স্থাপিত হচ্ছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট

বন্দর নগরীর চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে ‘সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট’। ১৫ দিনের মধ্যে এই প্ল্যান্ট চালু হবে বলে জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট মেটাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ‘এসআলম গ্রুপ’ এই প্ল্যান্ট চালু করার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছেন।

এর আগে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ, হাই ফ্লো অক্সিজেন দিয়েছে এসআলম গ্রুপ।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তা জামাল বলেন, আমরা দিনে দুই বার অক্সিজেন সিলিন্ডার আনি। কিন্তু গত তিন-চার দিন ধরে অক্সিজেনের চাহিদা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। আমরা যে মাত্রায় রোগীকে অক্সিজেন সাপ্লাই দিই, সেটাতে হচ্ছে না। অনেক রোগী নিজেরাই অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো শিখে গেছে। নিজেরাই বাড়িয়ে দিচ্ছেন। দ্রুত সিলিন্ডার শেষ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের করোনা ইউনিটটা ছয় তলায়, সিলিন্ডার থাকে দোতলায় স্টোর রুমে। হুট করে সিলিন্ডার শেষ হয়ে গেলে স্টোর রুমে গিয়ে আনতে আনতে দেখা যায় রোগী মারা যাচ্ছে কিংবা অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।

এই প্ল্যান্টটি বাস্তবায়নে এসআলম গ্রুপের সঙ্গে মেডিট্রেড নামে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫০ টাকায় জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির কার্যাদেশ দিয়েছে এই শিল্প গ্রুপ।

জানা গেল, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় আড়াইশ’ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল চালু করা হলেও শুরু থেকেই অক্সিজেন সংকটে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। ১০ শয্যার আইসিইউ চালু থাকলেও সেখানে অক্সিজেন ব্যবহার করা হচ্ছে সিলিন্ডারের মাধ্যমে। প্রয়োজনে তুলনায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কম থাকায় অনেক রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে সীতাকু-ের এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সময়মতো অক্সিজেন না পাওয়ায় জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ছাড়া আসলে নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা দেয়াটা ডিফিকাল্ট। দুইটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর স্থাপনও জরুরি। এগুলোর বিষয়ে অধিদফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সার্ভে করা হয়েছে।

এর আগে, গত ২২ মে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এসআলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই করোনায় আক্রান্ত মোরশেদুল আলম মারা যান। মাসুদের মা-ছেলে, আরও চার ভাইসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হন। মূলত ‘অক্সিজেন সংকটে’ ভাইয়ের মৃত্যুর পর চট্টগ্রামে করোনার চিকিৎসায় সংকট মেটাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন সাইফুল আলম মাসুদ।

এসআলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব (পিএ) মো. আকিজ উদ্দিন বলেন, জেনারেল হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে আমরা মৌখিকভাবে কথা বলেছি। তারা সম্মতি দিয়েছেন। এরপর আমরা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছি। আমাদের ৮৫ লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের প্ল্যান্ট বুঝিয়ে দেবেন। প্ল্যান্ট থেকে পাইপের মাধ্যমে প্রত্যেক বেডে অক্সিজেন সাপ্লাই হবে। কাজ শেষ হলে আমরা চিঠি দিয়ে সেটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিব।

মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ , ২ আষাঢ় ১৪২৭, ২৩ শাওয়াল ১৪৪

চট্টগ্রাম

স্থাপিত হচ্ছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো

বন্দর নগরীর চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে ‘সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট’। ১৫ দিনের মধ্যে এই প্ল্যান্ট চালু হবে বলে জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট মেটাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ‘এসআলম গ্রুপ’ এই প্ল্যান্ট চালু করার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছেন।

এর আগে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ, হাই ফ্লো অক্সিজেন দিয়েছে এসআলম গ্রুপ।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তা জামাল বলেন, আমরা দিনে দুই বার অক্সিজেন সিলিন্ডার আনি। কিন্তু গত তিন-চার দিন ধরে অক্সিজেনের চাহিদা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। আমরা যে মাত্রায় রোগীকে অক্সিজেন সাপ্লাই দিই, সেটাতে হচ্ছে না। অনেক রোগী নিজেরাই অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো শিখে গেছে। নিজেরাই বাড়িয়ে দিচ্ছেন। দ্রুত সিলিন্ডার শেষ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের করোনা ইউনিটটা ছয় তলায়, সিলিন্ডার থাকে দোতলায় স্টোর রুমে। হুট করে সিলিন্ডার শেষ হয়ে গেলে স্টোর রুমে গিয়ে আনতে আনতে দেখা যায় রোগী মারা যাচ্ছে কিংবা অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।

এই প্ল্যান্টটি বাস্তবায়নে এসআলম গ্রুপের সঙ্গে মেডিট্রেড নামে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫০ টাকায় জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির কার্যাদেশ দিয়েছে এই শিল্প গ্রুপ।

জানা গেল, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় আড়াইশ’ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল চালু করা হলেও শুরু থেকেই অক্সিজেন সংকটে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। ১০ শয্যার আইসিইউ চালু থাকলেও সেখানে অক্সিজেন ব্যবহার করা হচ্ছে সিলিন্ডারের মাধ্যমে। প্রয়োজনে তুলনায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কম থাকায় অনেক রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে সীতাকু-ের এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সময়মতো অক্সিজেন না পাওয়ায় জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ছাড়া আসলে নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা দেয়াটা ডিফিকাল্ট। দুইটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর স্থাপনও জরুরি। এগুলোর বিষয়ে অধিদফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সার্ভে করা হয়েছে।

এর আগে, গত ২২ মে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এসআলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই করোনায় আক্রান্ত মোরশেদুল আলম মারা যান। মাসুদের মা-ছেলে, আরও চার ভাইসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হন। মূলত ‘অক্সিজেন সংকটে’ ভাইয়ের মৃত্যুর পর চট্টগ্রামে করোনার চিকিৎসায় সংকট মেটাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন সাইফুল আলম মাসুদ।

এসআলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব (পিএ) মো. আকিজ উদ্দিন বলেন, জেনারেল হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে আমরা মৌখিকভাবে কথা বলেছি। তারা সম্মতি দিয়েছেন। এরপর আমরা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছি। আমাদের ৮৫ লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের প্ল্যান্ট বুঝিয়ে দেবেন। প্ল্যান্ট থেকে পাইপের মাধ্যমে প্রত্যেক বেডে অক্সিজেন সাপ্লাই হবে। কাজ শেষ হলে আমরা চিঠি দিয়ে সেটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিব।