পাসপোর্ট নিয়ে জালিয়াতি

সংঘবদ্ধ চক্র পরস্পর যোগসাজশে পাসপোর্ট নিয়ে ভয়াবহ জালিয়াতি করছে। সম্প্রতি সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ভারতে যাওয়ার পথে বেনাপোল সীমান্তে গেলে পাসপোর্টের সমস্যার কারণে তাকে সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠানো হয়। ঐ ঘটনায় পাসপোর্ট নিয়ে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। তিনি পার্সপোর্ট অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও কোন ফল না পেয়ে অবশেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করেন।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আবেদনকারী ৮৩ বছর বয়সী সেনাবাহিনী অবসরপ্রাপ্ত একজন সিনিয়র নাগরিক। হজ পালনের জন্য পাসপোর্টের আবেদন করলে ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল তার নামে একটি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। পাসপোর্ট নম্বর ইএ ০৪২৫২৪২। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার ছেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রোগ্রামার মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য ইন্ডিয়ান হাইকমিশন থেকে ভিসা নেন। তার ছেলে মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জটিল রোগে আক্রান্ত। তিনি নিয়মিত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই যান।

ভারতে যাওয়ার জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ২৫ মিনিট কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ইন্ডিগো বিমানে কলকাতা টু চেন্নাই টিকিট কেনেন। ওই দিন সকালে বেনাপোল পোর্ট দিয়ে ইমিগ্রেশনে চেক করার সময় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ পাসপোর্টে সমস্যা আছে বলে তাকে ভারতে যেতে দেয়নি। এতে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের অপূরণীয় মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে ৭০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর ফোনে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করলে জানা যায়, তার নামে ইবি ০৪৯১৩২১ (নম্বর) আরও একটি পাসপোর্ট ইস্যু করার ফলে বর্তমান পাসপোর্টটি বাতিল করা হয়েছে। এরপর তিনি ঢাকায় উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করে একটি আবেদন নিয়ে গেলে সেখান থেকে তিনি কোন সহযোগিতা পাননি। বরং সহকারী পরিচালক (পাসপোর্ট) মো. শাহজাহান কবিরের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আবেদন করলে আমাদের কিছু করার নেই। থানায় গিয়ে নতুন ইস্যু করা ইবি ০৪৯১৩২১ নম্বর পাসপোর্টটি হারিয়ে গেছে বলে জিডি করার পরামর্শ দেন। এরপর নতুন একটি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন।

উল্লেখ্য, তার নামে ইস্যুকৃত পাসপোর্টটি হারিয়ে যায়নি কিংবা মেয়াদও শেষ হয়নি বিধায় তিনি নতুন করে পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য কোন আবেদন করেনি। তথাপি কেন তার নামে পাসপোর্টটি ইস্যু করা হলো। আর নতুন ইস্যুকৃত পাসপোর্টটি তিনি গ্রহণ করেনি তবে কেন হারিয়ে গেছে বলে থানায় জিডি করে আর একটি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করব তা বোধগম্য নয় বলে তিনি জানান। তিনি ঘটনাটি তদন্ত ও সমস্যার সমাধান করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার ব্যবস্থা ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছেন।

একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, পাসপোর্টের জন্য প্রথমে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করা হয়। ওই আবেদন পরে তদন্তের জন্য এসবি অফিসে পাসপোর্ট শাখায় পাঠানো হয়। তারা সরজমিন বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানায় তদন্ত করে সবকিছু ঠিক থাকলে পাসপোর্ট অফিসে রিপোর্ট পেশ করে। এরপর পাসপোর্ট দেয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে রহস্যজনক কারণে একই নামে ২টি পাসপোর্ট কিভাবে দেয়া হয়। এ নিয়ে অনুসন্ধান ও তদন্তকারী দুই কমকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনে করেন।

মালিবাগ এসবি অফিসে পাসপোর্ট শাখার একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, একই নামের ঠিকানা দিয়ে অন্য কেউ পাসপোর্ট করতে পারে। তবে ছবি কিভাবে মিলবে তা নিয়ে কিছু বলতে পারেননি। আর সব তথ্য কিভাবে মিলেছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন এমন ঘটনা ঘটে। অভিযোগপত্র দেখলে ঘটনা জানা যাবে। তখন তদন্ত করে দেখা যাবে।

অভিযোগ রয়েছে, পাসপোর্ট অফিসের নানা অনিয়মের কারণে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পায়। অন্য কোন সংস্থা দিয়ে আলাদাভাবে তদন্ত করলে এসব জালিয়াতির প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব। আর ধরা পড়বে পাসপোর্ট জালিয়াত চক্রের হোতারা। হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে সাধারণ মানুষ।

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৭ মাঘ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

