যাপকতা দেখে মনে হয় যেন চ্যানেলগুলোর নিজস্ব প্রার্থীই হলেন দুই বৃহৎ দলের প্রার্থীরা। সাংবাদিকতা এবং প্রচার মাধ্যমের নিয়মনীতির পরিপন্থী এ আচরণ বৈষম্যমূলক ও গণতন্ত্রের বিধিবিধানেরও পরিপন্থীও বটে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কিন্তু সম্ভব এই বৈষম্যমূলক প্রচারণা বন্ধ করার এবং বৈষম্যমুক্ত প্রচার অভিযান না চালাতে সকল প্রচার মাধ্যমকে নির্দেশ দেয়ার। কিন্তু কমিশন এ ব্যাপারে আদৌ কোন প্রকার হস্তক্ষেপ না করে প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দেন ওই বড় দুই দলের প্রচার চালানো তাদেরও কাম্য।

যে কয়টি বিষয় এ যাবত উল্লেখ করলাম তার সবটিই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, নির্বাচন কমিশন সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই ধনী, বৃহৎ ধনী প্রাথীদের স্বার্থে তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন গণতন্ত্রের নাম-নিশানাও মুছে ফেলছেন।

নির্বাচনের জামানত, ভোটার তালিকা সম্বলিত সিডি বাধ্যতামূলকভাবে ক্রয়, পোস্টার, লিফলেট, যানবাহন, দলীয় ও ভাড়াটিয়া কর্মীদের ব্যয়, আহারাদি ও অন্যান্য খরচও যে নিম্নবিত্ত, স্বল্পবিত্ত ও বিত্তহীনদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার প্রকারান্তরে অস্বীকার করে তাদের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার সকলের চোখের সামনেই হরণ করে চলেছেন। বস্তিবাসী অশিক্ষিত, দরিদ্র ছেলে বা মেয়েকে কেন প্রার্থী হওয়ার সুযোগ তার অর্থাভাবে নস্যাৎ করে দেওয়া হবে? কেনই বা একটি কৃষক বা তার সন্তানকে, বা একজন শ্রমিক বা তার সন্তানকে, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন মানুষেরা সংখ্যায় সর্বাধিক হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র অর্থাভাবে, সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন? তাদের এ অধিকার অন্যতম মৌলিক অধিকার হওয়া সত্ত্বেও তা প্রকারান্তরে হরণ করা হবে কোন অধিকারে?

এ অধিকারগুলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ও তার অধিবাসীদের জন্য একটি মৌলিক অধিকার। কিন্তু তার অস্বীকৃতি একমাত্র ধনিকদের স্বার্থেই করে যাওয়া হচ্ছে। ইংরেজদের বিতাড়ন ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ঐ বিত্তহীন নিম্নবিত্তেরাই করেছেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তার সাম্প্রদায়িক এবং অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক নীতিগুলির বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন সংগ্রামেরও তারাই ছিলেন প্রধান চালিকা শক্তি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রেও তাই।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাশা ছিল সমগ্র জাতি, বিশেষ করে জাতির নিপীড়িত অংশসমূহ সকল মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করবেন। বাহাত্তরের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু তেমন অধিকারের স্বীকৃতিও দিলেন কিন্তু আজও তারা সে অধিকার থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেলেন। তারপরেও কি বলা যাবে বাংলাদেশে প্রাণবন্ত, পরিপুষ্ট গণতন্ত্র বিদ্যমান বা সমগ্র জাতি, উঁচু-নীচ নির্বিশেষে সে অধিকার ভোগ করেন? করেন না বলেই গণতন্ত্র যেন একটা মুমূর্ষু পর্যায়ে আইসিইউর্তে ভর্তি।

