ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের মুখে চিলমারী আশ্রয়ণ প্রকল্প

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে সুবিধাভোগীদের কাছে হস্থান্তর না হতেই ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে পড়েছে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২। উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের খাউরিয়ারচর দুশো বিঘা এলাকার প্রকল্পটিতে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে আশ্রয়কেন্দ্রটিতে যারা দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয় নিয়ে আছেন তারা নদী ভাঙনের পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা প্রশাসন নির্বাক। আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যারাক দখলকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় গৃহহীনদের আশ্রয় দেয়ার লক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে নির্বাচিত ৮ একর জমির উপরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫১৯.৭৪২ টন গম বরাদ্দ দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ করিয়ে নেয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২ কোটি ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ৩৯০ টাকা ব্যয়ে ৫টি পরিবারের জন্য একটি ব্যারাক হিসাবে ৩০টি ব্যারাক নির্মাণের কাজ শুরু করে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শেষ করেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী আশ্রয়ণ কেন্দ্রটিকে স্থানীয় প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করলেও অদ্যবধি অজানা কারণে ব্যারাকের ঘরগুলো গৃহহীন সুবিধাভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়নি। এরই মাঝে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর দু’সপ্তাহের টানা বর্ষণে হঠাৎ করেই ব্রক্ষপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় নদী ভাঙন। সেই সঙ্গে ভাঙতে শুরু করে আশ্রয়ণ প্রকল্পটিও। ৩০টি ব্যারাকের মধ্যে গত বন্যায় ৫টি ব্যারাক নদীতে বিলিন হয়েছে। এবারে ৪টি ব্যারাকের জায়গা ভেঙে গেছে। আরও ৩টি ব্যারাক ভাঙনের মুখে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে গেলে চোখে পড়ে যে যার ইচ্ছামত ব্যারাকগুলির ঘরের টিন, কাঠ, ইট ও দরজা-জানালা খুলে নিয়ে যাচ্ছে। ৩০টি ব্যারাকের জন্য স্থাপন করা ৩০টি টিউবওয়েল অনেক আগেই খুলে ফেলা হয়েছে।

এসময় একটি ব্যারাকে আশ্রয় নেয়া ইমান আলী (৭০) বলেন, আমি নদী ভাঙনের কথা চেয়ারম্যান ও ইউএনও সাহেবকে জানালে তারা ঘর ভাঙতে নিষেধ করেছেন। সে কথা জানানোর পরও স্থানীয় এক মেম্বারের লোকজন তিনটি ব্যারাকের ঘর জোড় পূর্বক ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মো. আবু হানিফা আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যারাক দখল নিয়ে সৃষ্ট বিবাদের কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মানের দীর্ঘ ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও সুবিধাভোগীদের মাঝে বরাদ্দ না দেয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.ডব্লিউ.এম রায়হান শাহ্ জানান, আশ্রয়ন প্রকল্পের কোন ব্যারাকে কে থাকবে সে সম্পর্কিত সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা প্রস্ততসহ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। ঠিক সেই মহূর্তেই নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছরেও নদী ভাঙনে ৫টি ঘর বিলীন গেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি।

শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ , ৩০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ২০ শাওয়াল ১৪৪১

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের মুখে চিলমারী আশ্রয়ণ প্রকল্প

এস, এম নুআস, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)

image

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) : অনুমতি ছাড়াই ভাঙা হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর -সংবাদ

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে সুবিধাভোগীদের কাছে হস্থান্তর না হতেই ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে পড়েছে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২। উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের খাউরিয়ারচর দুশো বিঘা এলাকার প্রকল্পটিতে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে আশ্রয়কেন্দ্রটিতে যারা দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয় নিয়ে আছেন তারা নদী ভাঙনের পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা প্রশাসন নির্বাক। আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যারাক দখলকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় গৃহহীনদের আশ্রয় দেয়ার লক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে নির্বাচিত ৮ একর জমির উপরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫১৯.৭৪২ টন গম বরাদ্দ দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ করিয়ে নেয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২ কোটি ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ৩৯০ টাকা ব্যয়ে ৫টি পরিবারের জন্য একটি ব্যারাক হিসাবে ৩০টি ব্যারাক নির্মাণের কাজ শুরু করে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শেষ করেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী আশ্রয়ণ কেন্দ্রটিকে স্থানীয় প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করলেও অদ্যবধি অজানা কারণে ব্যারাকের ঘরগুলো গৃহহীন সুবিধাভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়নি। এরই মাঝে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর দু’সপ্তাহের টানা বর্ষণে হঠাৎ করেই ব্রক্ষপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় নদী ভাঙন। সেই সঙ্গে ভাঙতে শুরু করে আশ্রয়ণ প্রকল্পটিও। ৩০টি ব্যারাকের মধ্যে গত বন্যায় ৫টি ব্যারাক নদীতে বিলিন হয়েছে। এবারে ৪টি ব্যারাকের জায়গা ভেঙে গেছে। আরও ৩টি ব্যারাক ভাঙনের মুখে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে গেলে চোখে পড়ে যে যার ইচ্ছামত ব্যারাকগুলির ঘরের টিন, কাঠ, ইট ও দরজা-জানালা খুলে নিয়ে যাচ্ছে। ৩০টি ব্যারাকের জন্য স্থাপন করা ৩০টি টিউবওয়েল অনেক আগেই খুলে ফেলা হয়েছে।

এসময় একটি ব্যারাকে আশ্রয় নেয়া ইমান আলী (৭০) বলেন, আমি নদী ভাঙনের কথা চেয়ারম্যান ও ইউএনও সাহেবকে জানালে তারা ঘর ভাঙতে নিষেধ করেছেন। সে কথা জানানোর পরও স্থানীয় এক মেম্বারের লোকজন তিনটি ব্যারাকের ঘর জোড় পূর্বক ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মো. আবু হানিফা আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যারাক দখল নিয়ে সৃষ্ট বিবাদের কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মানের দীর্ঘ ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও সুবিধাভোগীদের মাঝে বরাদ্দ না দেয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.ডব্লিউ.এম রায়হান শাহ্ জানান, আশ্রয়ন প্রকল্পের কোন ব্যারাকে কে থাকবে সে সম্পর্কিত সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা প্রস্ততসহ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। ঠিক সেই মহূর্তেই নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছরেও নদী ভাঙনে ৫টি ঘর বিলীন গেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি।