বরিশালে করোনার নমুনা সংগ্রহ বন্ধ

ভোগান্তিতে রোগীরা

বরিশালে টেকনোলজিস্ট সংকটের কারণে করোনা উপসর্গ থাকা রোগীদের সেবা প্রদান করা বিলম্বিত হচ্ছে। কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম। ফলে বিপাকে পরেছেন বরিশাল নগরীর বাসিন্দারা। সিটি করপোরেশেনের স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রাখার পর থেকে রোগীরা নগরীর ভেতরে থাকা শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল ?ও জেনারেল (সদর) হাসপাতালের শরণাপন্ন হচ্ছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে শেবাচিম হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা রোগীদের পরামর্শ দিলেও বিভিন্ন অজুহাতে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা নমুনা প্রদানের জন্য জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আর এর ফলে এসব ব্যক্তিদের দ্বারা করোনার প্রসার ঘটছে।

বরিশাল নগরীর মুন্সি গ্যারেজ এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, তিনি কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। সুস্থ না হওয়ায় তিনি বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং সেখান থেকে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। এরপর একই হাসপাতালে নমুনা দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, সেখানে ওইদিনের নির্ধারিত পরিমানে নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে গেছে। তাই তাকে সদর হাসপাতালে যেয়ে নমুনা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

গত কয়েকদিন ধরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট নিয়ে রোগীরা নমুনা দেয়ার জন্য জেনারেল হাসপাতালে আসছেন বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট মো. নওয়াব। তিনি জানান, মাত্র ১ জন টেকনোলজিস্টের পক্ষে হাসপাতালের প্যাথলজির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি একই সঙ্গে অনেক সম্ভাব্য করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করাটা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ঢাকায় অনেকগুলো স্থানে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা কয়েছে। তাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধুমাত্র ভর্তি রোগী এবং ওই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করছে। কিন্তু বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় সম্ভাব্য করোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য একমাত্র বরিশাল মেডিকেল কলেজে একটিমাত্র যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। তাই বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীসহ বিভিন্নস্থানে সংগৃহীত নমুনা এখানেই পরীক্ষা করতে হয়। বরিশালের আপামর জনতার কথা চিন্তা করে শেবাচিমে বাহিরের রোগীদেরও করোনা পরীক্ষা করা হয়। আর তা করতে গিয়ে এই হাসপাতালে প্রতিনিয়ত সক্ষমতার দ্বিগুণ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। মঙ্গলবারও ৮৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন ও পুলিশ হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহে দায়িত্বরতরা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরই এই হাসপাতালের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন সক্ষমতার অধিকের অধিক নমুনা সংগ্রহ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কিছু লোককে জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। পুরাতন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এ হাসপাতালের ৭ জন টেকনোলজিস্টের স্থলে রয়েছে মাত্র ৫ জন। যার মধ্যে শুরু থেকে মাত্র একজনকে দিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজটি করানো হচ্ছে। এছাড়া দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ৪ জন স্বেচ্ছাসেবক নেয়া হয়েছে নমুনা সংগ্রহের কাজে। যাদের যাবতীয় ব্যয় শেবাচিম হাসপাতালকে বহন করতে হচ্ছে। একজন নমুনা সংগ্রহকারীকে দিয়ে তিন শিফটে কাজ করানো সম্ভব নয় জানিয়ে পরিচালক বলেন, আর এই মুহূর্তে প্রধান নমুনা সংগ্রহকারী বিভূতি ভূষণ হালদার একটানা কাজ করতে যেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে এ হাসপাতালের অবস্থা যে কি হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এদিকে সিটি করপোরেশনের ডা. শুভ্র খন্দকার বলেন, মেয়রের নির্দেশে শুরু থেকেই নগর স্বাস্থ্য বিভাগ সরাসরি ছাড়াও অনলাইন ও মোবাইলে করোনা উপসর্গ থাকা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে যারা নগরের মধ্যে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের আইসোলেটে করা, নমুনা সংগ্রহ করা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি আমাদের ৩ জন টেকনোলজিস্টের করোনা পজেটিভ হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। তারা সুস্থ হলে আবারও নমুনা সংগ্রহ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের কোন নিজস্ব টেকনোলজিস্ট নেই। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে ৪ জন টেকনোলজিস্টকে বাইরে থেকে এনে সিটি করপোরেশন নিজস্ব উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করে। তাদের মাধ্যমে এযাবৎকালে প্রায় সাড়ে ৭ শত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। চার জনের মধ্যে বর্তমানে একজন শারীরিকভাবে অসুস্থ ও অপর তিনজনের করোনা পজেটিভ হওয়ায় সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি সিভিল সার্জন ও শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহ স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয়েছে।

বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, মূলত গোটা জেলায় টেকনোলজিস্টের সংকট রয়েছে। বরিশালের ১০টি উপজেলার মধ্যে জেনারেল হাসপাতালসহ ৭টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ জন টেকনোলজিস্ট রয়েছে। হিজলা, মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জ এ তিন উপজেলায় কোন টেকনোলজিস্ট নেই। তবে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করার জন্য ওই তিন উপজেলায় অন্য স্টাফদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিকল্পভাবে নমুনা পরীক্ষা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর যে উপজেলাতে ১ জন করে টেকনোলজিস্ট রয়েছে, সেখানেও অন্য স্টাফদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে কেউ অসুস্থ হলে বিকল্প লোক দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা যায়। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রশিক্ষিতরা অসুস্থ হয়ে পরেছেন। আর তাদের প্রশিক্ষিত নতুন লোকও তৈরি করা নেই। তাই তারা যখন নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রেখেছে তখন রোগীরা শেবাচিম ও জেনারেল হাসপাতালের শরণাপন্ন হচ্ছে। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বরিশালের প্রেক্ষাপটে সব মানুষই শেবাচিমের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এ কারণে সেখানে রোগীদের চাপও বেশি থাকে। তিনি বলেন, শেবাচিম থেকে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব রোগীদের নমুনা দেয়ার জন্য জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। তবে একজন টেকনোলজিস্টের পক্ষে এই চাপ নেয়াও সম্ভব না।

অবশ্য বরিশালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে কতটা ভঙ্গুর তা এবার প্রমাণিত হয়েছে। এবার রাজনৈতিক নেতাসহ ধর্নাঢ্য ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না পারায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাতে দেশের প্রকৃত চিত্রটা প্রকাশিত হয়েছে। তাদের মতে শেবাচিম হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও জেলায় মিলিয়ে যেহেতু ২৪ জনের মতো টেকনোলজিস্ট রয়েছে সেখানে পিসিআর ল্যাব ও প্যাথলজি বিভাগের পর নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে এতদিনে অ্যাডহক ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ দেয়া উচিত ছিল। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, নতুন একজন টেকনোলজিস্ট বরিশাল জেলা সিভিল সার্জনকে দেয়া হয়েছে। তিনি তার সুবিধামতো জায়গায় তাকে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।

আরও খবর
মানুষ বাঁচাতে হবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই বাজেটের লক্ষ্য
কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব প্রত্যাহার চায় টিআইবি
জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়ন করেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধার সম্ভব উন্নয়ন অন্বেষণ
বাজেট গতানুগতিক, করোনা সংকটের প্রতিফলন নেই সিপিডি
সংক্রমণ ৮০ হাজার ছাড়ালো মৃত্যু একদিনে ৪৬
করোনার কবল থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট আ’লীগ
মোবাইলে বাড়তি খরচের সক্ষমতা মানুষের আছে এনবিআর চেয়ারম্যান
অন্তঃসারশূন্য, কথার ফুলঝুড়ি ছাড়া এই বাজেটে কিছুই নেই
ডাক্তাররা আলাদা হাসপাতাল চান
জোনভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর হচ্ছে সরকার
চিকিৎসা পাচ্ছে না, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে রোগীরা
পুলিশ আক্রান্ত ৭ হাজারের বেশি মৃত্যু ২৩

শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ , ৩০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ২০ শাওয়াল ১৪৪১

টেকনোলজিস্ট সংকট

বরিশালে করোনার নমুনা সংগ্রহ বন্ধ

ভোগান্তিতে রোগীরা

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

বরিশালে টেকনোলজিস্ট সংকটের কারণে করোনা উপসর্গ থাকা রোগীদের সেবা প্রদান করা বিলম্বিত হচ্ছে। কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম। ফলে বিপাকে পরেছেন বরিশাল নগরীর বাসিন্দারা। সিটি করপোরেশেনের স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রাখার পর থেকে রোগীরা নগরীর ভেতরে থাকা শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল ?ও জেনারেল (সদর) হাসপাতালের শরণাপন্ন হচ্ছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে শেবাচিম হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা রোগীদের পরামর্শ দিলেও বিভিন্ন অজুহাতে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা নমুনা প্রদানের জন্য জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আর এর ফলে এসব ব্যক্তিদের দ্বারা করোনার প্রসার ঘটছে।

বরিশাল নগরীর মুন্সি গ্যারেজ এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, তিনি কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। সুস্থ না হওয়ায় তিনি বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং সেখান থেকে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। এরপর একই হাসপাতালে নমুনা দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, সেখানে ওইদিনের নির্ধারিত পরিমানে নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে গেছে। তাই তাকে সদর হাসপাতালে যেয়ে নমুনা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