এবারে দেখা যাক অত কিছু সত্ত্বেও কেমন হলো এবার ঢাকা সিটি কাউন্সিলের নির্বাচন। গত ২ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সুপরিচিত জাতীয় দৈনিকগুলোই নয়, শুধু খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশিনার বলে দিলেন, শতকরা ৩০ ভাগের মতো ভোটার ভোট দিয়েছেন। অপর একজন নির্বাচন কমিশনার বললেন, ভোট পড়েছে শতকরা ২৫ ভাগের মতো। অর্থাৎ অন্তত ৭০ ভাগ ভোটার ভোট দেননি এটা নির্বাচন কমিশনেরই কথা। প্রায় সকল পত্রিকাই ওই দিন লিখেছেন, আয়োজনের কোন ঘাটতি ছিল না কিন্তু কোথাও ভোটার ছিল না। সকাল ৮টায় ভোট শুরু হলেও ১১টা পর্যন্ত অতি অল্পসংখ্যক ভোটার ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলেন। বস্তুত ভোট কেন্দ্রগুলোর অবস্থা সারাদিনই ছিল তাই। কিন্তু কেন? প্রায় মাসব্যাপী ব্যাপক প্রচার প্রচারণা, লিফলেট, পোস্টার, মাইক্রোফোন, যানবাহন, কর্মী চলাচল, মিছিল, সমাবেশ, প্রার্থীদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা, কোটি কোটি টাকা ব্যয় সত্ত্বেও ভোটাররা কেন এলেন না তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে?

কারণ সম্ভবত একটিই। গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনের ওপর ভোটারদের মারাত্মক আস্থাহীনতা। আস্থাহীনতা প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও। কারণ ২০১৪, ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের একটিকে তারা দেখেছেন প্রার্থীবিহীন, ভোটারবিহীন নির্বাচন আর অপরটিতে তারা দেখেছেন নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট বাক্সগুলোকে ব্যালটভর্তি অবস্থায়। ভোটারদের উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন হয়ে গেল, সংসদ গঠিত হলো।

সার্বিক ভোট যদি শতকরা ৩০ ভাগ হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চিন্তে বলা যায় যে, মেয়র পদে নির্বাচিত উভয় প্রার্থীর কেউই মোট ভোটার সংখ্যার শতকরা আট-দশ ভাগের বেশি ভোট পাননি। অর্থাৎ তারা শতকরা ৯০ থেকে ৯২ ভাগ ভোটারের আস্থা অর্জন করতে না পারা সত্ত্বেও সরকারিভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষিত হয়েছেন। নির্বাচনী বুথগুলো ছিল সরকারি দলের পাহারায় আর বিরোধী দলের ভোট কর্মীরা ভোট কেন্দ্রে ঢুকতেই পারেননি। তবুও বলা হলো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, শান্তিপূর্ণ হয়েছে এবং যথার্থ হয়েছে। আরও বলা হয়েছে বিগত ১০০ বছরের মধ্যেও এত সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

গণতন্ত্রের নামে এমন প্রহসন মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা কেউ কি আশা করেছিলাম! জিয়া, এরশাদ আমলে হলেও না হয় কথা ছিল বা মেনে নেয়া যেতো। তাই সবাই দেখেন রাজনৈতিক ও বাস্তব অর্থেই ভোটাধিকারকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। তাই মানুষের এ অধিকারগুলোর সঙ্গে বাঁচার অধিকার, বেকারত্ব দূরীকরণ ও বৈষম্যের অবসান- প্রভৃতির লড়াইকে তীব্র করে তোলার বিকল্প নেই।

[লেখক : সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, পাবনা]

raneshmaitra@gmail.com

বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৩ মাঘ ১৪২৬, ১১ জমাদিউল সানি ১৪৪১

গণতন্ত্র আইসিইউতে : ভোটাধিকার নির্বাসনে

রণেশ মৈত্র

১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কাউন্সিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ফলাফলও সরকারিভাবে প্রকাশিত হয়েছে; যা ঘটার তাই ঘটেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই উভয় সিটি কাউন্সিলের মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন। কাউন্সিলার পদগুলোতে বেশির ভাগ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরাই জিতেছেন- অল্প কিছু সংখ্যক আসনে বিএনপি প্রার্থীও বিজয়ী হয়েছেন।

