বন্দর নগরী চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একের পর এক মৃত্যুর মিছিলে সামিল হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই ভাইরাসের সংক্রামণের চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় সরকারি হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ সামলাতে না পারায় মৃত্যুর মিছিল দিন দিন বাড়ছে।
গতকাল সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে সাবেক এক সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মো. ইসলাম (৫৫) নামে সাবেক এই সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা মজিদার পাড়া এলাকায়। মৃত মুহাম্মদ আজিজুর রহমানের ছেলে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য শিরিন আক্তার। তিনি বলেন, তার স্বামী দীর্ঘ ২৩ বছর চাকরি জীবন শেষে ২০১০ সালে অবসর নেন। করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ায় গত ১০ জুন তাকে চট্টগ্রাম সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ১১ জুন তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। আজ (গতকাল) সকাল সাড়ে ৮টায় হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
অন্যদিকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রামে ডা. সাদেকুর রহমান নামে এক চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ভোরে মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক। তিনি বলেন, ডা. সাদেককে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন না। তবে তার শ্বাসকষ্ট ছিল। ভোরে তিনি মারা যান। ডা. সাদেকুর রহমান চট্টগ্রামের জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন।
জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং বিএমএ সহ-সভাপতি ডা. শফিউল আজম বলেন, তিনি বেশ কিছুদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। মাসখানেক আগ থেকে ছুটিতে ছিলেন। হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউ খালি না থাকায় মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। আজ (গতকাল) সকালে সেখানেই তিনি মারা যান। এর আগে গত শুক্রবার রাতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মো. আরিফ হাসান নামে এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয় চমেক হাসপাতালে।
এছাড়া তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবারের অভিযোগ, তিন দিন চেষ্টা করেও কোন হাসপাতালে আইসিইউতে তাকে ভর্তি করা যায়নি। শেষ মুহূর্তে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা গেলেও অক্সিজেন সরবরাহ ও ডাক্তারদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা না পেয়েই তার মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত শনিবার রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত মো. শাহআলম চট্টগ্রামের সীতাকু- পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
শাহআলমের বড় ভাইয়ের স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার জানান, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকায় গত বুধবার তাকে ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তিন দিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে চট্টগ্রামের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ খালি পাওয়া যায়নি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ খালি নেই বলে জানানো হয়। এরমধ্যে গত শনিবার শাহআলমের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। বিকেলে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তবে খালি না থাকায় সেখানেও মেলেনি আইসিইউ সাপোর্ট।
অক্সিজেন ও চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার অভিযোগ করে ফেরদৌস আক্তার বলেন, জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ সাপোর্ট পাওয়া যায়নি। তারা অক্সিজেনও দিতে পারেনি। কোন ডাক্তার এসে একটু রোগীকে ভালো করে দেখেননি। রাতে তিনি (শাহআলম) মারা গেছেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তফা জামাল বলেন, তাকে (শাহআলম) একেবারে সংকটাপন্ন অবস্থায় আমাদের কাছে আনা হয়েছিল। আমাদের কাছেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল না। আইসিইউ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে তাকে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু আইসিইউ থেকে খুলে তার বেডের কাছে নেয়ার পর দেখা যায়, তিনি আর জীবিত নেই। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
সোমবার, ১৫ জুন ২০২০ , ১ আষাঢ় ১৪২৭, ২২ শাওয়াল ১৪৪১
চট্টগ্রাম ব্যুরো
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একের পর এক মৃত্যুর মিছিলে সামিল হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই ভাইরাসের সংক্রামণের চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় সরকারি হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ সামলাতে না পারায় মৃত্যুর মিছিল দিন দিন বাড়ছে।
গতকাল সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে সাবেক এক সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মো. ইসলাম (৫৫) নামে সাবেক এই সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা মজিদার পাড়া এলাকায়। মৃত মুহাম্মদ আজিজুর রহমানের ছেলে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য শিরিন আক্তার। তিনি বলেন, তার স্বামী দীর্ঘ ২৩ বছর চাকরি জীবন শেষে ২০১০ সালে অবসর নেন। করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ায় গত ১০ জুন তাকে চট্টগ্রাম সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ১১ জুন তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। আজ (গতকাল) সকাল সাড়ে ৮টায় হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
অন্যদিকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রামে ডা. সাদেকুর রহমান নামে এক চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ভোরে মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক। তিনি বলেন, ডা. সাদেককে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন না। তবে তার শ্বাসকষ্ট ছিল। ভোরে তিনি মারা যান। ডা. সাদেকুর রহমান চট্টগ্রামের জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন।
জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং বিএমএ সহ-সভাপতি ডা. শফিউল আজম বলেন, তিনি বেশ কিছুদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। মাসখানেক আগ থেকে ছুটিতে ছিলেন। হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউ খালি না থাকায় মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। আজ (গতকাল) সকালে সেখানেই তিনি মারা যান। এর আগে গত শুক্রবার রাতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মো. আরিফ হাসান নামে এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয় চমেক হাসপাতালে।
এছাড়া তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবারের অভিযোগ, তিন দিন চেষ্টা করেও কোন হাসপাতালে আইসিইউতে তাকে ভর্তি করা যায়নি। শেষ মুহূর্তে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা গেলেও অক্সিজেন সরবরাহ ও ডাক্তারদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা না পেয়েই তার মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত শনিবার রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত মো. শাহআলম চট্টগ্রামের সীতাকু- পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
শাহআলমের বড় ভাইয়ের স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার জানান, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকায় গত বুধবার তাকে ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তিন দিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে চট্টগ্রামের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ খালি পাওয়া যায়নি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ খালি নেই বলে জানানো হয়। এরমধ্যে গত শনিবার শাহআলমের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। বিকেলে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তবে খালি না থাকায় সেখানেও মেলেনি আইসিইউ সাপোর্ট।
অক্সিজেন ও চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার অভিযোগ করে ফেরদৌস আক্তার বলেন, জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ সাপোর্ট পাওয়া যায়নি। তারা অক্সিজেনও দিতে পারেনি। কোন ডাক্তার এসে একটু রোগীকে ভালো করে দেখেননি। রাতে তিনি (শাহআলম) মারা গেছেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তফা জামাল বলেন, তাকে (শাহআলম) একেবারে সংকটাপন্ন অবস্থায় আমাদের কাছে আনা হয়েছিল। আমাদের কাছেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল না। আইসিইউ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে তাকে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু আইসিইউ থেকে খুলে তার বেডের কাছে নেয়ার পর দেখা যায়, তিনি আর জীবিত নেই। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।