৪৪ জেলায় টেস্টের কোন ব্যবস্থাই নেই ৯৫ শতাংশই নমুনা পরীক্ষা করাতে অপারগ
ঢাকার কমলাপুরের বাসিন্দা রোকসানা ফেরদৌস গত ৮ জুন থেকে সর্দি-জ¦রে ভুগছেন। হালকা শ্বাসকষ্টও ছিল। তিনি তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে চার দিন চেষ্টা করেও করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করাতে পারেননি। নমুনা পরীক্ষার জন্য ৩৫ বছরের ওই নারী মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধরনা দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এক পর্যায়ে নিজেকে সম্ভাব্য করোনা আক্রান্ত ধরে নিয়েই তিনি পরিচিত এক চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় আইসোলেশনে (সঙ্গনিরোধ) থেকে ওষুধ সেবন করছেন।
রাজধানীর খিলগাঁও থানার গোড়ানের স্থায়ী বাসিন্দা ‘নঈম’ নামের এক ব্যক্তি ৭/৮ দিন ধরে হালকা কাশি, মাথাব্যথা ও পাতলা পায়খানায় ভুগছেন। তিনি তার এক মামার (সরকারের অতিরিক্ত সচিব) মাধ্যমে নানাভাবে চেষ্টা করে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করাতে পারেননি। ‘নঈম’ও স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে ঢাকা ও অন্যান্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ের একটি বড় অংশই করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট যথাসময়ে পাচ্ছেন না। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়েই অনেকে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অন্যদেরও সংক্রমিত করছেন।
কুমিল্লার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ৯ জুন ওই জেলা শহরে সরকার নির্ধারিত করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) হাসপাতালে নমুনা জমা দেন। গতকাল তিনি রিপোর্ট হাতে পান ‘করোনা পজিটিভ’। এরপর থেকেই তিনি নিজ বাসায় আইসোলেশনে যান।
করোনার নমুনা পরীক্ষার এই সংকট শুধুমাত্র রাজধানীতে নয়, জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে এই সংকট ও সমস্যা আরও প্রকট। দেশের বেশির ভাগ অর্থাৎ ন্যূনতম ৪৪ জেলায় এখনও করোনা টেস্টের ব্যবস্থা নেই। করোনা উপসর্গ নিয়ে এক জেলার রোগী অন্য জেলায় ঘুরছেন নমুনা পরীক্ষার জন্য। এতে সংক্রমণের ঝুঁকিও পাল্লা নিয়ে বাড়ছে। সামাজিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হওয়া, যাতায়াত ভোগান্তিসহ নানা দুর্ভোগের কারণে অনেকেই এখন করোনা পরীক্ষার পেছনে ছুটছেন না। শারীরিক অবস্থার অস্বাভাবিক অবনতি ঘটলেই কেবল রোগীরা করোনা পরীক্ষার চেষ্টা করছেন।
১৫ জুন প্রকাশিত জার্মানভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা শনাক্তকরণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জনসংখ্যা অনুপাতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার হার দশমিক ২৯ শতাংশ। পরীক্ষার এ হারের দিক থেকে সারাবিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম। পরীক্ষার সুযোগ এখন পর্যন্ত রাজধানীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে।
টিআইবি বলেছে, জেলা পর্যায়ের মাত্র ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ হাসপাতাল নিজ জেলা থেকেই পরীক্ষা করাতে পারে। বাকি ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বিভাগীয় শহরে বা ঢাকায় পাঠাতে হয়। এছাড়াও টেকনোলজিস্ট সংকট, মেশিন নষ্ট থাকা, জনবল ও মেশিন সংক্রমিত হওয়া এবং সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যাচ্ছে না মনে করছে সংস্থাটি।
৯৫ শতাংশ আগ্রহী নমুনা পরীক্ষা করাতে অপারগ
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর আগ থেকেই গত সাড়ে তিনমাসে শতকরা প্রায় ৯৫ শতাংশ আগ্রহী ব্যক্তিই করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে পারেনি। তারা নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করেও নমুনা দেয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত কোভিড-১৯ হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট স্থানের সিরিয়াল পাননি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন হট লাইনের নম্বরে করোনার উপসর্গ বা উপসর্গহীন মানুষ নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে টেলিফোন করেছেন ১ কোটি ১২ লাখের বেশি মানুষ। এরমধ্যে ১৫ জুন পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭১৭ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। বাকি এক কোটি ছয় লাখের বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষার সুযোগ হয়নি। এ হিসেবে, প্রায় ৯৫ শতাংশ আগ্রহী মানুষই নমুনা পরীক্ষা করাতে অপারগ হয়েছেন।
এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি এবং করোনা মোকাবিলায় সরকার গঠিত ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র অন্যতম সদস্য প্রফেসর ডা. ইকবাল আর্সলান সংবাদকে বলেন, ‘করোনায় মানুষের জীবন রক্ষায় টেস্টের কোন বিকল্প নেই। ব্যাপকভাবে যদি টেস্ট করতে পারতাম, তাহলে এর স্কেলটা (সংক্রমণ বৃদ্ধির হার) বুঝতে পারতাম। কিন্তু টেস্ট করার লিমিটেশনের (সীমাবদ্ধতা) যে জায়গাটা, সে কারণে সংক্রমণের তারতম্যটা আমরা বুঝতে পারছি না।’
ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘যতবেশি টেস্ট, তত বেশি রোগীকে আমরা চিহ্নিত করতে পারব। এটা করতে পারলে সে রোগীতে যেমন আলাদা করা যায় তেমনি সেও অন্যদের থেকে আলাদা হতে পারে। কিন্তু টেস্ট আমাদের কম। বেশি দরকার ছিল।’
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন হট নম্বরে ফোন করেছে, তাদের হয়ত করোনা উপসর্গ ছিল, তাদের নমুনা পরীক্ষারও দরকার ছিল। সক্ষমতার ঘাটতির কারণে তাদের সবার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এখনও নমুনা পরীক্ষার জন্য আসা আগ্রহী ব্যক্তিদের আগাম সাক্ষাৎকার নিয়ে এবং সাক্ষাতে ওই ব্যক্তির শরীরে করোনার উপসর্গ থাকতে পারে-এমন ধারণার ওপর ভিত্তি করেই নমুনা নেয়া হচ্ছে না। এর ফলে করোনা উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই পরীক্ষা সুবিধার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। এভাবেই করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছেন।
করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে গতকাল সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৬১টি পরীক্ষাগারে ১৭ হাজার ২৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮৬২ জন এবং করোনায় ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ শনাক্তের এই অবস্থা থেকেই ধারণা করা যায়, এখন করোনায় আক্রান্তদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পরীক্ষার আওতায় বাইরে রয়েছেন।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হলেও করোনায় প্রথম মৃত্যু ঘটে গত ১৮ মার্চ। সর্বশেষ গতকাল দুপুর পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ২৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে।
বুধবার, ১৭ জুন ২০২০ , ৩ আষাঢ় ১৪২৭, ২৪ শাওয়াল ১৪৪১
৪৪ জেলায় টেস্টের কোন ব্যবস্থাই নেই ৯৫ শতাংশই নমুনা পরীক্ষা করাতে অপারগ
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
ঢাকার কমলাপুরের বাসিন্দা রোকসানা ফেরদৌস গত ৮ জুন থেকে সর্দি-জ¦রে ভুগছেন। হালকা শ্বাসকষ্টও ছিল। তিনি তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে চার দিন চেষ্টা করেও করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করাতে পারেননি। নমুনা পরীক্ষার জন্য ৩৫ বছরের ওই নারী মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধরনা দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এক পর্যায়ে নিজেকে সম্ভাব্য করোনা আক্রান্ত ধরে নিয়েই তিনি পরিচিত এক চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় আইসোলেশনে (সঙ্গনিরোধ) থেকে ওষুধ সেবন করছেন।
রাজধানীর খিলগাঁও থানার গোড়ানের স্থায়ী বাসিন্দা ‘নঈম’ নামের এক ব্যক্তি ৭/৮ দিন ধরে হালকা কাশি, মাথাব্যথা ও পাতলা পায়খানায় ভুগছেন। তিনি তার এক মামার (সরকারের অতিরিক্ত সচিব) মাধ্যমে নানাভাবে চেষ্টা করে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করাতে পারেননি। ‘নঈম’ও স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে ঢাকা ও অন্যান্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ের একটি বড় অংশই করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট যথাসময়ে পাচ্ছেন না। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়েই অনেকে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অন্যদেরও সংক্রমিত করছেন।
কুমিল্লার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ৯ জুন ওই জেলা শহরে সরকার নির্ধারিত করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) হাসপাতালে নমুনা জমা দেন। গতকাল তিনি রিপোর্ট হাতে পান ‘করোনা পজিটিভ’। এরপর থেকেই তিনি নিজ বাসায় আইসোলেশনে যান।
করোনার নমুনা পরীক্ষার এই সংকট শুধুমাত্র রাজধানীতে নয়, জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে এই সংকট ও সমস্যা আরও প্রকট। দেশের বেশির ভাগ অর্থাৎ ন্যূনতম ৪৪ জেলায় এখনও করোনা টেস্টের ব্যবস্থা নেই। করোনা উপসর্গ নিয়ে এক জেলার রোগী অন্য জেলায় ঘুরছেন নমুনা পরীক্ষার জন্য। এতে সংক্রমণের ঝুঁকিও পাল্লা নিয়ে বাড়ছে। সামাজিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হওয়া, যাতায়াত ভোগান্তিসহ নানা দুর্ভোগের কারণে অনেকেই এখন করোনা পরীক্ষার পেছনে ছুটছেন না। শারীরিক অবস্থার অস্বাভাবিক অবনতি ঘটলেই কেবল রোগীরা করোনা পরীক্ষার চেষ্টা করছেন।
১৫ জুন প্রকাশিত জার্মানভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা শনাক্তকরণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জনসংখ্যা অনুপাতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার হার দশমিক ২৯ শতাংশ। পরীক্ষার এ হারের দিক থেকে সারাবিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম। পরীক্ষার সুযোগ এখন পর্যন্ত রাজধানীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে।
টিআইবি বলেছে, জেলা পর্যায়ের মাত্র ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ হাসপাতাল নিজ জেলা থেকেই পরীক্ষা করাতে পারে। বাকি ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বিভাগীয় শহরে বা ঢাকায় পাঠাতে হয়। এছাড়াও টেকনোলজিস্ট সংকট, মেশিন নষ্ট থাকা, জনবল ও মেশিন সংক্রমিত হওয়া এবং সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যাচ্ছে না মনে করছে সংস্থাটি।
৯৫ শতাংশ আগ্রহী নমুনা পরীক্ষা করাতে অপারগ
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর আগ থেকেই গত সাড়ে তিনমাসে শতকরা প্রায় ৯৫ শতাংশ আগ্রহী ব্যক্তিই করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে পারেনি। তারা নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করেও নমুনা দেয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত কোভিড-১৯ হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট স্থানের সিরিয়াল পাননি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন হট লাইনের নম্বরে করোনার উপসর্গ বা উপসর্গহীন মানুষ নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে টেলিফোন করেছেন ১ কোটি ১২ লাখের বেশি মানুষ। এরমধ্যে ১৫ জুন পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭১৭ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। বাকি এক কোটি ছয় লাখের বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষার সুযোগ হয়নি। এ হিসেবে, প্রায় ৯৫ শতাংশ আগ্রহী মানুষই নমুনা পরীক্ষা করাতে অপারগ হয়েছেন।
এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি এবং করোনা মোকাবিলায় সরকার গঠিত ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র অন্যতম সদস্য প্রফেসর ডা. ইকবাল আর্সলান সংবাদকে বলেন, ‘করোনায় মানুষের জীবন রক্ষায় টেস্টের কোন বিকল্প নেই। ব্যাপকভাবে যদি টেস্ট করতে পারতাম, তাহলে এর স্কেলটা (সংক্রমণ বৃদ্ধির হার) বুঝতে পারতাম। কিন্তু টেস্ট করার লিমিটেশনের (সীমাবদ্ধতা) যে জায়গাটা, সে কারণে সংক্রমণের তারতম্যটা আমরা বুঝতে পারছি না।’
ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘যতবেশি টেস্ট, তত বেশি রোগীকে আমরা চিহ্নিত করতে পারব। এটা করতে পারলে সে রোগীতে যেমন আলাদা করা যায় তেমনি সেও অন্যদের থেকে আলাদা হতে পারে। কিন্তু টেস্ট আমাদের কম। বেশি দরকার ছিল।’
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন হট নম্বরে ফোন করেছে, তাদের হয়ত করোনা উপসর্গ ছিল, তাদের নমুনা পরীক্ষারও দরকার ছিল। সক্ষমতার ঘাটতির কারণে তাদের সবার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এখনও নমুনা পরীক্ষার জন্য আসা আগ্রহী ব্যক্তিদের আগাম সাক্ষাৎকার নিয়ে এবং সাক্ষাতে ওই ব্যক্তির শরীরে করোনার উপসর্গ থাকতে পারে-এমন ধারণার ওপর ভিত্তি করেই নমুনা নেয়া হচ্ছে না। এর ফলে করোনা উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই পরীক্ষা সুবিধার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। এভাবেই করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছেন।
করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে গতকাল সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৬১টি পরীক্ষাগারে ১৭ হাজার ২৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮৬২ জন এবং করোনায় ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ শনাক্তের এই অবস্থা থেকেই ধারণা করা যায়, এখন করোনায় আক্রান্তদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পরীক্ষার আওতায় বাইরে রয়েছেন।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হলেও করোনায় প্রথম মৃত্যু ঘটে গত ১৮ মার্চ। সর্বশেষ গতকাল দুপুর পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ২৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে।