পরিস্থিতি বিবেচনায় রেডজোন ঘোষণা

বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সিভিল প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্রবাহিনী

রেডজোন ঘোষণা বা রেডজোন পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই যখন প্রয়োজন তখন রেডজোন ঘোষণা করা হবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রামাঞ্চলে কলকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন কারখানায় কাজ করা ও সড়কপথ, নদীপথ ও রেলপথে জোনের ভেতরে সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করাসহ রেডজোনে মানতে হবে ১৩ দফা বিধিনিষেধ। গত সোমবার এক নির্দেশনায় এই তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি সারা বাংলাদেশের রেডজোন চিহ্নিত করে সুপারিশ করেছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ অব্যাহতভাবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং অধিকতর বাস্তবমুখী সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অনুযায়ী ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংজ্ঞানুযায়ী যখন যেখানে প্রয়োজন, রেডজোন ঘোষণা করা হবে। রেডজোন ঘোষণা বা রেডজোন পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই যখন যা প্রয়োজন তা করা হবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করবে। এই বিষয়ে সবার বিভ্রান্তি নিরসন হওয়া প্রয়োজন। জনসাধারণের জীবন-জীবিকা নির্বাহের বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার কর্তৃক সারাদেশে ঘোষিত ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির পর গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন-২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১ নং আইন)-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ১০ জুন ২০২০ কতিপয় নির্দেশাবলী জারি করেন। এই নির্দেশাবলীর উদ্দেশ্য কোভিড-১৯ রোগের চলমান ঝুঁকি বিচেনায় বাংলাদেশের যেকোন ছোট বা বড় এলাকাকে লাল, হলুদ বা সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা এবং তা বাস্তবায়ন করা। জোন ঘোষণার ক্ষমতা আইনানুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের নিকট অর্পণ করা হয় এবং বলা হয় তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, জোন সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন অংশে কার্যকর হবে এবং এর পরিধি কি হবে তা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্থানীয় কমিটিগুলোকে নির্ধারণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত কৌশল বা গাইড তৈরি করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে বিতরণ করেছে। এ ছাড়া জোনের সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল বিভিন্ন সময়ে পর্যালোচনা করে পরামর্শ দেয়ার জন্য একটি কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছিল স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জোনিং সিস্টেমের হালনাগাদ সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল অনুযায়ী অব্যাহতভাবে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে এবং জোনিং সিস্টেম চালু করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নির্দেশাবলীতে প্রাথমিকভাবে ৩টি জেলায় (গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজাবাজার (পূর্ব রাজাবাজার) এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীতে পরীক্ষামূলকভাবে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ এবং নরসিংদী জেলার নির্বাচিত এলাকায় এবং ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ঢাকার ওয়ারীতে জোনিং সিস্টেম চালুর জন্য সুনির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। এই পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেমের অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য এলাকায় জোনিং সিস্টেম চালু বা পরিবর্তনের বিষয়ে সহায়ক হবে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও সিটি করপোরেশনও বর্ণিত কৌশল ও গাইড অনুযায়ী স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। সেই অনুযায়ী তারা প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নপূর্বক স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত অনুযায়ী জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপও অব্যাহতভাবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং অধিকতর বাস্তবমুখী সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তদানুযায়ী ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংজ্ঞানুযায়ী যেখানে যখন প্রয়োজন তখন রেডজোন ঘোষণা করা হবে। কাজেই রেডজোন ঘোষণা বা রেডজোন পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া।

