মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

১৪ ফেব্রুয়ারি

কেননা কোনো সরকার বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে না নিলেও বিশ্ববাসী স্বীকৃতি দিয়েছে -সিনেটর কেনেডী

সি এডওয়ার্ড কেনেডী সোমবার ঘোষণা করেন যে, কোনো কোনো সরকার বাংলাদেশকে মেনে নিলেও বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি বলেন যে, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশে দুই দিনের সফরে রাজধানীতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ভাষণদানকালে মার্কিন সিনেটর শরণার্থী সংক্রান্ত উপপরিষদের চেয়ারম্যান মি. কেনেডী একথা বলেন। পত্নী মিসেস জোয়ান কেনেডী ও ভাই-এর ছেলে জেএফ কেনেডী তার সাথে ঢাকায় এসেছেন। ঢাকা অবস্থানকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া হেলিকপ্টারযোগে কুষ্টিয়ার বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : মার্কিন ডেমোক্রেট দলের নেতা এবং বিখ্যাত কেনেডী পরিবারের পরলোকগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন কেনেডীর ছোট ভাই সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক সমাবেশে ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এক নয়া অধ্যায় সংযোজন করেছে। নবজাত রাষ্ট্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা উল্লেখ করে সিনেটর কেনেডি বলেন, এ শিশু রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আপনাদের ওপরই। বাংলাদেশি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, যারা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতিতে বিশ্বাস করেন না বাংলাদেশের নজরে তাদের শিক্ষা দেবে।

সরকার ছিল না জনগণ ছিল : মার্কিন সরকার যদিও বাংলাদেশের সংগ্রামকে সমর্থন করেনি তথাপি মার্কিন জনগণ এদেশের সংগ্রামী মানুষের দোসর ছিল। মানুষের মহান মূল্যবোধের মর্যাদা দিয়েই তারা বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে সিনেটর কেনেডি ঘোষণা করেন, “আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য মার্কিন জনগণের শুভেচ্ছবাণী নিয়ে এসেছি।’ তিনি আরো বলেন যে, আমেরিকানরা পরম আগ্রহে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা দেখেছেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এ যুদ্ধে সবাই অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, আমরা সবাই বাঙালি’ আমরা সবাই আমেরিকান, আমরা সবাই মানুষ। আমরা মানুষ্যত্বে বিশ্বাস করি। সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা জয়বাংলা, জয় কেনেডি, কেনেডি তোমায় ভালোবাসি এসব স্লোগান করেন।

বিমানবন্দরে : সকালে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি বিমান বন্দরে পৌঁছালে আন্তরিক সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। বিমানবন্দরে বাংলার তরুণ সমাজ সিনেটর কেনেডিকে এক নজর দেখার জন্য এতো পাগলপারা হয়ে পড়ে যে, সরকারি নিয়ম শৃঙ্খলা পর্যন্ত বিকল হয়ে যায়। ছাত্রছাত্রীরা তাকে এক প্রকার ঘিরে রাখে। ফলে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এম আর সিদ্দিকী যথাসমেয় তাকে স্বাগত জানাতে পারেনি। বহু কষ্টে তরুণ তরুণীদের ভিড়ের মধ্যে থেকে কোনো রকম বের করে আনলে প্রথমে বাণিজ্যমন্ত্রী তাকে বাংলার মাটিতে সু-স্বাগতম জানান। এরপরপরই আওয়ামী লীগের পক্ষে জনাব আবদুর রাজ্জাক এবং ন্যাপ নেতা জনাব মহিউদ্দিন তাকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন। তারা কিছুক্ষণ অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত সিনেটর কেনেডিকে অভিনন্দন জানাতে পেরেছিলেন। বিমান বন্দরে সিনেটর কেনেডির জন্য একটি লালগালিচা বিছানো হয়েছিল। অনেক হতাশ তরুণ তরুণী মালা দিতে না পেরে পুষ্পবৃষ্টি বর্ষণ করেন। বলাবাহুল্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় একই দৃশ্যের অবতারণা হয়।

