জোনভিত্তিক লকডাউনে জোর দিচ্ছে সরকার

রেডজোনে থাকবে সাধারণ ছুটি জেলায় লাখে ১০ জন আক্রান্ত হলে রেডজোন ১৫ জুনের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব খোলা থাকবে

সারাদেশে জোনভিত্তিক লকডাউনে জোর দিচ্ছে সরকার। রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সফল হওয়ায় এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অধিক করোনাভাইরাস সংক্রমিত এলাকাকে রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হবে। সেই এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। এছাড়া অন্য স্থানে আগের মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস খোলা থাকবে, চলবে গণপরিবহনও।

তবে রাজধানী ঢাকার বাইরে যে এলাকায় প্রতি লাখে ১০ জন বা এর বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী থাকবে সেখানেই রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হবে। সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার লকডাউন কার্যকর করবেন। সুনির্দিষ্টভাবে রোগীর অবস্থান করা জায়গা বা এলাকা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি স্থানীয় পর্যায়ে সহায়তা করবে। ১৫ জুনের পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো অফিস এবং গণপরিবহন খোলা থাকবে, সেজন্য একটি অর্ডার জারি করা হবে। সেটা হয়তো রোববারই জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল অনলাইনে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।

জানা গেছে, করোনা মোকাবিলায় ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দেয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয় গণপরিবহনও। এই পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকলে সরকার ফের সাধারণ ছুটির কথা বললেও এখন সেদিকে যাচ্ছে না। জোনভিত্তিক লকডাউনের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাইছে সরকার। বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড (লাল), অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়েলো (হলুদ) ও একেবারে কম আক্রান্ত বা করোনামুক্ত এলাকাকে গ্রিন (সবুজ) জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেডজোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়েলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও। লকডাউনের মেয়াদ হবে ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত।

গত ৯ জুন রাত ১২টা থেকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে পরীক্ষামূলকভাবে ‘রেডজোন’ হিসেবে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১৪ দিনের জন্য এই লকডাউন কার্যকর করা হবে সেখানে। গত শুক্রবার এলাকাভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় অনলাইনে বৈঠক করেন সরকারের তিন মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রী ও তিন মেয়র। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনলাইন বৈঠকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন জোনিংয়ে চলে যাচ্ছি। ঢাকাসহ যে জায়গাগুলো সিভিয়ারলি ইনফেক্টেড (মারাত্মক আক্রান্ত) হয়েছে সেই জায়গাগুলোতে রেডজোন ঘোষণা করে সেগুলোতে বিশেষ ট্রিটমেন্টে চলে যাব। বর্তমানে যে অবস্থায় চলছে সবকিছু সেভাবেই চলবে। নতুন করে ছুটি ঘোষণা করা হবে না। যে এলাকা রেডজোন থাকবে, সেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেখানে কিছু ভুলত্রুটি বের হয়ে এসেছে। লোকজন এখানে টপকাচ্ছে ওখানে টপকাচ্ছে। সবকিছু সম্পূর্ণ করে আমরা কোন স্থান লকডাউন করব।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জোনিং করে লকডাউন, খুবই একটা কার্যকর ব্যবস্থা বলে মনে করছি আমরা। একই সঙ্গে চার-পাঁচটি স্থান রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হতে পারে। বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলো সিলেকশন করা আছে। সেই স্থানগুলোকে আমরা রেডজোন ঘোষণা করতে পারি। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঘোষণা দেব, কোন এলাকায় লকডাউন করা হবে। আগে থেকে বলা হলে তো লোকজন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাবে। রেডজোনে জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। যাদের খাবার প্রয়োজন পৌঁছে দেয়া হবে। ১৫ জুনের পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো অফিস এবং গণপরিবহন খোলা থাকবে, সেজন্য একটি অর্ডার জারি করা হবে। সেটা হয়তো রোববারই জারি করা হবে।

ফরহাদ হোসেন জানান, দেশের বিদ্যমান সংক্রামক রোগ আইন অনুযায়ী রাজধানীর বাইরে জেলাগুলোয় কোন এলাকা লকডাউন করতে হলে সেই জেলার সিভিল সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়েই লকডাউন করতে হবে। সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার লকডাউন কার্যকর করবেন।

রবিবার, ১৪ জুন ২০২০ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২১ শাওয়াল ১৪৪