প্রাথমিকভাবে রেডজোনে মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ তা উল্লেখ করা হয়েছে নির্দেশনায়। নির্দেশনাগুলো হলো-১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্ধিত সময়ে কৃষি কাজ কাজ করা যাবে। ২. স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রামাঞ্চলে কলকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন কারখানায় কাজ করা যাবে। তবে শহরাঞ্চলে সব বন্ধ থাকবে। ৩. বাসা থেকেই অফিসের কাজ করতে হবে। ৪. কোন ধরনের জনসমাবেশ করা যাবে না। কেবলমাত্র অসুস্থ ব্যক্তি হাসপাতালে যেতে পারবেন। ৫. স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধুমাত্র প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে পারবেন। রিকশা-ভ্যান, সিএনজি, ট্যাক্সি বা নিজস্ব গাড়ি চলাচল করবে না। ৬. সড়কপথ, নদীপথ ও রেলপথে জোনের ভেতরে কোন যান চলাচল করবে না। ৭. জোনের ভেতরে ও বাইরে মালবাহী নৌযান ও জাহাজ কেবলমাত্র রাতে চলাচল করতে পারবে। ৮. প্রত্যেক এলাকায় সীমিত পরিমাণে প্রবেশ ও বহিরাগমন পয়েন্ট নির্ধারণ করে কঠোরভাবে জনগণের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৯. এই জোনের অন্তর্গত মুদি দোকান ও ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। রেস্টুরেন্ট ও খাবার দোকানে কেবলমাত্র হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু থাকবে। বাজারে শুধুমাত্র প্রয়োজনে যাওয়া যাবে। তবে শপিংমল, সিনেমা হল, জিম/স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। ১০. আর্থিক লেনদেন বিষয়ক কার্যক্রম যেমন টাকা জমাদান/উত্তোলন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেবলমাত্র এটিএম-এর মাধ্যমে করা যাবে। তবে সীমিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। ১১. এলাকার রোগীদের পর্যাপ্ত কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করা হবে। শনাক্ত রোগীরা হোম আইসোলেশন বা প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে থাকবেন। ১২. শুধুমাত্র মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মসজিদ/উপাসনালয়ে সামাজিক দূরত্ব রেখে ইবাদত করতে পারবেন। ১৩. সাধারণভাবে রেডজোন ২১ দিনের জন্য বলবৎ হবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে রেডজোন পরিবর্তন করা হবে।

রেডজোনসহ বাংলাদেশের সব অঞ্চলে যেসব নিয়মাবলী পালন করতে হবে- ক. সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। হাত ধোয়া, জীবাণুমুক্তকরণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। খ. করোনা রোগ/সংক্রমণ শনাক্তকরণ, তাদের আইসোলেশন ও চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। গ. সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। ঘ. স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, হাসপাতাল ও জরুরি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। অসুস্থ ব্যক্তি পরিবহনকারী যান/ ব্যক্তিগত গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে চলাচল করবে। ঙ. সকল প্রকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। চ. এসব কার্যক্রমের তদারকির জন্য কার্যকর সামাজিক সম্পৃক্ততা এবং মাঠকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১৫ জুন জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করতে হবে। উল্লেখ্য, রেডজোন বাস্তবায়নকালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সবার প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবাসহ অন্যান্য সুবিধা-অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বুধবার, ১৭ জুন ২০২০ , ৩ আষাঢ় ১৪২৭, ২৪ শাওয়াল ১৪৪১

করোনা সংযমনে স্বাস্থ্য অধিদফতর

পরিস্থিতি বিবেচনায় রেডজোন ঘোষণা

বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সিভিল প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্রবাহিনী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রেডজোন ঘোষণা বা রেডজোন পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই যখন প্রয়োজন তখন রেডজোন ঘোষণা করা হবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রামাঞ্চলে কলকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন কারখানায় কাজ করা ও সড়কপথ, নদীপথ ও রেলপথে জোনের ভেতরে সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করাসহ রেডজোনে মানতে হবে ১৩ দফা বিধিনিষেধ। গত সোমবার এক নির্দেশনায় এই তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি সারা বাংলাদেশের রেডজোন চিহ্নিত করে সুপারিশ করেছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ অব্যাহতভাবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং অধিকতর বাস্তবমুখী সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অনুযায়ী ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংজ্ঞানুযায়ী যখন যেখানে প্রয়োজন, রেডজোন ঘোষণা করা হবে। রেডজোন ঘোষণা বা রেডজোন পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই যখন যা প্রয়োজন তা করা হবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করবে। এই বিষয়ে সবার বিভ্রান্তি নিরসন হওয়া প্রয়োজন। জনসাধারণের জীবন-জীবিকা নির্বাহের বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার কর্তৃক সারাদেশে ঘোষিত ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির পর গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন-২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১ নং আইন)-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ১০ জুন ২০২০ কতিপয় নির্দেশাবলী জারি করেন। এই নির্দেশাবলীর উদ্দেশ্য কোভিড-১৯ রোগের চলমান ঝুঁকি বিচেনায় বাংলাদেশের যেকোন ছোট বা বড় এলাকাকে লাল, হলুদ বা সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা এবং তা বাস্তবায়ন করা। জোন ঘোষণার ক্ষমতা আইনানুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের নিকট অর্পণ করা হয় এবং বলা হয় তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, জোন সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন অংশে কার্যকর হবে এবং এর পরিধি কি হবে তা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্থানীয় কমিটিগুলোকে নির্ধারণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত কৌশল বা গাইড তৈরি করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে বিতরণ করেছে। এ ছাড়া জোনের সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল বিভিন্ন সময়ে পর্যালোচনা করে পরামর্শ দেয়ার জন্য একটি কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছিল স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জোনিং সিস্টেমের হালনাগাদ সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল অনুযায়ী অব্যাহতভাবে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে এবং জোনিং সিস্টেম চালু করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নির্দেশাবলীতে প্রাথমিকভাবে ৩টি জেলায় (গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজাবাজার (পূর্ব রাজাবাজার) এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীতে পরীক্ষামূলকভাবে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ এবং নরসিংদী জেলার নির্বাচিত এলাকায় এবং ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ঢাকার ওয়ারীতে জোনিং সিস্টেম চালুর জন্য সুনির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। এই পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেমের অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য এলাকায় জোনিং সিস্টেম চালু বা পরিবর্তনের বিষয়ে সহায়ক হবে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও সিটি করপোরেশনও বর্ণিত কৌশল ও গাইড অনুযায়ী স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। সেই অনুযায়ী তারা প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নপূর্বক স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত অনুযায়ী জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপও অব্যাহতভাবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং অধিকতর বাস্তবমুখী সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তদানুযায়ী ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংজ্ঞানুযায়ী যেখানে যখন প্রয়োজন তখন রেডজোন ঘোষণা করা হবে। কাজেই রেডজোন ঘোষণা বা রেডজোন পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া।

