চীন-রাশিয়ার ঊর্ধ্বেই থাকবে পশ্চিমা প্রাধান্য

চীন ও রাশিয়া যতই সাম্রাজ্য গড়ার চিন্তা করুক, পশ্চিমা মূল্যবোধগুলোই শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করবে বলে ইউরোপীয় মিত্রদের আশ্বস্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ইউরোপের নেতাদের অসন্তোষের মধ্যে শনিবার জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে দেয়া ভাষণে একথা বলেন পম্পেও। এ সময় বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকা ও পদক্ষেপগুলোর পক্ষে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন এ মর্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ওয়াশিংটনের এমন দাবির বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন। রয়টার্স।

বার্তা সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসয়ম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ স্লোগান, উত্তর আটলান্টিক সামরিক জোট ন্যাটো নিয়ে দোটানা এবং ইউরোপীয় পণ্যে একের পর এক শুল্ক আরোপের ঘটনায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কে সৃষ্ট অবিশ্বাস ও সন্দেহ দূর করারও জোর চেষ্টা চালিয়েছেন পম্পেও। এছাড়া পশ্চিমা নেতৃত্বে কোন ধরনের সংকটে নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘আটলান্টিকের এপার-ওপার মিত্রতার মৃত্যু নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তা যে অতিরঞ্জিত এটা জানাতে পেরে আমি খুশি। পশ্চিমারা জিতছে, এবং আমরা একসঙ্গেই জিতছি’। এ সময় উদার গণতন্ত্রের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন যুক্তরাষ্ট্রের এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পম্পেওর এ অবস্থানকে গত শুক্রবার মিউনিখ সম্মেলনে দেয়া জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইমেয়ারের দেয়া বক্তৃতার প্রত্যুত্তর হিসেবেই ধরে নেয়া হচ্ছে।

স্টেইনমেয়ার তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকে আরও ‘বিপজ্জনক অবস্থার দিকে’ ঠেলে দেয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও জার্মান প্রেসিডেন্টের ওই বক্তব্যকে সমর্থন জনিয়ে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কনিষ্ঠ অংশিদার (জুনিয়র পার্টনার) হতে পারি না। ন্যাটোকে সমর্থন দিলেও ইউরোপের যেমন প্রতিবেশীর হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম হয়ে ওঠা দরকার, তেমনি দরকার ওয়াশিংটনের বাইরে স্বতন্ত্র অবস্থান নেয়ারও। ইউরোপীয় সমাধান চেয়ে চেয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি’। রাশিয়াকে ঠেকানোর পশ্চিমা নীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলেও মত এ ফরাসী প্রেসিডেন্টের। কেউই যেহেতু মস্কোর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়াতে চায় না, সেহেতু বিরোধ নিষ্পত্তিতে আলোচনার পথই একমাত্র উপায় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ আরও বলেন, ‘সব অংশীদারদের মুখেই আমরা (রাশিয়াকে) বাধা দেয়ার কথা শুনছি। আমি পাগল নই, কিন্তু বাধা দেয়া এবং দুর্বল হওয়া, এটা কোন নীতি হতে পারে না। এটা পুরোপুরি অকার্যকর পন্থা। দ্বিতীয় একটি বিকল্প আছে, ফের কৌশলগত আলোচনা শুরু করা। পরিস্থিতিও সেটিই দাবি করছে। এখন দিন দিন আমাদের মধ্যে কথা কম হচ্ছে, সংঘর্ষ বাড়ছে এবং আমরা সংকটের সমাধান করতে পারছি না’।

বিশ্লেষকদের অভিমত, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ইরান চুক্তি ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র যে এখন আর ইউরোপীয় স্বার্থকে খুব বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে না তা স্পষ্ট হয়েছে। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর কূটনীতিকেও দুর্বল করে দিয়েছে ওয়াশিংটন।

মিউনিখ সম্মেলনে পম্পেও যুক্তরাষ্ট্রের এসব কৌশলের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন। বলেন, কিছু বিষয়ে মতভিন্নতা থাকলেও চীন, ইরান ও রাশিয়া নিয়ে ইউরোপ, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্য মিত্ররা ঐক্যবদ্ধ। বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে নির্মিত নর্ড স্ট্রিম গ্যাসলাইন প্রকল্পেরও সমালোচনা করেন। রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস রপ্তানির এ প্রকল্পে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলেরও সমর্থন রয়েছে । পম্পেও রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল, ইরানের সাইবার হুমকি এবং চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের প্রসঙ্গ উপস্থাপন করে বলেন, এ রাষ্ট্রগুলোর ‘সাম্রাজ্য আকাক্সক্ষা’ আছে এবং এরা আন্তর্জাতিক নিয়মনীতিকে অবজ্ঞা করে যাচ্ছে।

তার এ বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি বলেন, ‘চীনের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই মিথ্যা, কোন অভিযোগেরই বাস্তব ভিত্তি নেই। এ সময় বেইজিং ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ও সম্পর্কের দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনতে ইচ্ছুক বলেও মন্তব্য করেছেন দেশটির পরারষ্ট্রমন্ত্রী।

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৪ ফল্গুন ১৪২৬, ২২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি

চীন-রাশিয়ার ঊর্ধ্বেই থাকবে পশ্চিমা প্রাধান্য

সংবাদ ডেস্ক |

চীন ও রাশিয়া যতই সাম্রাজ্য গড়ার চিন্তা করুক, পশ্চিমা মূল্যবোধগুলোই শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করবে বলে ইউরোপীয় মিত্রদের আশ্বস্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ইউরোপের নেতাদের অসন্তোষের মধ্যে শনিবার জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে দেয়া ভাষণে একথা বলেন পম্পেও। এ সময় বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকা ও পদক্ষেপগুলোর পক্ষে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন এ মর্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ওয়াশিংটনের এমন দাবির বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন। রয়টার্স।

বার্তা সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসয়ম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ স্লোগান, উত্তর আটলান্টিক সামরিক জোট ন্যাটো নিয়ে দোটানা এবং ইউরোপীয় পণ্যে একের পর এক শুল্ক আরোপের ঘটনায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কে সৃষ্ট অবিশ্বাস ও সন্দেহ দূর করারও জোর চেষ্টা চালিয়েছেন পম্পেও। এছাড়া পশ্চিমা নেতৃত্বে কোন ধরনের সংকটে নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘আটলান্টিকের এপার-ওপার মিত্রতার মৃত্যু নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তা যে অতিরঞ্জিত এটা জানাতে পেরে আমি খুশি। পশ্চিমারা জিতছে, এবং আমরা একসঙ্গেই জিতছি’। এ সময় উদার গণতন্ত্রের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন যুক্তরাষ্ট্রের এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পম্পেওর এ অবস্থানকে গত শুক্রবার মিউনিখ সম্মেলনে দেয়া জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইমেয়ারের দেয়া বক্তৃতার প্রত্যুত্তর হিসেবেই ধরে নেয়া হচ্ছে।

স্টেইনমেয়ার তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকে আরও ‘বিপজ্জনক অবস্থার দিকে’ ঠেলে দেয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও জার্মান প্রেসিডেন্টের ওই বক্তব্যকে সমর্থন জনিয়ে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কনিষ্ঠ অংশিদার (জুনিয়র পার্টনার) হতে পারি না। ন্যাটোকে সমর্থন দিলেও ইউরোপের যেমন প্রতিবেশীর হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম হয়ে ওঠা দরকার, তেমনি দরকার ওয়াশিংটনের বাইরে স্বতন্ত্র অবস্থান নেয়ারও। ইউরোপীয় সমাধান চেয়ে চেয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি’। রাশিয়াকে ঠেকানোর পশ্চিমা নীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলেও মত এ ফরাসী প্রেসিডেন্টের। কেউই যেহেতু মস্কোর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়াতে চায় না, সেহেতু বিরোধ নিষ্পত্তিতে আলোচনার পথই একমাত্র উপায় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ আরও বলেন, ‘সব অংশীদারদের মুখেই আমরা (রাশিয়াকে) বাধা দেয়ার কথা শুনছি। আমি পাগল নই, কিন্তু বাধা দেয়া এবং দুর্বল হওয়া, এটা কোন নীতি হতে পারে না। এটা পুরোপুরি অকার্যকর পন্থা। দ্বিতীয় একটি বিকল্প আছে, ফের কৌশলগত আলোচনা শুরু করা। পরিস্থিতিও সেটিই দাবি করছে। এখন দিন দিন আমাদের মধ্যে কথা কম হচ্ছে, সংঘর্ষ বাড়ছে এবং আমরা সংকটের সমাধান করতে পারছি না’।

বিশ্লেষকদের অভিমত, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ইরান চুক্তি ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র যে এখন আর ইউরোপীয় স্বার্থকে খুব বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে না তা স্পষ্ট হয়েছে। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর কূটনীতিকেও দুর্বল করে দিয়েছে ওয়াশিংটন।

মিউনিখ সম্মেলনে পম্পেও যুক্তরাষ্ট্রের এসব কৌশলের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন। বলেন, কিছু বিষয়ে মতভিন্নতা থাকলেও চীন, ইরান ও রাশিয়া নিয়ে ইউরোপ, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্য মিত্ররা ঐক্যবদ্ধ। বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে নির্মিত নর্ড স্ট্রিম গ্যাসলাইন প্রকল্পেরও সমালোচনা করেন। রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস রপ্তানির এ প্রকল্পে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলেরও সমর্থন রয়েছে । পম্পেও রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল, ইরানের সাইবার হুমকি এবং চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের প্রসঙ্গ উপস্থাপন করে বলেন, এ রাষ্ট্রগুলোর ‘সাম্রাজ্য আকাক্সক্ষা’ আছে এবং এরা আন্তর্জাতিক নিয়মনীতিকে অবজ্ঞা করে যাচ্ছে।

তার এ বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি বলেন, ‘চীনের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই মিথ্যা, কোন অভিযোগেরই বাস্তব ভিত্তি নেই। এ সময় বেইজিং ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ও সম্পর্কের দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনতে ইচ্ছুক বলেও মন্তব্য করেছেন দেশটির পরারষ্ট্রমন্ত্রী।