পাসপোর্ট নিয়ে জালিয়াতি

বাকী বিল্লাহ ও রাকিব উদ্দিন

সংঘবদ্ধ চক্র পরস্পর যোগসাজশে পাসপোর্ট নিয়ে ভয়াবহ জালিয়াতি করছে। সম্প্রতি সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ভারতে যাওয়ার পথে বেনাপোল সীমান্তে গেলে পাসপোর্টের সমস্যার কারণে তাকে সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠানো হয়। ঐ ঘটনায় পাসপোর্ট নিয়ে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। তিনি পার্সপোর্ট অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও কোন ফল না পেয়ে অবশেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করেন।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আবেদনকারী ৮৩ বছর বয়সী সেনাবাহিনী অবসরপ্রাপ্ত একজন সিনিয়র নাগরিক। হজ পালনের জন্য পাসপোর্টের আবেদন করলে ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল তার নামে একটি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। পাসপোর্ট নম্বর ইএ ০৪২৫২৪২। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার ছেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রোগ্রামার মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য ইন্ডিয়ান হাইকমিশন থেকে ভিসা নেন। তার ছেলে মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জটিল রোগে আক্রান্ত। তিনি নিয়মিত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই যান।

ভারতে যাওয়ার জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ২৫ মিনিট কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ইন্ডিগো বিমানে কলকাতা টু চেন্নাই টিকিট কেনেন। ওই দিন সকালে বেনাপোল পোর্ট দিয়ে ইমিগ্রেশনে চেক করার সময় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ পাসপোর্টে সমস্যা আছে বলে তাকে ভারতে যেতে দেয়নি। এতে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের অপূরণীয় মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে ৭০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর ফোনে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করলে জানা যায়, তার নামে ইবি ০৪৯১৩২১ (নম্বর) আরও একটি পাসপোর্ট ইস্যু করার ফলে বর্তমান পাসপোর্টটি বাতিল করা হয়েছে। এরপর তিনি ঢাকায় উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করে একটি আবেদন নিয়ে গেলে সেখান থেকে তিনি কোন সহযোগিতা পাননি। বরং সহকারী পরিচালক (পাসপোর্ট) মো. শাহজাহান কবিরের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আবেদন করলে আমাদের কিছু করার নেই। থানায় গিয়ে নতুন ইস্যু করা ইবি ০৪৯১৩২১ নম্বর পাসপোর্টটি হারিয়ে গেছে বলে জিডি করার পরামর্শ দেন। এরপর নতুন একটি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন।

উল্লেখ্য, তার নামে ইস্যুকৃত পাসপোর্টটি হারিয়ে যায়নি কিংবা মেয়াদও শেষ হয়নি বিধায় তিনি নতুন করে পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য কোন আবেদন করেনি। তথাপি কেন তার নামে পাসপোর্টটি ইস্যু করা হলো। আর নতুন ইস্যুকৃত পাসপোর্টটি তিনি গ্রহণ করেনি তবে কেন হারিয়ে গেছে বলে থানায় জিডি করে আর একটি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করব তা বোধগম্য নয় বলে তিনি জানান। তিনি ঘটনাটি তদন্ত ও সমস্যার সমাধান করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার ব্যবস্থা ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছেন।

একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, পাসপোর্টের জন্য প্রথমে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করা হয়। ওই আবেদন পরে তদন্তের জন্য এসবি অফিসে পাসপোর্ট শাখায় পাঠানো হয়। তারা সরজমিন বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানায় তদন্ত করে সবকিছু ঠিক থাকলে পাসপোর্ট অফিসে রিপোর্ট পেশ করে। এরপর পাসপোর্ট দেয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে রহস্যজনক কারণে একই নামে ২টি পাসপোর্ট কিভাবে দেয়া হয়। এ নিয়ে অনুসন্ধান ও তদন্তকারী দুই কমকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনে করেন।

মালিবাগ এসবি অফিসে পাসপোর্ট শাখার একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, একই নামের ঠিকানা দিয়ে অন্য কেউ পাসপোর্ট করতে পারে। তবে ছবি কিভাবে মিলবে তা নিয়ে কিছু বলতে পারেননি। আর সব তথ্য কিভাবে মিলেছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন এমন ঘটনা ঘটে। অভিযোগপত্র দেখলে ঘটনা জানা যাবে। তখন তদন্ত করে দেখা যাবে।

অভিযোগ রয়েছে, পাসপোর্ট অফিসের নানা অনিয়মের কারণে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পায়। অন্য কোন সংস্থা দিয়ে আলাদাভাবে তদন্ত করলে এসব জালিয়াতির প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব। আর ধরা পড়বে পাসপোর্ট জালিয়াত চক্রের হোতারা। হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে সাধারণ মানুষ।