করোনা মহামারী

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘নড়বড়ে বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা

গত ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের ১২৫টিরও বেশি দেশ অঞ্চলে প্রায় সোয়া ৪ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া নতুন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সুস্পষ্ট ও কার্যকর নির্দেশনা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দীর্ঘসূত্রতা ও একের পর এক ব্যর্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক বিজ্ঞানী। নিউইয়র্ক টাইমস।

বৈজ্ঞানিক মতামতের এ দ্বিধাবিভক্তি বিভিন্ন দেশের সংক্রমণ মোকাবিলার নীতিতেও প্রভাব ফেলছে। প্রভাবশালী এ মার্কিন সংবাদ মাধ্যমটি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, এবারই প্রথম নয়, গত কয়েক মাসে আরও কয়েকবার করোনা মহামারী নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থানকে নড়বড়ে মনে হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তারা উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা ‘বিরল’ বলে অ্যাখ্যা দেয়ার প্রেক্ষিতে নতুন করে বিজ্ঞানীদের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে করোনা গবেষকদের তীব্র আপত্তির মুখে একদিন পরই জাতিসংঘের এ সংস্থাটি জানায়, তাদের বক্তব্যে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ সৃষ্টি হয়েছে । নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি গত সপ্তাহে এসে সবার মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়েছে। অথচ এতদিন ধরে তাদের ভাষ্য ছিল, মাস্কে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়- এর সপক্ষে জোরালো কোন প্রমাণ নেই।

ডব্লিউএইচও’র এমন মন্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে বিশ্বের বেশিরভাগ বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন দেশের সরকার গত কয়েক মাস ধরেই সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে আসছে। দেরিতে হলেও এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সে নির্দেশনাকেই কার্যকর বলে মেনে নিচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুকণার মাধ্যমে নতুন করোনাভাইরাস ছড়ায় না- ডব্লিউএইচওর এমন ভাষ্যের সঙ্গেও অনেক বিজ্ঞানীর বিরোধ দেখা যাচ্ছে।

মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল ওস্টেরহম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুকণা ও অতি ক্ষুদ্র তরলকণা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থান বিশ্বের অন্যদের চেয়ে এখনও ভিন্ন।’ শুধু উপসর্গ প্রকাশ পাওয়া আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখলেই হচ্ছে না, ‘উপসর্গবিহীন আক্রান্তরাও’ করোনাভাইরাস জনিত রোগ কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে-এমন আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই লকডাউনের পথ বেছে নিয়েছিল। আবার প্রাণঘাতী এ ভাইরাস যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুকণার মাধ্যমে ছড়াতে পারে, তাহলে শুধু হাত পরিষ্কার রাখলেই চলবে না, সংক্রমণ প্রতিরোধে নিতে হবে আরও নিত্যনতুন ব্যবস্থা।

এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীদের অভিমত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষে দ্রুত বিভিন্ন গবেষণা সংগ্রহ ও সেগুলো পর্যালোচনা করে ভাইরাসটির চরিত্র বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করা সম্ভব হলেও এ কাজে এখনও পর্যন্ত তারা আস্থার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়নি।

ডব্লিউএইচও সাধারণত বিশ্বের স্বাস্ব্য বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পর্যালোচনা করে থাকে। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ও মানুষের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এখন গবেষণার গতি বদলে গেছে। বিজ্ঞানীরা এখন যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানের ফল প্রকাশে মত্ত। অনুসন্ধানের ফল যথাযথ পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞদের সময়ও দিচ্ছেন না তারা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য এমন তাড়াহুড়ো অনাকাক্সিক্ষত নয়। কিন্তু এ ধরনের চর্চা অনেক সময় বিভ্রান্তিরও জন্ম দেয়।

‘উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের’ নিয়ে যেমনটা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ডব্লিউএইচও-চীন যৌথ মিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রকৃত উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। তবে এ ধরনের সংক্রমণ সম্ভবত খুবই বিরল এবং এটি ভাইরাসটির বিস্তারে মূল চালক বলে মনে হচ্ছে না।’ পরে বেশকিছু গবেষণায় উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে সংক্রমণ মোট সংক্রমণের প্রায় ৪০ শতাংশের মতো হতে পারে বলে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মূল্যায়নেও মোট সংক্রমণের ৩৫ শতাংশ উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে হয়েছে বলে ধারণা দেয়া হয়।

