সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ব্যাপক হারে : নেই নমুনা পরীক্ষার বুথ

রংপুরে করোনা সংক্রমণ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৭শ’ ছাড়িয়েছে তারপরেও এলাকাভিত্তিক লকডাউনের কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি জেলা প্রশাসন। সামাজিক দূরত্ব মানার কোন লক্ষণ নেই নগরীতে। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেন না, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পরেও প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়ান। আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন করার কোন পদক্ষেপ নেই। ইতোমধ্যে ১৪ জন মারা গেছেন।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা ৭শ’ ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে রংপুর নগরীতেই আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৫শ’ ছাড়িয়েছে। নমুনা পরীক্ষার জন্য এখনও কোন বুথ খেলা হয়নি। এরমধ্যে রংপুর নগরীসহ জেলার মাত্র ৫ হাজার ৮৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭শ’র বেশি পজিটিভ এসেছে। আক্রান্তের হার ২০ ভাগেরও বেশী। রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৩টি ওয়ার্ডে লোকসংখ্যা ১২ লাখ হলেও এখন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে সক্ষম হয়েছেন।

এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি করোনা পজিটিভ রোগী রয়েছে যাদের সংখ্যা ১২৫ জন। এ ছাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৩ জন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৯জন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২জন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬জন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৬জন, এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৪ জন। নগরীর ৮টি ওয়ার্ডে একজনও কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগী নেই, আবার ৯টি ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ১ থেকে ৩ জন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ওয়ার্ডে নমুনা পরীক্ষা করার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তাজ জানান প্রশাসনকে বলেও নমুনা পরীক্ষার বুথ স্থাপন করানো যায়নি। তাতেই আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে সব ওয়ার্ডে পরীক্ষা করালে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়তে পারে।

এদিকে নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন সিটি বাজারে সামাজিক দূরত্ব একেবারে মানা হচ্ছে না। এখানে শত শত নারী পুরুষ গা ঘেষাঘেঁষি করে বাজারে যাচ্ছেন। রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিটি বাজারকে পুরোপুরি লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তিন দিনেও তার বাস্তবায়ন নেই। অথচ বৈঠকে বলা হয় করোনার হটস্পট হচ্ছে সিটি বাজার।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও স্বীকার করেন সিটি বাজার সত্যি সত্যি করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও জানান, উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সিটি বাজার লকডাউন করার। আমি তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার কথা বলেছি। বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন।

এ ব্যাপারে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার জানান, আমরা নগরীর বিভিন্ন এলাকাকে রেডজোন, ইয়েলো জোনে চিহ্নিত করেছি। লকডাউন করার বিষয়টি আমরা আলোচনা করছি, সিদ্ধান্ত নেয়া হবে শীঘ্রই।

এছাড়াও নগরীর কোন মার্কেট শপিংমল সামাজিক দূরত্ব মানছে না। নেই কোন সংক্রমণ প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা। একই নগরীতে যানবাহন চলাচলে কোন নিয়ন্ত্রন নেই প্রশাসনের। তবে মঙ্গলবার থেকে প্রশাসন মাঠে নামলেও তা লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছে সাধারণ মানুষ।

এদিকে রংপুর নগরীর চাউল আমোদ এলাকায় ডা. আহসান হাবিব করোনা পজিটিভ হওয়ার পরেও ৫ দিন চেম্বারে বসে রোগী দেখেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় এলাকাবাসী তাকে চেম্বার থেকে বের করে দিয়ে লকডাউন করে দিয়েছে তার চেম্বার। একইভাবে নগরীর একটি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা করোনা পজিটিভ হওয়ার পর অফিস করলেও ব্যাংকটি লকডাউন করা হয়নি। সুপার মার্কেটের ৪ ব্যবসায়ী করোনা পজিটিভ হলেও কোন পদক্ষেপ নেই।

