ঘোষণা বাস্তবায়ন নিয়ে বিভ্রান্তি

সারাদেশে ৬৫টি এলাকাকে রেডজোন ঘোষণার সুপারিশ

সমন্বয়হীনতার কারণে জোনভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্ত। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে করোনা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি থেকে ঢাকা মহানগরী ৪৫টি ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১১টিসহ সারাদেশে প্রায় ৬৫টি এলাকাকে সম্পূর্ণ লকডাউনের (রেডজোন) ঘোষণার সুপারিশ করা হয়। সে হিসেবে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনের প্রথমে রেড ও ইয়েলো জোনে রেড ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরে তা সংশোধন করে শুধু রেড জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে রেডজোনের তালিকা প্রকাশ করা হলেও সরকারিভাবে রেড, ইয়েলো ও গ্রিনের তালিকা দিয়ে কোন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। তাই কোন এলাকা রেড ও কোন এলাকা ইয়োলো তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্ত।

তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বিকেলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। করোনা প্রতিরোধে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই সেনাসদস্যরা টহল দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান। কিন্তু রাজধানীর কোন এলাকায় পুলিশ বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে দেখা যায়নি বলে জানায় স্থানীয়রা।

বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার লকডাউনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাতে কোন কাজ হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এবং করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান। তিনি মুঠোফোনে সংবাদকে বলেন, টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ ভৌগলিক লকডাউন ঘোষণা করার। যেন পুরো ঢাকা শহর ও পুরো নারায়ণগঞ্জকে লকডাউন করতে হবে। ঢাকা শহরকে এভাবে জোন ভাগ করে লকডাউনে কোন কাজ হবে না। কিন্তু টেকনিক্যাল কমিটিকে পাত্তা দেয়া হয়নি সরকারি আমলারা। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইনে স্পষ্ট লেখা আছে সংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণে কার কি দায়িত্ব। কিন্তু দেয়া যায় এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। আইন অনুযায়ী কার্যক্রম ও পদক্ষেপ দেয়া আছে। কিন্তু সেই দায়িত্ব জনপ্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা নিজের মতো ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় লকডাউন বাস্তবায়নের কাজে যারা জড়িত সিটি করপোরেশন ও পুলিশ কেউ তা জানে না। টেকনিক্যাল কমিটির সঠিক পরামর্শ বাস্তবায়ন করা উচিত।

এদিকে জোনভিত্তিক লকডাউন ঘোষণার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়েছেন ডিএনসিসি’র মেয়র আতিকুর রহমান। গতকাল গণমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন যে ১৭টি এলাকা রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সেগুলোর সুনির্দিষ্ট ম্যাপিং পাওয়ার পর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লকডাউন কার্যকর করা যাবে। সামনে ১৭টি এলাকায় লকডাউন হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি বলেছি যত দ্রুত আমাদের ম্যাপ দেয়া হবে তত দ্রুত ব্যবস্থা নেব। অনেক বড় বড় এলাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা চাচ্ছি যত কনফাইন করে আমাদের দেয়া যাবে তত আমাদের ম্যানেজ করতে সুবিধা হবে। রেডজোনিং একটা হিউজ ম্যানেজমেন্ট। কাউন্সিলর, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে মিলে কিন্তু কাজ করতে হয়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর অথবা সরকারি কোন সংস্থা থেকে ডিএনসিসি’র রেড ও ইয়োলো জোনের তালিকা দেয়া হয়নি। গণমাধ্যমে রেডজোনের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিন্তু ইয়োলো জোনের কোন তালিকা আমাদের কাছে নেই। এদিকে লকডাউন বাস্তবায়নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)’র নগর ভবনে আজ মেয়রের সভাপতিত্বে এক সমন্বয় সভায় অনুষ্ঠিত হবে বলে ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তবে ঢাকা মহানগরীতে রেডজোন হিসেবে সম্পূর্ণ লকডাউন বাস্তবায়নের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কোন নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি)। এ বিষয়ে ডিএমপি’র ডিসি মিডিয়া মো. ওয়ালিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, করোনা মোকাবেলায় তিন মাস আগ থেকে আমরা কাজ করছি। তবে ঢাকা মহানগরীতে জোনিং হিসেবে লকডাউন ঘোষণার কোন নির্দেশনা আমরা এখনো পায়নি। ঢাকায় কোন কোন এলাকা রেডজোন ঘোষণা করা হবে সে তালিকা এখনো আমাদের দেয়া হয়নি। তাই রেড জোন হিসেবে সম্পূর্ণ লকডাউন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসে রোগীর সংখ্যা বিবেচনা করে রেড (লাল), ইয়োলো (হদুল) ও গ্রিন (সবুজ) জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বেশি করোনা আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়োলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা আক্রান্ত মুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেডজোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়োলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও। লকডাউনের মেয়াদ হবে ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত। গত ১১ জুন করোনা প্রতিরোধে সরকারের কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় ঢাকা মহানগরীতে ৪৫টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া ঢাকা সিটি করপোশেনের বাইরে তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সবকটি উপজেলাকে রেডজোনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটির ১০ এলাকাকে রেডজোনের মধ্যে রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো, কোতোয়ালির ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, বন্দরে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড। গত ১৪ দিনের প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার ভেতরে ৬০ জন রোগীর থাকার ভিত্তিতে এই রেড জোন ঘোষণা করা হচ্ছে। এটা কেবল ঢাকা এবং চট্টগ্রামের জন্য প্রযোজ্য। বাকি জেলাগুলোতে ১৪ দিনের ভেতরে ১ লাখ জনসংখ্যা ১০ জন থাকলে সেটাকে রেড জোন ঘোষণা করা হবে।

