শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব

করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগামী পাঁচ বছরের জন্য কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের দাবি জানিয়েছে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। নতুন অর্থবছরের ২০২০-২১ জাতীয় বাজেটে এ সুযোগ দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী বরাবর ১৬ দফা সম্বলিত প্রস্তাব পাঠিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনের সভাপতি এ কে এম মিজান-উর রশিদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম শাহাদাত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি গত ১৮ মে অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে যে মহা ধস শুরু হয়েছিল তা আজও অব্যাহত রয়েছে। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বহু বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করেছেন, অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যারা বেঁচে আছেন তারাও অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিনিয়োগকারীদের ১৬ দাবির মধ্যে রয়েছে, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য ন্যূনতম আগামী পাঁচ বছরের জন্য আসন্ন জাতীয় বাজেটে নিঃস্বার্থভাবে কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া। বিনোয়গকারীদের আর্থিক ক্ষতি পূরণের জন্য মার্জিন হিসাবের সুদ চলতি বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ করতে হবে। ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত মার্জিন হিসাবের সুদ সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা। ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সব প্রকার লভ্যাংশ আয়ের ওপর সব ধরনের ভ্যাট, ট্যাক্স মওকুফ করা। অতিদ্রুত বাইব্যাক কোম্পানি আইন পাস ও বাস্তবায়ন করা। সিসি ধারা কার্যকরের মাধ্যমে প্রত্যেক কোম্পানিকে ন্যূনতম ৩০ শতংশ এবং প্রত্যেক পরিচালকদের ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা। তারল্য সংকট দূর করার জন্য প্রচলিত মার্জিন লোন প্রদান সুবিধা আগামী তিন বছরের জন্য ন্যূনতম ১:১ করা। ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, মিউচুয়াল ফান্ডকে নিজ উদ্যোগে এফডিআর, এসটিআর, এলটিআর বা প্রচলিত ডিপোজিট সংগ্রহের অনুমতি দেয়া। রাজধানীসহ দেশব্যাপী ব্রোকারেজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শাখা খোলার অনুমতি দেয়া। বাজারের পরিধি আরও অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি ও শেয়ারবাজারের সেবা জনগণের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য দ্রুত সময়ে এবং নামমাত্র মূল্যে ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেক বিক্রয়র সিদ্ধান্ত দেয়া। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রচলিত ট্যাক্স ন্যুনতম আগামী তিন বছরের জন্য বর্তমান ট্যাক্সরেট থেকে ৫ শতাংশ কমানো। উদ্ভূত পরিস্থতিতে ব্যবসা মন্দার জন্য তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিকে তালিকাচূতি করা যাবে না। ওটিসি মার্কেটের সব কোম্পানিকে পর্যায়ক্রমে বাজারে পুনরায় তালিকাভুক্ত করতে হবে। যেসব কোম্পানি দুর্নীতি ও অসৎ উপায়ের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করেছে, তাদের কঠোর দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে। আসন্ন জাতীয় বাজেটে শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সরকারিভাবে শেয়ার ক্রয়ের জন্য ন্যূনতম ১০ হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা দিতে হবে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের শর্তে ব্যক্তিগত আয়কর মুক্ত সীমা ন্যূনতম ১০ লাখ টাকা করা। এসএমই শ্রেণিভুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আয়কর মুক্ত সীমা ৪০ লাখ টাকা করা। সরকার ঘোষিত প্রত্যেক ব্যাংকে শেয়ারবাজারে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধি করে ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকা করা। শেয়ারবাজারের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে আরও অধিক হারে ভালো করপোরেট, দেশিয় ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্জনের জন্য শেয়ারবাজারে আরও অধিক হারে বন্ড ইস্যু, মিউচুয়াল ফান্ড ইস্যু, পেনশন ফান্ড বিনিয়োগ উৎসাহিত করা।

বুধবার, ২০ মে ২০২০ , ৬ জৈষ্ঠ্য ১৪২৭, ২৬ রমাজান ১৪৪১

শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগামী পাঁচ বছরের জন্য কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের দাবি জানিয়েছে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। নতুন অর্থবছরের ২০২০-২১ জাতীয় বাজেটে এ সুযোগ দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী বরাবর ১৬ দফা সম্বলিত প্রস্তাব পাঠিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনের সভাপতি এ কে এম মিজান-উর রশিদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম শাহাদাত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি গত ১৮ মে অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে যে মহা ধস শুরু হয়েছিল তা আজও অব্যাহত রয়েছে। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বহু বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করেছেন, অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যারা বেঁচে আছেন তারাও অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিনিয়োগকারীদের ১৬ দাবির মধ্যে রয়েছে, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য ন্যূনতম আগামী পাঁচ বছরের জন্য আসন্ন জাতীয় বাজেটে নিঃস্বার্থভাবে কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া। বিনোয়গকারীদের আর্থিক ক্ষতি পূরণের জন্য মার্জিন হিসাবের সুদ চলতি বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ করতে হবে। ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত মার্জিন হিসাবের সুদ সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা। ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সব প্রকার লভ্যাংশ আয়ের ওপর সব ধরনের ভ্যাট, ট্যাক্স মওকুফ করা। অতিদ্রুত বাইব্যাক কোম্পানি আইন পাস ও বাস্তবায়ন করা। সিসি ধারা কার্যকরের মাধ্যমে প্রত্যেক কোম্পানিকে ন্যূনতম ৩০ শতংশ এবং প্রত্যেক পরিচালকদের ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা। তারল্য সংকট দূর করার জন্য প্রচলিত মার্জিন লোন প্রদান সুবিধা আগামী তিন বছরের জন্য ন্যূনতম ১:১ করা। ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, মিউচুয়াল ফান্ডকে নিজ উদ্যোগে এফডিআর, এসটিআর, এলটিআর বা প্রচলিত ডিপোজিট সংগ্রহের অনুমতি দেয়া। রাজধানীসহ দেশব্যাপী ব্রোকারেজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শাখা খোলার অনুমতি দেয়া। বাজারের পরিধি আরও অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি ও শেয়ারবাজারের সেবা জনগণের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য দ্রুত সময়ে এবং নামমাত্র মূল্যে ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেক বিক্রয়র সিদ্ধান্ত দেয়া। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রচলিত ট্যাক্স ন্যুনতম আগামী তিন বছরের জন্য বর্তমান ট্যাক্সরেট থেকে ৫ শতাংশ কমানো। উদ্ভূত পরিস্থতিতে ব্যবসা মন্দার জন্য তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিকে তালিকাচূতি করা যাবে না। ওটিসি মার্কেটের সব কোম্পানিকে পর্যায়ক্রমে বাজারে পুনরায় তালিকাভুক্ত করতে হবে। যেসব কোম্পানি দুর্নীতি ও অসৎ উপায়ের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করেছে, তাদের কঠোর দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে। আসন্ন জাতীয় বাজেটে শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সরকারিভাবে শেয়ার ক্রয়ের জন্য ন্যূনতম ১০ হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা দিতে হবে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের শর্তে ব্যক্তিগত আয়কর মুক্ত সীমা ন্যূনতম ১০ লাখ টাকা করা। এসএমই শ্রেণিভুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আয়কর মুক্ত সীমা ৪০ লাখ টাকা করা। সরকার ঘোষিত প্রত্যেক ব্যাংকে শেয়ারবাজারে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধি করে ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকা করা। শেয়ারবাজারের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে আরও অধিক হারে ভালো করপোরেট, দেশিয় ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্জনের জন্য শেয়ারবাজারে আরও অধিক হারে বন্ড ইস্যু, মিউচুয়াল ফান্ড ইস্যু, পেনশন ফান্ড বিনিয়োগ উৎসাহিত করা।