প্রাথমিকভাবে রেডজোনে মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ তা উল্লেখ করা হয়েছে নির্দেশনায়। নির্দেশনাগুলো হলো-১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্ধিত সময়ে কৃষি কাজ কাজ করা যাবে। ২. স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রামাঞ্চলে কলকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন কারখানায় কাজ করা যাবে। তবে শহরাঞ্চলে সব বন্ধ থাকবে। ৩. বাসা থেকেই অফিসের কাজ করতে হবে। ৪. কোন ধরনের জনসমাবেশ করা যাবে না। কেবলমাত্র অসুস্থ ব্যক্তি হাসপাতালে যেতে পারবেন। ৫. স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধুমাত্র প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে পারবেন। রিকশা-ভ্যান, সিএনজি, ট্যাক্সি বা নিজস্ব গাড়ি চলাচল করবে না। ৬. সড়কপথ, নদীপথ ও রেলপথে জোনের ভেতরে কোন যান চলাচল করবে না। ৭. জোনের ভেতরে ও বাইরে মালবাহী নৌযান ও জাহাজ কেবলমাত্র রাতে চলাচল করতে পারবে। ৮. প্রত্যেক এলাকায় সীমিত পরিমাণে প্রবেশ ও বহিরাগমন পয়েন্ট নির্ধারণ করে কঠোরভাবে জনগণের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৯. এই জোনের অন্তর্গত মুদি দোকান ও ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। রেস্টুরেন্ট ও খাবার দোকানে কেবলমাত্র হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু থাকবে। বাজারে শুধুমাত্র প্রয়োজনে যাওয়া যাবে। তবে শপিংমল, সিনেমা হল, জিম/স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। ১০. আর্থিক লেনদেন বিষয়ক কার্যক্রম যেমন টাকা জমাদান/উত্তোলন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেবলমাত্র এটিএম-এর মাধ্যমে করা যাবে। তবে সীমিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। ১১. এলাকার রোগীদের পর্যাপ্ত কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করা হবে। শনাক্ত রোগীরা হোম আইসোলেশন বা প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে থাকবেন। ১২. শুধুমাত্র মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মসজিদ/উপাসনালয়ে সামাজিক দূরত্ব রেখে ইবাদত করতে পারবেন। ১৩. সাধারণভাবে রেডজোন ২১ দিনের জন্য বলবৎ হবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে রেডজোন পরিবর্তন করা হবে।

রেডজোনসহ বাংলাদেশের সব অঞ্চলে যেসব নিয়মাবলী পালন করতে হবে- ক. সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। হাত ধোয়া, জীবাণুমুক্তকরণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। খ. করোনা রোগ/সংক্রমণ শনাক্তকরণ, তাদের আইসোলেশন ও চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। গ. সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। ঘ. স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, হাসপাতাল ও জরুরি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। অসুস্থ ব্যক্তি পরিবহনকারী যান/ ব্যক্তিগত গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে চলাচল করবে। ঙ. সকল প্রকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। চ. এসব কার্যক্রমের তদারকির জন্য কার্যকর সামাজিক সম্পৃক্ততা এবং মাঠকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১৫ জুন জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করতে হবে। উল্লেখ্য, রেডজোন বাস্তবায়নকালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সবার প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবাসহ অন্যান্য সুবিধা-অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।