গত কয়েকদিন ধরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট নিয়ে রোগীরা নমুনা দেয়ার জন্য জেনারেল হাসপাতালে আসছেন বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট মো. নওয়াব। তিনি জানান, মাত্র ১ জন টেকনোলজিস্টের পক্ষে হাসপাতালের প্যাথলজির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি একই সঙ্গে অনেক সম্ভাব্য করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করাটা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ঢাকায় অনেকগুলো স্থানে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা কয়েছে। তাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধুমাত্র ভর্তি রোগী এবং ওই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করছে। কিন্তু বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় সম্ভাব্য করোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য একমাত্র বরিশাল মেডিকেল কলেজে একটিমাত্র যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। তাই বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীসহ বিভিন্নস্থানে সংগৃহীত নমুনা এখানেই পরীক্ষা করতে হয়। বরিশালের আপামর জনতার কথা চিন্তা করে শেবাচিমে বাহিরের রোগীদেরও করোনা পরীক্ষা করা হয়। আর তা করতে গিয়ে এই হাসপাতালে প্রতিনিয়ত সক্ষমতার দ্বিগুণ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। মঙ্গলবারও ৮৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন ও পুলিশ হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহে দায়িত্বরতরা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরই এই হাসপাতালের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন সক্ষমতার অধিকের অধিক নমুনা সংগ্রহ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কিছু লোককে জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। পুরাতন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এ হাসপাতালের ৭ জন টেকনোলজিস্টের স্থলে রয়েছে মাত্র ৫ জন। যার মধ্যে শুরু থেকে মাত্র একজনকে দিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজটি করানো হচ্ছে। এছাড়া দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ৪ জন স্বেচ্ছাসেবক নেয়া হয়েছে নমুনা সংগ্রহের কাজে। যাদের যাবতীয় ব্যয় শেবাচিম হাসপাতালকে বহন করতে হচ্ছে। একজন নমুনা সংগ্রহকারীকে দিয়ে তিন শিফটে কাজ করানো সম্ভব নয় জানিয়ে পরিচালক বলেন, আর এই মুহূর্তে প্রধান নমুনা সংগ্রহকারী বিভূতি ভূষণ হালদার একটানা কাজ করতে যেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে এ হাসপাতালের অবস্থা যে কি হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এদিকে সিটি করপোরেশনের ডা. শুভ্র খন্দকার বলেন, মেয়রের নির্দেশে শুরু থেকেই নগর স্বাস্থ্য বিভাগ সরাসরি ছাড়াও অনলাইন ও মোবাইলে করোনা উপসর্গ থাকা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে যারা নগরের মধ্যে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের আইসোলেটে করা, নমুনা সংগ্রহ করা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি আমাদের ৩ জন টেকনোলজিস্টের করোনা পজেটিভ হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। তারা সুস্থ হলে আবারও নমুনা সংগ্রহ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের কোন নিজস্ব টেকনোলজিস্ট নেই। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে ৪ জন টেকনোলজিস্টকে বাইরে থেকে এনে সিটি করপোরেশন নিজস্ব উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করে। তাদের মাধ্যমে এযাবৎকালে প্রায় সাড়ে ৭ শত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। চার জনের মধ্যে বর্তমানে একজন শারীরিকভাবে অসুস্থ ও অপর তিনজনের করোনা পজেটিভ হওয়ায় সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি সিভিল সার্জন ও শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহ স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয়েছে।

বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, মূলত গোটা জেলায় টেকনোলজিস্টের সংকট রয়েছে। বরিশালের ১০টি উপজেলার মধ্যে জেনারেল হাসপাতালসহ ৭টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ জন টেকনোলজিস্ট রয়েছে। হিজলা, মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জ এ তিন উপজেলায় কোন টেকনোলজিস্ট নেই। তবে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করার জন্য ওই তিন উপজেলায় অন্য স্টাফদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিকল্পভাবে নমুনা পরীক্ষা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর যে উপজেলাতে ১ জন করে টেকনোলজিস্ট রয়েছে, সেখানেও অন্য স্টাফদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে কেউ অসুস্থ হলে বিকল্প লোক দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা যায়। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রশিক্ষিতরা অসুস্থ হয়ে পরেছেন। আর তাদের প্রশিক্ষিত নতুন লোকও তৈরি করা নেই। তাই তারা যখন নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রেখেছে তখন রোগীরা শেবাচিম ও জেনারেল হাসপাতালের শরণাপন্ন হচ্ছে। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বরিশালের প্রেক্ষাপটে সব মানুষই শেবাচিমের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এ কারণে সেখানে রোগীদের চাপও বেশি থাকে। তিনি বলেন, শেবাচিম থেকে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব রোগীদের নমুনা দেয়ার জন্য জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। তবে একজন টেকনোলজিস্টের পক্ষে এই চাপ নেয়াও সম্ভব না।

অবশ্য বরিশালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে কতটা ভঙ্গুর তা এবার প্রমাণিত হয়েছে। এবার রাজনৈতিক নেতাসহ ধর্নাঢ্য ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না পারায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাতে দেশের প্রকৃত চিত্রটা প্রকাশিত হয়েছে। তাদের মতে শেবাচিম হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও জেলায় মিলিয়ে যেহেতু ২৪ জনের মতো টেকনোলজিস্ট রয়েছে সেখানে পিসিআর ল্যাব ও প্যাথলজি বিভাগের পর নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে এতদিনে অ্যাডহক ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ দেয়া উচিত ছিল। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, নতুন একজন টেকনোলজিস্ট বরিশাল জেলা সিভিল সার্জনকে দেয়া হয়েছে। তিনি তার সুবিধামতো জায়গায় তাকে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।