আফ্রিকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস

ডব্লিউএইচওর সতর্কবার্তা

বৈশ্বিক মহামারী করোনার সংক্রমণ আফ্রিকা মহাদেশে ‘দ্রুত হারে বাড়ছে’ উল্লেখ করে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আন্তর্জাতিক এ স্বাস্ব্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে আফ্রিকার বড় বড় শহরগুলোতে প্রবেশ করেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এখন তা গ্রাম্য এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। আল-জাজিরা।

এদিকে করোনার নিয়মিত পরিসংখ্যান সরবরাহকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের সর্বশেষ দেয়া তথ্য মতে, গতকাল শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৮১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯১ জন। পাশাপাশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৮ লাখ ৪১ হাজার ৩৩৮ জন। আফ্রিকা মহাদেশের ৫৪টি দেশের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ২ লাখ ছাড়িয়েছে। আর প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনিত রোগ রোগ কোভিড-১৯ এ পর্যন্ত মহাদেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও’র আফ্রিকা প্রধান মাৎশিদিসো মোয়েতিকে উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, আফ্রিকা মহাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ৯৮ দিন। অথচ সে সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ২ লাখে পৌঁছাতে সময় নিয়েছে মাত্র ১৮ দিন। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে (মিডিয়া ব্রিফিং) অংশ নেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকা প্রধান মাৎশিদিসো মোয়েতি। এসময় তিনি বলেন, আফ্রিকার ৫৪টি দেশের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইারাসের স্থানীয় পর্যায়ের (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। একে ‘গুরুতর চিহ্ন’ বলে উল্লেখ করেন মোয়েতি। আফ্রিকায় সংক্রমণের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যদিও এ সংখ্যাটা বিশ্বের মোট আক্রান্তের সংখ্যার ৩ শতাংশেরও কম, তারপরও এটা স্পষ্ট যে এখানে মহামারী দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে।’

আফ্রিকা মহাদেশে এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। মোয়েতি জানান, এখনও পর্যন্ত আফ্রিকায় আক্রান্ত হওয়া ২ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বসবাস ১০টি দেশে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৫৮ হাজারেরও বেশি। মৃত্যু হয়েছে ১২০০ মানুষের।

এদিকে ইউরোপে কিছুদিন ধরে চলমান বিশাল গণবিক্ষোভের জেরে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই করোনা মহামারী দ্বিতীয় ধাপে প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কর্মকর্তারাসহ বিশেষজ্ঞ এবং রাজনীতিবিদরা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, ইউরোপের বেশির ভাগ দেশই এখন করোনা মহামারীর প্রথম পর্যায় পেরিয়ে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য চালু করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে। সংক্রমণও গত কয়েক সপ্তাহে কমে এসেছে অনেকটাই। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নিপীড়নে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ইউরোপের বড় বড় শহরগুলোতে গত কয়েকদিনে লাখো মানুষ বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ করছে।

এ প্রসঙ্গে একইদিন (বৃহস্পতিবার) ‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন’র প্রধান জোজেফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রত্যেককেই যখন একে অপরের কাছ থেকে দেড় মিটার দূরে থাকতে বলা হচ্ছে, ঠিক তখনই প্রত্যেকে একে অপরের পাশাপাশি অবস্থান করছে। একে অপরকে স্পর্শ করছে- এটি মোটেই ভাল কথা নয়। এর ফলে আগামী দু’সপ্তাহেই ভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে কিনা- সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তবে এমনটা বাস্তবে না ফললেই ভালো।’

করোনার সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক নিয়মিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ৬ জনেরও বেশি মানুষের জমায়েতে লোকজনের অংশ নেয়া উচিত নয়। সেটি যদি বিক্ষোভও হয় তারপরও না। তিনি আরও বলেন, মানুষ কোনো একটি কারণে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে চেয়েই রাস্তায় নামে। তাদের সেই অদম্য আবেগের বিষয়টি তিনি বোঝেন। কিন্তু এটা প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিষয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শ থেকে যেটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ ভাইরাস মানুষের ভাবাবেগের ধার ধারবে না। ইউরোপে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আগেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, দ্বিতীয় ধাপের মহামারী হতে পারে গ্রীষ্ম পেরোনোর পর। কিন্তু বিক্ষোভের কারণে এখন এই ইতিবাচক পরিস্থিতিতে ছেদ পড়তে পারে বলে উদ্বিগ্ন তারা।

শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ , ৩০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ২০ শাওয়াল ১৪৪১