নির্বাচনের তারিখের অনেক আগে থেকেই, বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্তভাবে দলীয় কার্যালয় থেকে ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই, যে ব্যাপক প্রচারণার বাদ্যি বাজানো হয়েছে, তা গণতন্ত্রের ইতিহাসে অভিনব। সকল টেলিভিশন চ্যানেলই দিবারাত্র খেয়ে না খেয়ে কখনও লাইভ কখনও অন্যভাবে ক্লান্তিহীন প্রচার করেছে নির্বাচনী অভিযানের দৃশ্য। মিছিল-সমাবেশ, প্রচারপত্র বিলি ও পোস্টার সাঁটার মহোৎসবের ছবিগুলো। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টেলিভিশনে এমন প্রচার-প্রচারণা-মিছিল ও অসংখ্য সমাবেশের দৃশ্য দেখানোর ফলে একঘেঁয়ে পরিবেশ রচিত হচ্ছিল।

নির্বাচন শেষ হয়েছে পাঁচদিন হলো, অথচ আজও প্রচার করা হয়নি প্রার্থীরা কত লক্ষ, কত হাজার করে পোস্টার লিফলেট ছেপেছেন এবং সে বাবদে মোট কত টাকা তাদেরকে খরচ করতে হয়েছে। প্রচারে আসে নি দলীয় কর্মী ছাড়াও ভাড়াটিয়া কর্মী কোন প্রার্থী কতজনকে কতদিন ধরে এবং প্রতিদিন কত ঘণ্টা করে খাটিয়েছেন এবং সেই বাবদে কত টাকা ব্যয় হয়েছে। জানার সুযোগ নেই প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার বাবদে মাইক, যানবাহন, কর্মীদের আহারাদি, প্রভৃতি বাবদই বা কত করে দৈনিক খরচ হয়েছে।

পাঠক-পাঠিকাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে, মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে যখন প্রার্থীরা জমা দিলেন, তার সঙ্গে তাদের আয়-ব্যয়ের যে হিসাব দাখিল করেছিলেন; তাতে বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থীরা সকলেই কোটিপতি বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। তাও আবার এক-দুই কোটি টাকা নয়, অনেক অনেক কোটি টাকা। এই প্রার্থীরা কেউ কোনো চাকরি করেন না, করেন ব্যবসা (একজন পেশায় আইনজীবী এবং এটিও ব্যবসা)। ফলে ঢাকা সিটি কাউন্সিল দুটির নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় মোট খরচ কত কোটি টাকা হয়েছে তার কোন হিসেব কোন দিনই প্রকাশ পাবে না জানাও যাবে না। আমার পক্ষে তা অনুমান করাও সম্ভব নয়।

মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন ফি বাবদ প্রত্যেক প্রার্থীকে জামানত হিসেবে জমা দিতে হয়েছে এক লক্ষ টাকা করে। কাউন্সিলর পদে ৫৫,০০০ টাকা করে। ন্যূনতম শতকরা ১২.৫ পার্সেন্ট ভোট পেলে তবেই তিনি ঐ জামানতের টাকা ফেরত পাবেন নতুবা নয়। আইন এমনই।

