চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তের বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে ‘পুলিশ বাহিনী’র তথ্য মাঝেমধ্যে বলা হলেও ‘চিকিৎসক’ ও অন্য ‘স্বাস্থ্যকর্মী’ আক্রান্তের বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ হচ্ছে না। কতজন চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত ও কতজন চিকিৎসক করোনায় মারা গেছেন তা সুনির্দিষ্ট করে প্রকাশ করছে না অধিদফতর। করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানেও অধিদফতরের গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলোর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো স্বাস্থ্যকর্মীর করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেব রাখছেন। সংগঠনগুলোর হিসেবে, করোনায় সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মারা গেছেন ন্যূনতম ২৯ জন চিকিৎসক।

গত ১৩ জুন চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’র (বিএমএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত এক হাজার তিন জন চিকিৎসক, ৮৫৩ জন নার্স এবং এক হাজার ৩০৮ জন অন্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২৮ চিকিৎসকের। এছাড়াও করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে পাঁচ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।’

বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তাদের (স্বাস্থ্যকর্মী) জন্য আমাদের কান্না নয়, বরং তাদের বীরত্বগাঁথা ও সাহসী আত্মৎসর্গ আমাদের গৌরবান্বিত করেছে এবং আগামীর দূর্গমযাত্রায় আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছে।’

চিকিৎসকরা বলেছেন, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসকরাই হলো- ফ্রন্টলাইন ফাইটার (সম্মুখসারীর যোদ্ধা)। অথচ তাদের নিয়েই স্বাস্থ্য অধিদফতরের চরম অবহেলা। কতোজন চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত হলো, কতজন করোনায় মারা গেছেন, কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনায় আক্রান্তের কারণ সর্ম্পকে যদি নিয়মিত বুলেটিনে ব্যাখ্যা করা হতো তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকে অধিকতর সচেতনাবোধ জাগত হতো।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক সহকারী পরিচালক ডা. রোকেয়া খাতুন সংবাদকে বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় চিকিৎসকরা সামনে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পেশাগতভাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মারাও গেছেন চিকিৎসক। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো- চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকদের কোন তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত ও মারা যাওয়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা ও অন্য তথ্য প্রকাশ হলে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকে আরও বেশি সচেতন হতো। মাস্ক ব্যবহার, সাবান দিয়ে বারবার হাত পরিষ্কার করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, জনসমাগম এড়িয়ে চলাসহ অন্য স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকেও সচেতন হতো।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, ‘পেশাগতভাবে এখন পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীর করোনা আক্রান্ত সদস্যদের ভালো চিকিৎসাসেবা হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত পুলিশের চিকিৎসায় নিজস্ব হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও একটি বেসরকারি হাসপাতাল পুলিশের চিকিৎসায় নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করেছে পুলিশ সদর দফতর। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের চরম উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। নামকাওয়াস্তে সংস্থাটি গত সপ্তাহে মহাখালির গেস্ট্রোলজি শেখ রাসেল হাসপাতালকে স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করেছে।’

দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ এপ্রিল মারা যান সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈনউদ্দীন আহমেদ। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এই সময় থেকেই করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সর্ম্পকে আইইডিসিআর ধারাবাহিকভাবে প্রেসব্রিফিং এবং পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদফতর অনলাইনে বুলেটিনের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের তথ্য প্রকাশ করছে।

মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ , ২ আষাঢ় ১৪২৭, ২৩ শাওয়াল ১৪৪

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তের বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে ‘পুলিশ বাহিনী’র তথ্য মাঝেমধ্যে বলা হলেও ‘চিকিৎসক’ ও অন্য ‘স্বাস্থ্যকর্মী’ আক্রান্তের বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ হচ্ছে না। কতজন চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত ও কতজন চিকিৎসক করোনায় মারা গেছেন তা সুনির্দিষ্ট করে প্রকাশ করছে না অধিদফতর। করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানেও অধিদফতরের গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলোর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো স্বাস্থ্যকর্মীর করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেব রাখছেন। সংগঠনগুলোর হিসেবে, করোনায় সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মারা গেছেন ন্যূনতম ২৯ জন চিকিৎসক।

গত ১৩ জুন চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’র (বিএমএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত এক হাজার তিন জন চিকিৎসক, ৮৫৩ জন নার্স এবং এক হাজার ৩০৮ জন অন্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২৮ চিকিৎসকের। এছাড়াও করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে পাঁচ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।’

বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তাদের (স্বাস্থ্যকর্মী) জন্য আমাদের কান্না নয়, বরং তাদের বীরত্বগাঁথা ও সাহসী আত্মৎসর্গ আমাদের গৌরবান্বিত করেছে এবং আগামীর দূর্গমযাত্রায় আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছে।’

চিকিৎসকরা বলেছেন, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসকরাই হলো- ফ্রন্টলাইন ফাইটার (সম্মুখসারীর যোদ্ধা)। অথচ তাদের নিয়েই স্বাস্থ্য অধিদফতরের চরম অবহেলা। কতোজন চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত হলো, কতজন করোনায় মারা গেছেন, কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনায় আক্রান্তের কারণ সর্ম্পকে যদি নিয়মিত বুলেটিনে ব্যাখ্যা করা হতো তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকে অধিকতর সচেতনাবোধ জাগত হতো।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক সহকারী পরিচালক ডা. রোকেয়া খাতুন সংবাদকে বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় চিকিৎসকরা সামনে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পেশাগতভাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মারাও গেছেন চিকিৎসক। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো- চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকদের কোন তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত ও মারা যাওয়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা ও অন্য তথ্য প্রকাশ হলে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকে আরও বেশি সচেতন হতো। মাস্ক ব্যবহার, সাবান দিয়ে বারবার হাত পরিষ্কার করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, জনসমাগম এড়িয়ে চলাসহ অন্য স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকেও সচেতন হতো।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, ‘পেশাগতভাবে এখন পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীর করোনা আক্রান্ত সদস্যদের ভালো চিকিৎসাসেবা হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত পুলিশের চিকিৎসায় নিজস্ব হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও একটি বেসরকারি হাসপাতাল পুলিশের চিকিৎসায় নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করেছে পুলিশ সদর দফতর। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের চরম উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। নামকাওয়াস্তে সংস্থাটি গত সপ্তাহে মহাখালির গেস্ট্রোলজি শেখ রাসেল হাসপাতালকে স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করেছে।’

দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ এপ্রিল মারা যান সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈনউদ্দীন আহমেদ। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এই সময় থেকেই করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সর্ম্পকে আইইডিসিআর ধারাবাহিকভাবে প্রেসব্রিফিং এবং পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদফতর অনলাইনে বুলেটিনের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের তথ্য প্রকাশ করছে।