কৃষকের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা স্কিম গঠন

করোনাভাইরাসে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষকের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার ‘কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’ নামে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮ মাস (৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ) মেয়াদি এ ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৪ শতাংশ। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এর আগে গত রোববার ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যকালে করোনাভাইরাসে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষকের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরই কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন ও পরিচালনার নীতিমালা জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনসহ অর্থনৈতিক কর্মকা- সীমিত হয়ে পড়েছে। দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের কৃষি খাত। এই খাতে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশের সার্বিক কৃষি খাত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। সে জন্যই কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণে ইচ্ছুক তফসিলি ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণমূলক চুক্তি স্বাক্ষর করবে। চুক্তির মাধ্যমে এই স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণ পূর্বক মাসিক ভিত্তিতে পুনঃঅর্থায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ও সব ক্ষমতার ভিত্তিতে কৃষিঋণ বিভাগ কর্তৃক ব্যাংকসমূহের অনুকূলে তহবিল বরাদ্দ করা হবে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পর বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে পর্যায়ক্রমে তহবিলের সমপরিমাণ অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

শস্য ও ফসল খাতে চলমান ঋণপ্রবাহ পর্যাপ্ত থাকার দরুণ এ খাত অপেক্ষা কৃষির চলতি মূলধন ভিত্তিক খাতসমূহে অধিকতর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ খাতগুলোতে ঋণের প্রবাহ নিশ্চিত করা আবশ্যক। এর প্রেক্ষিতে চলতি মূলধন ভিত্তিক কৃষির অন্যান্য খাতে (হর্টিকালচার অর্থাৎ মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাত) পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশের সার্বিক কৃষি খাত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বিদ্যমান কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় বর্ণিত বিধিবিধানসমূহ অনুসরণপূর্বক ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের আলোকে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে বিবেচনা করবে এবং প্রতিটি ঋণের জন্য পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করবে।

ব্যাংকগুলো পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের তারিখ হতে অনধিক ১৮ মাসের (১২ মাস + গ্রেস পিরিয়ড ৬ মাস) মধ্যে আসল এবং সুদ (বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদ হারে) পরিশোধ করবে। আর ব্যাংকগুলোতে গ্রাহক পর্যায়েও ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ঋণ গ্রহণের তারিখ হতে ১৮ মাস (৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ)। এ স্কিমের আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদ হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। আর গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। এই সুদ হার চলমান গ্রাহক এবং নতুন গ্রাহক উভয়ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

শস্য ও ফসল খাত ছাড়া কৃষির অন্যান্য চলতি মূলধন নির্ভরশীল খাতসমূহ (হর্টিকালচার অর্থাৎ মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাত)। তবে, কোন একক খাতে ব্যাংকের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ঋণের ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। এছাড়া, যেসব উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কৃষকের কাছ থেকে উৎপাদিত কৃষি পণ্য ক্রয় করে সরাসরি বিক্রয় করে থাকে, তাদেরও এ স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য বিবেচনা করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। এই স্কিমের আওতায় বিতরণকৃত ঋণের অর্থের কোন অংশের সদ্ব্যবহার হয়নি জানতে পারলে, বাংলাদেশ ব্যাংক সমপরিমাণ অর্থের ওপর নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদসহ এককালীন জরিমানা করবে।

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল ২০২০ , ১ বৈশাখ ১৪২৭, ১৯ শাবান ১৪৪১

কৃষকের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা স্কিম গঠন

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনাভাইরাসে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষকের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার ‘কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’ নামে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮ মাস (৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ) মেয়াদি এ ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৪ শতাংশ। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এর আগে গত রোববার ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যকালে করোনাভাইরাসে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষকের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরই কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন ও পরিচালনার নীতিমালা জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনসহ অর্থনৈতিক কর্মকা- সীমিত হয়ে পড়েছে। দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের কৃষি খাত। এই খাতে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশের সার্বিক কৃষি খাত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। সে জন্যই কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণে ইচ্ছুক তফসিলি ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণমূলক চুক্তি স্বাক্ষর করবে। চুক্তির মাধ্যমে এই স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণ পূর্বক মাসিক ভিত্তিতে পুনঃঅর্থায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ও সব ক্ষমতার ভিত্তিতে কৃষিঋণ বিভাগ কর্তৃক ব্যাংকসমূহের অনুকূলে তহবিল বরাদ্দ করা হবে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পর বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে পর্যায়ক্রমে তহবিলের সমপরিমাণ অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

শস্য ও ফসল খাতে চলমান ঋণপ্রবাহ পর্যাপ্ত থাকার দরুণ এ খাত অপেক্ষা কৃষির চলতি মূলধন ভিত্তিক খাতসমূহে অধিকতর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ খাতগুলোতে ঋণের প্রবাহ নিশ্চিত করা আবশ্যক। এর প্রেক্ষিতে চলতি মূলধন ভিত্তিক কৃষির অন্যান্য খাতে (হর্টিকালচার অর্থাৎ মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাত) পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশের সার্বিক কৃষি খাত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বিদ্যমান কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় বর্ণিত বিধিবিধানসমূহ অনুসরণপূর্বক ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের আলোকে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে বিবেচনা করবে এবং প্রতিটি ঋণের জন্য পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করবে।

ব্যাংকগুলো পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের তারিখ হতে অনধিক ১৮ মাসের (১২ মাস + গ্রেস পিরিয়ড ৬ মাস) মধ্যে আসল এবং সুদ (বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদ হারে) পরিশোধ করবে। আর ব্যাংকগুলোতে গ্রাহক পর্যায়েও ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ঋণ গ্রহণের তারিখ হতে ১৮ মাস (৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ)। এ স্কিমের আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদ হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। আর গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। এই সুদ হার চলমান গ্রাহক এবং নতুন গ্রাহক উভয়ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

শস্য ও ফসল খাত ছাড়া কৃষির অন্যান্য চলতি মূলধন নির্ভরশীল খাতসমূহ (হর্টিকালচার অর্থাৎ মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাত)। তবে, কোন একক খাতে ব্যাংকের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ঋণের ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। এছাড়া, যেসব উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কৃষকের কাছ থেকে উৎপাদিত কৃষি পণ্য ক্রয় করে সরাসরি বিক্রয় করে থাকে, তাদেরও এ স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য বিবেচনা করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। এই স্কিমের আওতায় বিতরণকৃত ঋণের অর্থের কোন অংশের সদ্ব্যবহার হয়নি জানতে পারলে, বাংলাদেশ ব্যাংক সমপরিমাণ অর্থের ওপর নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদসহ এককালীন জরিমানা করবে।