এসব গবেষণা ও মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ সবাইকে মাস্ক পরার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা ড. মারিয়া ভ্যান কেরখোভের মন্তব্যে সবার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এদিন তিনি বলেন, ‘এখনও দেখা যাচ্ছে, উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের থেকে দ্বিতীয় কারও দেহে সংক্রমণের ঘটনা খুবই বিরল।’ তাৎক্ষণিকভাবে ডব্লিউএইচও’র এ কর্মকর্তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিজ্ঞানীরা বলেন, আক্রান্ত অনেকের মধ্যে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ প্রকাশিত হওয়ার আগেই তারা অন্যদের দেহে ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে একের পর এক গবেষণায় দেখা গেছে।

গবেষকদের এমন আপত্তির মুখে পরদিন মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের আগের দিনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়। জানায়, সোমবারের বক্তব্যে তারা ‘উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের’ কথা বলেছে। আক্রান্ত হওয়ার পর যাদের উপসর্গ প্রকাশিত হতে দেরি হচ্ছে, তাদের কথা বলেনি। ভ্যান কেরখোভ তার যুক্তিতে বলেন, ‘আমি একটি জিজ্ঞাসার জবাবে (সোমবার) ওই কথা বলেছিলাম। ডব্লিউএইচও’র নীতি বা এ সংক্রান্ত কিছু বলিনি।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ কর্মকর্তা জানান, উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের নিয়ে তার ওই মন্তব্যের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের অপ্রকাশিত গবেষণা। দেশগুলো তাদের ওই গবেষণার ফল ডব্লিউএইচওর সঙ্গে শেয়ার করেছে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি। কিন্তু ডব্লিউএইচও’র সহযোগী সংগঠন ন্যাশনাল অ্যান্ড গ্লোবাল হেলথ ল’র পরিচালক লরেন্স গস্টিনের মতে, অপ্রকাশিত গবেষণার উপর ভিত্তি করে, তথ্য-উপাত্ত ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়া এ ধরনের মন্তব্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’কে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

মাস্ক নিয়ে নির্দেশনায় ডব্লিউএইচও’র দীর্ঘসূত্রিতাও তাদের ‘ব্যর্থতার’ অন্যতম নজির বলে দাবি করছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ বলছেন, বিশ্বজুড়ে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এতদিন সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়নি। ভ্যান কেরখোভে এ অভিযোগও প্রত্যাখান করে বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা তৈরি হয় বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে। সরবরাহ আছে কি নেই, তার উপর ভিত্তি করে নয়।

শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ , ৩০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ২০ শাওয়াল ১৪৪১

করোনা মহামারী

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘নড়বড়ে বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা

সংবাদ ডেস্ক |

image

গত ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের ১২৫টিরও বেশি দেশ অঞ্চলে প্রায় সোয়া ৪ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া নতুন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সুস্পষ্ট ও কার্যকর নির্দেশনা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দীর্ঘসূত্রতা ও একের পর এক ব্যর্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক বিজ্ঞানী। নিউইয়র্ক টাইমস।

বৈজ্ঞানিক মতামতের এ দ্বিধাবিভক্তি বিভিন্ন দেশের সংক্রমণ মোকাবিলার নীতিতেও প্রভাব ফেলছে। প্রভাবশালী এ মার্কিন সংবাদ মাধ্যমটি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, এবারই প্রথম নয়, গত কয়েক মাসে আরও কয়েকবার করোনা মহামারী নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থানকে নড়বড়ে মনে হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তারা উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা ‘বিরল’ বলে অ্যাখ্যা দেয়ার প্রেক্ষিতে নতুন করে বিজ্ঞানীদের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে করোনা গবেষকদের তীব্র আপত্তির মুখে একদিন পরই জাতিসংঘের এ সংস্থাটি জানায়, তাদের বক্তব্যে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ সৃষ্টি হয়েছে । নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি গত সপ্তাহে এসে সবার মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়েছে। অথচ এতদিন ধরে তাদের ভাষ্য ছিল, মাস্কে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়- এর সপক্ষে জোরালো কোন প্রমাণ নেই।

ডব্লিউএইচও’র এমন মন্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে বিশ্বের বেশিরভাগ বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন দেশের সরকার গত কয়েক মাস ধরেই সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে আসছে। দেরিতে হলেও এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সে নির্দেশনাকেই কার্যকর বলে মেনে নিচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুকণার মাধ্যমে নতুন করোনাভাইরাস ছড়ায় না- ডব্লিউএইচওর এমন ভাষ্যের সঙ্গেও অনেক বিজ্ঞানীর বিরোধ দেখা যাচ্ছে।

মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল ওস্টেরহম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুকণা ও অতি ক্ষুদ্র তরলকণা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থান বিশ্বের অন্যদের চেয়ে এখনও ভিন্ন।’ শুধু উপসর্গ প্রকাশ পাওয়া আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখলেই হচ্ছে না, ‘উপসর্গবিহীন আক্রান্তরাও’ করোনাভাইরাস জনিত রোগ কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে-এমন আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই লকডাউনের পথ বেছে নিয়েছিল। আবার প্রাণঘাতী এ ভাইরাস যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুকণার মাধ্যমে ছড়াতে পারে, তাহলে শুধু হাত পরিষ্কার রাখলেই চলবে না, সংক্রমণ প্রতিরোধে নিতে হবে আরও নিত্যনতুন ব্যবস্থা।

এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীদের অভিমত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষে দ্রুত বিভিন্ন গবেষণা সংগ্রহ ও সেগুলো পর্যালোচনা করে ভাইরাসটির চরিত্র বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করা সম্ভব হলেও এ কাজে এখনও পর্যন্ত তারা আস্থার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়নি।

ডব্লিউএইচও সাধারণত বিশ্বের স্বাস্ব্য বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পর্যালোচনা করে থাকে। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ও মানুষের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এখন গবেষণার গতি বদলে গেছে। বিজ্ঞানীরা এখন যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানের ফল প্রকাশে মত্ত। অনুসন্ধানের ফল যথাযথ পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞদের সময়ও দিচ্ছেন না তারা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য এমন তাড়াহুড়ো অনাকাক্সিক্ষত নয়। কিন্তু এ ধরনের চর্চা অনেক সময় বিভ্রান্তিরও জন্ম দেয়।

‘উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের’ নিয়ে যেমনটা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ডব্লিউএইচও-চীন যৌথ মিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রকৃত উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। তবে এ ধরনের সংক্রমণ সম্ভবত খুবই বিরল এবং এটি ভাইরাসটির বিস্তারে মূল চালক বলে মনে হচ্ছে না।’ পরে বেশকিছু গবেষণায় উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে সংক্রমণ মোট সংক্রমণের প্রায় ৪০ শতাংশের মতো হতে পারে বলে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মূল্যায়নেও মোট সংক্রমণের ৩৫ শতাংশ উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে হয়েছে বলে ধারণা দেয়া হয়।

এসব গবেষণা ও মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ সবাইকে মাস্ক পরার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা ড. মারিয়া ভ্যান কেরখোভের মন্তব্যে সবার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এদিন তিনি বলেন, ‘এখনও দেখা যাচ্ছে, উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের থেকে দ্বিতীয় কারও দেহে সংক্রমণের ঘটনা খুবই বিরল।’ তাৎক্ষণিকভাবে ডব্লিউএইচও’র এ কর্মকর্তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিজ্ঞানীরা বলেন, আক্রান্ত অনেকের মধ্যে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ প্রকাশিত হওয়ার আগেই তারা অন্যদের দেহে ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে একের পর এক গবেষণায় দেখা গেছে।

গবেষকদের এমন আপত্তির মুখে পরদিন মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের আগের দিনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়। জানায়, সোমবারের বক্তব্যে তারা ‘উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের’ কথা বলেছে। আক্রান্ত হওয়ার পর যাদের উপসর্গ প্রকাশিত হতে দেরি হচ্ছে, তাদের কথা বলেনি। ভ্যান কেরখোভ তার যুক্তিতে বলেন, ‘আমি একটি জিজ্ঞাসার জবাবে (সোমবার) ওই কথা বলেছিলাম। ডব্লিউএইচও’র নীতি বা এ সংক্রান্ত কিছু বলিনি।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ কর্মকর্তা জানান, উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের নিয়ে তার ওই মন্তব্যের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের অপ্রকাশিত গবেষণা। দেশগুলো তাদের ওই গবেষণার ফল ডব্লিউএইচওর সঙ্গে শেয়ার করেছে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি। কিন্তু ডব্লিউএইচও’র সহযোগী সংগঠন ন্যাশনাল অ্যান্ড গ্লোবাল হেলথ ল’র পরিচালক লরেন্স গস্টিনের মতে, অপ্রকাশিত গবেষণার উপর ভিত্তি করে, তথ্য-উপাত্ত ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়া এ ধরনের মন্তব্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’কে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

মাস্ক নিয়ে নির্দেশনায় ডব্লিউএইচও’র দীর্ঘসূত্রিতাও তাদের ‘ব্যর্থতার’ অন্যতম নজির বলে দাবি করছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ বলছেন, বিশ্বজুড়ে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এতদিন সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়নি। ভ্যান কেরখোভে এ অভিযোগও প্রত্যাখান করে বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা তৈরি হয় বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে। সরবরাহ আছে কি নেই, তার উপর ভিত্তি করে নয়।