সভা সিদ্ধান্ত হয় : উত্তর সিটি করপোরেশনের যে ১৭ এলাকাকে রেডজোন হিসেবে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো-বসুন্ধরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রাজাবাজার, উত্তরা। দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকার মধ্যে আছে- যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, বাসাবো, শান্তিনগর, পরিবাগ, পল্টন, আজিমপুর, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।

৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে। পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী গত ৩০ মে ছুটি শেষ হয়। বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় সম্পূর্ণ লকডাউন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে পরীক্ষামূলকভাবে ‘রেডজোন’ হিসেবে সম্পূর্ণ লকডাউন বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে করোনাভাইরাসের সংখ্যা বিবেচনা করে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ৪৫টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ১৯ এবং দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকা আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ১১টি এলাকা রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের বাইরে তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সবকটি উপজেলাকে রেডজোনের আওতায় আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে পূর্ব রাজাবাজার ছাড়া অন্য কোন এলাকাকে এখনও আনুষ্ঠানিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ডেপুটি পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সচিব ডা. জহিরুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, গত ১১ জুন কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত ১৪ দিনে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার ভেতরে ৬০ জন রোগীর থাকার ভিত্তিতে এই রেডজোন ঘোষণা করা হচ্ছে। এটা কেবল ঢাকা এবং চট্টগ্রামের জন্য প্রযোজ্য। বাকি জেলাগুলোতে ১৪ দিনের ভেতরে ১ লাখ জনসংখ্যা ১০ জন থাকলে সেটাকে রেডজোন ঘোষণা করা হবে।

মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ , ২ আষাঢ় ১৪২৭, ২৩ শাওয়াল ১৪৪

রেড-ইয়েলো-গ্রিন জোন

ঘোষণা বাস্তবায়ন নিয়ে বিভ্রান্তি

সারাদেশে ৬৫টি এলাকাকে রেডজোন ঘোষণার সুপারিশ

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

সমন্বয়হীনতার কারণে জোনভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্ত। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে করোনা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি থেকে ঢাকা মহানগরী ৪৫টি ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১১টিসহ সারাদেশে প্রায় ৬৫টি এলাকাকে সম্পূর্ণ লকডাউনের (রেডজোন) ঘোষণার সুপারিশ করা হয়। সে হিসেবে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনের প্রথমে রেড ও ইয়েলো জোনে রেড ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরে তা সংশোধন করে শুধু রেড জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে রেডজোনের তালিকা প্রকাশ করা হলেও সরকারিভাবে রেড, ইয়েলো ও গ্রিনের তালিকা দিয়ে কোন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। তাই কোন এলাকা রেড ও কোন এলাকা ইয়োলো তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্ত।

তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বিকেলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। করোনা প্রতিরোধে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই সেনাসদস্যরা টহল দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান। কিন্তু রাজধানীর কোন এলাকায় পুলিশ বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে দেখা যায়নি বলে জানায় স্থানীয়রা।

বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার লকডাউনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাতে কোন কাজ হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এবং করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান। তিনি মুঠোফোনে সংবাদকে বলেন, টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ ভৌগলিক লকডাউন ঘোষণা করার। যেন পুরো ঢাকা শহর ও পুরো নারায়ণগঞ্জকে লকডাউন করতে হবে। ঢাকা শহরকে এভাবে জোন ভাগ করে লকডাউনে কোন কাজ হবে না। কিন্তু টেকনিক্যাল কমিটিকে পাত্তা দেয়া হয়নি সরকারি আমলারা। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইনে স্পষ্ট লেখা আছে সংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণে কার কি দায়িত্ব। কিন্তু দেয়া যায় এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। আইন অনুযায়ী কার্যক্রম ও পদক্ষেপ দেয়া আছে। কিন্তু সেই দায়িত্ব জনপ্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা নিজের মতো ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় লকডাউন বাস্তবায়নের কাজে যারা জড়িত সিটি করপোরেশন ও পুলিশ কেউ তা জানে না। টেকনিক্যাল কমিটির সঠিক পরামর্শ বাস্তবায়ন করা উচিত।