আফ্রিকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস

ডব্লিউএইচওর সতর্কবার্তা

সংবাদ ডেস্ক |

image

বৈশ্বিক মহামারী করোনার সংক্রমণ আফ্রিকা মহাদেশে ‘দ্রুত হারে বাড়ছে’ উল্লেখ করে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আন্তর্জাতিক এ স্বাস্ব্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে আফ্রিকার বড় বড় শহরগুলোতে প্রবেশ করেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এখন তা গ্রাম্য এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। আল-জাজিরা।

এদিকে করোনার নিয়মিত পরিসংখ্যান সরবরাহকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের সর্বশেষ দেয়া তথ্য মতে, গতকাল শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৮১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯১ জন। পাশাপাশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৮ লাখ ৪১ হাজার ৩৩৮ জন। আফ্রিকা মহাদেশের ৫৪টি দেশের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ২ লাখ ছাড়িয়েছে। আর প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনিত রোগ রোগ কোভিড-১৯ এ পর্যন্ত মহাদেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও’র আফ্রিকা প্রধান মাৎশিদিসো মোয়েতিকে উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, আফ্রিকা মহাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ৯৮ দিন। অথচ সে সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ২ লাখে পৌঁছাতে সময় নিয়েছে মাত্র ১৮ দিন। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে (মিডিয়া ব্রিফিং) অংশ নেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকা প্রধান মাৎশিদিসো মোয়েতি। এসময় তিনি বলেন, আফ্রিকার ৫৪টি দেশের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইারাসের স্থানীয় পর্যায়ের (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। একে ‘গুরুতর চিহ্ন’ বলে উল্লেখ করেন মোয়েতি। আফ্রিকায় সংক্রমণের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যদিও এ সংখ্যাটা বিশ্বের মোট আক্রান্তের সংখ্যার ৩ শতাংশেরও কম, তারপরও এটা স্পষ্ট যে এখানে মহামারী দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে।’

আফ্রিকা মহাদেশে এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। মোয়েতি জানান, এখনও পর্যন্ত আফ্রিকায় আক্রান্ত হওয়া ২ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বসবাস ১০টি দেশে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৫৮ হাজারেরও বেশি। মৃত্যু হয়েছে ১২০০ মানুষের।

এদিকে ইউরোপে কিছুদিন ধরে চলমান বিশাল গণবিক্ষোভের জেরে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই করোনা মহামারী দ্বিতীয় ধাপে প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কর্মকর্তারাসহ বিশেষজ্ঞ এবং রাজনীতিবিদরা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, ইউরোপের বেশির ভাগ দেশই এখন করোনা মহামারীর প্রথম পর্যায় পেরিয়ে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য চালু করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে। সংক্রমণও গত কয়েক সপ্তাহে কমে এসেছে অনেকটাই। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নিপীড়নে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ইউরোপের বড় বড় শহরগুলোতে গত কয়েকদিনে লাখো মানুষ বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ করছে।

এ প্রসঙ্গে একইদিন (বৃহস্পতিবার) ‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন’র প্রধান জোজেফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রত্যেককেই যখন একে অপরের কাছ থেকে দেড় মিটার দূরে থাকতে বলা হচ্ছে, ঠিক তখনই প্রত্যেকে একে অপরের পাশাপাশি অবস্থান করছে। একে অপরকে স্পর্শ করছে- এটি মোটেই ভাল কথা নয়। এর ফলে আগামী দু’সপ্তাহেই ভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে কিনা- সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তবে এমনটা বাস্তবে না ফললেই ভালো।’

করোনার সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক নিয়মিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ৬ জনেরও বেশি মানুষের জমায়েতে লোকজনের অংশ নেয়া উচিত নয়। সেটি যদি বিক্ষোভও হয় তারপরও না। তিনি আরও বলেন, মানুষ কোনো একটি কারণে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে চেয়েই রাস্তায় নামে। তাদের সেই অদম্য আবেগের বিষয়টি তিনি বোঝেন। কিন্তু এটা প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিষয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শ থেকে যেটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ ভাইরাস মানুষের ভাবাবেগের ধার ধারবে না। ইউরোপে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আগেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, দ্বিতীয় ধাপের মহামারী হতে পারে গ্রীষ্ম পেরোনোর পর। কিন্তু বিক্ষোভের কারণে এখন এই ইতিবাচক পরিস্থিতিতে ছেদ পড়তে পারে বলে উদ্বিগ্ন তারা।