আজকের কর্মসূচি : আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তিনি সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশে থাকাকালে সিনেটর অত্যন্ত ব্যস্ত দিন কাটাবেন। উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর । সিনেটর কেনেডি এবারই প্রথম ঢাকায় এলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তিনি বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পাকিস্তানি প্রতিপক্ষ তা নাকচ করে দেন।

বাংলাদেশ টিকে থাকতে এসেছে- বঙ্গবন্ধু

ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ এখানে বলেন যে, বাংলাদেশ একটি বাস্তব সত্য এবং কোনো দেশ স্বীকৃতি দিক আর না দিক তা টিকে থাকার জন্য এসেছে। বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দানের প্রশ্নে সিনেটর কেনেডির সাথে তার কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব বঙ্গবন্ধু একথা বলেন, বাংলাদেশ একটি বাস্তব সত্য, তা টিকে থাকতে এসেছে। কে আমাদের স্বীকৃতি দিল না তাতে আমাদের পরোয়া নাই।

ভুট্টো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রতিরক্ষা চুক্তির ইচ্ছে জানিয়েছে

নিউইয়র্ক। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের সাথে যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অবসান ঘটিয়ে ছিল পাকিস্তান এক্ষণে আবার পুনরুজ্জীবনে আগ্রহী বলে ভুট্টো নিক্সন সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সব সংগত ব্যাপারেই আললোচনা করতে চেয়েছেন, যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এটা নিক্সন সরকারের জন্য ব্রিতকর না হয়। ভুট্টো এটার সত্যতাও স্বীকার করেছেন যে, চীন যাবার পূর্বে এবং আসার পরও পিকিং সরকারের নিকট একই ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তিতে মোটেই উৎসাহ দেন নাই। তারা সাধারণ স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষপাতি বলে ভুট্টোকে জানিয়ে দেন। ভুট্টো এ ব্যাপারে তার সর্ব শেষ চিন্তা ভাবনা রাওয়ালপিন্ডিতে নিউইয়র্ক টাইমস এর প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেন। এর সাক্ষাৎকারে বিবরণ উক্ত পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়। পিকিং-এ তার আলোচনা সম্পর্কে প্রথমবারের ন্যায় আলোকপাত করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তার সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিককে বলেন যে, পিকিং প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রস্তাবের উত্তরে বলে, দেখো আরেকটি কমিউনিস্ট দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমাদের প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে। পরিণতিতে তা আজ কি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। কাজেই পারস্পরিক স্বার্থই ভালো এবং তাতেই দৃঢ় মৈত্রী গড়ে উঠবে। এই সাক্ষাৎকারের ওপর মন্তব্য প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমস প্রতিনিধি মন্তব্য করেন যে, চীন ও পাকিস্তানের সাধারণ স্বার্থের দিক হতে অবশ্যই মিল রয়েছে, আর তা হচ্ছে ভারতের প্রতি শত্রুতা এবং রাশিয়া যাতে এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের ব্যাপারে একচেটিয়াভাবে সফল না হয় তার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের সাথে সাথে চীন ও পাকিস্তান উদ্বেগ বোধ করছে।

৮৪টি দেশের প্রতিনিধিদের প্রস্তাব গ্রহণ

ভার্সাই। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সহ ৮৪টি দেশের ১২শ প্রতিনিধি নিক্সন সরকারকে ইন্দোচীন থেকে সৈন্য অপসারণের জন্যে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। ইন্দোচীনে স্মরণকালের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সমাবেশে ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়ায় শান্তি প্রতিষ্টার জন্যে বিশ্বকে সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। এই সমাবেশে বিঘঘাষিত এক প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরোধী শক্তিগুলোকে আন্তর্জাতিক সমর্থন দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। ভার্সাই-এ তিন দিন ব্যাপি সমাবেশে গৃহীত আরেকটি পৃথক প্রস্তাবে ইন্দোচীন থেকে শীঘ্রই সকল সশস্ত্রবাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্যে মার্কিন সরকারের নিকট দাবি জানানো হয়েছে এবং এ ব্যাপারে সঠিক তারিখ দিতে বলা হয়েছে।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৪ ফল্গুন ১৪২৬, ২২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

মুজিব শতবর্ষ

মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

১৪ ফেব্রুয়ারি

কেননা কোনো সরকার বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে না নিলেও বিশ্ববাসী স্বীকৃতি দিয়েছে -সিনেটর কেনেডী

সি এডওয়ার্ড কেনেডী সোমবার ঘোষণা করেন যে, কোনো কোনো সরকার বাংলাদেশকে মেনে নিলেও বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি বলেন যে, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশে দুই দিনের সফরে রাজধানীতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ভাষণদানকালে মার্কিন সিনেটর শরণার্থী সংক্রান্ত উপপরিষদের চেয়ারম্যান মি. কেনেডী একথা বলেন। পত্নী মিসেস জোয়ান কেনেডী ও ভাই-এর ছেলে জেএফ কেনেডী তার সাথে ঢাকায় এসেছেন। ঢাকা অবস্থানকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া হেলিকপ্টারযোগে কুষ্টিয়ার বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : মার্কিন ডেমোক্রেট দলের নেতা এবং বিখ্যাত কেনেডী পরিবারের পরলোকগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন কেনেডীর ছোট ভাই সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক সমাবেশে ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এক নয়া অধ্যায় সংযোজন করেছে। নবজাত রাষ্ট্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা উল্লেখ করে সিনেটর কেনেডি বলেন, এ শিশু রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আপনাদের ওপরই। বাংলাদেশি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, যারা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতিতে বিশ্বাস করেন না বাংলাদেশের নজরে তাদের শিক্ষা দেবে।

সরকার ছিল না জনগণ ছিল : মার্কিন সরকার যদিও বাংলাদেশের সংগ্রামকে সমর্থন করেনি তথাপি মার্কিন জনগণ এদেশের সংগ্রামী মানুষের দোসর ছিল। মানুষের মহান মূল্যবোধের মর্যাদা দিয়েই তারা বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে সিনেটর কেনেডি ঘোষণা করেন, “আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য মার্কিন জনগণের শুভেচ্ছবাণী নিয়ে এসেছি।’ তিনি আরো বলেন যে, আমেরিকানরা পরম আগ্রহে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা দেখেছেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এ যুদ্ধে সবাই অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, আমরা সবাই বাঙালি’ আমরা সবাই আমেরিকান, আমরা সবাই মানুষ। আমরা মানুষ্যত্বে বিশ্বাস করি। সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা জয়বাংলা, জয় কেনেডি, কেনেডি তোমায় ভালোবাসি এসব স্লোগান করেন।

বিমানবন্দরে : সকালে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি বিমান বন্দরে পৌঁছালে আন্তরিক সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। বিমানবন্দরে বাংলার তরুণ সমাজ সিনেটর কেনেডিকে এক নজর দেখার জন্য এতো পাগলপারা হয়ে পড়ে যে, সরকারি নিয়ম শৃঙ্খলা পর্যন্ত বিকল হয়ে যায়। ছাত্রছাত্রীরা তাকে এক প্রকার ঘিরে রাখে। ফলে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এম আর সিদ্দিকী যথাসমেয় তাকে স্বাগত জানাতে পারেনি। বহু কষ্টে তরুণ তরুণীদের ভিড়ের মধ্যে থেকে কোনো রকম বের করে আনলে প্রথমে বাণিজ্যমন্ত্রী তাকে বাংলার মাটিতে সু-স্বাগতম জানান। এরপরপরই আওয়ামী লীগের পক্ষে জনাব আবদুর রাজ্জাক এবং ন্যাপ নেতা জনাব মহিউদ্দিন তাকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন। তারা কিছুক্ষণ অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত সিনেটর কেনেডিকে অভিনন্দন জানাতে পেরেছিলেন। বিমান বন্দরে সিনেটর কেনেডির জন্য একটি লালগালিচা বিছানো হয়েছিল। অনেক হতাশ তরুণ তরুণী মালা দিতে না পেরে পুষ্পবৃষ্টি বর্ষণ করেন। বলাবাহুল্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় একই দৃশ্যের অবতারণা হয়।