আর্থিক দিকটা একটু বেশিই হয়তো লিখে ফেললাম কিন্তু প্রার্থীদের খাতওয়ারি ব্যয় ও মোট ব্যয় সম্পর্কে কোন স্পষ্ট বা আনুমানিক ধারণও দেয়া সম্ভব হলো না। গণতন্ত্রে দেশের যে কোন নাগরিক, যদি ভোটার তালিকায় তার নাম থাকে এবং ন্যূনতম বয়স সীমা যদি অর্জন করে থাকেন তা হলে তিনি যে কোন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। এটি সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু যে কোন নাগরিক কি বাস্তবে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন, বিশেষ করে স্বল্পবিত্ত, নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন কোন নাগরিক অপরাপর সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও? এক লক্ষ টাকা সরকারি জামানত (বা কাউন্সিলরের ক্ষেত্রে ৫৫,০০০ টাকা) জমা দিয়ে, বাধ্যতামূলকভাবে ভোটার তালিকার সিডি কিনে (সিডির টাকা অফেরতযোগ্য) প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোস্টার লিফলেট, সভা-সমাবেশ, কর্মী নিয়োগ, আহারাদির জন্য যে বিপুল ব্যয় অনুমানে আনা সম্ভব তাও কি সকল নাগরিকের পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব?

প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের সকলেরই জানা। তা হলে দেখা যাচ্ছে যে নির্বাচন কমিশনে বিপুল অংকের টাকা জমা দেয়ার বাধ্যতামূলক পূর্বশর্ত, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত সিডিগুলোও ক্রয় বাধ্যতামূলক করে সরকারই (বা নির্বাচন কমিশন) ধনিক গোষ্ঠীর জন্যই নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার শতকরা ৯৫ ভাগ। নিম্নবিত্ত, স্বল্পবিত্ত, বিত্তহীনদের জন্য পুরোপুরি অসম্ভব করে তুলে তাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছেন।

নির্বাচনী ব্যয়ে প্রার্থীরা কত টাকা ব্যয় করতে পারবেন তার একটা সীমা নির্বাচনী বিধিতে উল্লেখ করা আছে। নির্বাচন শেষে সকল প্রার্থীকেই (বিজয়ী বা পরাজিত নির্বিশেষে) নির্বাচনী ব্যয়ের একটি হিসাব নির্দিষ্ট সময় কালের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দাখিলের বাধ্যতামূলক বিধান আছে। এই বিধান না মানলে সম্ভবত সংশ্লিষ্ট প্রার্থী পরবর্তী কোন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার হারাতে পারেন। নির্বাচনী ব্যয় প্রার্থীরা সর্বোচ্চ কত টাকা করতে পারবেন নির্বাচন কমিশন প্রণীত নিয়মকানুনে তাও স্পষ্টাক্ষরে লিখিত আছে এবং তাও সম্ভবত বাধ্যতামূলক।

শেষ পর্যন্ত কোন প্রার্থী সর্বোচ্চ কত টাকা ব্যয় করলেন, নির্বাচন শেষে তার হিসাব-নিকাশ বিল-ভাউচার প্রমাণাদিসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিয়ে থাকেন এবং ওই হিসাব-নিকাশ করা বিল ভাউচার সত্য কি না তা কখনও যাচাই করে দেখা হয় না। কিন্তু অফিসিয়ালি স্বীকার না করলেও নির্বাচন কমিশনসহ সকল মহলই তা জানেন। নির্বাচনী অভিযান চলাকালে প্রার্থীরা কে কেমন ব্যয় করছেন তার মনিটরিং বা কারও ব্যয় সীমাবহির্ভূত বলে বিবেচিত হলেও তাকে আদৌ জবাদিহিতার আওয়তায় আনা হয় না। অর্থাৎ গো অ্যাজ ইউ লাইক।

টেলিভিশনে সপ্তাহের পর সপ্তাহব্যাপী দিবারাত্র সিটি কাউন্সিল নির্বাচনের প্রচারও শুধুমাত্র অত্যধিক নয় গণতন্দ্রের বিধান সেখানেও আনা হয় না। উল্টো চ্যানেলগুলোর আচরণ মারাত্মকভাবে বৈষম্যমূলক। দুটি বৃহৎ দলের ধনী প্রার্থীরা ছাড়া অন্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছোট-বড়-মাঝারি দলের প্রার্থীকে চ্যানেলগুলো তাদের প্রচারে স্থান না দিয়ে যে বৈষম্য দেখান তাও গণতন্দ্রের মূল সূত্র বিরোধী। আইনত ও ন্যায়ত সকল দলের (বা নির্দলীয়) সকল প্রার্থীই সমান প্রচার পাওয়ার অধিকার রাখেন। এ বিষয়েও নির্বাচনী বিধিতে কিছু কথা লেখা আছে টেলিভিশন বা সংবাদপত্র এমন কিছু উল্লেখ না করে। প্রচারের ব্যাপকতা দেখে মনে হয় যেন চ্যানেলগুলোর নিজস্ব প্রার্থীই হলেন দুই বৃহৎ দলের প্রার্থীরা। সাংবাদিকতা এবং প্রচার মাধ্যমের নিয়মনীতির পরিপন্থী এ আচরণ বৈষম্যমূলক ও গণতন্ত্রের বিধিবিধানেরও পরিপন্থীও বটে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কিন্তু সম্ভব এই বৈষম্যমূলক প্রচারণা বন্ধ করার এবং বৈষম্যমুক্ত প্রচার অভিযান না চালাতে সকল প্রচার মাধ্যমকে নির্দেশ দেয়ার। কিন্তু কমিশন এ ব্যাপারে আদৌ কোন প্রকার হস্তক্ষেপ না করে প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দেন ওই বড় দুই দলের প্রচার চালানো তাদেরও কাম্য।

যে কয়টি বিষয় এ যাবত উল্লেখ করলাম তার সবটিই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, নির্বাচন কমিশন সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই ধনী, বৃহৎ ধনী প্রাথীদের স্বার্থে তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন গণতন্ত্রের নাম-নিশানাও মুছে ফেলছেন।

নির্বাচনের জামানত, ভোটার তালিকা সম্বলিত সিডি বাধ্যতামূলকভাবে ক্রয়, পোস্টার, লিফলেট, যানবাহন, দলীয় ও ভাড়াটিয়া কর্মীদের ব্যয়, আহারাদি ও অন্যান্য খরচও যে নিম্নবিত্ত, স্বল্পবিত্ত ও বিত্তহীনদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার প্রকারান্তরে অস্বীকার করে তাদের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার সকলের চোখের সামনেই হরণ করে চলেছেন। বস্তিবাসী অশিক্ষিত, দরিদ্র ছেলে বা মেয়েকে কেন প্রার্থী হওয়ার সুযোগ তার অর্থাভাবে নস্যাৎ করে দেওয়া হবে? কেনই বা একটি কৃষক বা তার সন্তানকে, বা একজন শ্রমিক বা তার সন্তানকে, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন মানুষেরা সংখ্যায় সর্বাধিক হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র অর্থাভাবে, সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন? তাদের এ অধিকার অন্যতম মৌলিক অধিকার হওয়া সত্ত্বেও তা প্রকারান্তরে হরণ করা হবে কোন অধিকারে?

এ অধিকারগুলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ও তার অধিবাসীদের জন্য একটি মৌলিক অধিকার। কিন্তু তার অস্বীকৃতি একমাত্র ধনিকদের স্বার্থেই করে যাওয়া হচ্ছে। ইংরেজদের বিতাড়ন ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ঐ বিত্তহীন নিম্নবিত্তেরাই করেছেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তার সাম্প্রদায়িক এবং অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক নীতিগুলির বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন সংগ্রামেরও তারাই ছিলেন প্রধান চালিকা শক্তি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রেও তাই।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাশা ছিল সমগ্র জাতি, বিশেষ করে জাতির নিপীড়িত অংশসমূহ সকল মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করবেন। বাহাত্তরের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু তেমন অধিকারের স্বীকৃতিও দিলেন কিন্তু আজও তারা সে অধিকার থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেলেন। তারপরেও কি বলা যাবে বাংলাদেশে প্রাণবন্ত, পরিপুষ্ট গণতন্ত্র বিদ্যমান বা সমগ্র জাতি, উঁচু-নীচ নির্বিশেষে সে অধিকার ভোগ করেন? করেন না বলেই গণতন্ত্র যেন একটা মুমূর্ষু পর্যায়ে আইসিইউর্তে ভর্তি।

এবারে দেখা যাক অত কিছু সত্ত্বেও কেমন হলো এবার ঢাকা সিটি কাউন্সিলের নির্বাচন। গত ২ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সুপরিচিত জাতীয় দৈনিকগুলোই নয়, শুধু খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশিনার বলে দিলেন, শতকরা ৩০ ভাগের মতো ভোটার ভোট দিয়েছেন। অপর একজন নির্বাচন কমিশনার বললেন, ভোট পড়েছে শতকরা ২৫ ভাগের মতো। অর্থাৎ অন্তত ৭০ ভাগ ভোটার ভোট দেননি এটা নির্বাচন কমিশনেরই কথা। প্রায় সকল পত্রিকাই ওই দিন লিখেছেন, আয়োজনের কোন ঘাটতি ছিল না কিন্তু কোথাও ভোটার ছিল না। সকাল ৮টায় ভোট শুরু হলেও ১১টা পর্যন্ত অতি অল্পসংখ্যক ভোটার ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলেন। বস্তুত ভোট কেন্দ্রগুলোর অবস্থা সারাদিনই ছিল তাই। কিন্তু কেন? প্রায় মাসব্যাপী ব্যাপক প্রচার প্রচারণা, লিফলেট, পোস্টার, মাইক্রোফোন, যানবাহন, কর্মী চলাচল, মিছিল, সমাবেশ, প্রার্থীদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা, কোটি কোটি টাকা ব্যয় সত্ত্বেও ভোটাররা কেন এলেন না তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে?

কারণ সম্ভবত একটিই। গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনের ওপর ভোটারদের মারাত্মক আস্থাহীনতা। আস্থাহীনতা প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও। কারণ ২০১৪, ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের একটিকে তারা দেখেছেন প্রার্থীবিহীন, ভোটারবিহীন নির্বাচন আর অপরটিতে তারা দেখেছেন নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট বাক্সগুলোকে ব্যালটভর্তি অবস্থায়। ভোটারদের উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন হয়ে গেল, সংসদ গঠিত হলো।

সার্বিক ভোট যদি শতকরা ৩০ ভাগ হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চিন্তে বলা যায় যে, মেয়র পদে নির্বাচিত উভয় প্রার্থীর কেউই মোট ভোটার সংখ্যার শতকরা আট-দশ ভাগের বেশি ভোট পাননি। অর্থাৎ তারা শতকরা ৯০ থেকে ৯২ ভাগ ভোটারের আস্থা অর্জন করতে না পারা সত্ত্বেও সরকারিভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষিত হয়েছেন। নির্বাচনী বুথগুলো ছিল সরকারি দলের পাহারায় আর বিরোধী দলের ভোট কর্মীরা ভোট কেন্দ্রে ঢুকতেই পারেননি। তবুও বলা হলো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, শান্তিপূর্ণ হয়েছে এবং যথার্থ হয়েছে। আরও বলা হয়েছে বিগত ১০০ বছরের মধ্যেও এত সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

গণতন্ত্রের নামে এমন প্রহসন মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা কেউ কি আশা করেছিলাম! জিয়া, এরশাদ আমলে হলেও না হয় কথা ছিল বা মেনে নেয়া যেতো। তাই সবাই দেখেন রাজনৈতিক ও বাস্তব অর্থেই ভোটাধিকারকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। তাই মানুষের এ অধিকারগুলোর সঙ্গে বাঁচার অধিকার, বেকারত্ব দূরীকরণ ও বৈষম্যের অবসান- প্রভৃতির লড়াইকে তীব্র করে তোলার বিকল্প নেই।

[লেখক : সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, পাবনা]

raneshmaitra@gmail.com