এদিকে জোনভিত্তিক লকডাউন ঘোষণার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়েছেন ডিএনসিসি’র মেয়র আতিকুর রহমান। গতকাল গণমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন যে ১৭টি এলাকা রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সেগুলোর সুনির্দিষ্ট ম্যাপিং পাওয়ার পর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লকডাউন কার্যকর করা যাবে। সামনে ১৭টি এলাকায় লকডাউন হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি বলেছি যত দ্রুত আমাদের ম্যাপ দেয়া হবে তত দ্রুত ব্যবস্থা নেব। অনেক বড় বড় এলাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা চাচ্ছি যত কনফাইন করে আমাদের দেয়া যাবে তত আমাদের ম্যানেজ করতে সুবিধা হবে। রেডজোনিং একটা হিউজ ম্যানেজমেন্ট। কাউন্সিলর, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে মিলে কিন্তু কাজ করতে হয়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর অথবা সরকারি কোন সংস্থা থেকে ডিএনসিসি’র রেড ও ইয়োলো জোনের তালিকা দেয়া হয়নি। গণমাধ্যমে রেডজোনের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিন্তু ইয়োলো জোনের কোন তালিকা আমাদের কাছে নেই। এদিকে লকডাউন বাস্তবায়নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)’র নগর ভবনে আজ মেয়রের সভাপতিত্বে এক সমন্বয় সভায় অনুষ্ঠিত হবে বলে ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তবে ঢাকা মহানগরীতে রেডজোন হিসেবে সম্পূর্ণ লকডাউন বাস্তবায়নের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কোন নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি)। এ বিষয়ে ডিএমপি’র ডিসি মিডিয়া মো. ওয়ালিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, করোনা মোকাবেলায় তিন মাস আগ থেকে আমরা কাজ করছি। তবে ঢাকা মহানগরীতে জোনিং হিসেবে লকডাউন ঘোষণার কোন নির্দেশনা আমরা এখনো পায়নি। ঢাকায় কোন কোন এলাকা রেডজোন ঘোষণা করা হবে সে তালিকা এখনো আমাদের দেয়া হয়নি। তাই রেড জোন হিসেবে সম্পূর্ণ লকডাউন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসে রোগীর সংখ্যা বিবেচনা করে রেড (লাল), ইয়োলো (হদুল) ও গ্রিন (সবুজ) জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বেশি করোনা আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়োলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা আক্রান্ত মুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেডজোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়োলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও। লকডাউনের মেয়াদ হবে ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত। গত ১১ জুন করোনা প্রতিরোধে সরকারের কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় ঢাকা মহানগরীতে ৪৫টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া ঢাকা সিটি করপোশেনের বাইরে তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সবকটি উপজেলাকে রেডজোনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটির ১০ এলাকাকে রেডজোনের মধ্যে রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো, কোতোয়ালির ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, বন্দরে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড। গত ১৪ দিনের প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার ভেতরে ৬০ জন রোগীর থাকার ভিত্তিতে এই রেড জোন ঘোষণা করা হচ্ছে। এটা কেবল ঢাকা এবং চট্টগ্রামের জন্য প্রযোজ্য। বাকি জেলাগুলোতে ১৪ দিনের ভেতরে ১ লাখ জনসংখ্যা ১০ জন থাকলে সেটাকে রেড জোন ঘোষণা করা হবে।

সভা সিদ্ধান্ত হয় : উত্তর সিটি করপোরেশনের যে ১৭ এলাকাকে রেডজোন হিসেবে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো-বসুন্ধরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রাজাবাজার, উত্তরা। দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকার মধ্যে আছে- যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, বাসাবো, শান্তিনগর, পরিবাগ, পল্টন, আজিমপুর, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।

৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে। পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী গত ৩০ মে ছুটি শেষ হয়। বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় সম্পূর্ণ লকডাউন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে পরীক্ষামূলকভাবে ‘রেডজোন’ হিসেবে সম্পূর্ণ লকডাউন বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে করোনাভাইরাসের সংখ্যা বিবেচনা করে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ৪৫টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ১৯ এবং দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকা আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ১১টি এলাকা রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের বাইরে তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সবকটি উপজেলাকে রেডজোনের আওতায় আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে পূর্ব রাজাবাজার ছাড়া অন্য কোন এলাকাকে এখনও আনুষ্ঠানিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ডেপুটি পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সচিব ডা. জহিরুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, গত ১১ জুন কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত ১৪ দিনে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার ভেতরে ৬০ জন রোগীর থাকার ভিত্তিতে এই রেডজোন ঘোষণা করা হচ্ছে। এটা কেবল ঢাকা এবং চট্টগ্রামের জন্য প্রযোজ্য। বাকি জেলাগুলোতে ১৪ দিনের ভেতরে ১ লাখ জনসংখ্যা ১০ জন থাকলে সেটাকে রেডজোন ঘোষণা করা হবে।