অর্থ পাচার দেশের জন্য অশনিসংকেত

সম্প্রতি ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক (টিজেএন) নামের এক সংস্থা একটি সূচক প্রকাশ করেছে। সূচকের নাম হচ্ছে সিক্রেসি ইনডেক্স বা অর্থিক গোপনীয়তা সূচক। এই সূচকানুযায়ী, অবৈধভাবে অর্থ পাচারকারী ১৩৩ টি দেশ কে নিয়ে তৈরি করা তালিকায় বাংলাদেশ ৫৪ তম অবস্থানে রয়েছে।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি জানায় যে, শুধু ২০১৫ সালেই ৫০ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে অন্যদেশে পাচার হয়েছে। সংস্থাটি বৈশিকভাবে ১৪৮ টি দেশের অর্থ পাচারের তথ্য প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৯তম!

এ সংস্থাটি গত কয়েক বছর ধরেই অবৈধ অর্থ পাচারের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে অন্তর্জাতিক বানিজ্যের মাধ্যমে ৫৯০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজার দরে প্রায় ৪৯ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এছাড়াও ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছিলো ৯১১ কোটি ডলার; যা প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট ছিলো ২৫০, ৫০৬ কোটি টাকা। এভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ছত্রছায়ায় প্রতিনিয়ত দেশের টাকা অন্যদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থব্যবস্থা পরছে ঝুঁকির মধ্যে।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য এবং সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য বর্তমান সরকার অ্যাকশন প্লান তৈরি করলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন ফলাফল পরিলক্ষিত হয়নি। এবং অর্থ পাচার অধিকতর বৃদ্ধির পিছনে রাজনৈতিক ছত্রছায়াকে দায়ী মনে করেন অনেকেই।

কারণ অপরাধীরা বারংবার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। অপরাধীকে দৃষ্টান্ত মূলক কোন শাস্তি এখন পর্যন্ত বিচারবিভাগ দিতে পারেনি। এছাড়াও মানি লন্ডারিং ও টাকা পাচার প্রতিরোধে যে আইন রয়েছে তার বাস্তবায়ন সন্তোষজনক নয়।

একটি দেশ তার উন্নতির গতিপথ মসৃণ করে অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে। বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়া থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে নিজেদের যোগ্যতার বাহ্যিক স্বীকারোক্তিই মূলত একটি দেশের অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী হওয়া। কিন্তু এভাবে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হওয়া দেশের জন্য অশনিসংকেত। তাই দেশের উন্নতির গতপথকে চলমান রাখার জন্য এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে সমৃদ্ধ রাখতে এই সমস্যা সমাধান এবং ঘরের শত্রুদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখন সময়ের দাবি।

ফয়সাল মাহমুদ আল-মারজান

শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০ , ৫ বৈশাখ ১৪২৭, ২৩ শাবান ১৪৪১

অর্থ পাচার দেশের জন্য অশনিসংকেত

সম্প্রতি ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক (টিজেএন) নামের এক সংস্থা একটি সূচক প্রকাশ করেছে। সূচকের নাম হচ্ছে সিক্রেসি ইনডেক্স বা অর্থিক গোপনীয়তা সূচক। এই সূচকানুযায়ী, অবৈধভাবে অর্থ পাচারকারী ১৩৩ টি দেশ কে নিয়ে তৈরি করা তালিকায় বাংলাদেশ ৫৪ তম অবস্থানে রয়েছে।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি জানায় যে, শুধু ২০১৫ সালেই ৫০ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে অন্যদেশে পাচার হয়েছে। সংস্থাটি বৈশিকভাবে ১৪৮ টি দেশের অর্থ পাচারের তথ্য প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৯তম!

এ সংস্থাটি গত কয়েক বছর ধরেই অবৈধ অর্থ পাচারের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে অন্তর্জাতিক বানিজ্যের মাধ্যমে ৫৯০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজার দরে প্রায় ৪৯ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এছাড়াও ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছিলো ৯১১ কোটি ডলার; যা প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট ছিলো ২৫০, ৫০৬ কোটি টাকা। এভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ছত্রছায়ায় প্রতিনিয়ত দেশের টাকা অন্যদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থব্যবস্থা পরছে ঝুঁকির মধ্যে।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য এবং সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য বর্তমান সরকার অ্যাকশন প্লান তৈরি করলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন ফলাফল পরিলক্ষিত হয়নি। এবং অর্থ পাচার অধিকতর বৃদ্ধির পিছনে রাজনৈতিক ছত্রছায়াকে দায়ী মনে করেন অনেকেই।

কারণ অপরাধীরা বারংবার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। অপরাধীকে দৃষ্টান্ত মূলক কোন শাস্তি এখন পর্যন্ত বিচারবিভাগ দিতে পারেনি। এছাড়াও মানি লন্ডারিং ও টাকা পাচার প্রতিরোধে যে আইন রয়েছে তার বাস্তবায়ন সন্তোষজনক নয়।

একটি দেশ তার উন্নতির গতিপথ মসৃণ করে অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে। বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়া থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে নিজেদের যোগ্যতার বাহ্যিক স্বীকারোক্তিই মূলত একটি দেশের অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী হওয়া। কিন্তু এভাবে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হওয়া দেশের জন্য অশনিসংকেত। তাই দেশের উন্নতির গতপথকে চলমান রাখার জন্য এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে সমৃদ্ধ রাখতে এই সমস্যা সমাধান এবং ঘরের শত্রুদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখন সময়ের দাবি।

ফয়সাল মাহমুদ আল-মারজান