বুধবার, ১৭ জুন ২০২০ , ৩ আষাঢ় ১৪২৭, ২৪ শাওয়াল ১৪৪১

রংপুরে করোনা

সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ব্যাপক হারে : নেই নমুনা পরীক্ষার বুথ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুরে করোনা সংক্রমণ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৭শ’ ছাড়িয়েছে তারপরেও এলাকাভিত্তিক লকডাউনের কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি জেলা প্রশাসন। সামাজিক দূরত্ব মানার কোন লক্ষণ নেই নগরীতে। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেন না, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পরেও প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়ান। আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন করার কোন পদক্ষেপ নেই। ইতোমধ্যে ১৪ জন মারা গেছেন।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা ৭শ’ ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে রংপুর নগরীতেই আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৫শ’ ছাড়িয়েছে। নমুনা পরীক্ষার জন্য এখনও কোন বুথ খেলা হয়নি। এরমধ্যে রংপুর নগরীসহ জেলার মাত্র ৫ হাজার ৮৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭শ’র বেশি পজিটিভ এসেছে। আক্রান্তের হার ২০ ভাগেরও বেশী। রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৩টি ওয়ার্ডে লোকসংখ্যা ১২ লাখ হলেও এখন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে সক্ষম হয়েছেন।

এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি করোনা পজিটিভ রোগী রয়েছে যাদের সংখ্যা ১২৫ জন। এ ছাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৩ জন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৯জন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২জন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬জন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৬জন, এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৪ জন। নগরীর ৮টি ওয়ার্ডে একজনও কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগী নেই, আবার ৯টি ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ১ থেকে ৩ জন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ওয়ার্ডে নমুনা পরীক্ষা করার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তাজ জানান প্রশাসনকে বলেও নমুনা পরীক্ষার বুথ স্থাপন করানো যায়নি। তাতেই আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে সব ওয়ার্ডে পরীক্ষা করালে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়তে পারে।

এদিকে নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন সিটি বাজারে সামাজিক দূরত্ব একেবারে মানা হচ্ছে না। এখানে শত শত নারী পুরুষ গা ঘেষাঘেঁষি করে বাজারে যাচ্ছেন। রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিটি বাজারকে পুরোপুরি লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তিন দিনেও তার বাস্তবায়ন নেই। অথচ বৈঠকে বলা হয় করোনার হটস্পট হচ্ছে সিটি বাজার।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও স্বীকার করেন সিটি বাজার সত্যি সত্যি করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও জানান, উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সিটি বাজার লকডাউন করার। আমি তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার কথা বলেছি। বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন।

এ ব্যাপারে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার জানান, আমরা নগরীর বিভিন্ন এলাকাকে রেডজোন, ইয়েলো জোনে চিহ্নিত করেছি। লকডাউন করার বিষয়টি আমরা আলোচনা করছি, সিদ্ধান্ত নেয়া হবে শীঘ্রই।

এছাড়াও নগরীর কোন মার্কেট শপিংমল সামাজিক দূরত্ব মানছে না। নেই কোন সংক্রমণ প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা। একই নগরীতে যানবাহন চলাচলে কোন নিয়ন্ত্রন নেই প্রশাসনের। তবে মঙ্গলবার থেকে প্রশাসন মাঠে নামলেও তা লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছে সাধারণ মানুষ।

এদিকে রংপুর নগরীর চাউল আমোদ এলাকায় ডা. আহসান হাবিব করোনা পজিটিভ হওয়ার পরেও ৫ দিন চেম্বারে বসে রোগী দেখেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় এলাকাবাসী তাকে চেম্বার থেকে বের করে দিয়ে লকডাউন করে দিয়েছে তার চেম্বার। একইভাবে নগরীর একটি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা করোনা পজিটিভ হওয়ার পর অফিস করলেও ব্যাংকটি লকডাউন করা হয়নি। সুপার মার্কেটের ৪ ব্যবসায়ী করোনা পজিটিভ হলেও কোন পদক্ষেপ নেই।