চিকিৎসা পাচ্ছে না, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে রোগীরা

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে সেবার মান নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছে নগরবাসী। কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি না করায় চিকিৎসা না পেয়ে একের পর মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এসব হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি না করায় সাধারণ মানুষের অভিযোগের কোন কমতি নেই।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরের পার্কভিউ, ম্যাক্স, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে করোনা সন্দেহে ভর্তি নেয়নি নগর বিএনপির সহ-সভাপতি লায়ন মো. কামাল উদ্দিনকে। মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি নিলেও অক্সিজেন পাননি তিনি। পরে ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে মারা যান কামাল উদ্দিন। গতকাল ভোর রাতে তিনি মারা যান।

নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, তার করোনার উপসর্গ ছিল। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় মা ও শিশু হাসপাতালে। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা বসেছিলেন তিনি, এরপরও অক্সিজেন মেলেনি। পার্কভিউ, ম্যাক্স ও মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কোথাও করোনা সন্দেহে ভর্তি নেয়নি। ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে যখন আনা হয় তখন তার অক্সিজেন নেমে গিয়েছিল ৭৮-এ। তখন তার আইসিইউ সাপোর্ট লাগতো। কিন্তু ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে তিনটি আইসিইউ শয্যার মধ্যে তিনটি রোগী ভর্তি ছিল।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সব হাসপাতালে আইসিইউর খোঁজ করা হলেও কোথাও আইসিইউ মেলেনি। মূলত আইসিইউর অভাবে তিনি মারা যান।

অন্যদিকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন ছেলে অভিজিৎ। করোনা ভেবে কোন হাসপাতালেই ভর্তি করানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি।

দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকায় সপরিবারে থাকতেন ৬২ বছর বয়সী প্রীতি বিকাশ দত্ত। গত বুধবার রাত সাড়ে আটটায় হঠাৎ তার বুকে ব্যথা উঠলে ছেলে অভিজিৎ দত্ত বাবাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে বের হন। বন্ধুর বাবার অসুস্থতার খবর শুনে মানবাধিকার কমিশনের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা করেন অভিজিতের বন্ধু অজয়। চট্টগ্রামের মা-মনি হাসপাতাল, ম্যাক্স, ন্যাশনাল হাসপাতাল ঘুরেও মিলেনি চিকিৎসা। পরে বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

অভিজিতের বন্ধু বিজয় বলেন, বন্ধুর বাবা অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে আমি একটি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করে দিই। তারা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তিনটি হাসপাতালে ঘুরেছেন। কোন হাসপাতালে তার বাবাকে ভর্তি করানো হয়নি। পরে চমেক হাসপাতালের নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, করোনার অজুহাতে চিকিৎসা দেয়নি হাসপাতালগুলো। কিন্তু ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। হাসপাতালগুলোর এমন অপারগতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবাকে।

এছাড়া আইসিইউ না পেয়ে এক অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। পাঁচ দিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। ফাতেমা আক্তার মুক্তা (৩০) নামের ওই নারী চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকার বাসিন্দা। দুই সন্তানের জননী ফাতেমাকে গত মঙ্গলবার প্রথমে চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে চিকিৎসা না পাওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট পেলেও আইসিইউ না পাওয়া মৃত্যু হয় তার। মৃতের স্বামী তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মা ও শিশু হাসপাতালে গেলাম। বিভিন্ন টেস্ট করিয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত ছিলাম। আমার স্ত্রীকে আইসিইউ সুবিধা দিতে চিকিৎসকের পায়ে ধরেছি। বলেছি এক ঘণ্টার জন্য হলেও আইসিইউ দেন। যদি অবস্থা স্থিতিশীল হয় তখন ছেড়ে দেব। কিন্তু কারো মন গলাতে পারলাম না। পরে চমেক হাসপাতালে গেলাম।

জরুরি বিভাগ থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে করোনা ইউনিটে ভর্তি করানো হলো। শেষ পর্যন্ত অক্সিজেন দেয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা আইসিইউ লাগবে বলে জানান। তবে চমেকেও আইসিইউ বেড খালি নেই জানিয়ে দিলেন। রাত পৌনে চারটার দিকে আমার স্ত্রী মারা গেছেন। কী পরিমাণ কষ্ট গেছে তা বোঝানো সম্ভব নয়।

আরও খবর
মানুষ বাঁচাতে হবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই বাজেটের লক্ষ্য
কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব প্রত্যাহার চায় টিআইবি
জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়ন করেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধার সম্ভব উন্নয়ন অন্বেষণ
বাজেট গতানুগতিক, করোনা সংকটের প্রতিফলন নেই সিপিডি
সংক্রমণ ৮০ হাজার ছাড়ালো মৃত্যু একদিনে ৪৬
করোনার কবল থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট আ’লীগ
মোবাইলে বাড়তি খরচের সক্ষমতা মানুষের আছে এনবিআর চেয়ারম্যান
অন্তঃসারশূন্য, কথার ফুলঝুড়ি ছাড়া এই বাজেটে কিছুই নেই
ডাক্তাররা আলাদা হাসপাতাল চান
জোনভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর হচ্ছে সরকার
পুলিশ আক্রান্ত ৭ হাজারের বেশি মৃত্যু ২৩
বরিশালে করোনার নমুনা সংগ্রহ বন্ধ

শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ , ৩০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ২০ শাওয়াল ১৪৪১

চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে

চিকিৎসা পাচ্ছে না, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে রোগীরা

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে সেবার মান নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছে নগরবাসী। কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি না করায় চিকিৎসা না পেয়ে একের পর মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এসব হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি না করায় সাধারণ মানুষের অভিযোগের কোন কমতি নেই।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরের পার্কভিউ, ম্যাক্স, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে করোনা সন্দেহে ভর্তি নেয়নি নগর বিএনপির সহ-সভাপতি লায়ন মো. কামাল উদ্দিনকে। মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি নিলেও অক্সিজেন পাননি তিনি। পরে ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে মারা যান কামাল উদ্দিন। গতকাল ভোর রাতে তিনি মারা যান।

নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, তার করোনার উপসর্গ ছিল। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় মা ও শিশু হাসপাতালে। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা বসেছিলেন তিনি, এরপরও অক্সিজেন মেলেনি। পার্কভিউ, ম্যাক্স ও মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কোথাও করোনা সন্দেহে ভর্তি নেয়নি। ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে যখন আনা হয় তখন তার অক্সিজেন নেমে গিয়েছিল ৭৮-এ। তখন তার আইসিইউ সাপোর্ট লাগতো। কিন্তু ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে তিনটি আইসিইউ শয্যার মধ্যে তিনটি রোগী ভর্তি ছিল।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সব হাসপাতালে আইসিইউর খোঁজ করা হলেও কোথাও আইসিইউ মেলেনি। মূলত আইসিইউর অভাবে তিনি মারা যান।

অন্যদিকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন ছেলে অভিজিৎ। করোনা ভেবে কোন হাসপাতালেই ভর্তি করানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি।

দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকায় সপরিবারে থাকতেন ৬২ বছর বয়সী প্রীতি বিকাশ দত্ত। গত বুধবার রাত সাড়ে আটটায় হঠাৎ তার বুকে ব্যথা উঠলে ছেলে অভিজিৎ দত্ত বাবাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে বের হন। বন্ধুর বাবার অসুস্থতার খবর শুনে মানবাধিকার কমিশনের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা করেন অভিজিতের বন্ধু অজয়। চট্টগ্রামের মা-মনি হাসপাতাল, ম্যাক্স, ন্যাশনাল হাসপাতাল ঘুরেও মিলেনি চিকিৎসা। পরে বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

অভিজিতের বন্ধু বিজয় বলেন, বন্ধুর বাবা অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে আমি একটি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করে দিই। তারা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তিনটি হাসপাতালে ঘুরেছেন। কোন হাসপাতালে তার বাবাকে ভর্তি করানো হয়নি। পরে চমেক হাসপাতালের নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, করোনার অজুহাতে চিকিৎসা দেয়নি হাসপাতালগুলো। কিন্তু ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। হাসপাতালগুলোর এমন অপারগতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবাকে।

এছাড়া আইসিইউ না পেয়ে এক অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। পাঁচ দিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। ফাতেমা আক্তার মুক্তা (৩০) নামের ওই নারী চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকার বাসিন্দা। দুই সন্তানের জননী ফাতেমাকে গত মঙ্গলবার প্রথমে চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে চিকিৎসা না পাওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট পেলেও আইসিইউ না পাওয়া মৃত্যু হয় তার। মৃতের স্বামী তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মা ও শিশু হাসপাতালে গেলাম। বিভিন্ন টেস্ট করিয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত ছিলাম। আমার স্ত্রীকে আইসিইউ সুবিধা দিতে চিকিৎসকের পায়ে ধরেছি। বলেছি এক ঘণ্টার জন্য হলেও আইসিইউ দেন। যদি অবস্থা স্থিতিশীল হয় তখন ছেড়ে দেব। কিন্তু কারো মন গলাতে পারলাম না। পরে চমেক হাসপাতালে গেলাম।

জরুরি বিভাগ থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে করোনা ইউনিটে ভর্তি করানো হলো। শেষ পর্যন্ত অক্সিজেন দেয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা আইসিইউ লাগবে বলে জানান। তবে চমেকেও আইসিইউ বেড খালি নেই জানিয়ে দিলেন। রাত পৌনে চারটার দিকে আমার স্ত্রী মারা গেছেন। কী পরিমাণ কষ্ট গেছে তা বোঝানো সম্ভব নয়।