ভিন্ন বাস্তবতায়, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রণীত এবারের (২০২০-২১ অর্থবছর) বাজেট ‘করোনার কবল থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের এক ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট’। এ বাজেট করোনা মহামারীর বিদ্যমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেয়ার বাস্তবসম্মত দলিল। জীবন-জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সময়োচিত সাহসী চিন্তার ফসল। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে আনার পরিকল্পনাও বাজেট প্রস্তাবনায় রাখা হয়েছে। গতকাল নিজের সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের পক্ষে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন।

ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থাপিত বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা, মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সব প্রতিকূলতাকে জয় করে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা মহামারীর কারণে কয়েক মাস ধরে বিপর্যয়ের পরও বাজেটের আকার কমেনি, বরং বেড়েছে।

বিএনপির পক্ষে বাজেটের ব্যাপকতা ও সম্ভাবনা অনুধাবন সম্ভব নয় : বিএনপির পক্ষে বাজেটের ব্যাপকতা ও সম্ভাবনা অনুধাবন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা গত ১১টি বাজেট ঘোষণার পর নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা মন্তব্য করেছেন। বরাবরই বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়ন হবে না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে মাত্র ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিল। আর এবার শুধু স্বাস্থ্য খাতেই ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আরও বলেন, করোনা সংকটের মধ্যেও সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের গতিশীলতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এটি একটি জনবান্ধব ও জীবনঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। এডিবির আশঙ্কা, করোনা পরিস্থিতির কারণে ১৪ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারাতে পারে। ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাজেটে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

বাজেটে শিক্ষায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হলেও স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা, ক্ষতিপূরণ ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ২৩ শতাংশ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের চেয়ে ৫ গুণ বেশি এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। মন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। অনেকে এটাকে উচ্চাভিলাসী মনে করতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি, এ প্রত্যাশা পূরণে যত ঝুঁকি নিতে হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা নেবেন। অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে আগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় কাক্সিক্ষত ভীত রচনাই এবারের বাজেটের লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যত পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।