আজকের কর্মসূচি : আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তিনি সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশে থাকাকালে সিনেটর অত্যন্ত ব্যস্ত দিন কাটাবেন। উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর । সিনেটর কেনেডি এবারই প্রথম ঢাকায় এলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তিনি বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পাকিস্তানি প্রতিপক্ষ তা নাকচ করে দেন।

বাংলাদেশ টিকে থাকতে এসেছে- বঙ্গবন্ধু

ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ এখানে বলেন যে, বাংলাদেশ একটি বাস্তব সত্য এবং কোনো দেশ স্বীকৃতি দিক আর না দিক তা টিকে থাকার জন্য এসেছে। বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দানের প্রশ্নে সিনেটর কেনেডির সাথে তার কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব বঙ্গবন্ধু একথা বলেন, বাংলাদেশ একটি বাস্তব সত্য, তা টিকে থাকতে এসেছে। কে আমাদের স্বীকৃতি দিল না তাতে আমাদের পরোয়া নাই।

ভুট্টো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রতিরক্ষা চুক্তির ইচ্ছে জানিয়েছে

নিউইয়র্ক। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের সাথে যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অবসান ঘটিয়ে ছিল পাকিস্তান এক্ষণে আবার পুনরুজ্জীবনে আগ্রহী বলে ভুট্টো নিক্সন সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সব সংগত ব্যাপারেই আললোচনা করতে চেয়েছেন, যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এটা নিক্সন সরকারের জন্য ব্রিতকর না হয়। ভুট্টো এটার সত্যতাও স্বীকার করেছেন যে, চীন যাবার পূর্বে এবং আসার পরও পিকিং সরকারের নিকট একই ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তিতে মোটেই উৎসাহ দেন নাই। তারা সাধারণ স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষপাতি বলে ভুট্টোকে জানিয়ে দেন। ভুট্টো এ ব্যাপারে তার সর্ব শেষ চিন্তা ভাবনা রাওয়ালপিন্ডিতে নিউইয়র্ক টাইমস এর প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেন। এর সাক্ষাৎকারে বিবরণ উক্ত পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়। পিকিং-এ তার আলোচনা সম্পর্কে প্রথমবারের ন্যায় আলোকপাত করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তার সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিককে বলেন যে, পিকিং প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রস্তাবের উত্তরে বলে, দেখো আরেকটি কমিউনিস্ট দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমাদের প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে। পরিণতিতে তা আজ কি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। কাজেই পারস্পরিক স্বার্থই ভালো এবং তাতেই দৃঢ় মৈত্রী গড়ে উঠবে। এই সাক্ষাৎকারের ওপর মন্তব্য প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমস প্রতিনিধি মন্তব্য করেন যে, চীন ও পাকিস্তানের সাধারণ স্বার্থের দিক হতে অবশ্যই মিল রয়েছে, আর তা হচ্ছে ভারতের প্রতি শত্রুতা এবং রাশিয়া যাতে এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের ব্যাপারে একচেটিয়াভাবে সফল না হয় তার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের সাথে সাথে চীন ও পাকিস্তান উদ্বেগ বোধ করছে।

৮৪টি দেশের প্রতিনিধিদের প্রস্তাব গ্রহণ

ভার্সাই। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সহ ৮৪টি দেশের ১২শ প্রতিনিধি নিক্সন সরকারকে ইন্দোচীন থেকে সৈন্য অপসারণের জন্যে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। ইন্দোচীনে স্মরণকালের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সমাবেশে ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়ায় শান্তি প্রতিষ্টার জন্যে বিশ্বকে সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। এই সমাবেশে বিঘঘাষিত এক প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরোধী শক্তিগুলোকে আন্তর্জাতিক সমর্থন দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। ভার্সাই-এ তিন দিন ব্যাপি সমাবেশে গৃহীত আরেকটি পৃথক প্রস্তাবে ইন্দোচীন থেকে শীঘ্রই সকল সশস্ত্রবাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্যে মার্কিন সরকারের নিকট দাবি জানানো হয়েছে এবং এ ব্যাপারে সঠিক তারিখ দিতে বলা হয়েছে।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২