করোনা মোকাবিলা

জোনভিত্তিক লকডাউনে জোর দিচ্ছে সরকার

রেডজোনে থাকবে সাধারণ ছুটি জেলায় লাখে ১০ জন আক্রান্ত হলে রেডজোন ১৫ জুনের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব খোলা থাকবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

সারাদেশে জোনভিত্তিক লকডাউনে জোর দিচ্ছে সরকার। রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সফল হওয়ায় এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অধিক করোনাভাইরাস সংক্রমিত এলাকাকে রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হবে। সেই এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। এছাড়া অন্য স্থানে আগের মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস খোলা থাকবে, চলবে গণপরিবহনও।

তবে রাজধানী ঢাকার বাইরে যে এলাকায় প্রতি লাখে ১০ জন বা এর বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী থাকবে সেখানেই রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হবে। সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার লকডাউন কার্যকর করবেন। সুনির্দিষ্টভাবে রোগীর অবস্থান করা জায়গা বা এলাকা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি স্থানীয় পর্যায়ে সহায়তা করবে। ১৫ জুনের পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো অফিস এবং গণপরিবহন খোলা থাকবে, সেজন্য একটি অর্ডার জারি করা হবে। সেটা হয়তো রোববারই জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল অনলাইনে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।

জানা গেছে, করোনা মোকাবিলায় ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দেয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয় গণপরিবহনও। এই পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকলে সরকার ফের সাধারণ ছুটির কথা বললেও এখন সেদিকে যাচ্ছে না। জোনভিত্তিক লকডাউনের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাইছে সরকার। বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড (লাল), অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়েলো (হলুদ) ও একেবারে কম আক্রান্ত বা করোনামুক্ত এলাকাকে গ্রিন (সবুজ) জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেডজোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়েলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও। লকডাউনের মেয়াদ হবে ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত।

গত ৯ জুন রাত ১২টা থেকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে পরীক্ষামূলকভাবে ‘রেডজোন’ হিসেবে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১৪ দিনের জন্য এই লকডাউন কার্যকর করা হবে সেখানে। গত শুক্রবার এলাকাভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় অনলাইনে বৈঠক করেন সরকারের তিন মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রী ও তিন মেয়র। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনলাইন বৈঠকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন জোনিংয়ে চলে যাচ্ছি। ঢাকাসহ যে জায়গাগুলো সিভিয়ারলি ইনফেক্টেড (মারাত্মক আক্রান্ত) হয়েছে সেই জায়গাগুলোতে রেডজোন ঘোষণা করে সেগুলোতে বিশেষ ট্রিটমেন্টে চলে যাব। বর্তমানে যে অবস্থায় চলছে সবকিছু সেভাবেই চলবে। নতুন করে ছুটি ঘোষণা করা হবে না। যে এলাকা রেডজোন থাকবে, সেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেখানে কিছু ভুলত্রুটি বের হয়ে এসেছে। লোকজন এখানে টপকাচ্ছে ওখানে টপকাচ্ছে। সবকিছু সম্পূর্ণ করে আমরা কোন স্থান লকডাউন করব।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জোনিং করে লকডাউন, খুবই একটা কার্যকর ব্যবস্থা বলে মনে করছি আমরা। একই সঙ্গে চার-পাঁচটি স্থান রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হতে পারে। বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলো সিলেকশন করা আছে। সেই স্থানগুলোকে আমরা রেডজোন ঘোষণা করতে পারি। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঘোষণা দেব, কোন এলাকায় লকডাউন করা হবে। আগে থেকে বলা হলে তো লোকজন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাবে। রেডজোনে জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। যাদের খাবার প্রয়োজন পৌঁছে দেয়া হবে। ১৫ জুনের পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো অফিস এবং গণপরিবহন খোলা থাকবে, সেজন্য একটি অর্ডার জারি করা হবে। সেটা হয়তো রোববারই জারি করা হবে।

ফরহাদ হোসেন জানান, দেশের বিদ্যমান সংক্রামক রোগ আইন অনুযায়ী রাজধানীর বাইরে জেলাগুলোয় কোন এলাকা লকডাউন করতে হলে সেই জেলার সিভিল সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়েই লকডাউন করতে হবে। সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার লকডাউন কার্যকর করবেন।