আর্থিক প্রণোদনার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে সরকার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ প্রণোদনা ঘোষণা করেন। পাঁচটি প্যাকেজে এ প্রণোদনা দেয়া হবে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের এ প্রণোদনাকে বিএনপি ঋণ প্যাকেজ বলে আখ্যায়িত করেছে।

করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সময় যত গড়াচ্ছে বিশ্বের অর্থনীতির ওপর তত চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশও এ চাপের সম্মুখীন হয়েছে। আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয় ইতোমধ্যে গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কমে গেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগেই দেশের অর্থনীতি নানামুখী চাপের মধ্যে পড়েছিল। খেলাপি ঋণ আর লুটপাটের কারণে আর্থিক খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ কাক্সিক্ষতভাবে হয়নি। কর্মসংস্থানও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে ছিল না। করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বহু মানুষ ইতোমধ্যে কাজ হারিয়েছেন। আগামীতে আরও অনেকে কাজ হারাবেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের প্রণোদনা দেয়া জরুরি ছিল।

আর্থিক প্রণোদনাকে আমরা সময়োপযোগী বলে মনে করি। এখন জরুরি হচ্ছে, এ প্রণোদনার যথাযথ ব্যবহার। প্রণোদনার টাকা নিয়ে যেন কোন অনিয়ম-দুর্নীতি না হয় সেটা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ঋণখেলাপিদের মতো অন্যায় সুবিধাভোগী গোষ্ঠী যেন কোন ফায়দা না লোটে সে সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত ঋণের অর্থ ছাড় করতে হবে। এক্ষেত্রেও কাজ করতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে।

শুধু আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে আসন্ন মন্দার মোকাবিলা করা কঠিন হবে। সরকারকে সামাজিক-নিরাপত্তার আওতা বাড়াতে হবে। দুর্দশাগ্রস্ত সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে। সরকারপ্রধান এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তৃণমূল পর্যায়ে অনেক মানুষ এখনও সরকারি সহায়তা পাচ্ছে না। প্রশাসনের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ও এক শ্রেণীর জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ দ্রুত সুরাহা করা দরকার।

মন্দা মোকাবিলার মূল হাতিয়ার হতে পারে কৃষি উৎপাদন। সরকার বিষয়টিতে জোর দিয়েছে। আমরা আশা করি, অতীতের মতো এবার কৃষকরা সফল হবেন। তবে কৃষকের সেই সাফল্যকে ধরে রাখতে হলে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিপণ্য নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন কারসাজি করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

বুধবার, ০৮ এপ্রিল ২০২০ , ২৫ চৈত্র ১৪২৬, ১৩ শাবান ১৪৪১

আর্থিক প্রণোদনার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে সরকার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ প্রণোদনা ঘোষণা করেন। পাঁচটি প্যাকেজে এ প্রণোদনা দেয়া হবে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের এ প্রণোদনাকে বিএনপি ঋণ প্যাকেজ বলে আখ্যায়িত করেছে।

করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সময় যত গড়াচ্ছে বিশ্বের অর্থনীতির ওপর তত চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশও এ চাপের সম্মুখীন হয়েছে। আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয় ইতোমধ্যে গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কমে গেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগেই দেশের অর্থনীতি নানামুখী চাপের মধ্যে পড়েছিল। খেলাপি ঋণ আর লুটপাটের কারণে আর্থিক খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ কাক্সিক্ষতভাবে হয়নি। কর্মসংস্থানও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে ছিল না। করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বহু মানুষ ইতোমধ্যে কাজ হারিয়েছেন। আগামীতে আরও অনেকে কাজ হারাবেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের প্রণোদনা দেয়া জরুরি ছিল।

আর্থিক প্রণোদনাকে আমরা সময়োপযোগী বলে মনে করি। এখন জরুরি হচ্ছে, এ প্রণোদনার যথাযথ ব্যবহার। প্রণোদনার টাকা নিয়ে যেন কোন অনিয়ম-দুর্নীতি না হয় সেটা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ঋণখেলাপিদের মতো অন্যায় সুবিধাভোগী গোষ্ঠী যেন কোন ফায়দা না লোটে সে সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত ঋণের অর্থ ছাড় করতে হবে। এক্ষেত্রেও কাজ করতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে।

শুধু আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে আসন্ন মন্দার মোকাবিলা করা কঠিন হবে। সরকারকে সামাজিক-নিরাপত্তার আওতা বাড়াতে হবে। দুর্দশাগ্রস্ত সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে। সরকারপ্রধান এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তৃণমূল পর্যায়ে অনেক মানুষ এখনও সরকারি সহায়তা পাচ্ছে না। প্রশাসনের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ও এক শ্রেণীর জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ দ্রুত সুরাহা করা দরকার।

মন্দা মোকাবিলার মূল হাতিয়ার হতে পারে কৃষি উৎপাদন। সরকার বিষয়টিতে জোর দিয়েছে। আমরা আশা করি, অতীতের মতো এবার কৃষকরা সফল হবেন। তবে কৃষকের সেই সাফল্যকে ধরে রাখতে হলে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিপণ্য নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন কারসাজি করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।